Monday, December 23, 2013

২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ গ্যাৎচোরেৎশালা

১.
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠলে মনে হয় আজ জটিল একটা দিন। বাইরে তখনো প্রায়ান্ধকার। শীতকালে এত ভোরে অফিস যাওয়াটা যুগ পার হবার পরও অভ্যেসে পরিণত হয়নি। তাই ভোরের দিকে ঘুমটা যখন সবচেয়ে বেশী মায়া নিয়ে চোখে জড়িয়ে ধরে, নকশী কাঁথাটা যখন গায়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো উষ্ণতাটা বিলায়, ঠিক তখনই বেরসিক এলার্মটা বাজে। শীতভোরের এলার্ম টোন পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর সঙ্গীত। আমি খুব চেষ্টা করি সকালে এলার্মের ডাকে মাধুর্য ঢালতে, বৈচিত্র আনতে। রিংটোন পাল্টাতে পাল্টাতে সব শেষ হয়ে যাবার পর এখন ধরেছি প্রিয় গানের সুর। আমি জানি এই গানগুলো কদিন পরই বিষবৎ হয়ে উঠবে। এখন দিয়েছি Scorpion এর Winds of Change. এই গানের সূচনা সঙ্গীত খুব মিষ্টি। শীতকাল যতদিন থাকবে এটা রাখবো ভাবছি।

২.
গতকাল পত্রিকায় চোখও বুলাইনি। কারণ পত্রিকায় প্রধান খবর হিসেবে যে শিরোনাম আর ছবি থাকবে সেই বিভৎসতা দিয়ে সন্ধেটা মাটি করতে চাইনি। আমি দৈনিক পত্রিকার হেডলাইনে চোখ বুলাই সন্ধায় অফিস থেকে ফেরার পর। বাকী সবার কাছে ওটা বাসী হয়ে গেলেও আমি তাজা মনেই চোখ বুলাই। এই চোখ বুলানো কোন সংবাদ অনুসন্ধিৎসা নয়, বরং এটা একটা নিজস্ব ভড়ং। এই ভড়ং দিয়ে আমি নিজেকে বোঝাই সময়টা এখন নয় সময়টা আরো ত্রিশ বছর আগের। যখন চট্টগ্রামে ঢাকার পত্রিকা আসতে বিকেল গড়িয়ে যেতো। আমি সেই সময়টার ঘ্রাণ পেতে ভালোবাসি। আমি যে কোন অতীতের ঘ্রাণে মুগ্ধ। এমনকি সেটা যদি দুঃসময়ের ঘ্রাণ হয় তবুও। আমার এই ভড়ং এর উদ্দেশ্য অতীতচারী হয়ে বর্তমান থেকে খানিক সময় পালিয়ে থাকা। বর্তমান সময়টাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।

৩.
বুঝ হবার পর থেকে সজ্ঞানে আমি কখনো কোন পাকিস্তানী পণ্য কিনি না। মাল্টা নামের কমলার মতো দেখতে একটা ফল বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়। আমার ওটা খেতে কখনোই ভালো লাগেনি। তবে কখনো রোগী দেখতে গেলে জিনিসটা কিনতাম। একদিন দোকানীকে জিজ্ঞেস করে জানলাম এই বস্তু পাকিস্তান থেকে আসে। সেদিন থেকে রোগীর জন্যও এই ফল কেনা বন্ধ করে দিলাম। এতকাল পর দেখতে পাচ্ছি আরো অনেক বাঙালী পাকিপন্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। ক্যাম্পেইন করছে অনেকে। ভালো কথা। কিন্তু আমার মতো অবোধ মানুষও যা বুঝেছে বহুবছর আগে, আপনাদের এতদিন লাগলো বুঝতে?

৪.

অতীন ব্যানার্জীর 'নীলকন্ঠের খোঁজে' বইটিতে 'গ্যাৎচোরেৎশালা' শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। শব্দটা গালি নাকি ক্ষ্যাপাটে বুলি বুঝিনি। বন্ধু যদিও বলে এটা গালিই আমি নিশ্চিত নই। অতীন ব্যানার্জি বেঁচে থাকলে জিজ্ঞেস করতাম। তবে দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে এরকম একটা গালি মুখ দিয়ে বের হয়ে যেতে চায়।

৫.
এবার একটু জীবনানন্দ সুধা-

প্রৌঢ় হৃদয়, তুমি
সেই সব মৃগতৃষ্ণিকাতলে ঈষৎ সিমুমে
হয়তো কখনো বৈতাল মরুভুমি,
হৃদয়, হৃদয় তুমি!
তারপর তুমি নিজের ভিতরে ফিরে এসে তব চুপে
মরীচিকা জয় করেছো বিনয়ী যে ভীষন নামরূপে
সেখানে বালির সব নিরবতা ধূ ধূ
প্রেম নয় তবু প্রেমেরই মতন শুধু।


No comments: