Sunday, January 18, 2009

কিছু একটা বলুন প্লীজ, মহামান্য ঘাঘু

নির্বাচনের পর থেকে ব্লগজগতে একদল মানুষকে নিখোজ দেখা যাচ্ছে। তারা হলেন সবজান্তা মহামান্য ঘাঘু।

এই দলের তাত্ত্বিকগন সর্বক্ষেত্রে সর্বসময় সংবিধান ও গনতন্ত্র খুঁজে বেড়ান। জীবন থেকে তত্ত্বকে আলাদা করতে পারেন না ইনারা। এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্যও তাঁরা সংবিধানের ধারার সন্ধান করেন। এই ঘাঘুরা সবখানে সব জায়গায় নিজেদের সিলেবাসের তত্ত্ব হাজির করেন। সিলেবাস ছেড়ে কিছুতেই বেরুতে পারেন না। সেই তত্ত্বের বিরাট অংশ জুড়ে থাকে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র পরিকল্পানার অজানা কাহিনী। বিশ্বের কোথায় কোথায় কীভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গনতন্ত্রকে নস্যাত করে ষড়যন্ত্র করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে সেই তত্ত্বের চর্বিত চর্বন। কীভাবে দেশের মানুষ গনতন্ত্রের অভাবে, সংবিধানের অভাবে হাঁসফাঁস করছে, সংবিধান ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, ইত্যাদি। যদিও আমি গত দুবছরে গনতন্ত্রের জন্য হাসফাস করা একজন মানুষও দেখিনি রাজনৈতিক ধান্ধাবাজ আর দুর্নীতিবাজ বাদে। আরেকটা শ্রেনীকে হাসফাস করতে দেখেছি - তারা জামাত শিবির চক্র। কারন তত্ত্বাবধায়ক সরকার একের পর এক স্বাধীনতার স্তম্ভগুলোকে স্বীকৃতি দিচ্ছিল, পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতার বিকৃত ইতিহাসকে সংশোধন করছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসংগ উত্থাপন করছিল নানান সভাসমিতিতে। এতে জামাত-শিবিরের রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছিল যদিও বাস্তবে তাদের বিচার করার শক্তি তত্ত্ববধায়ক সরকারেরও ছিল না।

১/১১ এর পর অসাংবিধানিক সরকার যখন ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ন কাজ করার উদ্যোগ নিচ্ছিল, এই ঘাঘুরা তখন জাত গেল জাত গেল রব তুললো। কারন এসব কাজ তো সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত গনতান্ত্রিক সরকারের করার কথা। নাপাক অসাংবিধানিক সরকার কিভাবে এসব করবে? এটা পুরা অবৈধ, নাজায়েজ কাজ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নামে সময় ক্ষেপন করে ক্ষমতা দখলের পায়তারা করছে মঈন-ফখরুদ্দিন গং। তাদেরকে জীবনেও নামানো যাবে না। ব্যাটারা ভেতরে ভেতরে জামাতের দালাল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা আইওয়াশমাত্র। ইত্যাদি ইত্যাদি।

কখনো আবার বলতো এটা বাংলাদেশের বিপুল পরিমান মজুদ তেল-গ্যাস খাওয়ার ইন্ডিয়ান-আমেরিকান ষড়যন্ত্র। ইন্ডিয়ার কাছে দেশ বিক্রির ষড়যন্ত্র। মঈন-ফখরুদ্দিন বিশ্বব্যাংক ও ইন্ডিয়ার দালাল, ইত্যাদি ইত্যাদি। কথার কোন ট্যাক্স নাই, কথার কোন শেষ নাই। জানিনা এই ঘাঘুরা বাংলাদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন দেশ মনে করে কেন। না হলে বিশ্বের বড় বড় শক্তিগুলো বাংলাদেশের তেল গ্যাস দিয়ে বড়লোক হবার স্বপ্ন দেখছে এসব ভাবনা আসে কী করে। এমনও শুনেছি বাংলাদেশের সব মানুষের ডাটাবেজ তৈরী করে দেশের সার্বভৌমত্ব আমেরিকার হাতে তুলে দেয়া হবে। হায়রে মস্তিস্কের উর্বরতা। এই উর্বর পলি যদি চাষবাসের কাজে লাগতো, তাহলে দেশে ফসলের বাম্পার ফলন হতো বছর বছর।

আমরা যারা এই অসাংবিধানিক সরকারের উপর আস্থাশীল ছিলাম, ভোটার তালিকা-জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি কাজের প্রশংসা করতাম, তাদের প্রচুর তিরস্কার-গালি হজম করতে হয়েছে গত দুবছরে। আজ আমি তাই সেইসব ঘাঘু ভাইদের কাছ থেকে দেশের বর্তমান অবস্থায় নতুন কিছু বানী শুনতে আগ্রহী।

মঈন-ফখরুদ্দিন গং দেশের বারোটা বাজিয়ে ৮৭ভাগ আসন দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পাঠিয়ে ষড়যন্ত্র সফল করেছে, আপনারা তার প্রতিবাদ না করে এখনো চুপচাপ কেন।

মঈন-ফখরুদ্দিনের দিন তো শেষ। দেশে এখন পূর্ন গনতন্ত্র। কিছু একটা বলুন প্লীজ, মহামান্য ঘাঘু।

No comments: