Saturday, January 18, 2014

পশ্চিমা বাতাসের কবলে বাংলাদেশ

-শুনেছো কথাটা?

-কোন কথা?

-ঐ যে কালকে আমেরিকা যা বললো

-হ্যাঁ শুনেছি

-শিরোনামটা খুব অস্বস্তিকর। আমেরিকা জুনের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন চায়। পরাশক্তিগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত। বাংলাদেশে যখন বছরের পর বছর অনির্বাচিত সরকার ছিল তখন কোন মাথাব্যথা ছিল না।

-মাথা ব্যথা তো থাকবেই। এটা কোন ইলেকশান হলো? এমনকি আমি যাকে ভোট দিতে চেয়েছিলাম সেও ভোটে দাঁড়ালোই না।

-তাহলে তোমার আফসোসের কি আছে।

-আফসোস হলো যে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তাদের চেয়ে আমার প্রার্থী অনেক বেশী যোগ্য ছিল

-যোগ্য হলে দাঁড়ালো না কেন।

-দাঁড়ায়নি নেত্রী অনুমতি দেয়নি বলে। এখন বলো আমেরিকার কথা নিয়ে তোমার আপত্তি কেন?

-বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায় আছে সেটি যেমন নির্বাচন করেই আসুক না কেন, এটি একটি বৈধ সরকার। এই সরকারে আপত্তি থাকলে সেটা জনগণ জানাবে। আরেকটা নির্বাচন চাইলে জনগণ চাইবে। আমেরিকা নির্বাচন চাইবার অর্থটা কি এখানে? আমেরিকা আমাদের কী?

-আমেরিকা আমাদের বড় ভাই কাম বন্ধু

-বড় ভাই কি অন্যায় আবদার করতে পারে?

-অন্যায় কোথায় দেখলা?

-অন্যায় না? আমার বউয়ের জন্য আমি কি শাড়ি কিনবো সেটা কি বড়ভাই বলে দেবে?

-তোমার বউ যদি ভাসুরের কাছে নালিশ করে শাড়ি পছন্দ হয় নাই বলে, তাহলে বড় ভাইয়ের উপায় কি?

-বউয়ের না হয় আক্কেল নাই। তাই বলে বড় ভাইও বেয়াক্কেলের মতো কথা বলবে?

-বেয়াক্কেল কেন হবে? বড় ভাই একটা নালিশ শুনে মন্তব্য করেছে মাত্র।

-মন্তব্য বলে মনে হয়নি আমার। দাবী বলেই মনে হয়েছে।

-বড় ভাই কি কোন দাবী করতে পারে না?

-আমি কোন তাত্ত্বিক আলোচনায় যাবো না। কিন্তু বড় ভাইয়ের আবদারের সীমানা তিনি লংঘন করেছেন এটা মানতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মতামত নিয়েই তো এই দেশের চলার কথা, এটাই তো গণতন্ত্রের নিয়ম, নাকি? বাংলাদেশের মানুষ যদি এই যেনতেন নির্বাচন মেনে নিয়ে চুপ করে থাকে আগামী পাঁচ বছর, তাহলে আমেরিকার সমস্যা কি?

-আমেরিকার সমস্যা হলো এই নির্বাচন বিরোধী দল মেনে নেয়নি। যাদের উপর আমেরিকার স্বার্থের বিনিয়োগ ছিল। সম্ভাব্য ক্ষমতাসীন দলের সাথে আমেরিকার কিছু বোঝাপড়া থাকে। সেই বোঝাপড়ায় ভেজাল লেগে গেছে এই ফলাফলে।  তাছাড়া সাধারণ মানুষও তো সর্বাত্মকভাবে নির্বাচন মেনে নেয়নি। আমেরিকা সেই সুযোগও নিয়েছে।

-এই নির্বাচন অনেক মানুষ মেনে নেয়নি, কথা সত্য। কিন্তু মেনে না নিলেও বিক্ষোভে তো ফেটে পড়েনি। সেরকম হলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসতো না? আর্মি পুলিশ এসব দিয়ে কি জনতার আন্দোলন থামানো যায়? আর্মি পুলিশ তো এরশাদেরও ছিল, আইয়ুবেরও ছিল, খালেদারও ছিল। কিন্তু মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ফেটে পড়েছে তেমন ঘটনা কই? সেরকম একটাও দেখি না। কিন্তু ভেবে দেখেছো কেন ফেটে পড়েনি? ফেটে পড়েনি কারণ যেসব মানুষ আওয়ামীলীগ পছন্দ করে না, তারাও বিএনপি জামাতের কাজকর্ম সহ্য করতে পারেনি। বিএনপি জামাত যে আন্দোলন করেছে সেই ইস্যুর যতটা জনপ্রিয়তা ছিল তাও নষ্ট হয়ে গেছে আন্দোলনের সহিংস ধরণে। আন্দোলনের নামে যা করেছে তার প্রায় সবটাই নাশকতা। ওটা ছিল দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বিএনপি এমন একটা দলের কাছে আন্দোলন বিক্রি করেছে যে দলটা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। যে দলটি বাংলাদেশের মানুষকে শত্রুদেশের মানুষ মনে করে। সেরকম একটা নৈরাজ্যবাদী দলটাকে আন্দোলন চালাবার দায়িত্ব দিয়ে চুড়ি পড়ে ঘরে বসে ছিল ওরা। এই বিএনপি মানুষের কাছ থেকে দূরে তো গেছেই, এমন কি জিয়ার বিএনপির কাছ থেকেও দূরে চলে গেছে।

-তোমার আসল কথাটা খুলে বলো তো? কি বলতে চাও তুমি?

-আমি বলতে চাই বিএনপি তার আশির দশকের চেহারায় ফিরে আসুক। ওই বিএনপিকে বিরাট অংশের মানুষ সমর্থন করেছিল। বর্তমান বিএনপিকে মানুষ কাছে টানতে পারছে না জামাতপ্রীতির কারণে। আদর্শিকভাবে বিএনপির যেটুকু স্বতন্ত্র চেহারা ছিল গত কয় বছরে তা প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে। লক্ষ্য করে দেখবে বিএনপির সমর্থক বলে আলাদা কোন লোক নেই। আজকাল বিএনপি সমর্থক বলতেই তারা জামাতেরও সমর্থক। এই বিএনপি বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসা মানে জামাত ক্ষমতায় আসা।

-ইউরোপ আমেরিকা তাই তো বলেছে জামাতকে বাদ দিয়ে আসতে হবে। ঠিক তোমার কথারই প্রতিধ্বনি যেন।

-কিন্তু আমার স্বার্থ আর ইউরোপ আমেরিকার স্বার্থ এক না। পশ্চিমারা তৃতীয় বিশ্বে নানান জাতের প্রাণী পোষে। টিয়া ময়না হরিন বাঘ ভালুক সাপ থেকে সবকিছু, যখন যেটা কাজে লাগে। যখন যাকে দরকার তাকেই সুশীল তাকেই মডারেট উপাধিতে ভুষিত করে। এমনকি সেটা কাল কেউটে সাপ হলেও।

-তুমি খুব জটিল চিন্তা করো। আমি অত জটিল চিন্তা পারি না। আমি সিনেমা দেখি, বই পড়ি, সংসার করি আর মাঝে মাঝে তোমার সাথে ঝগড়া করি। পৃথিবীটা অত জটিল কিছু না। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে থাকা ভালো। আমি তাই থাকি।

-তোমার মতো সুখী এদেশে আর কে আছে। স্বামীর অগাধ সম্পদের পাহাড়ের উপর বসে বাতাস খাওয়া। প্রাডো গাড়ির তেল পুড়িয়ে সমাজ সেবার সেমিনার করা আর  মাঝে মাঝে বিনামূল্যে হিতোপদেশ বিতরণ করা।

-জায়গামতো খোঁচাটা তুমি ভালোই পারো। থাক আজ আর ঝগড়া করতে পারছি না। বাচ্চাকে আনতে যেতে হবে স্কুলে। পরে কথা হবে। তুমি ভালো থেকো।

-তুমিও ভালো থেকো।

No comments: