প্রায়ই মেজাজ খারাপ থাকে বলে আমার এক মামা মেডিটেশান কোর্স করেছিল। কিন্তু কিছুদিন বাদে মেজাজ আবারো খটখটে। দোষ মামার না, রাস্তার। রাস্তায় নামলেই মামার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সকালে অফিস যেতে বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তার মোড়ে সীটের উপর পা তুলে বসে থাকা ঔদ্ধত্য রিকশাওয়ালাদের সারিবদ্ধ বসে থাকতে দেখে ভেতরটা চিড়বিড় করে ওঠে।
মামা প্রতিদিনকার মতো জিজ্ঞেস করে -'এই রিকশা যাইবা?'
প্রথমজন বলে 'না, যামু না'।
দ্বিতীয়জন বলে, 'না'।
তৃতীয়জন প্রশ্ন শোনার আগেই না-সূচক মাথা নাড়ে।
চতুর্থজন মামার প্রশ্ন শোনারই প্রয়োজনীয়তা বোধ করলো না। অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
প্রায় প্রতিদিন এ জাতীয় ঘটনা ঘটে। রিকশাগুলো খালি খালি দাড়িয়ে থাকে, কিন্তু যাবে না। কদাচিৎ দয়ালু রিকশাওয়ালা ভাগ্য জোটে। এরকম দশ বিশটা রিকশা 'যামু না' রিকশার পর একটা 'যাবো' রিকশা মেলে। একই দশা কিছু কিছু সিএনজি টেক্সীরও। আল্লাই মালুম কষ্ট করে এরা রাস্তায় আসে কেন 'যামু না' বলার জন্য।
মেজাজ ঠিক থাকার উপায় আছে? অফিসে নিত্যদিন লেট। বসের বকা চুপ করে হজম করে রাতে মামীর উপর এসে ঝাড়ে। মামীরও পাল্টা ঝাড়ি। সংসারে অশান্তি। মাথা কারো ঠিক থাকে না?
অথচ রিকশাওয়ালারা যদি 'যাবো' বলে এক কথায় রাজী হয়ে যেত, মামা ঠিক সময়ে অফিসে পৌছে যেতো, বসের সুনজরে থাকতো, বাড়ি ফিরে মামীর সাথে ঝাড়াঝাড়ি করতে হতো না, সংসারে সুখের ফল্গুধারা বইতো। ওই রিকশাওয়ালাগুলো যত নস্টের মূল। ওরা কেন যেন মামাকে দেখলেই বলে, 'যামু না'।
আমি অনেকদিন রিক্সায় চড়িনা। টেম্পুতে বাসে চড়ে ভার্সিটিতে যাতায়াত করি। মামীর কাছ থেকে ঘটনা শুনে ভাবলাম একদিন রিকশায় যাওয়া যাক।
বেরিয়ে প্রথম রিকশাওয়ালার কাছে যাবার সাথে সাথে রাজী। আমি তো খুশী, মামা আসলেই খিটখিটে বুড়ো হয়ে গেছে। কিন্তু আমি রিকশায় উঠে চালাতে বলতেই রিকশাওয়ালা বললো, 'আপা উঠবে না?'
'কোন আপা?'
বলে পাশে তাকিয়ে দেখি স্কুলের ড্রেস পড়া পনের ষোল বছরের এক কিশোরী দাঁড়িয়ে। আমার পেছন পেছন আসছিল আমি খেয়াল করিনি। রিকশাওয়ালা ভেবেছে আমি ওর সাথের। এই সময়ে বালিকা স্কুলের মেয়েরা বেরোয়। রিকশাওয়ালারা স্কুল বালিকাদের প্রতি আকৃষ্ট। সেকারনেই মামাকে অফিসে যাবার সময় প্রতিদিন শুনতে হয় - যামু না!!
No comments:
Post a Comment