Wednesday, June 25, 2014

উন্নয়ন, ইপিজেড ও বাংলাদেশ বিষয়ক ক্যাচাল

বাংলাদেশ সরকার বিশেষ সুবিধা দিয়ে একের পর এক ইপিজেড চালু করেছে ঢাকা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে। ইপিজেড একটি বণ্ডেড জোন। এই জোনগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেকটা আন্তর্জাতিক। এখানে কেউ পন্য বিক্রি করলে তা হবে বাংলাদেশের এক্সপোর্ট। এখান থেকে কেউ পন্য কিনলে তা হবে বাংলাদেশের ইমপোর্ট। ইপিজেডগুলো বণ্ড সুবিধার আওতায় ডিউটি ফ্রি আমদানী করে তা দিয়ে রপ্তানী পন্য তৈরী করে বিদেশে পাঠায় নির্ধারিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। ইপিজেডের প্রত্যেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১০ বছরের জন্য করমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু ১০ বছর পার হবার পরও এদের খুব বেশী কর দিতে হয় না। কারণ এদের আয় অধিকাংশ সময়ই করমুক্ত সীমার ভিতরে থাকে অথবা অগ্রিম কর থেকে এই করের পরিমান খুব কম হয়। ফলে বাংলাদেশ সরকার এখান থেকে কিছুই পায় না বছর শেষে।

তাহলে ইপিজেড বাংলাদেশের উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখছে? কেউ বলবেন, কর্মসংস্থান। কেউ বলবেন, বৈদেশিক মুদ্রা আহরন।

দুটোই সত্যি। কর্মসংস্থানও হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রাও আহরন চলছে। কিন্তু কর্মসংস্থান কি স্থানীয় কারখানাগুলোতে হচ্ছে না? বৈদেশিক মুদ্রা কি স্থানীয় কোম্পানী গুলো আয় করছে না? ইপিজেডকে অধিক সুবিধা দেবার কারণটা কি তাহলে?

সেটা সরকার জানে। আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক অনুভূতির কথা বলি।

আমার ধারণা ইপিজেড বিদেশীদের জন্য যতটা লোভনীয়, বাংলাদেশের জন্য ততটা নয়। বিদেশীদের জন্য লোভনীয় কারণ এখানে আইনের আওতায় দুর্নীতি করার সুযোগ আছে। একটা উদাহরণ দেই।

ডাকসিল কোম্পানী ৪ মিলিয়ন ডলার খরচ করে একটা কারখানা খুলেছে। কর্ম সংস্থান করেছে ২০০০ মানুষের। কোম্পানীটি বছরে রপ্তানী করে ২০ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে আমদানী ব্যয় ১৬ মিলিয়ন ডলার। অন্যন্য খরচ ২ মিলিয়ন। নেট লাভ ২ মিলিয়ন ডলার। দশ বছরের করমুক্ত সুবিধায় কোম্পানীটি ২০ মিলিয়ন ডলার নেট লাভ করলো দশ বছরে। সেই লাভ থেকে তিন বছর পরপর আবারো বিনিয়োগ করলো ৪ মিলিয়ন ডলার করে দুইবার। এখন তাদের ৩ টি কারখানা। প্রতিটা কারখানায় ২০ মিলিয়ন করে মোট বার্ষিক রপ্তানী ৬০ মিলিয়ন ডলার দাড়ায়। ডাকসিল-১ যখন দশবছর পূর্ন করলো সেবছর তাদের আয় কমতে শুরু করলো। ১১তম বছরে ডাকসিল-১ এর মূনাফা ২ লাখ ডলারে নেমে আসে।  পরের বছর আরো কম। এভাবে দেখা যায় ডাকসিলকে তেমন কোন কর দিতে হচ্ছে না ১০ বছর পার হবার পরও।

ডাকসিল খুশী, কারখানার কর্মচারীগন খুশী, শুধু খুশী হতে পারে না বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ সরকার ভাবতে থাকে ডাকসিলকে এত সুবিধা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে আমার কি লাভ হলো?
লাভ নেই জেনেও ডাকসিলকে ব্যবসা করার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

ডাকসিলকে বন্ধ করে দিলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কে কে?
১. ডাকসিলের মালিক (বছরে ২ মিলিয়ন ডলার আয়)
২. ডাকসিলের ২০০০ কর্মী (বছরে ১.৬ মিলিয়ন ডলার বেতন)
৩. ডাকসিলের সাথে কর্মরত বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহ (বছরে ১ মিলিয়ন ডলার আয়)
৪. বাংলাদেশ কর বিভাগ ( বছরে ২৫ হাজার ডলারের উৎস কর)

তেল কোম্পানীর সাথে সম্পাদিত পিএসসি চুক্তির মতো এই ইপিজেডগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে যতটা উপকার করছে, তারা নিজেরা উপকৃত হচ্ছে কয়েকগুন বেশী। কিন্তু আমাদের আর কোন উপায় নেই বলে আমরা বাধ্য হচ্ছি সেই অলাভজনক বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে। এ যেন সেই গরীব মানুষের বউ যে পরিবারের অভাব মেটাতে ব্যর্থ হয়ে স্বামীর অনুমোদন নিয়ে শরীর বেচে।

অথচ সেই বউটি যদি শিক্ষিত হতো, সে ভিন্ন একটা সম্মানজনক কর্মসংস্থান বেছে নিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা অবকাঠামো। বিদ্যুত আর যোগাযোগ খাতটা যদি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিনিয়োগ বান্ধব হতো, তাহলে বাংলাদেশকে ইপিজেডগুলোর মতো ক্ষুদে বিনিয়োগকারীদের উপর এতটা নির্ভর করতে হতো না।

মাঝে মাঝে শোনা যায় বাংলাদেশকে গার্মেন্টস সেক্টরের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। সেদিন এক মন্ত্রী বলছিলেন ২০২১ সালে বাংলাদেশ গার্মেন্টসএর চেয়ে অধিক পরিমান সফটওয়ার রপ্তানী করবে। আমি বলবো, এসব বাকোয়াজী বন্ধ করে অবকাঠামো উন্নয়ন করার জন্য কাজ করেন আগামী পাঁচ বছর। উন্নয়ন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে আপনার বাড়িতে এসে ঢুকবে। সনি, স্যামসাং, এলজি, হুন্দাই, এসব কোম্পানীর বিনিয়োগ আশা করতে হলে আপনাকে বিদ্যুতখাতকে ১০০% নিশ্চিদ্র করতে হবে। ০.০০০১% বিচ্যুতিও সহ্য করবে না বিদ্যুতখাত। সুতরাং বক্তিমা কমান, কাম করেন!

No comments: