খাস্তগীর স্যার আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ব্যপক জনপ্রিয়, সুরসিক মানুষ ঘরে বাইরে স্কুলে। একদিন রিক্সায় করে স্কুল থেকে ফেরার পথে পড়লেন খুচরা ছিনতাইকারীর হাতে। রিক্সা থামালো ওরা বাসার কাছাকাছি এলাকায়। উনি ভয় পাবার বদলে একটু অবাক হলেন। ওনাকে ছিনতাইকারী ধরতে পারে সেটা অবিশ্বাস্য।
কারন এই এলাকায় মুড়ি মুড়কি বিক্রেতা থেকে ছিনতাইকারী সবগুলোর মধ্যে ওনার ছাত্র আছে। ফলে ওনাকে রাস্তায় আটকানোর সাহস কারো থাকার কথা না। যারা আটকেছে তারাও কোন এককালে তার স্কুলে গেছে হয়তো। যাইহোক ছিনতাইকারীরা যখন আটকিয়েই ফেললো, উনি স্বভাবসুলভ স্বরে জানতে চাইলেন, "কিরে কি করস তোরা এখানে?"
ছিনতাইকারীদের কোন একজন বোধহয় চিনলো ইনি কে। কিন্তু ছুরি যখন ধরে ফেলেছে ফিরে যাওয়া লজ্জার ব্যাপার। তাই মোলায়েম স্বরে ছিনতাইপর্ব শুরু হলো। ওনার সাথে যে সংলাপগুলো হলো সেগুলো এরকম-
-স্যার আপনার পকেটে কি আছে দেখি।
-কী আছে তাতে তোর কি?
-দেখি না কি আছে
-মানিব্যাগ আছে।
-মানিব্যাগটা দেখি?
-মানিব্যাগ দেখার কি আছে
-একটু দেখবো খালি
-দেখালে তো লই দৌড় দিবি
-না স্যার, দৌড় দিমু না
-সত্য বলতেছস?
-কসম স্যার
খাস্তগীর স্যার পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে হাতে তুলে দেখালেন।
-হাতে নিয়ে দেখি স্যার?
-আরে হাতে নিলে তো দৌড় দিবি
-দৌড় দিমুনা
-সত্য তো?
-খোদার কসম স্যার।
স্যার মানিব্যাগটা ওর হাতে দিতেই সেটা খপ করে নিয়ে ভোঁ দৌড়ে পগার পার সবাই। আর পেছন থেকে খাস্তগীর স্যার চিৎকার করে বলছে,
-ওই ব্যাটা, আমি তখনই বলছিলাম, দেখাইতে গেলেই নিয়ে দৌড় দিবি তোরা। এবার দেখলি তো কার কথা সত্যি হলো? হারামজাদারা আমার কথা বিশ্বাসই করলি না।
গজগজ করতে করতে বাড়ী ফিরে গেলেন রসিক মানুষটা। মানিব্যাগ হারানোর চাইতেও মনে হলো ছেলেরা তার কথা বিশ্বাস করলো না সেটাতেই আক্ষেপটা বেশী।
No comments:
Post a Comment