Tuesday, July 1, 2014

এলেবেলে দিনপঞ্জি

রাতে ঠিকমতো ঘুম না হওয়াতেই বোধহয় বারবার হাই ওঠে। বারবার হাই ওঠা খারাপ লক্ষণ। যখন হাত এবং মগজ কোনটাতেই কাজ থাকে না তখনই হাইগুলো উঠে। হাই উঠার ঘন্টাখানেক পরই কপালের দুপাশ পিনপিন করতে শুরু করবে। পিনপিনটা মৃদু থেকে তীব্রতার দিকে যেতে যেতে সমগ্র মস্তিষ্কের নেটওয়ার্ক জুড়ে ঝিমঝিম করে বাজতে শুরু করবে। চোখের সামনে যত আলো আছে সবকিছু অসহ্য ঠেকবে। মাথাটা কোথাও ঠেকানোর জায়গা খুঁজবে। চোখটা অন্ধকারের আশ্রয় চাইবে। কোনটাই যখন হবে না তখন তীব্র বেগে আঘাত করতে শুরু করবে মাইগ্রেন ঝড়। কমপক্ষে ১২ ঘন্টা ধরে এই ঝড় চলবে। তারপর ব্যথানাশক এক শান্ত্বনা পুরস্কারের স্পর্শে ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসবে। ততক্ষণে শরীরের কোষগুলো সমস্ত শক্তি হারিয়ে আত্মসমর্পন করে বসেছে।

সোমবার দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এই রুটিন অব্যাহত ছিল। মাঝে কিছু স্মৃতির যন্ত্রণা, অবচেতনের বঞ্চনা এসে নির্ধারিত ঘুমের ট্রেনটা লেট করিয়ে দিল। দশটার ট্রেন ছাড়লো রাত দেড়টায়। মাঝপথে কলিংবেল, আড়াইটায়। একবার, দুবার, তিনবার। কে? এত রাত কে ডাকে?

অন্ধকারে উঁকি দেই, কেউ নেই। কারো থাকার কথা না। কিন্তু কেউ বাজিয়েছিল, কেউ একজন। ভুতপ্রেতে বিশ্বাস নেই। কংক্রিটের শহরে ওসব নেই। বিদ্যুত বিভ্রাট মেনে নেই। আমার ঘুম স্পর্শ করার আগেই অ্যালার্ম বাজে। ওর কোন দোষ নেই। ওকে বলা হয়েছিল এই সময়ে বাজতে, বেজেছে। বাজুক।

অ্যালার্ম বন্ধ করে আড়মোড়া ভেঙ্গে আবারো শুয়ে পড়ি। কটা বাজে? ঘড়িটা দেখা যায় না অন্ধকারে। কাছের ঘড়ি খালি চোখে দেখি না। চশমা নেই হাতের কাছে। উঠে গিয়ে পেড়ে নিতে ইচ্ছে করছে না। আগে ভালো ছিলাম, চশমা দেবার পর থেকে ঝাপসা হয়ে আসছে পৃথিবী।

নাহ, শুয়ে থাকার মানে নেই। উঠে পড়ি। পানি খাই। হাতমুখ ধুয়ে টিভিরুমে যাই। বাতি জ্বালাই। রিমোট টিপি। জার্মানীকে হয়রান বানাচ্ছে আলজেরিয়া। আমি কার পক্ষে? ব্রাজিলের খেলা এবার পছন্দ না হওয়াতে প্রতিদিন নতুন প্রিয় দল বানাই। যে ভালো খেলবে তার পক্ষে আজ। কে ভালো খেলে? জার্মানী? না আলজেরিয়া। দুদলকেই চালাক মনে হয়।

নাইজেরিয়াও চালাক ছিল। তবু হেরে গেল। ওস্তাদের মার শেষ রাতে। ফ্রান্স দোনোমোনো খেলেও শেষ অংকে বাজীমাত করলো। নাইজেরিয়া কালকে ফ্লাইটে চড়ে বসবে। আফ্রিকা থেকে দুটো দল অন্ততঃ খেলছে। এবার কাপ নেবে কে? ইউরোপ না ল্যাটিন আমেরিকা? নতুন কোন দেশ যদি হয়। কোস্টারিকা পছন্দ হয়েছে। মাথায় ঝড় থাকলে এসব ভাবা যায় না। ঝড় থেমেছে, ব্যথা নেই। ঘুম দরকার। সকালে অফিস। ঘুম যাই।

[কপিরাইট: মাইগ্রেনাসক্ত বেতাল মস্তিষ্কের]

No comments: