১. (পুরোনো দিনের কথা) সারাদিনের অফিসের খাটাখাটুনি সেরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে কর্মক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলাম। সিলিং ফ্যানের হু হু হাওয়ার প্রানটা জুড়িয়ে গেল। বাসায় আসার জন্য বিকেল থেকেই মনটা উড়ু উড়ু করছিল। বউ বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে স্পেশাল খেতে যাবো। কী সুখী জীবন!
.
২. (এসেছে নতুন দিন) অফিসের কাজকাম সেরে সন্ধ্যায় বাসায় যাবার সময় হতেই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠতে থাকে। এত তাড়াতাড়ি সাতটা বেজে গেল! আরামের অফিসে থাকতেই তো ভালো লাগছিল। বাসায় গিয়ে করবো কি, আলো, বাতাস, বিদ্যুত, পানি কিছুই নাই। তবু বাসায় যেতে হয়। মোম জ্বালিয়ে বসে থাকি। বউ খেতে ডাকলো। দুর করে তাড়িয়ে দিলাম। কারেন্ট না এলে খাবো না। বারোটার দিকে কারেন্ট এলে মেজাজটা নিয়ন্ত্রনে আসে। তারপর খেয়ে শুয়ে পড়লাম। রাত সোয়া একটার দিকে ঘুমটা লেগে এসেছে অমনি ফ্যানের আওয়াজ থেমে গেল। গেছে!! শালার চুতমারানি এসেই চলে গেছে আবার!! এক সেকেন্ডে যেন আগুন লেগে গেল শরীরে। ঘাম ঝরছে বন্যার মতো। বিছানা ভিজে যাচ্ছে। উঠে বসলাম। দমবন্ধ লাগছে। জানালাটা হা করে খোলা, কিন্তু একফোঁটা বাতাস নেই বাইরে। রুমের মধ্যে যেন অক্সিজেনের অভাব পড়েছে। হাঁসফাস লাগছে।
.
৩. দুই নম্বরের বিদ্যুতহীনতার বাস্তবতা এখন সারাদেশে। আমিও সেই বাস্তবতায় ছিলাম দুবছর আগে। এখন বাধ্য হয়ে স্বার্থপরের মতো ফ্ল্যাটে উঠেছি একটু আরাম আয়েশে থাকার জন্য। যেখানে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুত পানির নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চয়তা। এরকম আরামীয় পরিবেশে যারা থাকেন তারা বাইরের দুঃসহ বিদ্যুতহীন পরিবেশ যে সেভাবে অনুভব করতে পারেন না সেটা নিজেকে দিয়ে বুঝতে পারলাম। তাই অভিজ্ঞতার আলোকে বিদ্যুত সমস্যার আশু সমাধানে একটা গ্যারান্টেড প্রস্তাব দিতে ইচ্ছে হলো। বিফলে মূল্য ফেরত।
.
৪. বাংলাদেশের বিদ্যুত সমস্যার সমাধানে যাদের কঠিন হস্তক্ষেপ প্রয়োজন তারা সবাই লোডশেডিং বিহীন জীবন যাপন করেন। যারা এরকম আরামীয় পরিবেশে থাকেন তাদের দেশের মানুষের বিদ্যুতহীনতার অবর্ননীয় কষ্ট অনুভব করতে পারার কথা না। সুতরাং ৫ নম্বর দফায় আমার প্রস্তাবটা পড়ুন।
.
৫ .সংসদ, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীসহ সাংসদ মন্ত্রীদের বাসভবন, বঙ্গভবন, ক্যান্টনমেন্ট সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় মাথারা যেখানে যেখানে রাতে ঘুমায় সেগুলোকে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ দু’মাসের জন্য রেগুলার বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থায় আনা হোক। মানে লোড শেডিং এর আওতা সম্প্রসারিত করা হোক সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় অবধি। ওখানেও সাধারন নগরবাসীর মতো বিদ্যুত আসবে-যাবে খেয়ালখুশী মতো এবং কোন জেনারেটর সংযোগ থাকবে না। ফলে বিদ্যুত চলে গেলে এসি লাইট ফ্যান কিছুই চলবে না।
.
৬. ইনশাল্লাহ, বিদ্যুত সমস্যার সমাধান জ্যৈষ্ঠ মাস ফুরানোর আগেই হয়ে যাবে!
.
৭. এই পরামর্শ ওপেন সোর্সকোড দ্বারা নির্মিত এবং এবসলিউটলি ফ্রী! তাই এর জন্য কোন রকম চার্জ দিতে হবে না। তবে এটা টেরাই করতে গিয়ে কেউ বিপাকে পড়লে লেখককে খুঁজবেন না।
No comments:
Post a Comment