১.
অনন্তকাল সুখী জীবন কাটায় না কোন মানুষ। স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের আয়ু খুব সীমিত। বাজেট ফুরোলেই সব শেষ। অর্থ আয়ু সবকিছুর বাজেটই সীমিত। বিশ বছর আগে একবার চেয়েছিলাম আয়ু হোক ৩০ বছর। তারও পনের বছর পার হয়ে গেছে। এখনো আছি। দীর্ঘকাল বেঁচে থাকাটা অভিশাপ। কিন্তু এই বর্তমান আমার সুখের সময়। মাঝে মাঝে মনে হয় এটাই আমার জীবনের শীর্ষসুখ। এতটুকুতে যা পেয়েছি সেই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পাওয়া। এরপর পাওয়ার স্কেল শুধু কমতেই থাকবে। কমতে কমতে একসময় শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। তখন দেখবো জীবনে কিছুই অর্জন করিনি। বঞ্চনার কষ্টে আজকের এই অর্জনের স্মৃতিগুলোকে অলীক মনে হবে। ৬০ বছর আয়ুপ্রাপ্ত মানুষদের কি তেমনি মনে হয়? আমি ষাটের আয়ু পেলে কী করবো? অভিশাপ হয়ে বেঁচে থাকবো? সৃষ্টিশীল কোন কাজ করিনি জীবনে। যে সামান্য লেখালেখি করি সেটা শুধু নিজের জন্যই। নিজেকে ইতিহাসের খোরাক বানাবার তাগিদে। এখনো সুখীজীবন যাপন করছি বলেই লেখালেখি করতে পারছি। এমনকি দুঃখবিলাসী গানও গাইতে পারি। যখন সত্যি সত্যি দুঃখের জীবন শুরু হবে, তখন লিখে জানান দেবার অবকাশ থাকবে কি? নাহ এসব লেখা ঠিক হচ্ছে না। আমি কি নৈরাশ্যবাদী হয়ে পড়ছি?
অনন্তকাল সুখী জীবন কাটায় না কোন মানুষ। স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের আয়ু খুব সীমিত। বাজেট ফুরোলেই সব শেষ। অর্থ আয়ু সবকিছুর বাজেটই সীমিত। বিশ বছর আগে একবার চেয়েছিলাম আয়ু হোক ৩০ বছর। তারও পনের বছর পার হয়ে গেছে। এখনো আছি। দীর্ঘকাল বেঁচে থাকাটা অভিশাপ। কিন্তু এই বর্তমান আমার সুখের সময়। মাঝে মাঝে মনে হয় এটাই আমার জীবনের শীর্ষসুখ। এতটুকুতে যা পেয়েছি সেই সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পাওয়া। এরপর পাওয়ার স্কেল শুধু কমতেই থাকবে। কমতে কমতে একসময় শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। তখন দেখবো জীবনে কিছুই অর্জন করিনি। বঞ্চনার কষ্টে আজকের এই অর্জনের স্মৃতিগুলোকে অলীক মনে হবে। ৬০ বছর আয়ুপ্রাপ্ত মানুষদের কি তেমনি মনে হয়? আমি ষাটের আয়ু পেলে কী করবো? অভিশাপ হয়ে বেঁচে থাকবো? সৃষ্টিশীল কোন কাজ করিনি জীবনে। যে সামান্য লেখালেখি করি সেটা শুধু নিজের জন্যই। নিজেকে ইতিহাসের খোরাক বানাবার তাগিদে। এখনো সুখীজীবন যাপন করছি বলেই লেখালেখি করতে পারছি। এমনকি দুঃখবিলাসী গানও গাইতে পারি। যখন সত্যি সত্যি দুঃখের জীবন শুরু হবে, তখন লিখে জানান দেবার অবকাশ থাকবে কি? নাহ এসব লেখা ঠিক হচ্ছে না। আমি কি নৈরাশ্যবাদী হয়ে পড়ছি?
২.
খানিক আগে পুরোনো এক বন্ধুর ফোন পেলাম। স্কুলে একসাথে পড়েছি। ঢাকায় চাকরী করে। স্বচ্ছল ঘরের সন্তান। প্রচুর জমিজমার মালিক উত্তরাধিকার সুত্রে। স্ত্রী পুত্রকন্যা নিয়ে সুখেই ছিল। সে জানালো নদীর ভাঙ্গনে তাদের সমস্ত ঘরবাড়ি জমিজমা চলে গেছে। তার গ্রামের বাড়ি বলতে আর কিছুর অস্তিত্ব থাকলো না। ঢাকার চাকরীটা আছে বলে চলছিল। এখন শোনা যাচ্ছে তার অফিসও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগামী মাসের পর চাকরীও থাকবে না। বউ একটা স্কুলে চাকরী করে, সেটাই ভরসা এখন। খুব টেনে হিচড়ে চলতে হবে। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল শুনে। আমার যে হতাশা তার চেয়ে বহুগুন বেশী ওর সমস্যা। বন্ধুর এই সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে আর ব্যক্তিগত নৈরাশ্যবাদ গ্রাস করতে পারে না।
মনে মনে বলি আমি আছি বন্ধু, তুই ভাবিস না।
৩.
আমার বন্ধুভাগ্য খুব ভালো। সেই স্কুলজীবন থেকে এখনো পর্যন্ত আমি বন্ধুদের অগাধ ভালোবাসা পেয়ে এসেছি। এত ভালোবাসা পাবার যোগ্যতা আমার নেই। তবু সবচেয়ে কাছের বন্ধুর কাছে মনে মনে অভিমান করি কোন কোন সময়, আমাকে তুই কম ভালোবাসিস! কী অন্যায্য ব্যাপার না? তবু এরকম অন্যায্য দাবী তো সত্যিকারের বন্ধুর কাছেই করা যায়।
৪.
রুনা লায়লার একটা গান আছে দি রেইন ছবিতে। 'পরদেশী মেঘ রে, আর কোথা যাস নে। বন্ধু ঘুমায় দে ছায়া দে রে। বন্ধু ঘুমায় রে'। ছেলেবেলা থেকে রেডিওতে শুনে শুনে গানটা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। তখনো বোঝার বয়স হয়নি পরদেশী মেঘকে উদ্দেশ্য করে বন্ধুকে কেন ছায়া দিতে বলছিল সে। তার বহুবছর পর বন্ধুর কল্যাণে গানটি খুঁজে পাই ইউটিউব থেকে। ছেলেবেলায় শোনা গানটি দেখার সুযোগ পেলাম এই বুড়ো বয়সে। বন্ধুর কাছে তখন খুব কৃতজ্ঞ হয়েছি। হারানো সময় খুঁজে দিতে বন্ধুর কোন বিকল্প হয় না।
৫.
পরিবারের বাইরে আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয় বন্ধু। বন্ধুর এই ঋন আমার কোনদিন শোধ করা হবে না। এই বিষয়ে ঋনী থাকাই আমার অগ্রাধিকার।
No comments:
Post a Comment