পোষ্ট পড়ে মেজাজ খারাপ হতে পারে। তাই শুরুতে দুটো গান শুনে নিন। প্রথমে শুনুন শোনাও তোমার অমৃতবাণী। একটা শুনে মন ভরেনি? এবার আরেকটা। শুধু তোমার বাণী।। সৌজন্য ছাড়া আজকাল টিভিতে ছাগলও গান গায় না। খবরের পরতে পরতেও সৌজন্য। বিরতি বিজ্ঞাপন তো আছেই। এমনকি হেডলাইনের মাঝখানেও বিজ্ঞাপন চলে। এই গানগুলো পোষ্টের অপ্রাসঙ্গিক জাতের বিজ্ঞাপন। মূল বিষয়ে আসি। বিষয় হলো 'বাণী'।
বিশেষ দিনে দৈনিক পত্রিকার এক্সট্রা পাতা যোগ করতে হয় বাণী প্রচার করতে। এর জন্য পত্রিকার বড় অংকের বিজ্ঞাপন আয় হয়। এর বাইরে বাণীর আর কোন সুবিধাভোগী আছে?
দিবস ভেদে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় বা দপ্তরের প্রধান পর্যন্ত বাণীদাতা হন। বাণীর কতোগুলো নিয়ম আছে ফরমেট আছে সরকারী প্রেসনোটের মতো। আসুন দেখা যাক একটা বাণীতে কি কি থাকে কি কি থাকে না?
১. বাণী পাতায় বাণীদাতার একটা পাসপোর্ট সাইজ ফটো ডান/বাম কোনায় থাকবে। ছবির নীচ বা ডান/বাম পাশ থেকে বাণী লেখা শুরু হবে। নির্দিষ্ট সময় পরে বাণী শেষ হবে। নীচে বাণীদাতার স্বাক্ষর পদবী শিক্ষা ইত্যাদি থাকবে। (স্বাক্ষর কি বিশ্বাসযোগ্যতা বা ওজন বাড়ায়?)
২. বাণী চিরন্তন। তাই বাণী কখনো বদলায় না। যুগযুগ ধর একরকম থাকে। (ধরুন সশস্ত্র বাহিনী দিবস। এই দিবসের গত ত্রিশ বছরের বাণী পাশাপাশি সাজালে দেখা যাবে বাণীর বাক্যমালা একই আছে, শুধু ছবি বদলেছে। বাণীদাতা চিরন্তন না, বাণীই চিরন্তন।
৩. বাণীতে কখনো সমালোচনা থাকে না, শুধুই তৈল মর্দন আর পৃষ্ঠ চুলকানি। মানপত্রের মতো। একসময় বিয়েতেও বর কনের উদ্দেশ্যে মানপত্র ছাপানো হতো। বাণীও সেরকম।
৪. বাণীতে প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করা হয় মরণশীল প্রতিষ্ঠান হলেও।
৫. কোন কোন বাণী যে কোন দিবসেই একরকম থাকে। এর কারণ বাণী ক্লার্ক কুঁড়ে সম্রাট, জীবনে কপিপেষ্ট বাদে আর কিছু শেখেনি।
৬. তবে বাণীর সবচেয়ে ভালো দিক হলো বাণীতে কখনো কাদা ছোড়াছুড়ি থাকে না। বাণী সর্বদা সুশীল। ইস্তিরি করা জামার মতো।
এবার আন্দাজ করা যাক বাণী কে কে পাঠ করে। যার বাণী তিনি যে পড়েন না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তার অত সময় নেই। বাণীদাতা বিদেশে থাকলেও বাণী ছাপা হয়ে যায়। বাণী লেখার লোক আছে। তবে তারাও বোধহয় বাণী পড়ে না। তারা গত বছরের সেভ করা ফাইলটা ওপেন করে বছরটা বদলে দিয়ে প্রিন্ট করে কিংবা পত্রিকা অফিসে ফরোয়ার্ড করে দেয়। পত্রিকা অফিসে বাণী পড়ার কেউ আছে? প্রুফরিডার? না বোধহয়। আজকাল প্রুফরিডিংএর ভাত নেই। পিসিতে স্পেল চেকার দিয়ে কাজ হয়ে যায়। এরপর বাণী পেষ্টিং রুমে চলে যায়। ওখানে পাঠ করার সুযোগ নেই। পেষ্টিং হলে ছাপার ঘরে ঢুকে যায়। ছাপাখানার রোলার দমাদম পেটাতে পেটাতে বাণীকে চিড়ে চ্যাপটা করে ছাপা কাগজে বের করে দেয়।
ছাপা হবার পর থেকে হকারের সাইকেলে চড়ে পাঠকের হাতে পৌঁছাবার আগ পর্যন্তও বাণী পঠিত হবার কোন সম্ভাবনা নেই। অবশেষে পত্রিকার কোলে করে বাণী পাঠকের হাতে আসলো।
ধরা যাক সেই পাঠক আমার মতো কেউ। পত্রিকা হাতে নিয়েই ক্রোড়পত্র চোখে পড়লে ওটা কিসের তা দেখার প্রয়োজন না করেই পাশের ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে সযত্নে ড্রপ করবে। ৫ বছর বয়সী কন্যাটা খেলতে এসে ওটা দেখে বলবে, "বাবা এটা তুমি ফেলে দিয়েছো, আমি নিয়ে খেলি?" আমি বলবো, ঠিকাছে তুমি ওটা নিয়ে খেলতে পারো।
কন্যা 'বাণী' নিয়ে খেলতে যাবার খানিক পর একটা চিৎকার আসবে। "বাবা!!! শিহান পেপারটা পড়ার জন্য টানাটানি করছে!!!" শিহান আমার দুবছর বয়সী কনিষ্ঠ সন্তান। বড়বোন যা নেয়, ওরও তা চাই। আমি জবাবে বলবো, "ওকেও পড়তে দাও!"।
কিছুক্ষণ পর আবারো চিৎকার, সাথে কান্না, "বাবা!!!!!!!!! শিহান ওটার উপর হাগু করে দিয়েছে!!!! আমি এখন কেমনে খেলবো????????"
আমি আনমনে জবাব দিতে গিয়ে প্রায় বলে বসবো, ওকে হাগতে দাও.......। কিন্তু কি মনে হতেই দৌড়ে ভেতরের ঘরে গিয়ে দেখবো কম্ম সাবাড়!! মানী লোকের মান মেরে দিয়েছে আমার ফাজিল ছেলেটা!!
.....................................................................................................................
আজকে কোন লেখা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু খানিক আগে বাংলাদেশ বিমানের ওয়েবসাইটে বেড়াতে গিয়ে দেখলাম ওয়েবসাইটেও বাণীর আছর। দুই কর্তার দুটো বাণী পড়ে এ বিষয়ে সাড়ে তিনখানা কথা না লিখে পারলাম না।
বিমানের বাণী সেই দুটো পড়তে চান?
বাণী এক। বাণী দুই।
এই বাণীতেও যথারীতি খারাপ কিছু নেই। তবে কথা হলো, সুযোগ পেলেই আমরা বাণী দিতে ভালোবাসি। বাণীসমৃদ্ধ জাতি আমরা।
No comments:
Post a Comment