এয়ারপোর্ট স্টেশানে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ট্রেনের হুইসেল শুনলাম যেন। জানুয়ারীর তীব্র শীতের বিকেল। সেবার সত্যি খুব শীত পড়েছিল, কয়েক বছর আগে। জোব্বা জ্যাকেটে শীত মানছিল না। টেক্সী থেকে নেমেই হাতের ব্যাগ আর কাঁধের ব্যাগ শক্ত করে ধরে ছুট দিলাম প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে। ট্রেন ছেড়েই দিচ্ছিল।
কোনদিকে না তাকিয়ে হাতল ধরে ঢুকে পড়লাম সামনে যে বগির দরোজা পেলাম সেখানে। আমরা দুজন। দিদার আর আমি। উঠেই হাঁপ ছাড়লাম, যাক একটুর জন্য মিস করলাম না। এবার ধীরে সুস্থে সীট খুঁজে বের করা যাবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেনীর কেবিন খুঁজে পেতে অত কষ্ট হবে না। সুবর্ন এক্সপ্রেসে এই প্রথম যাত্রা। প্রচুর সুনাম শুনেছি এর। চড়লাম এই প্রথম। কিন্তু ট্রেন ছাড়তেই খেয়াল হলো আজকে লোকজন বড় বেশী। কি বার আজকে? রোববার হবে। সপ্তাহের প্রথম দিন।
শুরু করলাম বগিতে বগিতে হেঁটে আসন খোঁজা। ট্রেনটা লম্বায় মাইলখানেক হবে। এমাথা ওমাথা দুবার আসা যাওয়া করে পৌষের কঠিন শীতগুলো শরীরের ঘাম হয়ে আগুন ঝরাতে শুরু করলো। ব্যাপার কি। কোথাও আমাদের কাংখিত বগিটা পাচ্ছি না।
ভিআইপি কেবিনগুলো ইঞ্জিনের কাছাকাছি হয়। যাই ওদিকে। প্রথম শ্রেনীর আরামদায়ক সীটগুলো যেন ডাকছে। রাতের বাসে এসে সকালে নেমেছি ঢাকায়। সারাদিনের প্রচন্ড হাটাহাটিতে পা টনটন করছে। একটু শোবার অবসর। একটু খানি আরামের দরকার। আরাম তো এক্ষুনি পাবো। ওই তো শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের বিছানা আসছে আমার কাছে। এই ট্রেনের মধ্যেই কোথাও আছে। আশাবাদী দুজন মানুষ আমরা।
অবশেষে প্রথম শ্রেনী লেখা একটা বগি পাওয়া গেল। বাপরে, প্রথম শ্রেনীতেও এত ভীড়। বগিটার ভিআইপি লোকজনের চেহারা দেখে ভিড়মি খেলাম। সীটে পা তুলে বসে আছে লুঙ্গিপরা অনেক মানুষ। এদেশে নানান শ্রেনীর হাতে পয়সা চলে গেছে। দেশ তো ভালোই উন্নতি করেছে।
ট্রেনের সীট নাম্বার খুঁজতে গিয়ে টিটির দেখা পেলাম একজন। টিকেট হাতে নিয়ে উনি একবার আমাদের চেহারা আরেকবার টিকেটের দিকে পরখ করতে লাগলেন। বললেন, "আপনারা তো ভুল ট্রেনে উঠে পড়েছেন!!"
"এ্যাঁ?" মুখ হা হয়ে গেল আমাদের। কোন ট্রেনে উঠে পড়লাম? কোথায় যাচ্ছে ট্রেনটা?
কাধের বোঁচকা ছুড়ে ফেলে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে কাঁদতে ইচ্ছে হলো।
No comments:
Post a Comment