Sunday, June 22, 2014

আনস্মার্টের গদ্য এবং বৃষ্টি দিনের কথকতা

১. স্মার্ট বনাম আনস্মার্ট

আমি জীবনভরই আনস্মার্ট। জীবনযাপন পোষাকআশাক শিক্ষাদীক্ষা সবকিছুতেই। প্রযুক্তিতে এসেও সেই আনস্মার্ট জীবনযাপন। এখন আবার স্মার্ট আনস্মার্টের সংজ্ঞা অন্যরকম। মোবাইল দিয়ে মাপা হয় সেটা। সেই হিসেবে আমি বছরখানেক স্মার্ট ছিলাম। শখ করে একটা সনি এক্সপেরিয়া কিনে কাক হয়ে ময়ূর সেজেছিলাম এই এক বছর। সেদিন মানে গত বিষ্যুদবার আমার সংক্ষিপ্ত স্মার্টজীবনের অবসান ঘটতে শুরু করলো যখন আমি পুরোনো ধাচের একটা মোবাইল কিনলাম।

যে দোকান থেকে স্মার্ট কিনেছিলাম সানমার ওশান সিটির সেই একই দোকানে গিয়ে বললাম, ভাই এবার একটা আনস্মার্ট ফোন দেন, আমার স্মার্টনেসের চেয়েও বেশী দরকার চার্জ। দিনে তিনবার না, তিনদিনে একবার চার্জ দিতে হয় তেমন একটা সেট দেন। আর যদি সম্ভব হয় তাতে যেন গানটান শোনার একটু ব্যবস্থা থাকে। যে কোন ভ্রমণে আমার গান শোনার নেশাটা অনেক প্রিয়। ভ্রমণে বই সাথে থাকলেও চোখ বন্ধ করে গান শোনাই হয় বেশী।

দোকানী আমার জন্য একটা নকিয়া সাদামাটা(আসলে কালোমাটা) একটা সেট বের করে দিলেন। একদম আমার দাদার যুগের চেহারা। দাম মাত্র ২০০০ টাকা। কালোমাটা চেহারাটা পছন্দ হলে আর দেরী না করে জিনিসটা বগলদাবা করে নিয়ে এলাম।


আগের স্মার্টফোনের অভ্যেসগুলো আস্তে আস্তে বদলাতে হবে। প্রযুক্তির সাথে অতিমাত্রায় বন্ধুতার বিপদ অনেক। পদে পদে নাজেহাল করতে পারে সে। একটু কানেকশান বিঘ্ন ঘটলে মনে হয় দুনিয়ার তার ছিঁড়ে গেল। বি কানেক্টেড ব্যাপারটাই একটা মানসিক রোগ হয়ে যায়। পকেটে করে যেন সবসময় আস্ত একখানা অফিস বয়ে নিয়ে যাই। অফিসের মেইল, ফাইলপত্র, দরকারী তথ্য, ছবি, গান,এমনকি মুভিও।  সব বোঝা থেকে হালকা হয়ে ভাসতে ভাসতে বাসায় ফিরলাম।

আনস্মার্ট ফোন থেকে প্রথমে একটা সংক্ষিপ্ত ফোন করলাম এক বন্ধুকে। দেখলাম আগের ফোনের চেয়ে এই ফোনে কথা আরো পরিষ্কার। শুধু একটা সমস্যা। এটাতে ভাইবার নাই। স্মার্টের ভাইবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম বেশ কিছুকাল। ভাইবার সেট থেকে শেষবার যখন ফোন করি তখনো ভাবছিলাম মাঝে মাঝে ভাইবারের জন্য স্মার্টফোনের দরকার হবে। কিন্তু ফোনটা করার পর বুঝলাম, ভাইবারও বিগড়ে গেছে।


২. বৃষ্টির অনিষ্ট বনাম বৃষ্টির রোমান্টিকতা

গত তিনদিন ধরে শহরজুড়ে অঝোর ধারায় বর্ষণ। বঙ্গোপসাগরের সবগুলো মেঘ এখন গাঙ্গেয় মোহনায় অবস্থান করছে। নগরজীবন অচল প্রায়। তলিয়ে গেছে অনেক এলাকা। বর্ষণের গতি এত তীব্র যে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে ধোঁয়াশা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। ২০০৭ এর জুনে এরকম এক বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিল আমাদের আগের বাড়িটা। ঘরের মধ্যেই এক কোমর জল হয়েছিল। আমরা পাশের দোতলা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম সব জিনিসপত্রের মায়া ছেড়ে। ১৯৯১ ঘূর্নিঝড়ের মতো সেবারো প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তবু বইগুলো বেঁচে গিয়েছিল। ওই একতলা বাড়ির নিরাপত্তাহীনতা ছেড়ে আমরা পালিয়ে বেঁচেছিলাম শেষমেষ। কিন্তু কত মানুষ পালাবার সুযোগ পায় না। বছরের পর বছর আটকে থাকে চক্রবন্দী হয়ে। বৃষ্টি আমার বুকে ভালোলাগার আমেজ ঘটায়। শুধু কি আমার? এত দূর্যোগ বন্যা সত্ত্বেও বাঙালীর রক্তে বৃষ্টির প্রতি কেমন একটা সিক্ত রোমান্টিকতা কাজ করে না? বৃষ্টি নিয়ে বিশেষ কিছু স্মৃতি? আছে, তবে আজ নয়। আজ একটা কবিতা পড়া যাক। সচলের রোমেল ভাই কিছুদিন আগে লিখেছিলেন-

তোমাকেই লিখছি, তবু তোমাকে জানাতে নয়
হয়তো এ লিখা নয়—
স্মৃতির দোলচেয়ারে বসে
এলোমেলো ভাবনার আঙ্গিনায়
একটু আধটু ঢেউ তোলা...
অনিমেষ চেয়ে দেখা ভাঙনের বিদীর্ণ বুক।

হয়ত অন্ধের রাস্তা হাঁটবার মতো করে
হাতড়ে হাতড়ে চলা
তারপর কিছু কথা বলা ঘোরের ভেতর
তারপর বেলাবেলি হলে বুকের ভেতরের কবন্ধ হাহাকারগুলো
আলগোছে নেড়ে চেড়ে দেখা—
হাওয়ার ভেতরে খুঁজে ফেরা দীর্ঘশ্বাসের কিছু বিমূর্ত সংলাপ।

==========================

৩. এবং আংশিক সংলাপ

বৃষ্টির গান এখনো অবিরাম বেজে যাচ্ছে। আজ ভিজতে হবে। গাড়ি নেই। ছাতা ব্যবহারে অনভ্যস্ত। পকেট বাঁচিয়ে, রাস্তার জমা জল ঠেলে, জুতো মোজা একাকার করে, কতদূর যাবে তুমি, কত দূর।

যেতে যেতে বাংলা গান শুনি-

বন্ধু তোমার মন ভালো নেই

তারপর একখানা ইংলিশ-

And if you ever get lost on life's highway
Don't know where to go
There's just one thing that I want you to know
I am here for you, always here for you
When you're needin' someone to hold you
Remember I told you
I am here for you, I am here for you

[তুঁই যদি লাইপের মেইনরোডে পথ হারায় ফেলো, আঁই আছি, তোঁয়ারলাই আঁই ইয়ানে খাঁড়ায় আছি]

এর ফড়েও যদি তোঁয়ার মন ভালা না হয় তাইলে দেশী চ্যাং এর ক্যারিশমা দেখো






No comments: