Thursday, January 16, 2014

১৬ জানুয়ারী ২০১৪: স্কুল বালকের প্রথম দিন

আজ আমাদের পুচকা শিহানের শিক্ষাজীবনের অভিষেক হলো। প্রথম স্কুল দিবস নিয়ে যে টেনশান ছিল সেটা কেটেছে ওর নিরুপদ্রপ ক্লাস প্রবেশে। ভয় ছিল সে ঢুকবে কিনা। ব্যাটা কারো সাথেই কথা বলে না। বাসায় অতিথি এলে মুখে তালা মেরে চুপপপপ হয়ে যায়। যে কেউ ভাবে কী সুশীল একটা ছেলে। কিন্তু ভদ্রলোক যে কি পরিমান সাইলেন্ট বিটলা সেটা পরিবারের লোকজনই জানে। প্রথমদিন সে কোনমতে ক্লাসে ঢুকলেও ভয়ে নাকি তার কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল। কান্না আসছিল খুব, কিন্তু সামলে রেখেছে। এটুকুতেই আমি সন্তুষ্ট। আমি তার জায়গায় হলে পালিয়ে চলে আসতাম। ওশিনও প্রথম কদিন ঢুকেনি।

ওশিনও এই স্কুলে পড়ে। স্বীকার করতেই হয় বাপের চেয়ে তাদের দুজনের পারফরমেন্স অনেক ভালো। তাদের বাপ ক্লাস ওয়ানে একদিনও ক্লাস করে নাই। ক্লাস টুতেও কদিন করেছে হাতে গোনা যাবে। ক্লাস থ্রিতে তো চরম ফাঁকিবাজি করে ধরা পড়ছিল। রীতিমত স্কুল চুরি করেছিল। আগ্রাবাদ স্কুলের বদলে এক বন্ধুর সাথে পাশের কলোনীতে টিএণ্ডটি স্কুলে গিয়েছিল ক্লাস করতে। অবশ্য বাপ এখন বুড়াকালে সেই দুষ্কর্মের স্মৃতিচারণ করে বিশেষ পরিতৃপ্তি পেয়ে থাকে।

ওদের স্কুলটি বাচ্চাদেরকে বিশেষ কায়দায় পড়ালেখা করায়। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালন করা বাংলা মাধ্যমের স্কুল খুঁজতে গিয়ে এর সন্ধান পাই। আনন্দের সাথে পড়াশোনা এখানকার অন্যতম চরিত্র। 'ফুলকি' পরিচালিত স্কুলটার নাম 'সহজপাঠ'। 'ফুলকি' হলো চট্টগ্রামের চার দশক পুরোনো একটা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। নন্দনকাননে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি ফুলকি স্কুল বলে বেশী পরিচিত। নিরিবিলি পাহাড়ঘেরা পরিবেশটা মুগ্ধ করে।

শিহানের ক্লাসের নাম 'খেলাপড়া'। এই ক্লাস আগে ছিল না। এ বছর থেকে শুরু করেছে। খেলাপড়া অন্যস্কুলের প্লে। এই স্কুলে নার্সারিকে বলে, কুঁড়ি। কেজিকে বলে, 'কলি'। চমকপ্রদ সব নাম। এখানকার পড়াশোনার ধরণটাও চমৎকার। যে কোন লেখা শেখানো হয়  ছবি আঁকার মতো। একটা সংখ্যা লিখে বলা হবে রং করো। বাচ্চারা রং নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। ফলে খেলতে খেলতে পড়া শেখা হয়। ওশিনও এই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠলো এবার। ওশিন শুরু করেছিল 'কুঁড়ি' ক্লাস থেকে।

পুচকার আজকের দিনতো কোনমতে কাটলো। সামনের দিনগুলোতে কি করে সেটার জন্য চিন্তায় আছি।


No comments: