পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়ে একটা সংক্ষিপ্ত এবং আনুমানিক বিশ্লেষন।
প্রধানতঃ দুটো দল ঘটনার সাথে যুক্ত থাকতে পারে। প্রথম দলটা ‘কাভার’, দ্বিতীয় দলটা ‘ষ্ট্রাইকিং ফোর্স’। প্রথম দলটা বৈষম্য বঞ্চনা ইত্যাদিতে দীর্ঘদিন ক্ষুব্ধ ছিল। দ্বিতীয় দলটা একটা উদ্দেশ্য সাধনে সুযোগের সন্ধানে ছিল। প্রথম দল দ্বিতীয় দলের আসল পরিচয় উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু জানে না। দ্বিতীয় দলটা আসল উদ্দেশ্য গোপন রেখে প্রথম দলের ক্ষোভের সাথে তাল মেলালো। দাবী আদায়ের নামে প্রথম দলকে ফ্রন্টলাইনে পাঠিয়ে ঘটনার সুত্রপাত করলো এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় দল গিয়ে ডিজিসহ প্রথম ধাক্কায় ১১ জন অফিসারকে হত্যা করলো।তারপর বাকীদেরকে খুজে খুজে হত্যা করলো।
কিন্তু দেশবাসীকে কৌশলে জানানো হলো বৈষম্য, বঞ্চনা, অবিচারের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ বিষ্ফোরিত হয়ে বিডিআর সেনারা বিদ্রোহ করেছে, সেনাবাহিনীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করেছে, দরবার হলে ডিজিসহ বেশ কয়েকজন অফিসারকে জিম্মি করেছে দাবী আদায়ের জন্য। টিভিতে বিদ্রোহী সৈন্যদের বক্তব্য প্রচারের পর জনসহানুভুতিও বাড়তে লাগলো বিদ্রোহের প্রতি। সরকারের প্রতিনিধি ভেতরে গেল আলোচনা করে ফিরে এল। আবার বিদ্রোহীদের ১৪ জন প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে দাবি দাওয়া দিল। সরকার দাবি মেনে সহানুভুতির সাথে সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করলো বিদ্রোহীদের প্রতি। কিন্তু অস্ত্র সমর্পনে গড়িমসি করতে দেখা গেল। রাত কেটে গেল প্রহসনে। পরের দিনও যেতে লাগলো সমাধান ছাড়া। সেনাবাহিনীর ট্যাংক বহর রওনা দেবার খবর পেয়ে সাদা পতাকা উড়িয়ে দিল বিডিআর।
ততক্ষনে দ্বিতীয়পক্ষ উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলেছে। তারা শ খানেক মেধাবী অফিসারকে খুজে খুজে হত্যা করে ফেলেছে। হয়তো সে সময় প্রথম দলকে লুটপাটের দিকে লেলিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় দল লাশগুলো কিছু নর্দমায় কিছু গনকবরে ঢুকিয়ে দেয়। হয়তো প্রথম দল জানেও না কতজনকে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো যখন জেনেছে তখন দেরী হয়ে গেছে। মুখে রুমাল দিয়ে টিভিতে বিক্ষোভ দেখানো মুখগুলো মনে হয় প্রথম দলের বোকা বিপ্লবীদের। দ্বিতীয় দলের চেহারা বোধহয় মিডিয়ার কোথাও দেখা যায় নি, যার ঘটনা ঘটায় তারা সবসময় আড়ালেই থাকে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম দুঃসাহসী হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ড শেষে তারা সামরিক পোষাক খুলে তৈরী ছিল পালিয়ে যাবার জন্য। সংলাপের দরকষাকষির প্রহসনের অবকাশে প্রথম দলের হাতে সাদা পতাকা দিয়ে দ্বিতীয় দল পগার পার, এবং এরপর প্রথম দলের বিচক্ষনেরাও পালিয়ে যায়। যে দুইশজনকে শেষ পর্যন্ত ওখানে পাওয়া গেছে ওরা প্রথম দলের সর্বোচ্চ বোকারা যাদের পালানোর মতো বুদ্ধিও অবশিষ্ট ছিলনা। প্রথম দল ছিল বোকা বিপ্লবী, যাদের মাথায় নুন রেখে বরই খেয়ে চলে গেছে অন্য একটা ভিন্ন মিশনে থাকা দ্বিতীয় দলটি। সেটির অস্তিত্ব খুজে বের করা দুষ্কর হবে।
কারা কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত? শুধুই বিডিআর জওয়ান? সেনা অফিসারদের কেউ কী জড়িত থাকতে পারে না যারা ভিন্ন বিশ্বাসে লালিত? বাংলাদেশের জন্মে যারা অবিশ্বাস করে, তেমন মোনাফেক সেনা অফিসার কী নেই? কতজন তারা? কারা সেই অফিসার যাদের জন্য বাংলাদেশের কোন সেনানিবাসে সকল প্রগতিশীল প্রত্রিকার প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল? এই চক্রান্তের শিকড় আরো কত গভীরে লুকিয়ে আছে। নাট্যচিত্রের আংশিক বাস্তবায়নেই বাংলাদেশ বিপর্যস্ত, বাকীটা কোন মঞ্চে বাস্তবায়িত হবে? সেনাকুন্ঞ্জে না সংসদ ভবনে? মোনাফেক মীরজাফর পরিবেষ্টিত বাংলাদেশে কোন স্থান নিরাপদ নয়, সেটা বুঝতে বাকী নেই আর। এই ঘটনা ভেতরের কেউ না কেউ পূর্বেই জানতো, হয়তো কোন কোন অফিসারও অবগত ছিল। সেদিনের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিল কোন কোন অফিসার? তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব? সম্ভব হলে কিছু তথ্যসুত্র সেখান থেকেই বেরুতে পারে।
পিলখানা হত্যাকান্ডের সেই শকুনদের, তার পেছনে থাকা শকুন চালকদের, তার পেছনের পরিকল্পকদের খুজে বের করে নিকেশ করতেই হবে, নাহলে বাংলার মাটি এভাবে রক্তে লাল হতেই থাকবে বারংবার। বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশে ছোবল মেরেছে শকুনের দলটি। তবে পাল্টা ছোবল মারতে হুশিয়ার হতে হবে সেনা বাহিনীকে। এমনিতেই ক্ষতি যথেষ্ট হয়েছে, পাল্টা ছোবল ভুল মানুষের উপর পড়লে, মজা লুটবে ৩য় পক্ষ। ৭৫ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সবগুলো সামরিক ঘটনায় লাভবান হয়েছে ৩য় কোন একটা পক্ষ। এবারও যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়।
No comments:
Post a Comment