Thursday, December 19, 2013

ও গানঅলা, আরেকটি গান গাও


আমাকে প্রথম যিনি সুমনের গান শুনিয়েছিলেন(তোমাকে চাই) তিনি এখন আমার দিগন্তের অন্য প্রান্তে। সুমনের গান ১৯৯৩ সালে প্রথম শোনা হয়।  শিমুল মোস্তফার কন্ঠে আবৃত্তিও শুনি এই গানের এবং কবিতার।

সুমন আমাকে বেশ কিছুদিন আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। গানের একটা নেশা আছে। একেক সময় একেকজন সেই নেশায় ডাকে। সুমনের সময়টাও আমার ভাঙচুরের একটা গুরুত্বপূর্ন সময়।

দীর্ঘদিন সুমনের গান শুনে শুনে যে ভাবনাগুলি খেলা করেছে সেই ভাবনার একটা অংশ পেয়ে গেলাম সচল মাহবুব লীলেনের এই লেখায়

লীলেন বলেছেন,
.....সুমনের গানগুলো শুনলে মনে হয় কোথাও একটা দেশ ছিল। ছিল একটা জীবন। যে জীবন ফেলে এসেছে সবাই অথচ ফেলে আসতে চায়নি কেউই.......

....গতি ও গতিহীনতায় আক্রান্ত বাংলাদেশের মানুষের কাছে সুমন এক অব্যক্ত অনুভূতির প্রকাশ। সুমনের চরিত্রগুলোর অনেক কিছুই আছে তবু যেন অনেক কিছু নেই। অনেক কিছু পেয়েও যেন অনেক হারিয়েছে তারা। অথবা পাবে না কোনো দিন.....

....সুমনের গানের আরেকটা প্রধান দিক হল এর বাউলিয়ানা। সবগুলো গানের আড়ালেই যেন কোথাও একটা বাউল সুর বেজে ওঠে। একটা দুঃখী ছিন্নমূল বৈরাগীর চেহারা ভাসে.....


আমি যখন একটা অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম ১৯৯৫ সালে, তখন একবার রাতের বাসে ঢাকায় গিয়ে মামুনের ফকিরাপুলের বাসায় হাজির হই ভোরবেলা। সে অফিসে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছিল। আমি নাস্তা করে ঘুমোবো। ওর ব্যাচেলর বাসাটি তখন আমাদের ঢাকার সরাইখানা। মামুন অফিসে যাবার সময় আমার কানে যে হেডফোনটি তুলে দিয়েছিল তাতে বাজছিল "ও গান অলা"। আমি সেদিন থেকে সুমনের গানের আরো গভীরে ঢুকে গেলাম।

সুমন ও নচিকেতা। নব্বই দশকে এই দুজনের গান একই সাথে জনপ্রিয়তা পায় দুই ধরনের শ্রোতার কাছে।  তবে নচিকেতা আমাকে টানেনি একদমই। আমাকে টেনেছিল সুমন। সুমন আমার কাছে ছিল নিঃসঙ্গ নাগরিক কবি। আমি নব্বই দশকের সুমনকে মিস করি।

সুমন এখন অনেক বদলে গেছে। বদলে যাওয়ার অনেকটাই ভালোলাগা ক্ষুণ্ন করেছে। তবু সুমনকে এখনো বলি, আরেকটা গান গাও, তুমি যা গাও তাতেই প্রচ্ছন্ন সুর ফুটে ওঠে-


শেষ পর্যন্ত তুইও?
আমি খুব সাবধানে রাস্তা মেপে হাঁটিনি কখনো
খালিপায়ে, জুতোপায়ে
ধুলোমাখা পথ ধরে
এলোমেলো হেঁটে গেছি আপন আনন্দে।
যে বাতাসে সীসার গন্ধ
সে বাতাসে আমি হাস্নাহেনার ঘ্রাণ,
যে আকাশের ওজোন স্তরে বিষবৎ ফুটকি
সে আকাশে স্নিগ্ধ মেঘের ছোঁয়া,

আমি জোর দাবীতে বৃষ্টি নামিয়েছি অঝোর ধারায়,
সিক্ত হয়েছি, ভেসে গিয়েছি, ভাসিয়ে নিয়ে গেছি, শুদ্ধ হয়েছি, অশুদ্ধ করেছি,
কখনো হাঁটুজল ভেঙ্গে অন্যের সাজানো বাগানেও ঢুকে পড়েছি।
জেনেশুনে আমি নষ্ট করেছি ফুলের কেয়ারী, ঢিল ছুড়ে অকালপক্ক ফল ঝরিয়েছি
অন্যায় সাগরের বন্যায় ভেসে গেছি অবাধ অগাধ
তবু আমি বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ করিনি।
আমি আমার সকল সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছিলাম
তোরই জন্য- তোরই জন্য -তোরই জন্য........
তবু একদিন আর সবার মতো তুইও প্রবল ক্ষেদে আঙুল তুলে বললি - তুমি উচ্ছন্নে গেছো!!

আহত হয়েছি, অবাক হইনি।
জানা ছিল, একদিন তাই বলবি।
তবু আমি কেন যেন উচ্ছন্নের পথকেই বেছে নিয়েছিলাম।


ও গানঅলা, এবার এই গানটি গেয়ে শোনাও। নাগরিক কষ্ট বিলাসে আমি বুঁদ হয়ে আবারো তোমার গান শুনি। এবার কেউ পাশে নেই, তবু গানতো রয়েছেই।

No comments: