Saturday, June 28, 2014

সুসংবাদ নেই

নিয়ত দুঃসংবাদ
প্রতিদিন দুঃসংবাদ। ঘুম ভাঙ্গে দুঃসংবাদ শুনে। ঘুমোতে যাই দুঃসংবাদ শুনে। একদিন নিজেও হয়ে যাবো দুঃসংবাদের অংশ। আশংকা নয়, সম্ভাবনা নয়, অনিবার্য পরিণতি। কোন স্বজন বন্ধুর আটকানো নিঃশ্বাস হাসপাতালে জমা রেখেই আমরা বুক ভর্তি হাওয়া গিলে ঘুরে বেড়াই। কাজ করি, আড্ডা দেই, বিশ্বকাপ দেখি, খাই, ঘুমাই। একই সময়ে কেউ কেউ নির্ঘুম রাত পার করে। এক ফোঁটা বাতাসের জন্য কারো কান্না ভেসে বেড়ায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। অথচ আমার চোখ জুড়ে তখন জানোয়ারের মতো বিশুদ্ধ নিঃশ্বাসে নির্লজ্জ ঘুম ভেঙ্গে আসে।

শৃংখলবৃদ্ধি
দু হাতে শেকল পরানো ছিল বহুকাল। শেকল ছেঁড়ার শক্তি ছিল না। নিয়তির শৃংখল অথবা শৃংখলিত নিয়তি মেনে নিয়েও কাটছিল সময়। হাত বন্ধ থাকলেও হাঁটা বন্ধ হয়নি। হাঁটতে পারতাম যখন খুশী। চোখ মেলে তাকাতে পারি আকাশ অথবা সবুজে। একদিন সবুজের ঘ্রাণ পেয়েছিলাম। সজীব সময়। এরপর অবসর হতো সবুজের কাছে যাবার। সবুজের মুগ্ধতা ভুলিয়ে দিয়েছিল শৃংখলের যন্ত্রণা। অতঃপর নজরে পড়ে গেলাম অসময়ের। একদিন অসময় এসে শৃংখল পরিয়ে দিল দু'পায়েও। 

মগডাল
গাছটার একদম মগডালে ওঠার পর অবাক হয়ে ভাবছিল কিভাবে এত বিশাল একটা বৃক্ষের চুড়াশীর্ষ স্পর্শ করলো। সেই কবে গাছে উঠেছিল মনেই নেই। তাই এই শীর্ষারোহন তাকে বিশেষ তৃপ্তি দিল। শীর্ষে বসে সে অনুমান করার চেষ্টা করছে গাছটার উচ্চতা কত হতে পারে। একটা চারতলা দালানের চেয়েও বেশী হবে। কটা ডাল পার হয়ে আসলো? বিশটা তো হবেই। গাছের বাকলের রঙ কি, পাতাগুলো কতটা সবুজ। এই সবুজের আড়ালে বসে থাকতে কতটা ভালো লাগা। বাতাসে গা জুড়িয়ে যাচ্ছে। যত উপরে তত বেশী বাতাস। সে দুহাত মেলে বাতাস ছুঁয়ে দিতে চাইল। উঠে আসার আনন্দটা দ্বিগুন হয়ে ভর করলো যেন। ...........তারপর সর্বশেষ ডালের শীর্ষে দাঁড়িয়ে সে পাতার ফাঁক দিয়ে তাকাবার চেষ্টা করলো শেকড়ের দিকে....ঐ তো ওখান দিয়ে উঠে এসেছিলাম আমি। তাকানোই হলো ভুল, অপরিণামদর্শী এক ভুল। পা হড়কে ধপাস করে পড়ে গেল নীচে। ডালের সাথে বাড়ি খেতে খেতে, পাতার ফাঁক দিয়ে পড়তে পড়তে সে কিছুই ভাবতে পারছিল না, এমনকি ভুলে গেল একদিন সে সর্বোচ্চ চুড়াটা স্পর্শ করতে পেরেছিল।

রমজানে বঙ্গদেশ
আর একদিন পরেই রোজার শুরু। যদি সুযোগ থাকতো এই একটা মাস আমি বাংলাদেশ থেকে দূরে কোথাও থাকতাম। রমজান হলো সংযমের মাস। কিন্তু এই মাসটার মতো অসহনীয় অসংযমের মাস আমি একটিও দেখি না। চারদিকে শুধু খাই খাই হৈ হৈ রৈ রৈ তেলেভাজা পিয়াজু বেগুনি কি মরীচিকার খেলা। ধোঁয়া ধোঁয়া তেলতেলে রাজপথ গলিপথের বাতাস। মার্কেটে মার্কেটে গিলে ফেলা হা-গিলের দল হাহা রবে ছুটে বেড়ায়। রাস্তাঘাট যানজটে আটকা ঘন্টার পর ঘন্টা। গরমে রোদে বিকেলের ভাজাভুজিতে অসহ্য আচার। হঠাৎ মুসল্লীর দল ভিড় করে মসজিদে মসজিদে ইফতার পার্টিতে। ভণ্ড ধার্মিক পাঞ্জাবি পাতলুনে চিকচিকে চেকনাই, মুখে মুখে হাদিসের বাহার। ধর্ম নিয়ে ব্যবসাপাতি চাঙ্গা করার খায়েশ।

কোন মতে এই একমাস যদি নির্বাসনে যেতে পারতাম? এই একটা মাস, আমার পোড়াভাজা বাংলাদেশ, আমি তোমায় ভালোবাসি না।

No comments: