আপনি সুন্দর জীবন যাপন করেন। সৎভাবে আয় রোজগার করেন। সদা সত্য কথা বলেন। পরিবারের সব দায়িত্ব পালন করেন। নিয়মিত নামাজ-রোজা করেন। বন্ধুবান্ধব আত্মীয় প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রাখেন। লোভ-হিংসা-অহংকার করেন না। আপনার সুন্দর সুন্দর শখ আছে। পান-সিগারেট মদ-গাঁজার অভ্যেস নাই। ঘুষ-দুর্নীতি করেন না। ফটকাবাজি-জোচ্চুরি করেন না। আপনি সৎ মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু আপনি জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন করেন। কেন করেন? সমর্থন করেন কারন আপনি জামায়াত-শিবিরের কর্মকান্ডে বিশেষভাবে মুগ্ধ। কারন জামায়াত বলে তারা সৎলোকের শাসন চায়, আল্লাহর আইন চায়। আপনিও তা বিশ্বাস করেন এবং স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু আপনার বিশ্বাস কি সঠিক? আপনি কি নিশ্চিত আপনি কোথাও ভুল করছেন না? আপনি কি নিজে পড়াশোনা করে, নিজের বিবেক খরচ করে ভেবে দেখেছেন আপনার বিশ্বাসে কোন ফাঁক আছে কিনা? জামায়াত সম্পর্কে আপনি কী সব জানেন? আসলেই জানেন, গভীরভাবে? আপনাকে প্রথম কে বলেছিল জামায়াত সম্পর্কে? নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্য কেউ, নাকি জামায়াত সংগঠনের কেউ, অথবা কঠিন আওয়ামী বিদ্বেষী কেউ? আপনি কার কথায় জামায়াতের উপর আস্থা অর্জন করেছেন?
যিনি আপনাকে বুঝিয়েছেন, তিনি নিশ্চয় বলেছেন ১৯৭২-৭৫ সালের শেখ মুজিবের দুঃশাসনের কথা, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের কথা, আওয়ামী-বাকশালী শক্তির অপকর্মের কথা, শেখ কামালের ব্যাংক লুটের কথা, মেজর ডালিমের বউকে হাইজ্যাক করার কথা। আপনি ছোট ছিলেন কিংবা জন্ম হয়নি তখন তাই আপনার যাচাই করার উপায় নাই, তাই আপনি শুধু বিশ্বাস স্থাপন করেছেন শোনা কথার ওপর, কিংবা সুলিখিত জামাতী পুস্তকের ওপর। এখনতো আপনি যাচাই করতে পারেন শোনা কথাগুলো। যাচাই করতে পারেন কেন আপনাকে এতগুলো মিথ্যা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়েছিল। কার স্বার্থে? যাচাই করেছেন কি? যিনি আপনাকে শিবিরে এনেছেন, তিনি কী একবারও বলেছেন জামায়াত একাত্তরে কী করেছিল? জামায়াতের যারা পরিচালক, তারা কিভাবে একাত্তরে হাজার হাজার মানুষের হত্যার সাথে জড়িত ছিল সেটা কি আপনাকে বলেছে? নিশ্চয়ই বলেননি। নিশ্চয়ই বলেননি ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে রাজাকার, আল-বদরের সৈনিকেরা নিরীহ বুদ্ধিজীবিদের কিভাবে চোখ বেধে বধ্যভুমিতে নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল।
বরং আপনি হয়তো শুনেছেন জামায়াত কেবল একাত্তরে ইসলামের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই পাকিস্তানের হাতে হাত রেখে ভারতীয় চক্রান্ত রুখে দেয়ার চেষ্টা করেছে মাত্র। হয়তো বলেছে রাজাকার-আলবদরদের সাথে জামাতের কোন সম্পর্ক নেই। জামায়াত একটা মুসলমানকেও হত্যা করেনি একাত্তরে। জামায়াত স্বাধীনতার বিরোধিতাও করেনি আবার সমর্থনও করেনি। এটা কোন অপরাধ নয় কারন শেখ মুজিবও তো স্বাধীনতা চায়নি। শেখ মুজিবও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখে গেছেন। ২৫শে মার্চে কোন গনহত্যা হয়নি, কেবল ভারতীয় দালাল খুঁজে খুঁজে গুলি করে মারা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। কোন মুসলমান মারা যায়নি, সব নাসারা হিন্দু ভারতীয় দালালকে কতল করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত যোগ দেয়নি কারন ওটা ছিল ভারতীয় নীল নকশার অংশ। নয় মাসের রক্ষক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ আসলে পাকিস্তানের উপর, মুসলিম ঐক্যের উপর ভারতীয় আগ্রাসনের প্রচেষ্টা মাত্র। নয়মাস পর ভারত চক্রান্ত করে পাকিস্তানকে আত্মসমর্পন করিয়েছে তারপর সাড়ে তিন বছর অরাজকতার মধ্যে থেকে বাংলাদেশকে শাসন করিয়েছে ভারতীয় দালাল সরকার দিয়ে। বাংলাদেশ সত্যিকারের মুক্ত হয়েছে ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫। বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড ছিল ভারতীয় মদদে আওয়ামী চক্রান্ত। ইত্যাদি ইত্যাদি শুনেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন আপনি।
তবে আপনি কোন না কোন ভাবে উপরের কথাগুলো বিশ্বাস করেন। আপনি মনে করেন জামায়াত একাত্তরে কোন ভুল করেনি। ইসলামের স্বার্থ রক্ষার জন্য কিছু অনিয়ম করতে হয়েছে মাত্র। যেসব অনিয়ম করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশী বাড়িয়ে বলা হয়েছে ইতিহাসে। আসলে এত মানুষ মারা যায়নি একাত্তরে। জামায়াত তেমন বড় কোন অন্যায় করেনি। এটাই হয়তো আপনার সরলভাবে সৎভাবে বিশ্বাস করেন।
কিন্তু আপনি কি নিশ্চিত আপনার এই বিশ্বাসে কোন ভুল নেই? কোটি মানুষের সাক্ষ্য, লক্ষ মানুষের ভাষ্য, হাজার মানুষের বই, সব মিথ্যা আর জামায়াতের কয়েকটা লোকের বানোয়াট কথা সত্যি মনে হয়? আপনি কি জানেন ভুল বিশ্বাসের কারনে আপনার ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে? আপনি কী সেই উদ্ধৃতিটা শুনেছেন -একটা মিথ্যায় বিশ্বাস করার চেয়ে সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়াও ভালো?
প্লীজ, আপনাকে যতটুকু পড়তে দেয়া হয়েছে, তারচেয়ে একটু বেশী পড়ুন। সত্য যাচাই করে দেখুন। বাইরে চোখ মেলে তাকান। আপনাকে শিবির করতে হবে কেন? আপনার যেসব গুনাবলী আছে, আপনি সহজেই আলোকিত মানুষ হিসেবে বাঁচতে পারবেন। ইহকাল পরকাল সবদিকেই আপনার রাস্তা সুপ্রশস্ত থাকবে। আপনি বরং শিবিরের মতো ভন্ড অনৈতিক দলকে সমর্থন করে নিজের বেহেশতে যাবার সুযোগকেই হুমকি মুখে ফেলে দিচ্ছেন। আপনার শিবির করার দরকার নাই, আওয়ামী লীগ করার দরকার নাই, বিএনপি করার দরকার নাই, আপনি মানুষ হিসেবে, মুসলমান হিসেবে নিজেই নিজের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ন হয়ে বেঁচে থাকতে পারেন।
আপনার বিবেকের জন্য কয়েকটা প্রশ্নমালা দিলাম-
যারা একটা মিথ্যাকেও সমর্থন করতে পারে তাদের কী সৎ মানুষ বলা যায়?
যারা একটা সত্যিকেও গোপন করতে পারে তাদের কী সৎ মানুষ বলা যায়?
আপনি যাদের সমর্থন করেন তারা কি একটা মিথ্যাকেও সত্যি বলে নাই?
আপনি যাদের সমর্থন করেন তারা একটা সত্যকেও গোপন করে নাই?
আপনি একজন মুসলমান। আপনি জানেন মুসলমান হবার প্রধানতম যোগ্যতা হলো ঈমান বা বিশ্বাস। এই বিশ্বাস শুধু আল্লাহতে বিশ্বাস না। এই বিশ্বাস হলো আল্লাহসহ অনেকগুলো বিশ্বাসের সমষ্টি। আপনার সবগুলো বিশ্বাসের মধ্য একটা বিশ্বাসও ভুল থাকে, আপনার ঈমান দুর্বল হয়ে যাবে না? আপনি জামায়াতকে সমর্থন করতে গিয়ে আপনার এতগুলো গুনাবলী সমৃদ্ধ ঈমানকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন না তো? আপনি কী আজাজিল ফেরেশতার ঘটনাটা জানেন? আপনি কি এজিদের চরিত্র পড়েছেন? আপনি কি জানেন এজিদ মুসলমান ছিল?
আপনি শিবির হলে আপনি ঈমানদার হতে পারেন না। আপনি ঈমানদার হলে শিবির সমর্থন করতে পারেন না। ‘ঈমানী শিবির’ কিংবা ‘শিবিরের ঈমান’ শব্দ দুটি সোনার পাথর বাটি। তবু কেন শিবির করবেন?
No comments:
Post a Comment