Sunday, April 18, 2010

অতিপ্রিয় অশুদ্ধ উচ্চারনগুলো

কন্যাকে স্কুলে পাঠানোর উপযোগী করতে আমার স্ত্রী বছরখানেক ধরে গলদঘর্ম হচ্ছে 'অ আ ই' '১ ২ ৩' কিংবা 'A B C' ইত্যাদি শেখাতে। বিদ্যাশিক্ষার ব্যাপারে আমার অপটুতা ও অমনোযোগিতার কারনে আমার উপর বিস্তর অভিযোগ তার। কারন আমি বাসায় ফেরামাত্র কন্যার অনুসন্ধিৎসু চোখটা বই-খাতা-পেন্সিল ছেড়ে আমার হাতের মুঠোয়-পকেটে-ব্যাগে লুকানো কিছু আছে কিনা সেদিকেই ঘুরতে থাকে। প্রতিদিন কলিংবেল বাজা মাত্র ভেতর থেকে প্রথম যে তীব্র ধ্বনিটা শোনা যাবে সেটা হলো 'বাবা এসেছেএএএএএএএ' এবং প্রবেশমাত্র দ্বিতীয় বাক্যটা হবে, 'আমা-জন্ন কী এনেছো?'

তুচ্ছ কিছু হলেও আনবো ওর সেই বিশ্বাসটা এত গভীর যে কখনো কিছু আনতে ভুলে গেলেও সে আঁতিপাঁতি করে সবগুলো পকেট তল্লাশী করে কিছু না পেয়ে একটা গোল পয়সাও যদি খুঁজে পায় বলবে, 'বাবা এটা এনেছো আমার জন্ন'? আমি মিথ্যে হলেও বলি, 'হ্যাঁ। আমার যা আছে সব তোমার।' ওর মিষ্টি অশুদ্ধ উচ্চারনে 'জন্ন' শব্দটা আমার ভীষন প্রিয়। ওটা শোনার জন্য আমি নানান বাহানা করি। কেবল এটাই নয় ওর আধো বোলের ভুল উচ্চারনগুলো এত প্রিয় হয়ে গেছে যে ওর সাথে কথা বলার সময় নিজেও ওর মতো করে বলার চেষ্টা করি।

প্রত্যেক বাচ্চার নিজস্ব কতগুলো উচ্চারন থাকে। যা সে নিজ থেকেই আবিষ্কার করে এবং বেশ কিছুদিন মেতে থাকে ওই উচ্চারনে, একসময় আমরাও অভ্যস্ত হয়ে যাই সেই উল্টাপাল্টা উচ্চারনে, ভালোবাসতে শুরু করি সেগুলো। তবে আমরা অভ্যস্ত হতে হতে বাচ্চাটা একসময় সঠিক উচ্চারন শিখে ফেলে যা এতদিন গলদঘর্ম হয়েও শেখাতে পারানি। সঠিক উচ্চারন শিখে ফেলার পর পুরোনো ভুল উচ্চারনগুলো আর পারে না এবং মজার ব্যাপার হলো তখন ভুল উচ্চারনগুলো শোনার জন্যই মন কেমন করে।

দু বছর বয়স থেকেই কন্যা আমার কিছু কিছু শব্দ উল্টো করে উচ্চারন করতো। যে কোন শব্দের মাঝের অক্ষরটাকে নিপুনভাবে শেষে নিয়ে যেতো, শেষের অক্ষরটাকে মাঝখানে আনতো। নির্দিষ্ট কিছু বস্তুর উচ্চারন সেভাবেই করতো। যেমন ওর প্রথম রং চেনা হলো - গোলাপী কিন্তু উচ্চারন করতো 'গোপালী'। আমরা ওটা শুনতে শুনতে ওর সাথে বলতে বলতে এত অভ্যস্ত হয়ে পড়ি যে দোকানে কিছু কিনতে গেলে বলে বসতাম - ভাই ওই গোপালী জামাটা দেন তো? সেরকম আরো কটি শব্দ 'পটেক(পকেট)', 'জিবালা/ জিপালী(জিলাপী)', 'কলমা(কমলা)', আরো কত হাবিজাবি শব্দ।

গুটি গুটি পায়ে বড় হচ্ছে আমার মেয়ে, শুদ্ধ হচ্ছে উচ্চারন। গোপালী না বলে এখন শুদ্ধস্বরে বলে গোলাপী। আগামী বছর থেকে স্কুলেও যাবে হয়তো। আমার খুশী হবার কথা। কিন্তু আমার কানটা তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকে ওর আধোবোলের অশুদ্ধ উচ্চারনগুলোর জন্য। বারবার শুনতে ইচ্ছে করে সেই উচ্চারন যা প্রতিদিন দ্রুততার সাথে ভুলিয়ে দিচ্ছে ওর মা দাদী ফুপুরা। কিরকম অদ্ভুত চাওয়া মানুষের!

No comments: