যদিও এটা খুবই জনপ্রিয় শহুরে মধ্যবিত্ত সংস্কৃতি কিন্তু পহেলা বৈশাখে পার্কে গিয়ে পান্তা-ইলিশ খাইনি কখনো। আমার কাছে এই ব্যাপারটা কেন যেন একটু মেকী মনে হয়। আমি জানিনা পার্কে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার মেকী সংস্কৃতি কখন থেকে শুরু, কিন্তু পান্তা খাওয়ার সামর্থ থাকলেও ইলিশ খাওয়ার সামর্থ্য যে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের নেই সেটা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হতে হয় না। ইলিশ মাছের দাম এমনকি মধ্যবিত্তেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবু পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়াকে যেভাবে দেশীয় সংস্কৃতির ফরজ হিসেবে দেখানো হয় মিডিয়াতে, আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়। দেশের বেশীরভাগ মানুষ যে খাবার খেতে পারে না সেটাকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে পালন করতে আমার একটু আপত্তি আছে।
এমনিতে নিন্মবিত্ত মানুষকে অভাবের কারনে সকালে পান্তা খেতে হয়। কিন্তু সেটা ইলিশ দিয়ে নয়, পেঁয়াজ, মরিচ বা আগের রাতের বাসী তরকারী দিয়ে। আর্থিক দুরাবস্থায় আছেন তেমন মানুষ মাত্রেই জানেন সকালে পান্তাভাত আর বাসী তরকারী খাওয়াটা কোন উৎসবের অংশ নয়, নিত্যদিনের দুঃখদৃশ্য। আমি সেই কঠিন মধ্যবিত্ত জীবন দেখে এসেছি বলে পান্তা ইলিশ উৎসবে কখনো যোগ দিতে পারিনি।
পহেলা বৈশাখ বা এরকম যে কোন উৎসব শ্রেফ শহুরে বাবুয়ানা যাতে আপামর দরিদ্র মানুষের অংশগ্রহন নেই। আমি শহর কিংবা গ্রামে খেটে খাওয়া মানুষদের এই উৎসবের বিষয়গুলির প্রতি প্রবল অনাগ্রহ দেখেছি। আসলেই দরিদ্র মানুষের কী কোন উৎসব আছে? সকল উৎসব পালা পর্বন শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের অধিকারে। তার মানে এই নয় যে আমরা এসব পালন করবো না। নিশ্চয়ই পালন করবো। তবে পালন করতে গিয়ে যেন ঐতিহ্যকে বিলাসিতা বানিয়ে না ফেলি। আমাদের সকল উৎসব ঐতিহ্য যেন আপামর জনগনের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে। উৎসব থেকে যারা আর্থিক সামর্থ্যের কারনে বাদ পড়ছে তাদের কথা যেন ভুলে না যাই।
No comments:
Post a Comment