Saturday, January 31, 2009

একটি সুখ ও অ-সুখ বিষয়ক গদ্য

আমি কী সুখী? প্রতিটি মানুষ নিজেকে এই প্রশ্নটা করে এবং বেশীরভাগই কোন উপসংহারে পৌঁছাতে পারে না। সুখের সংজ্ঞা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি আছে। আমরা ভাবতে চাই যে - সুখ হলো একটা চুড়ান্ত গন্তব্য এবং সেই গন্তব্যে পৌছানোর জন্য আমরা প্রত্যেকে প্রানান্তকর চেষ্টা করে যাই সারাজীবন। এটা সেটা পেয়ে সুখী হবার জন্য একটার পর একটা অভিযানে নামি। চাকরী-ব্যবসা-বিয়ে-সন্তান-গাড়ী- বাড়ী-সম্মান-প্রতিপত্তি ইত্যাদি নানান ধরনের সুখ অভিযান। অভিযানে নেমে কেউ কেউ খেই হারিয়ে অন্ধকার পথেও চলে যায়। প্রতিটা অভিযান শেষে আমরা আবারো অভিযানে নামি, আরো আরো চাই, আরো বেশী সুখ। সুখী হবার এত চেষ্টার পরও শেষ পর্যন্ত খুব কম মানুষই বলতে পারে ‘আমি সুখী’। কারন এই কথা বলার পরমুহুর্তেই হয়তো অ-সুখের সংবাদ চলে আসতে পারে। তবে মূল যে কারনে আমরা সুখী হতে পারি না তা হলো আমরা আসলে জানিই না সুখ কী।

সুখ আসলে কী? সুখ যদি গন্তব্য না হয় সুখ কী গাড়ী? না, সুখ গন্তব্যও নয়, গাড়ীও নয়। সুখ হলো ভ্রমন, একটা চলমান প্রক্রিয়া। জীবনের পথে চলতে গিয়ে আমরা কখনো হাসি, কখনো কাঁদি। ছোট ছোট দুঃখেও বিষন্ন হয়ে পড়ি, আবার বড় বড় সুখেও হাসতে ভুলে যাই। তাই হাসি কান্নার পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। সেই অর্থে সুখী হওয়াটাও আপেক্ষিক। কেউ কেউ একবেলা সাদাভাত পেলেই নিদারুন সুখে গড়াগড়ি দেয়। আবার কেউ সাদাভাতের সাথে মাছ-মাংস-কোরমা-রেজালা নিয়েও অসন্তুষ্ট দই-সালাদের ব্যবস্থা নেই বলে। সুতরাং সুখের নির্দিষ্ট কোন গন্ডী নেই। কতটুকু পেলে সুখী হওয়া যাবে তার কোন পরিমাপ নেই।

জামিলের কথাই বলা যাক। ভার্সিটিতে জামিল রুনাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। রুনার মন জয় করার জন্য হেন কাজ নেই জামিল করেনি। রুনার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিল জামিল। প্রথমদিকে রুনা জামিলের প্রস্তাব এড়িয়ে যাবার পর সে আরো উন্মাদ হয়ে যায়। একদিন রুনাকে শাহবাগ মোড়ে রজনীগন্ধা কিনতে দেখে সে পরদিন শাহবাগের সবগুলো রজনীগন্ধা কিনে ক্যাম্পাসের মাঠে রুনার পায়ের সামনে বিছিয়ে দেয়। এরকম পাগলকে ভালো না বেসে রুনার কোন উপায় ছিলনা। বড়লোক বাবার মেয়ে রুনা সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করে জামিলকে। বিয়ে করে সুখী হয় দুজনে। সুখী থাকে একমাস, দুই মাস, নয় মাস, এমনকি বছরও গড়ায়। জামিল মোটামুটি ভালো চাকরী করে এখন, ছোট একটা বাসা নিয়ে থাকে মালিবাগে। ইদানীং বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায় প্রায়ই, ফিরে খেয়েই ঘুম। পরিশ্রমের চাকরী বটে তাই বউয়ের দিকে খেয়াল রাখার ফুরসত নেই। নেই ফুল কেনা নেই কথার ফুলঝুরি। ব্যস্ততার কারনে সব বাসী নিরামিষ হয়ে গেছে। আসলে কি তাই? ব্যস্ততাই সব? নাকি প্রেমের স্টক ফুরিয়ে গেছে। যদি ফুরিয়েই যেত তাহলে অফিসের শ্যামলা তিরতিরে রিসেপশানিষ্ট পলিকে দেখলে বুকে কাঁপন লাগে কেন। ওর শাড়ী পরার ভঙ্গীটা, মুচকি হাসিটা ওর ভাবনাকে এলোমেলো করে দেয় কেন? বৃহস্পতিবার ছুটির সময় মন খারাপ হয়ে যায় কেন শুক্রবারদিন পলিকে দেখবে না বলে।

আসলে সুখের চাহিদা এবং ফলাফল এরকমই। পাওয়ার আগ পর্যন্ত খুব তৃষিত, পাওয়ার পর পানসে। এ শুধু প্রেম নয়। গাড়ী, বাড়ী, জামা, জুতো, ঘড়ি সবকিছুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। স্থায়ী সুখ বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। সব সুখই অস্থায়ী। তাই জীবনের পথে চলতে গিয়ে ছোট ছোট সুখগুলি যে যত বেশী সংগ্রহ করতে পেরেছে সে তত বেশী সফল, সে-ই সত্যিকারের সুখী।

আপনি কী অসুখী? তাহলে আমি যা করি তা একবার করে দেখুনতো কিছু যদি বদলায় কিনা? আমার নিজস্ব ফরমূলাটা বিনামূল্যে ছেড়ে দিলাম এখানে।

১) ‘কী নেই’ সেই ভাবনাটা বাদ দিয়ে ‘কী আছে’ সেটা ভাবুন। [আপনার গাড়ী-বাড়ী নেই, কিন্তু একটা সুখী পরিবার আছে অথবা আপনার সুখী পরিবার নেই, কিন্তু আপনি সুস্থ দেহে বেঁচে আছেন, পৃথিবীর রূপরস উপভোগ করতে পারছেন]

২) আপনার যা আছে তা কতজনের নেই সেটা ভাবুন। [আপনার ফুটফুটে একটা বা দুটো ছেলে-মেয়ে আছে, অনেকে লক্ষ টাকা খরচ করেও একটা সন্তানের পিতামাতা হতে পারে না]

৩) আপনার চেয়ে যার বেশী আছে তার দিকে না তাকিয়ে আপনার চেয়ে কম আছে তার দিকে তাকান। [আপনার এক বন্ধুর গাড়ী আছে, কিন্তু আরেক বন্ধুর চাকরীও নেই]

৪) আপনার বৈষয়িক চাহিদাকে সীমাবদ্ধ করুন। [বেশী টাকা, বেশী সম্পদ, বেশী সমস্যার জন্মদাতা]

৫) অতীতের আরো বড় সমস্যার কথা ভাবুন [আজকের সংকট কেবলই অর্থের, বানিজ্যের কিংবা চাকরীর কিংবা মনোমালিন্যের, অতীতে জীবন-মরন সংকটও গেছে যেটা অনেক বেশী মারাত্মক ছিল]

নির্ভয়ে বলছি এই মুহুর্ত পর্যন্ত আমি সুখী। আপনিও সুখী হোন। নীচের সংগৃহিত লেখাটি প্রতিদিন একবার পাঠ করুন, বাঁধিয়ে রাখুন আপনার অফিসে কিংবা বাসায়ঃ

Happiness is a journey, not a destination

So, treasure every moment that you have and treasure it more because you shared it with someone special, special enough to spend your time … and remember that time waits for no one.

So, stop waiting until you finish school,
until you go back to school,
until you lose ten pounds,
until you gain ten pounds,
until you have kids,
until your kids leave the house,
until you start work,
until you retire,
until you get married,
until you get divorced,
until Friday night,
until Sunday morning,
until you get a new car or home,
until your car or home is paid off,
until spring, until summer,
until fall, until winter,
until you are off welfare,
until the first or fifteenth,
until your song comes on,
until you’ve had a drink,
until you’ve sobered up, until you die,
until you are born again to decide that there is no better time than right now to be happy.

Happiness is a journey, not a destination

No comments: