আমি আদার বেপারীও না জাহাজের কারবারীও না। যদিও রপ্তানী বানিজ্যের সাথে সরাসরি কাজ করছি দীর্ঘদিন ধরে, পাটের কারবার করার সুযোগ হয়নি কখনো। আমার রপ্তানী চাপাবাজি শুনে এক বন্ধুর ধারনা হয়ে গেছে আমি বাংলাদেশের রপ্তানী বিষয়ে একজন দিকপাল। তাই সে কোনরকম রপ্তানীর সংবাদ পেলেই আমাকে ফোন দেয় সবার আগে। তৎমাফিক কয়েক বছর আগে একটা ইউরোপীয়ান কোম্পানী বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পন্য আমদানীতে আগ্রহের কথা শুনে বন্ধু খবরটা দিল জরুরী বার্তায়। পাট বানিজ্য সম্পর্কে আমার তেমন জানাশোনা নাই। তবু বন্ধুর গুতানিতে তাৎক্ষনিক ভাবে সুযোগ নেয়া যায় কিনা দেখার জন্য আমি খোঁজ নেয়া শুরু করি। আমার লাইনের কারো কাছে পাট বানিজ্যের কোন খবর নেই দেখে গুগল সার্চ দিলাম। কিন্তু অনুসন্ধানের ফলাফল দেখে আমি হতাশ। বাংলাদেশ নামক একটা দেশে যে বিপুল পরিমান পাট উৎপাদিত হয় ও রপ্তানী হয় তার কোন চিহ্ন দেখলাম না গুগল অনুসন্ধানে। ওখানে পাট নিয়ে যত ওয়েব সাইট দেখা গেল সব ভারতীয়। বাংলাদেশের কোন নাম নিশানা নেই পাটজাত পন্য সম্পর্কিত অনুসন্ধান তালিকায়। আশ্চর্য ব্যাপার তাই না? একমাত্র বিজেএমসি ছাড়া আর কোথাও কোন তথ্য পাওয়া যায় না পাট সম্পর্কে। আঁতিপাতি খুঁজে যত তথ্য পাওয়া গেল সব হলো কাঁচামাল পাটের খবর। পাটজাত পন্যের কোন এমন কোন কোম্পানী পাইনি যেখান থেকে পাটের তৈরী পন্য ক্রয় করে রপ্তানী করতে পারি। পাটজাত পন্য রপ্তানী করার মতো উল্লেখযোগ্য একটা প্রতিষ্ঠানও কী বাংলাদেশে নেই?
পাট নিয়ে মনজুরুল হকের সাম্প্রতিক একটা লেখা পড়ে নিজের অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করলাম। ভেবে কষ্ট লাগে আমরা বছর বছর পাট রপ্তানী করেছি ঠিকই, কিন্তু পাটের উন্নয়নে বৃটিশদের রেখে যাওয়া প্রযুক্তির বাইরে কিছুই করিনি। গত বিশ বছরে কতগুলো পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তার হিসেব করলে মাথা ঘুরে ওঠে। আমাদের পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যায়, আর ভারতে নতুন নতুন পাটকল গড়ে উঠে। পাটশিল্প টিকিয়ে রাখার দায়টা কার? পাটশিল্পের ব্যর্থতার দায়ভার কার- কৃষকের, শ্রমিকের, প্রযুক্তির নাকি ব্যবস্থাপনার? গভীর ভাবে ভেবে দেখা উচিত এই বিষয়টা।
পাটশিল্প উন্নয়নে ভারত যা করেছে আমরা কী তা করেছি? এমনকি করার চেষ্টা ছিল কিনা সেটার উত্তরেও বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন। সারা বিশ্বের পাট উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবর এক নম্বরে ছিল । অথচ বিগত কয়েক বছরে ভারত বাংলাদেশের জায়গা দখল করেছে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পাট উৎপাদন করেছে ৮ লাখ টন, আর ভারত করেছে ২১ লাখ টন। পাটশিল্পে পিছানোর প্রতিযোগিতায় আমরা এগিয়ে আছি।
জাতিসংঘ ২০০৯ সালকে International Year of Natural Fibres ঘোষনা করেছে। পাট অন্যতম একটি Natural Fibre। বাংলাদেশে পাট মন্ত্রনালয়ের কী কোন ভুমিকা আছে? পাট মন্ত্রনালয়ের যে ওয়েবসাইট আছে তা অপ্রবেশ্য। পাট গবেষনা কেন্দ্রের ওয়েবসাইটেরও একই অবস্থা। এতেই বোঝা যায় পাট বিষয়ে আমাদের মনযোগ কতটুকু।
পাট মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট http://www.motj.gov.bd/jute/index.html
পাট গবেষনা কেন্দ্র http://www.bangladesh.gov.bd/bjri/
অদুর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পাটের অবস্থা নিয়ে নীচের ভবিষ্যতবানী করা যায় কিনাঃ
১) পাট খুব শীঘ্রই ইতিহাস হয়ে যাবে
২) আমরা পাটজাত পন্য আমদানী শুরু করবো
No comments:
Post a Comment