(এটি একটি খানাপিনা বিষয়ক হালকা পোষ্ট। জ্ঞানীগুনীরা নিজ দায়িত্বে পড়বেন).......আমি পড়তে ভালোবাসি। শুধু তাই না, পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়তে আরো বেশী ভালোবাসি। তবে আজকাল সাহিত্য পড়া বাদ দিয়ে নতুন কিছু পড়ছি। পড়ছি না ঠিক, বলা যায় গবেষণা করছি। .........যেসব খাবার খেতে ডাক্তার বারন করেন, যেসব খাবার জিবে সয় কিন্তু রক্তে সয় না, যেসব খাবার ছেলেপিলেরা কচ কচ করে খায়, আর আধবুড়োরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, সেইসব খাওয়া কি উপায়ে খাওয়া যায় সেই বিষয়ে গবেষণা করা এবয নিষিদ্ধ খাবারগুলোকে নির্ভয়ে টেবিলে পরিবেশনে গৃহিনীদের উৎসাহিত করাও একটা উদ্দেশ্যে। আজকের বিষয় চিংড়ি।
চল্লিশে সবাই চালশে হয় না। তবু চল্লিশ পেরুনো মানুষদের স্বাস্থ্যচিন্তা করতেই হয়। কারণ এই বয়স থেকেই যাত্রা শুরু হয় সেইসব রোগের যা এতদিন যাবত বয়স্কদের রোগ বলেই শুনতে অভ্যস্ত ছিল। যেমন হার্টের ব্যামো, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার ইত্যাদি। এই সময়ে লিপিড প্রোফাইল, কোলেষ্টেরল, এইচডিএল, এলডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড ইত্যাদি শব্দের সাথে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটতে থাকে ধীরে ধীরে। ডাক্তারের চেম্বারে, ডায়গনসিস সেন্টারে, ওষুধের দোকানে বারবার হানা দিতে হয়।
প্রথমবার লিপিড প্রোফাইল করাই তিন বছর আগে। তখন মোট কোলেষ্টেরল LDL, HDL সবকিছু নিরাপদ মাত্রার মধ্যে ছিল, কেবল ট্রাইগ্লিসারাইড ছিল ২৮০ (সর্বোচ্চ নিরাপদ সীমা ২০০)। ডাক্তার সাহেব TG বা triglycerides নিয়ন্ত্রনের জন্য কিছু নিয়মনীতি বেধে দিলেও বাঙালীর স্বাধীন গণতান্ত্রিক চেতনায় মাসখানেক পরই নিয়মের বেড়া ভেঙ্গে বেরিয়ে আসি। আবার পুরোনো সিস্টেমে চলতে থাকি। দাওয়াতে গেলে নিজের প্লেটে বিরিয়ানী রেজালা সব নিয়ে বসি আর বাণিজ্যমন্ত্রীর মতো লোকজনকে বলতে থাকি, কম খান।
তেমন কোন সমস্যা হচ্ছিল না। তবে জাপানের সুনামীর কিছুদিন পর আমি চোখে প্রায়ই ৬-৭ মাত্রার ভূমিকম্প দেখতে থাকি বাংলাদেশে বসেও। চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম কয়েকবার। আশপাশের কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে, ওরকম ভূমিকম্পের কোন নজির তারা দেখে না। ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি দেখেশুনে জানালো ভূমিকম্প আসলে আমার মাথায়। আবারো চেকাপ। লিপিড প্রোফাইলসহ নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষার প্রেসক্রিপশান।
দেখা গেল তিন বছর আগের তুলনায় শরীরের ওজন তেমন না বাড়লেও রক্ত কনিকায় সব ধরনের কোলেস্টেরলের প্রবৃদ্ধি কেওক্রাডং ছেড়ে কাঞ্চনজংঘার দিকে রওনা দিয়েছে এবং সবচেয়ে বাম্পার ফলন হয়েছে টিজি বা ট্রাইগ্লিসারাইডের। আমার ট্রাইগ্লিসারাইড ৭৪৭ ছুয়েছে! ভয়াবহ অবস্থা। টিজি'র বিপদ সীমার সর্বোচ্চ রেটিং ৫০০, আমার রেটিং তাদেরকে ছেড়ে বোয়িং ৭৪৭ এর মতো অনেক উঁচুতে উঠে গেছে। অথচ আমি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করি, সীমিত আহার করি, পানদোষ নেই, ধুমদোষ নগণ্য। দোষের মধ্যে হাঁটাহাটি কম করি আর সুযোগ পেলে কাবাব তন্দুরী খাই।
ডাক্তার সাহেব সব উর্বর খানাপিনা, সামাজিক দাওয়াত, ফাষ্টফুড, তন্দুরী ইত্যাদির উপর কারফিউ জারি করলেন। রুটি/ভাত, সবজি, সমুদ্রের মাছ, ফলমূল ইত্যাদি বাদে আর সব খাবার নিষিদ্ধ। আয়ুবৃদ্ধির স্বার্থে আমি সব মেনে নিলাম, কিন্তু চিংড়ি মাছের প্রতি আজীবন দুর্বলতা হেতু, ডাক্তারের কাছে মিনমিন করে আপীল করলাম,
-সত্যিই চিংড়ি খাওয়া যাবে না? এটা কি খুব ক্ষতিকর?
-অসম্ভব। এটা কোলেষ্টেরলে ভর্তি, এটা একদম খাওয়া নিষেধ
-কিন্তু আমি যেন শুনলাম এটায় LDL কম HDL বেশী এবং এই চিংড়িতে OMEGA-3 আছে
-ওসব হলো খাওয়ার ফন্দী। আমি যখন বলছি ওসব কিছুতেই খাবেন না।
বেজার মুখ করে চলে আসলাম। কিন্তু একদিন স্বপ্নে আওয়াজ পেলাম, আরো কিছু অজুহাত খুঁজে বের করো যাতে চিংড়িটা সুখপাঠ্য যুক্তি দিয়ে টেবিলে সাজানো যায়। নেটে বসে আবারো গুঁতোগুতি শুরু করলাম। চিংড়ি মাছের মতো মজাদার একটা আইটেম খানাপিনার লিষ্ট থেকে বাদ যাবে, এটা হতে পারে না। খুঁজি আর খুঁজি কিন্তু কোথাও সায় পাই না।
অবশেষে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশান একটু আশার আলো দেখালো। ওরা মৃদুস্বরে বলছে, যেসব খাবারকে আমরা কোলেষ্টেরোলের জন্য দায়ী করি, আসলে তার চেয়েও ভয়ংকর ক্ষতিকর জিনিস হলো saturated fat এবং trans fat. কোলেষ্টেরোলের উৎপাত কমাতে এই দুটোর ভোজন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। এবং চিংড়িতে এই জিনিসের তেমন প্রাদুর্ভাব নেই। এটা শোনার পর নড়ে চড়ে বসলাম আবার। তবে এই লিংকের ডকুটা ডাক্তারের কাছে দেখালে ডাক্তার মানবে কিনা সন্দেহ। যদিও এখানে পরিষ্কার বলেছে-
A common cause of high blood cholesterol levels is eating too much saturated fat.
However, some people have high blood cholesterol even though they eat a healthy diet. For example, they may have inherited a condition called familial hyperlipidaemia (FH).
The cholesterol which is found in some foods such as eggs, liver, kidneys and some types of seafood eg. prawns, does not usually make a great contribution to the level of cholesterol in your blood. It's much more important that you eat foods that are low in saturated fat.
আবার বলছে-
"In the past a restriction on eggs was recommended because we thought that foods high in cholesterol (including liver, kidneys and shellfish, as well as eggs) could have an impact on cholesterol levels in the body.
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশানের মতো প্রতিষ্ঠান যখন একথা বলে, তখন আমার ডাক্তারের উপদেশ একটু সন্দেহের মধ্যে পড়ে যায় না?
আমি আজকাল ডাক্তার বৈদ্যকে নির্ভেজাল বিশ্বাস করা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ ওদের কথাবার্তা কদিন পরপর বদলায়। একসময় বলতো চা খাওয়া খারাপ। এখন শুনি দিনে পাঁচ কাপ চা খেলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা কম থাকে, আরো অনেক অসুখ বিসুখের জন্য চা বিশেষ উপকারী। জয়তু চা! তবে চিনি ছাড়া।
যাইহোক চিংড়ি কথায় ফিরে আসি।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশানের পরে উইকিতে গিয়ে চিংড়ি বিষয়ে দারুণ একটা প্যারা খুঁজে পেয়ে আরো উৎসাহিত হলাম।
As with other seafood, shrimp is high in calcium, iodine and protein but low in food energy. A shrimp-based meal is also a significant source of cholesterol, from 122 mg to 251 mg per 100 g of shrimp, depending on the method of preparation.[7] Shrimp consumption, however, is considered healthy for the circulatory system because the lack of significant levels of saturated fat in shrimp means that the high cholesterol content in shrimp actually improves the ratio of LDL to HDL cholesterol and lowers triglycerides.[8]
এবং আরেকটু এগিয়ে গিয়ে চিংড়ি নিয়ে সবচেয়ে চমকপ্রদ লেখা পেয়ে গেলাম American Journal of Clinical Nutrition এর একটা প্রবন্ধে। এটা পাঠ করার পর আমার চিংড়ি প্রেম তুঙ্গে উঠে গেল। এখানে পরিষ্কার বলছে চিংড়ি খাওয়া মোটেও মন্দ কাজ নয়। বরং এটি স্বাস্থ্যপক্ষে খুব উপকারী।
ভূনা চিংড়ির প্লেটটা টেবিলে সাজিয়ে কি এখন দেশী ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখানো যায়?
No comments:
Post a Comment