শতবর্ষ পুরোনো অব্যবহৃত দীঘি। ঘন আঁশটে গন্ধী জলজ আগাছার ফাঁকে ফাঁকে শত শত শাপলা ফুটে থাকে এখনো। পরিত্যক্ত দীঘিতে কেউ আসে না জল নিতে বা গা ধুতে। দীঘির পাড় জুড়ে কবরস্থান। হাজার হাজার মৃত মানুষের হাড় ফসফরাস সরবরাহ করছে মাটিতে। শাপলা তুলতে প্রতিদিন দীঘিতে নামে দ্বাদশবর্ষীয় মুকুল।
একেকটা ফুল তুলে সবুজ সাদা পাপড়িগুলো ফেলে এক কামড়ে ফুলের মাথিটা খেয়ে লতাটা গলায় ঝুলিয়ে নেয়। এই ফুল তার খিদে মেটায়। ফুলের নলিগুলো তার মায়ের রান্নায় তরকারির যোগান দেয়। প্রতিদিন শাপলার তরকারী খেয়ে দুবেলা কাটে মা ছেলের।
আজকে দীঘিতে নেমে গভীরে যেতে হলো একটু। যদিও গভীর অগভীর এক সমান এখানে। জলের নীচে লতার ঝাড়ে পা দিয়ে দিয়ে অনেক দূর চলে যেতে পারে সে। কিন্তু আজকে অল্পদূর গিয়েই হঠাৎ পা ফসকে শেকড় লতার গভীরে নেমে গেল মুকুল। পায়ের নীচে কিসের যেন টান। সে দুপায়ে ঝটকা মেরে উঠতে চাইলে আরো জোরে গিট্টু লেগে গেল। টানাটানিতে তার মাথাটা ডুবে গেল জলের নীচে। সে কোনমতেই ঠাঁই পাচ্ছে না অগভীর জলেও। দম আটকে আসছে তার। শাপলার শেকড় লতাগুলোকে হিংস্র মনে হলো। অল্প কিছুক্ষণ টানাটানির পর জলের নীচেই দমটা থেমে গেল তার।
এই দীঘির পাড়ে কেউ আসে না বিবশ দুপুরে। তাই কেউ দেখলো না এই ঘটনার লেশমাত্র। কেবল গত সপ্তাহে কবর হওয়া জমিরের দাদার বুড়ো শরীরটা কবরের বাঁশের বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুনতে পায় দীঘির ধোপ সাদা ফুলগুলো একটা কালো চুলের মাথা ঘিরে বেদম হাসছে ফিসফিসিয়ে। সম্মিলিত সুরে মাথা নেড়ে জাতীয় ফুলগুলো যেন বলছে, 'অবশেষে একদিন মানুষ খেলুম'।
No comments:
Post a Comment