Tuesday, December 24, 2013

২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ স্বচ্ছ জীবন, অস্বচ্ছ ছায়া

১.
জীবনটা মোটেও মসৃন নয়। এর ধারগুলো খাঁজকাটা খাঁজকাটা। জীবনের চাকা যখন ঘুরে তখন কাটা খাঁজগুলো আমাদের চামড়ায় ক্ষত সৃষ্টি করে। কিছু কিছু ক্ষত আমরা মলম দিয়ে সারিয়ে নিই, কিছু ক্ষত সারাজীবনেও সারে না। যে ক্ষতগুলো সারে না তাদের মেনে নেয়ার জন্য আমরা তৈরী করেছি নিয়তি নামের একটা উপলক্ষ। সেই উপলক্ষের হাত ধরে আমরা ক্ষয়ক্ষতি সমৃদ্ধ জীবনকে মেনে নিয়ে ভুল আনন্দে মেতে থাকি। কোন কোন আনন্দের ঠিক নীচের ভাঁজেই থাকে ভয়ংকর কুৎসিত কোন যন্ত্রণা। যে যন্ত্রণার উপশমের কোন সম্ভাবনা নেই। তবু আমরা বলি মানুষ মাত্রেই সম্ভাবনাময় প্রাণী। অথচ প্রাণ থাকলে প্রাণী হলেও মন না থাকলে মানুষ হয় না।

২.
আমি তোমাকেও পছন্দ করি না, তাকেও পছন্দ করি না। কিন্তু তোমাকেও বলি না, তাকেও বলি না। তোমাদের কিছু কাজ আমাদের সহ্য হলেও অধিকাংশ কাজে আমার তীব্র আপত্তি। কিন্তু তোমাদের ছেড়ে আমাদের উপায় নেই বলে আমি তোমাকের কাউকে কিছু বলছি না। যদি আমার একটি সঠিক বিকল্প হাতে থাকতো তাহলে এই মাটির শপথ, আমি তোমাদের দুজনকেই ছুঁড়ে দিতাম মহাকালের আবর্জনা ভাগাড়ে যেখানে তোমাদের যাবার কথা ছিল আরো অনেক বছর আগে।

৩.
সে একটা স্বচ্ছ সরু জলভর্তি টবে হাঁটু ডুবিয়ে কোমর বাঁকিয়ে মাথা সোজা রেখে দাঁড়িয়েছিল টেবিলের একটা কোনায়। তাকে বড় যত্নে আগলে রেখেছিল কাঁচের সরু টবটি। তবে সে নিজে কতটা স্বচ্ছন্দে ছিল, অথবা জায়গাটা তার জন্য যথাযথ ছিল কিনা, আরো একটু বড় জায়গা দরকার কিনা কেউ তাকে জিজ্ঞেস করেনি। তবু সে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতো। দিবানিশি রোদবৃষ্টি জ্যোৎস্না যত কিছুই থাকুক সে ঘরের আবছায়া আলো মেখে দাঁড়িয়ে থাকতো প্রতিদিনের ক্ষণিক জলবদলের আনন্দ নিয়ে। কতদিন সে দাঁড়িয়ে ছিল? এক দুই দশ দিন নয়। তিন পেরিয়ে সাড়ে তিন বছর। কিন্তু এক পায়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হলে যতগুলো শিকড় দরকার, তার পায়ে হয়তো ততগুলো শিকড় ছিল না। শেকড় গজাবার জায়গা ছিল না। তাই সাড়ে তিন বছর পর একদিন সহ্যের সমাপ্তিরেখায় পৌঁছে নিজেকে অনিবার্য সেই পরিণতির কাছে সমর্পন করলো ছোট্ট সবুজ সজীব বৃক্ষকাণ্ডটি। হারিয়ে গেল চিরদিনের মতো। সে তো গেলই, সেই সাথে নিঃসঙ্গ করে গেল প্রতিদিনের আনন্দের সঙ্গী তার আশ্রয়দাতা সেই স্বচ্ছ কাঁচের টবটিকেও।

No comments: