গাজায় প্যালেষ্টাইনীদের উপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলী সরকারের বর্বরতার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলী বুদ্ধিজীবিদের সাথে তর্ক-বিতর্কে অংশ নিয়ে একটা ইহুদী সংগঠনের সাথে জানাশোনা হলো। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও Neturei Karta (Guardians of the City") বা 'নগর কর্তা' নামের ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক ইহুদী সংগঠন কঠিন ভাবে ইসরায়েল রাষ্টের অস্তিত্বের বিরোধী। তারা বিশ্বব্যাপী প্যালেষ্টাইনীদের অধিকারের জন্য প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে । ইহুদী ধর্মের আদিপুস্তক 'তোরাহ' এর রেফারেন্স দিয়ে তারা বলেছে, যে অজুহাতে ধর্মের ভিত্তিতে ইসরায়েল রাষ্টের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা কতটা ভিত্তিহীন। সামান্য কয়েকটি নীচে দেয়া হলোঃ
১) ইহুদী ধর্মের মুল ভিত্তি জুডাইজম, যা ইহুদী ধর্মের আদি উৎস। কিন্তু ইসরায়েল রাস্ট্রের ভিত্তি জিয়নবাদ, যার জন্ম দেড়শো বছরেরাও কম, যার ভিত্তি রাজনীতি। সত্যিকার ইহুদী ধর্মের সাথে জিয়নবাদের কোন মিল নেই।
২) ইসরায়েল জিয়নিজমের নামে কেবল ইঙ্গ-মার্কিন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির স্বার্থ সংরক্ষন করে। ইহুদীদের স্বার্থ তো রক্ষা করেই না, বরং বিশ্বব্যাপী নিরীহ ইহুদিদের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে।
৩) উনিশ শতকে যে যুক্তিতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ধারনার জন্ম হয়েছিল তোরাহ বর্নিত সেই 'প্রতিশ্রুত ভুমি' বা promised land (Genesis 15:18-21) এর অজুহাত বর্তমান সময়ে ধোপে টেকে না। তোরাহ বর্নিত প্রতিশ্রুতি আড়াই হাজার বছর আগের প্রেক্ষিতে বর্নিত। এই আড়াই হাজার বছরে পৃথিবীর মানচিত্র শতশত বার পরিবর্তিত হয়েছে। তাছাড়া প্রতিশ্রুত ভুমি পাওয়ার কথা ছিল মহান মেসিয়াহ'র পুনরুত্থানের পরে। জোর করে অন্যের ভুমি দখল করে প্রতিশ্রুত রাস্ট্র বানানোর কোন ধর্মীয় বা নৈতিক অধিকার কারো নেই।
গাজায় ইসরায়েলী বর্বরতার বিরূদ্ধে গত ২৭শে ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে নিউইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে Neturei Karta আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভার বক্তৃতার একাংশঃ
The world stands aghast as the atrocities being committed by the Zionist regime in Gaza, becomes known in ever greater and shocking detail.
Mere words are insufficient to express the pain that all mankind feels at the plight of the Gaza and Palestinian people.
For over one hundred years, they have been subject to a carefully conceived plan, to drive them from their homes and their land.
Throughout their history, the Zionists have resorted to intimidation, war, ethnic cleansing and state—sponsored terrorism to achieve their goals.
This is, has been and continues to be, the criminal agenda of the Zionist movement. But among this movement’s greatest crimes, is that it has claimed to carry out these nefarious actions in the name of holiness, in the name of the Almighty, in the name of Judaism and the Jewish people !!
This is a wicked and monstrous lie !!
It is a desecration of our religion !!
......................................................................
Before the advent of Zionism, Muslims and Christian, Arabs and Jews, lived peacefully together in the Holy Land, as in all the Muslim lands, — Ask your grandparents! — They remember those peaceful days! And in fact it is here the opportune time to thank all the Muslim countries for their extraordinary friendship, hospitality and safe haven that they have provided to the Jewish people throughout the ages!
......................................................................
(সম্পূর্ন ভাষনটি পড়তে চাইলে ক্লিক করুন http://www.nkusa.org/activities/Speeches/20081227.cfm)
দেখা যাচ্ছে সব ধর্মের সমস্যাগুলো সৃষ্টি করে এসব নব্য মতবাদ। মুসলমানদের মধ্যেও যেমন রয়েছে মওদুদীবাদ, ওহাবীবাদ যারা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসকে ইসলামের সাথে একাকার করে ফেলেছে। মওদুদীবাদ মানে যেমন আসল ইসলাম নয়, তেমনি জিয়নবাদ মানেও যেমন আসল ইহুদী ধর্ম নয় । মানুষকে যুগে যুগে বিভ্রান্ত করে বিশ্বশান্তিকে হুমকির মুখে ফেলে রেখেছে এসব বিবেকবর্জিত স্বার্থান্ধ শক্তি।
ইসরায়েল রাস্ট্রের অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা যতটুকু ধার্মিক তার চেয়ে অনেক বেশী বানিজ্যিক। মধ্যপ্রাচ্যে তেল আবিস্কারের পর থেকেই ইজরায়েল রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তাটা মারাত্মক আকার ধারন করেছিল পশ্চিমা শক্তি বিশেষতঃ বৃটেন ও আমেরিকার কাছে। ইসরায়েল রাস্ট্র প্রতিষ্টার সুযোগের সুচনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয়ের পর বেলফোর চুক্তি থেকে হলেও পুর্নাঙ্গতা পেয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন নির্যাতিত ইহুদীদের প্রতি সারা বিশ্বের সহানুভুতি প্রবল। অন্যদিকে বিশৃংখল, অনৈক্যে পরিপূর্ন আরব ভুমিতে সচল বৃটিশ থাবা। সৌদি আরবের সিংহাসনে বৃটেনের অনুগ্রহে ক্ষমতা প্রাপ্ত আল-সৌদ পরিবার। মিশর ছাড়া মাথা তুলে দাড়ানোর কোন শক্তিই ছিল না আরব ভুমিতে। সেই মিশরও তখন রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থায় পতিত। সেরকম বিশৃংখল অনুকূল পরিবেশে ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে পেটের ভেতর রোপিত হয় ইসরায়েল নামক বিষফোড়াটা। যেটি এখন সার্বভৌম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত হলেও মাঝে মাঝে ওটাকে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ অঙ্গরাজ্য বলেই মনে হয়। তেলসম্পদ আর ভৌগলিক কৌশলগত অবস্থান দুটোরই সমান গুরুত্ব পেয়েছে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের পেছনে। তেল বিক্রির টাকায় সৌদি কোম্পানী কত বিলিয়ন ডলার কামিয়েছে আর ইঙ্গ-মার্কিন কর্পোরেট জগত কত বিলিয়ন ডলার কামিয়েছে সেই হিসেবটা দেখলে স্বার্থের এই সমীকরন বোঝা আরো সহজ হয়। যে যার ফায়দা লুটে নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মার খাচ্ছে বিশ্বমানবতা। বর্তমান পৃথিবীতে বানিজ্যিক স্বার্থ ছাড়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর (বিশেষ করে ইঙ্গ-মার্কিন) একটা তৎপরতাও চোখে পড়বে না। অজুহাতটা মানবাধিকার হোক, বা সংখ্যালঘু স্বার্থ রক্ষা হোক কিংবা অন্য যে কোন দোহাই।
স্বার্থবানিজ্যের আক্রমনে মানবতা যখন নিস্পেষিত, Neturei Karta এর মতো সংগঠনের উপস্থিতি বিশেষ প্রয়োজনীয়। স্বার্থকলুষতার অক্ষশক্তি নিপাত যাক, Neturei Karta এর মতো ক্ষুদ্র সংগঠনগুলোর শক্তিবৃদ্ধি হোক। জয় হোক ফিলিস্তিনি জনগনের।
No comments:
Post a Comment