Sunday, June 1, 2014

একটি কবিতার সারমর্ম প্রচেষ্টা


জীবনানন্দ দাশের অন্যন্য কবিতার মতো 'দুজন' কবিতাটি পড়েও দৃষ্টিভঙ্গির ফেরে পাঠকের অর্থবাচক প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হতে পারে। আমি বিশ বছর আগে যখন কবিতাটি পড়ি তখন একরকম অর্থ ভেবেছি, আজ ভাবছি অন্য রকম। প্রতি ছত্রের নিজস্ব একটা সারমর্ম তৈরী করে ব্র্যাকেটে জুড়ে দিলাম কবিতার সাথে। এহেন অপকর্মে বোদ্ধা লোকের তিরস্কার অতি প্রত্যাশিত পুরস্কার হতে পারে।


আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন-কতদিন আমিও তোমাকে
খুঁজি নাকো;- এক নক্ষত্রের নিচে তবু - একই আলো পৃথিবীর পারে
আমরা দুজনে আছি; পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি?- বলে সে তাকাল তার সঙ্গিনীর দিকে;
আজ এই মাঠ সূর্য সহমর্মী অঘ্রাণ কার্তিকে
প্রাণ তার ভরে গেছে।


[একই নক্ষত্রের নীচে বসবাস করেও দুজন দুজনকে ভুলে পৃথিবীর নিঃশ্বাসে বেঁচেছিল বহুকাল। নক্ষত্রের ঢের আগে মরে যায় নিবিড় প্রেমও..............]

দুজনে আজকে তারা চিরস্থায়ী পৃথিবী ও আকাশের পাশে
আবার প্রথম এল- মনে হয়-যেন কিছু চেয়ে -কিছু একান্ত বিশ্বাসে।
লালচে হলদে পাতা অনুষঙ্গে জাম বট অশ্বথের শাখার ভিতরে
অন্ধকারে নড়ে-চড়ে ঘাসের উপর ঝরে পড়ে;
তারপর সান্ত্বনায় থাকে চিরকাল।

[বিশ্ববটতলে মাত্র দুটো ঝরাপাতা................]

যেখানে আকাশে খুব নীরবতা, শান্তি খুব আছে,
হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে-ক্রমে যেখানে মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছেঃ
সেই ব্যপ্ত প্রান্তরে দুজন; চারিদিকে ঝাউ আম নিম নাগেশ্বরে
হেমন্ত আসিয়া গেছে;-চিলের সোনালি ডানা হয়েছে খয়েরী;
ঘুঘুর পালক যেন ঝরে গেছে-শালিকের নেই আর দেরি,
হলুদ কঠিন ঠ্যাং উচুঁ করে ঘুমাবে সে শিশিরের জলে;
ঝরিছে মরিছে সব এইখানে-বিদায় নিতেছে ব্যাপ্ত নিয়মের ফলে।


[হেমন্তদিন পার হলে সোনালী ডানার চিলও হারায় আভা, এই তো জগতের ব্যাপ্ত নিয়ম.........]

নারী তার সঙ্গীকেঃ'পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
জানি আমি;-তারপর আমাদের দুঃস্থ হৃদয়
কী নিয়ে থাকিবে বল;-একদিন হৃদয়ে আঘাত ঢের দিয়েছে চেতনা,
তারপর ঝ'রে গেছে; আজ তবু মনে হয় যদি ঝরিত না।
হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ আমাদের-প্রেমের অপূর্ব শিশু আরক্ত বাসনা
ফুরোত না যদি, আহা, আমাদের হৃদয়ের থেকে-'


[প্রতিটি প্রেমের হৃদয়ই দুস্থ, প্রতিটি হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ, যদি ভুলগুলো না হতো কিছু ক্ষরণ বেঁচে যেতো আহা.........]

এই বলে ম্রিয়মাণ আঁচলের সর্বস্বতা দিয়ে মুখ ঢেকে
উদ্বেল কাশের বনে দাঁড়িয়ে রইল হাঁটুভর।
হলুদ রঙের শাড়ি, চোরকাঁটা বিঁধে আছে, এলোমেলো অঘ্রাণের খড়
চারি দিকে শূণ্য হতে ভেসে এসে ছুঁয়ে ছেনে যেতেছে শরীর;
চুলের উপর তার কুয়াশা রেখেছে হাত, ঝরিছে শিশির;-
প্রেমিকের মনে হলঃ'এই নারী-অপরূপ-খুঁজে পাবে নক্ষত্রের তীরে
যেখানে রব না আমি, রবে না মাধুরী এই, রবে না হতাশা,
কুয়াশা রবে না আর-জনিত বাসনা নিজে-বাসনার মতো ভালোবাসা
খুঁজে নেবে অমৃতের হরিণীর ভিড় থেকে ইপ্সিতেরে তার।'

[অতঃপর কবি ভাবে.... এই নারী আমাকে না পেলেও খুঁজে পাবে তার ইপ্সিত আশ্রয়, অঘ্রাণের শুষ্কতা পেরিয়ে সে পৌছে যাবে তার অবিরল ঠিকানায়.......]

No comments: