Monday, April 27, 2009

নববর্ষ যদি শুরু হতো ফাল্গুনে বা অঘ্রানে?

একটা আজগুবি চিন্তা মাথায় এলো। বাংলা মাসের সিরিয়ালে পরিবর্তনের চিন্তা। গতকাল মধ্য এপ্রিলের প্রচন্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে রোদে জ্বলে পুড়ে নারী-পুরুষ- শিশু-বৃদ্ধ সবাই মিলে যেভাবে পহেলা বৈশাখ উৎসবে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখলাম, তাতে মাথার ভেতরে চিন্তাপোকাটা বললো সময়টা যদি একটু শীতময় হতো, আহা- কতো মজা করে এই উৎসবটা পালন করতে পারতো এরা। বাঙালী মধ্যবিত্তের সবচেয়ে বড় উৎসব এই পহেলা বৈশাখ। কিন্তু এই উৎসব পালন করতে গিয়ে গরমে ঘেমে নেয়ে বিশ্রী অবস্থা। মেয়েদের অবস্থা বেশী শোচনীয়। এই উৎসবকে আরেকটু আনন্দময় করতে, আরামদায়ক করতে আমরা কী করতে পারি?

বিধাতার কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করতে পারি, “হে খোদা আমাদের সবাইকে এসি গাড়ীর মালিক করে দাও তাহলে আমরা আরামে সারাদিন ঘুরে বেড়াতে পারবো।” আচ্ছা, বিধাতা নাহয় দিলোই এসি গাড়ী দিয়ে বড়লোক বানিয়ে। কিন্তু উৎসবে-মিছিলে-নাচে-গানে যোগ দিতে হলে তো এসি গাড়ীতে বসে থাকলে চলবে না। বাইরের গরমের আগুনে হলকা হজম করতেই হবে। আবারো বিধাতার কাছে আবেদন করতে হবে- “হে খোদা আমাদের হাটে মাঠে ঘাটে শীতল পরশ ঢেলে দাও। কিন্তু বিধাতার এই প্রস্তাবে রাজী হবার সম্ভাবনা কম। কারন আশেপাশের অন্য দেশ এতে আপত্তি জানাতে পারে।

তবে নববর্ষ পালনের সময়টা যদি একটু শীতের দিকে হয়, পহেলা ফাল্গুনে বা অগ্রানে যেরকম হালকা শীতের পরশ থাকে, তেমন চমৎকার দিনে যদি নববর্ষের উৎসব হয়, ভাবুন তো কেমন জমতো? বিধাতার কাছে একটু ঠান্ডা পরশের জন্য কেঁদে মরতে হতো না। বিধাতা তো নানান রকম ঋতু আমাদের দিয়েই রেখেছে, আমাদের দরকার সুবিধামতন বেছে নেয়া। যদি বৈশাখ মাসকে একটু শীতের দিকে এগিয়ে নেয়া যেত কিংবা শীতের দিকের কোন মাস দিয়ে বছর শুরু করা যেত, তাহলে? ফাল্গুন কিংবা অগ্রহায়নে যদি শুরু হয় বাংলা বছর, কেমন হয়? প্রস্তাবটা বেশী আজগুবি লাগে? লাগলে লাগুক। তবু গরমে হাসফাস করা নববর্ষকে আরেকটু আরামদায়ক করার জন্য বর্ষশুরু মাস পরিবর্তনের এই সুবিধাজনক আফাইট্টা প্রস্তাব করছি আমি। পোকাটা মাথার ভেতরে ঢুকেছে বাংলা সনের উৎপত্তির ইতিহাস পড়তে গিয়ে। নীচে খানিকটা দিলাম-

“আকবর নতুন সনপদ্ধতি চালু করার আগে বঙ্গে শক বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হতো। অনুমান করা হয়, শক রাজবংশকে স্মরণীয় করে রাখতেই ৭৮ খ্রীষ্টাব্দে প্রবর্তিত শকাব্দ (শক বর্ষপঞ্জির) থেকে বাংলা সনের নামগুলি এসেছে। বিভিন্ন তারকারাজির নামে বাংলা মাসগুলির নামকরণ করা হয় সেগুলো হলো: বিশাখা থেকে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা থেকে জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়া থেকে আষাঢ়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, অগ্রাইহনী থেকে অগ্রহায়ণ, পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফল্গুনি থেকে ফাল্পুন, এবং চিত্রা থেকে চৈত্র। অগ্রহায়ন মাসের নামের আরেকটি ব্যাখ্যা হলো: অগ্র অর্থ প্রথম, হায়ন অর্থ বর্ষ বা ধান। আগে এই মাস থেকেই বছর গণনা আরম্ভ হতো কিম্বা এই সময়ে প্রধান ফসল ধান কাটা হতো। তাই এই মাসের নাম হয় অগ্রহায়ণ।”

এ থেকে অনুমান করা যায় কোন না কোন এক সময়ে বাংলা বছর শুরু হতো অগ্রহায়ন মাস থেকে। অগ্রহায়ন মাসের উৎপত্তির দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটা তাই বলে। যদি অগ্রহায়ন মাস থেকে বাংলা নববর্ষ গননা শুরু হয় ব্যাপারটা দারুন হবে। চাইলেই করতে পারি আমরা। বাংলা তো আমাদের ক্যালেন্ডার। আমরা আমাদের পছন্দমত আরামদায়ক একটা মাসকে দিয়ে বছর শুরু করাতে পারি। এরজন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কোন বিল পাশ করাতে হবে না কিংবা সৃষ্টিকর্তার কোন অনুমোদন লাগবে না। এতে জাত ধর্ম সংস্কৃতির ক্ষতি হবারও কোন সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশ সরকার চাইলে সংসদে বিল পাশ করিয়ে এটা করতে পারে। কত আজেবাজে বিল পাশ হয় সংসদে। এই বিল পাশ করা কী খুব কঠিন হবে?

সংসদে এই প্রস্তাবটা উত্থাপন করার জন্য পাঠাতে চাই আমি। কিন্তু আমজনতা কী সংসদে কোন প্রস্তাব পাঠাতে পারে? পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় আসীন সরকার কি এই পরিবর্তনের ডাকে সাড়া দেবে?

[পুনশ্চ- যারা এই প্রস্তাবকে হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মনে করবেন, তাদের এই পোস্ট থেকে দুরে থাকার অনুরোধ করছি]

No comments: