বাংলাদেশ সরকার বিশেষ সুবিধা দিয়ে একের পর এক ইপিজেড চালু করেছে ঢাকা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে। ইপিজেড একটি বণ্ডেড জোন। এই জোনগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেকটা আন্তর্জাতিক। এখানে কেউ পন্য বিক্রি করলে তা হবে বাংলাদেশের এক্সপোর্ট। এখান থেকে কেউ পন্য কিনলে তা হবে বাংলাদেশের ইমপোর্ট। ইপিজেডগুলো বণ্ড সুবিধার আওতায় ডিউটি ফ্রি আমদানী করে তা দিয়ে রপ্তানী পন্য তৈরী করে বিদেশে পাঠায় নির্ধারিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। ইপিজেডের প্রত্যেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১০ বছরের জন্য করমুক্ত সুবিধা পায়। কিন্তু ১০ বছর পার হবার পরও এদের খুব বেশী কর দিতে হয় না। কারণ এদের আয় অধিকাংশ সময়ই করমুক্ত সীমার ভিতরে থাকে অথবা অগ্রিম কর থেকে এই করের পরিমান খুব কম হয়। ফলে বাংলাদেশ সরকার এখান থেকে কিছুই পায় না বছর শেষে।
তাহলে ইপিজেড বাংলাদেশের উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখছে? কেউ বলবেন, কর্মসংস্থান। কেউ বলবেন, বৈদেশিক মুদ্রা আহরন। ডাকসিল খুশী, কারখানার কর্মচারীগন খুশী, শুধু খুশী হতে পারে না বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ সরকার ভাবতে থাকে ডাকসিলকে এত সুবিধা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে আমার কি লাভ হলো?
৩. ডাকসিলের সাথে কর্মরত বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহ (বছরে ১ মিলিয়ন ডলার আয়)
৪. বাংলাদেশ কর বিভাগ ( বছরে ২৫ হাজার ডলারের উৎস কর)
তেল কোম্পানীর সাথে সম্পাদিত পিএসসি চুক্তির মতো এই ইপিজেডগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে যতটা উপকার করছে, তারা নিজেরা উপকৃত হচ্ছে কয়েকগুন বেশী। কিন্তু আমাদের আর কোন উপায় নেই বলে আমরা বাধ্য হচ্ছি সেই অলাভজনক বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে। এ যেন সেই গরীব মানুষের বউ যে পরিবারের অভাব মেটাতে ব্যর্থ হয়ে স্বামীর অনুমোদন নিয়ে শরীর বেচে।
অথচ সেই বউটি যদি শিক্ষিত হতো, সে ভিন্ন একটা সম্মানজনক কর্মসংস্থান বেছে নিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা অবকাঠামো। বিদ্যুত আর যোগাযোগ খাতটা যদি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিনিয়োগ বান্ধব হতো, তাহলে বাংলাদেশকে ইপিজেডগুলোর মতো ক্ষুদে বিনিয়োগকারীদের উপর এতটা নির্ভর করতে হতো না।
মাঝে মাঝে শোনা যায় বাংলাদেশকে গার্মেন্টস সেক্টরের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। সেদিন এক মন্ত্রী বলছিলেন ২০২১ সালে বাংলাদেশ গার্মেন্টসএর চেয়ে অধিক পরিমান সফটওয়ার রপ্তানী করবে। আমি বলবো, এসব বাকোয়াজী বন্ধ করে অবকাঠামো উন্নয়ন করার জন্য কাজ করেন আগামী পাঁচ বছর। উন্নয়ন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে আপনার বাড়িতে এসে ঢুকবে। সনি, স্যামসাং, এলজি, হুন্দাই, এসব কোম্পানীর বিনিয়োগ আশা করতে হলে আপনাকে বিদ্যুতখাতকে ১০০% নিশ্চিদ্র করতে হবে। ০.০০০১% বিচ্যুতিও সহ্য করবে না বিদ্যুতখাত। সুতরাং বক্তিমা কমান, কাম করেন!
No comments:
Post a Comment