Thursday, December 12, 2013

১২ ডিসেম্বর ২০১৩ : আশংকার দিনগুলো

১.
এখন দিনগুলো স্বাভাবিক না। গত দেড় মাস যাবত অস্বাভাবিক রুটিনে দিনযাপন করছি। বিশেষ করে অফিসে আসা আর যাওয়া। অফিস বাসা এই দুই গন্তব্যের বাইরে আর কোথাও যাই না। যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্বিসহ হয়ে গেছে হরতাল অবরোধে। আরো দীর্ঘসময় চলতে পারে এরকম অচলাবস্থা। এর চেয়ে আরো খারাপ অবস্থারও আশংকা করা যায়।

আমরা এখনো ভাগ্যবান, বড় কোন ঝামেলায় পড়িনি। কিন্তু যে কেউ যে কোন সময় পড়ে যেতে পারে। বোমা গুলি ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ এখনো সরাসরি স্পর্শ করেনি। বাড়ি ফিরতে গিয়ে পথের মাঝে আটকে থাকিনি দুদিন। অনাহারে অর্ধাহারে পথে পথে ঘুরিনি। আমার বাসাটা শহরের ভেতরে। আমার সব স্বজনেরা এখানেই। আমাকে কাজের প্রয়োজনে কিংবা স্বজনের প্রয়োজনে ঢাকা চট্টগ্রাম করতে হচ্ছে না। অথবা ভিন্ন ভিন্ন জেলায়ও ছুটতে হচ্ছে না। যাদের প্রিয়জন ভিন্ন জেলায়, যারা ভিন্ন শহরে চাকরী করছে, তারা কেউ বাড়ি ফিরতে পারছে না নিরাপদে। প্রত্যেকের জীবন অনিরাপদ হয়ে গেছে।

দেশের কিছু আনাচে কানাচে পাকিস্তান আফগানিস্তানের দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সেই দুর্গন্ধ বিকট আকার ধারণ করলে এই দেশে বাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই গুমোট অশান্তি কবে কাটবে আমরা এখনো জানি না। দেশটা অশুভ শক্তির ছায়ার নীচে বাস করছে। এখানে সবচেয়ে বড় ভয় হলো কোন কিছু না জেনে, কোন কিছুতে জড়িত না থেকে খামাকা ক্রসফায়ারে পড়ে যাওয়া। বিনা কারণে মৃত্যুবরণ করাটাও বিব্রতকর।

২.
চট্টগ্রামে এখনো শীতের তেমন বাড়াবাড়ি নেই। মোটামুটি স্নিগ্ধ রোদ্রোজ্জল আবহাওয়া বলা যায়। পৌষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আর দুদিন বাদেই। আজ অঘ্রানের ২৮ তারিখ। বাংলাদেশে শীত পড়ে এক মাস এবং সেটা পৌষেই। পৌষ এলেই পিঠাপার্বন। পৌষ এলেই শীতের চুড়ান্ত অভিষেক। পৌষে আমার প্রিয় কুয়াশা চাদর। গত পৌষে ঢাকায় গিয়ে চরম শীতের কাঁপুনিতে সপরিবার ঠকঠক করেছিলাম ঢাকা চিড়িয়াখানার সবুজ বনানীতে। তবু এত সুন্দর, এত ভালো লাগা ছিল ওশিন শিহানকে নিয়ে প্রথম এক বনভোজনে। এবার আর সেরকম দিন কাটাবার সুযোগ হচ্ছে না।

৩.
কিছু কিছু অপ্রকাশিতব্য ঝামেলা মাঝে মাঝেই ঘোট পাকায়। আজও ছিল। এরকম ব্যাপারগুলো কাজের গতি ব্যহত করে, মনযোগ নষ্ট করে, অথচ আর কারো কাছে উল্লেখযোগ্য নয়। দার্শনিক হলে সুবিধা হতো। দার্শনিকেরা এরকম ব্যাপারগুলোকে কোন না কোন ছকে ফেলে তাতেই একটা ফরমূলা আবিষ্কার করে বসে। মানুষ একটা জটিল প্রাণী। তাই মানুষকে কেউ পুষতে পারে না। বরং মানুষই অন্য প্রাণীকে পোষে, সে হাতি হোক বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার হোক।

৪.
স্মার্টনেস কাকে বলে? চকচকে নতুন জামাকাপড় পরাকে স্মার্টনেস বলে নাকি খুব চোস্ত ভাষায় আর্ট সহকারে বক্তৃতা করাকে স্মার্টনেস বলে?  কেউ কেউ পোষাকে বা কথাবার্তায় স্মার্ট হয় বটে। কিন্তু সবাইকে চকচকে জামাকাপড়ে মানায় না, সবাই চোস্ত ভাষায় গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। আমার পোষাকও চকচকে না, ভাষাও চোস্ত না। তাই আমার মতে নিজের যা আছে তাকে মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার নামই স্মার্টনেস। এটা কি সুবিধাবাদী সংজ্ঞা হয়ে যায় নাকি?

No comments: