স্বাধীনতা ব্যাপারটি যে নিঃশব্দেও হরন হতে পারে সেটি জানা ছিল না ভুক্তভোগী হবার আগ পর্যন্ত। আমি বরাবরই অজাতশত্রু ভাবতাম নিজেকে। আমার কোন ব্যক্তিগত শত্রু নেই। এখনো নেই, আগেও ছিল না। তবু আমি আক্রান্ত হয়েছি তৃতীয় পক্ষের কারণে। আক্রান্ত হবার আগে কিছু অস্বস্তিকর মুহুর্ত থাকে। সেই মুহুর্তগুলোতে অনুভব করা যায় কেউ আমাকে লক্ষ্য করছে। বিশেষভাবে লক্ষ্য করছে, বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু কেউ আমাকে লক্ষ্য করলেই আমি অভিযোগ দায়ের করতে পারি না। বিচারপ্রার্থী হওয়া যায় তখনই যখন আমি আক্রান্ত হয়ে যাবো। সুতরাং আক্রান্ত হবার আগ পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হয়।
আমার ব্যক্তিগত কোন শত্রু নেই, কিন্তু রাজনৈতিক শত্রুর সংখ্যা অজানা হলেও জানি, ওরা আছে। আমার ছাত্রজীবনের বিরাট একটা অংশ শত্রুশিবিরে কেটেছে। তখনো আমি জানতাম ওরা আছে। আমাকে লক্ষ্য করছে। লক্ষ্য করছে জেনেও আমি কখনো নিজেকে বিপন্ন মনে করিনি। আমি দুর্দান্ত কোন সাহসী মানুষ না, কিন্তু আমার রাজনৈতিক মতবাদের অবস্থানটা ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য। শত্রুশিবিরেও আমি কখনো চুপ থাকিনি। এবং একবার সেই স্পষ্ট সরবতার খেসারতও দিতে যাচ্ছিলাম শত্রুপক্ষের ঘেরাওর কবলে পড়ে। আমার অপরিনামদর্শীতা বন্ধুদের এতই ভীত করে তুলেছিল ওরা একটু দূরত্বে অবস্থান নিয়েছিল। ওরা দূরে থাকলেও আমার বুকে ছিল সমগ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার দুর্মর শক্তি। আমাকে আক্রান্ত করতে দেয়নি সেই বিশ্বাস। শত্রুর চোখে পোড়া চোখ দুটো জ্বালিয়ে রেখেই বের হয়ে আসতে পেরেছিলাম। বুঝলাম ২১ বছর বয়সটা আসলেই দুরন্ত বেপরোয়া।
আমার ব্যক্তিগত কোন শত্রু নেই, কিন্তু রাজনৈতিক শত্রুর সংখ্যা অজানা হলেও জানি, ওরা আছে। আমার ছাত্রজীবনের বিরাট একটা অংশ শত্রুশিবিরে কেটেছে। তখনো আমি জানতাম ওরা আছে। আমাকে লক্ষ্য করছে। লক্ষ্য করছে জেনেও আমি কখনো নিজেকে বিপন্ন মনে করিনি। আমি দুর্দান্ত কোন সাহসী মানুষ না, কিন্তু আমার রাজনৈতিক মতবাদের অবস্থানটা ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য। শত্রুশিবিরেও আমি কখনো চুপ থাকিনি। এবং একবার সেই স্পষ্ট সরবতার খেসারতও দিতে যাচ্ছিলাম শত্রুপক্ষের ঘেরাওর কবলে পড়ে। আমার অপরিনামদর্শীতা বন্ধুদের এতই ভীত করে তুলেছিল ওরা একটু দূরত্বে অবস্থান নিয়েছিল। ওরা দূরে থাকলেও আমার বুকে ছিল সমগ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার দুর্মর শক্তি। আমাকে আক্রান্ত করতে দেয়নি সেই বিশ্বাস। শত্রুর চোখে পোড়া চোখ দুটো জ্বালিয়ে রেখেই বের হয়ে আসতে পেরেছিলাম। বুঝলাম ২১ বছর বয়সটা আসলেই দুরন্ত বেপরোয়া।
সেই একুশেই আরো একবার বেপরোয়া হয়েছিলাম একই শত্রুর মুখোমুখি হয়ে। সামনে কী আছে জেনেই পা বাড়িয়েছিলাম। কোথা থেকে একটা উড়ো রাগ এসে ভর করেছিল। সবকিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবার অদম্য জেদে হাঁটতে শুরু করেছিলাম মিছিলে। শুধু একটু ভুল করেছিলাম কাছের দুই বন্ধুকেও আমার সেই যুদ্ধে জোর করে টেনে নিয়ে। যখন আক্রান্ত হলাম, তখন কে কোন দিকে ছিটকে গেলাম মনে পড়ে না। সেই প্রথম আক্রান্ত হয়ে পালিয়েছিলাম সরাসরি গুলির মুখে। মরলে বাকী যুদ্ধ সমাপ্ত করবে কে? নাকি আগে নিজে বাঁচো, তারপর সহযাত্রী? নিজের এবং সহযাপাঠির রক্তমাখা শার্ট মনে করিয়ে দিচ্ছিল সেই একই শত্রু ১৯৭১ এবং ১৯৯০। একই শত্রু, ভিন্ন শিবিরে। অতঃপর পলায়নের চুড়ান্তে দুই বন্ধুকে অক্ষত পেয়ে বেঁচে থাকার বিজয়ের তৃপ্তি।
বহুদিন পর আবারো লক্ষ্যের শিকার। লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া এড়াতে নতুন একটা ক্যামোফ্লেজ জড়াতে হয়েছিল। বেশ কিছুকাল নিরাপত্তা চাদরে থাকার পর একদিন একটু একটু করে ছিদ্র হতে থাকে ক্যামোফ্লেজ। একদিন টের পেয়ে যাই আবারো লক্ষ্যের শিকার। চেনাপথগুলোতে চলাচল করছে পর্যবেক্ষকের চোখ। এবার আক্রান্ত হবার ধরন ভিন্ন হবার সম্ভাবনা জেনেও অস্বস্তি সরে না। চেনাপথগুলো দিয়ে হাঁটতে গিয়েও সতর্ক থাকতে হয়।
হাঁটতে হাঁটতে টের পাই চোখগুলো কিভাবে আমাকে অনুসরণ করছে। কাউকে না জানিয়ে আমি ক্যামোফ্লেজ পাল্টে ফেলবো কিনা ভাবতে থাকি। কিন্তু আমার পথে কেউ কাঁটা বিছিয়ে দেয়নি, শুধু কয়েকটি দৃষ্টিপাত মাত্র। সামান্য সেই দৃষ্টিপাতেই এত অস্বস্তি? আমি নতুন উপায় খুঁজতে শুরু করি।
হাঁটতে হাঁটতে টের পাই চোখগুলো কিভাবে আমাকে অনুসরণ করছে। কাউকে না জানিয়ে আমি ক্যামোফ্লেজ পাল্টে ফেলবো কিনা ভাবতে থাকি। কিন্তু আমার পথে কেউ কাঁটা বিছিয়ে দেয়নি, শুধু কয়েকটি দৃষ্টিপাত মাত্র। সামান্য সেই দৃষ্টিপাতেই এত অস্বস্তি? আমি নতুন উপায় খুঁজতে শুরু করি।
ঠিকানা পাল্টানো? আমি ক্যামোফ্লেজ পাল্টে ফেললেও আমার ঠিকানা পাল্টাতে পারছি না বিবিধ কারণে। ঠিকানা পাল্টাতে না পারলে লক্ষ্যবস্তু হওয়া কিছুতেই ঠেকানো যাবে না। আমার স্বাধীনতাও ফিরবে না। এখন উপায়?
কোন উপায় নেই, আপাততঃ গোলাম হোসেন আপাতঃ পরাধীনতায় আক্রান্ত। যেখানে জ্বর গায়ে ঘাড়-মাথা ব্যথার মতো বস্তুর সাথে আটকে আছে লক্ষ্যের দৃষ্টি।
No comments:
Post a Comment