Saturday, January 31, 2009

বিশ্বাসী বনাম অবিশ্বাসী

বিশ্বাস করা কঠিন, অবিশ্বাস করা সহজ। তবে না জেনে বিশ্বাসও সহজ, কিন্তু জেনে বিশ্বাস কঠিন কাজ। বিশ্বাসীরা যদি প্রমান করে বিশ্বাস করতে চায়, তাঁকে বহুদুর হাঁটতে হবে। অতদুর হাঁটার শক্তি থাকে না সবার। তবু অনেকে হাঁটতে চায়, যখন শক্তি ফুরিয়ে যায়, ধৈর্য ফুরিয়ে যায়, তখন মাঝপথে বসে পড়ে। সামনে তার দুটি পথ খোলা থাকে। এক- অন্ধ বিশ্বাসে ভর করে ফিরে আসা, দুই- ফিরে যাওয়া অবিশ্বাসের রাস্তায়।

অবিশ্বাসে কোন প্রমান লাগে না। অবিশ্বাস সহজ। তবু অবিশ্বাসীর চেয়ে বিশ্বাসীর সংখ্যা বেশী কেন বিশ্বে? কারন অবিশ্বাস করা সহজ হলেও অবিশ্বাসী হতে সাহস লাগে। বিশাল দুঃসাহস। দুঃসাহসী মানুষের সংখ্যা বরাবরই কম। অধিকাংশ মানুষ ঝুঁকিবিহীন পথ বেছে নেয়। প্রমান অপ্রমানের পরিশ্রমের রাস্তায় না গিয়ে, ঝুঁকিবিহীন অন্ধ বিশ্বাসের পথে যাওয়াটাই শ্রেয় মনে করে বেশীরভাগ মানুষ। দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে স্বর্গের সুধাবঞ্চিত হবার কোন মানে হয় না। তাই বিশ্বাসীরা সংখ্যাগুরু, অবিশ্বাসীরা সংখ্যালঘু।

তবে বিশ্বাসের প্রমান পাওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ পথ যারা পাড়ি দিতে পেরেছে তারাই যুগে যুগে সাধক-মহামানব।
আর যারা ততটা পথ হাঁটতে পারেনি, মাঝপথে ক্লান্ত-শ্রান্ত-বিভ্রান্ত হয়েছে, যাত্রা পথের কন্টকময় খন্ডিত বিবরনই মিলবে কেবল এদের কাছে। এরা কারা?

প্রথম আকাশ ভ্রমন

ছেলেবেলায় সব মানুষের নানান রকম স্বপ্ন থাকে। বেলাশেষে দেখা যায় সব স্বপ্ন হয় অসমাপ্ত নয় বহুত-দুর-অস্ত । আমারো সেরকম একটা অসমাপ্ত স্বপ্ন ছিল। ‘বড় হয়ে কী হতে চাও’ কেউ জিজ্ঞেস করলেই বলতাম- পাইলট হবো। আদতে জানতাম না পাইলট হতে হলে কী কী করতে হয়। শুধু জানতাম পাইলট আকাশে উড়তে পারে, আর আমার আজীবন সাধ আকাশে ওড়ার। বেন্জামিন ফ্রাংকলিন পড়ার আগ থেকেই আমার শখ আকাশ থেকে পৃথিবীটা দেখা। আকাশে কোন প্লেন দেখলে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম -আহ্ ওই প্লেনের ভেতর যারা আছে তারা কী ভাগ্যবান, পুরো পৃথিবীটা দেখতে পাচ্ছে পাখির চোখে। অন্ততঃ পাখিও হতে পারতাম যদি, পাইলট না হলেও চলতো। চিল কিংবা ঈগল, নিদেন পক্ষে কাক হলেও চলতো। কিন্তু পাইলট হবার কিঞ্চিত সম্ভাবনা থাকলেও, পাখি হবার কোন সম্ভাবনাই নেই। শেষমেষ অবশ্য কিছুই হওয়া হয়নি। তারপরও আকাশে ওড়ার সাধ তিলমাত্র কমেনি। আকাশের প্রতি আমার মুগ্ধতা বেড়েই চলেছিল।

আরেকটু বড় হবার পর বাবা-চাচা-মামা যাদের দেশ বিদেশে আসা যাওয়া আছে, তাদের কাছ থেকে বিমানে চড়ার গল্প শুনতাম। সবাই বিমানের আরামদায়ক ব্যবস্থা, সুস্বাদু খাবার-দাবার, চাহিবা মাত্র চা-কফি-কোক-পেপসি পাওয়ার নিশ্চয়তার গল্প করতো(শরাবের কথা অবশ্য কেউ বলতো না)। কিন্তু কেউ গল্প করতো না বিমান যখন আকাশে ওড়ে তখন ওপর থেকে পৃথিবীটা কেমন লাগে সে কথা। অথচ আমি সেই দৃশ্যের বর্ননা শোনার জন্য আকুল হয়ে থাকতাম। কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলতো, ওটা আবার দেখার কি আছে, অত খেয়াল করিনি, ইত্যাদি। তার মানে ওসব ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই। সদ্য কৈশোরোত্তীর্ন আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, এত উপর থেকে পৃথিবীটা কেমন দেখায় সেটা নিয়ে মুগ্ধ হয় না কেন মানুষ, আমি হলে তো হৈ চৈ করে বর্ননা করতাম সে দুর্লভ অভিজ্ঞতার কথা।

চাকরী জগতের পাথুরে কঠিন ভুমিতে পা রাখার পর অদুর-সুদুর কোন ভবিষ্যতে বিমানে চড়ার কোন সম্ভাবনা দেখতে পেলাম না। বড়জোর টাকা জমিয়ে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রুটে একবার চেষ্টা করা যেতে পারে। এরকম অবস্থায় কোন এক উপরঅলার অদৃশ্য যাদুর কাঠির বলে এক সকালে আমাকে অফিস থেকে জানানো হলো - বিদেশ সফরে যেতে হবে, পাসপোর্টের জন্য ছবি আর জাতীয়তা সনদ যেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে যোগাড় করি। আমি সংবাদদাতার দিকে সরু চোখে তাকালাম। মশকরা করছে নাকি?

কিন্তু মশকরা না, সত্যি সত্যি আমাকে এক সপ্তাহ পরে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরগামী বিমান ধরার জন্য চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে রাতের শেষ ডোমেষ্টিক ফ্লাইটটাতে চড়ে বসতে হলো। বাংলাদেশ বিমানের ছোট একটা আকাশযান, কিন্তু আমার চোখে বিরাট বিষ্ময়, শিহরন শরীরের পরতে পরতে। তবে সীটবেল্ট বেধে বসতে না বসতেই ফ্লাইট এটেন্টডেন্টের সতর্কীকরন বার্তা ও আনুসাঙ্গিক ক্যারিকেচার দেখে একটু ভয় ভয় লাগলো। বিরস মুখে চোখ বন্ধ করে সতর্কবার্তা মিথ্যাপ্রমান হবার জন্য সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে বার্তা প্রেরন করার চেষ্টা করলাম। রানওয়েতে প্রবল শব্দ করে বিমানটি যখন শূন্যে লাফ দিল তখন কলিজাটা বুকের খাঁচার মধ্যে এমন ঝাঁকি খেয়ে গুড়গুড় শব্দে কাঁপতে লাগলো যে পাশের জনও শুনতে পাবে কান পাতলে। ভুলে গেলাম আকাশ থেকে পৃথিবী দেখার স্বপ্ন। বিমানের লাইটগুলো সব নিবিয়ে দেয়া হয়েছে, খোদা জানে কেন। বিমান উঠছে… উঠছে… উঠছে….. আমার উদ্বেগের স্কেলও দ্বিগুন তালে উর্ধমূখী হচ্ছে। ভয় চরমে ওঠার আগেই কয়েক মিনিট পর দপ করে জ্বলে উঠলো সবগুলো লাইট। মিষ্টি হেসে মোটাসোটা বয়স্ক বিমান বালা এগিয়ে এলো চকোলেটের ট্রে নিয়ে। চেহারা দেখে আমি হতাশ। আগে শুনতাম বিমানবালারা সব স্বর্গের হুরপরী টাইপ হয়, তারুন্যে ঝলমলে। কিন্তু গরীব দেশে হয়তো এরচে ভালো পাওয়া যায়নি। চকোলেট নিয়ে মুখে দিতেই পাইলটের কন্ঠস্বর ভেসে এল স্পীকারে। বলতে লাগলেন কত হাজার ফুট উপরে উঠেছি আমরা, আবহাওয়া খুব চমৎকার, মেঘমুক্ত আকাশ, বায়ুর গতি স্বাভাবিক, চল্লিশ মিনিট পর আমরা ঢাকা পৌছাবো ইত্যাদি। শুনে আস্বস্ত হলাম। জানালা দিয়ে শহরের লাইটগুলো খোজার চেষ্টা করলাম। অন্ধকার, কিছু দেখা গেল না।

তবে বেশীক্ষন আস্বস্তও থাকা হলো না। একটু পরেই খেয়াল করলাম বিমানটা নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে যেন, লিফট নীচে নামলে যেরকম লাগে সেরকম। মনে হচ্ছে বিমানটা পড়ে যাচ্ছে। ঘটনা কী। অন্যন্য প্যাসেন্জারের দিকে তাকালাম, সবাই নির্বিকার। আমি কী একা ভুদাই নাকি। অভিনয় করে আমিও নিরুদ্বিগ্ন থাকার চেষ্টা করলাম। কিন্তু একটু পর বিমানটা প্রবল ঝাকুনি দিল। তবু আশেপাশের কারো মধ্যে বিকার দেখলাম না। আবার ঝাকুনি, ঝাকুনি চলছেই থেমে থেমে। সীটের উপরে মালামাল রাখার বক্সগুলো কাঁপছে থরথর করে। আমি আকাশ বিজ্ঞান সংক্রান্ত আমার যাবতীয় জ্ঞান দিয়ে ভাবতে চাইলাম এমন হবার কারনটা কি। আকাশের রাস্তা তো সিটি কর্পোরেশান বানায় না, খোদাতালার বানানো পথে গর্ত টর্ত থাকার কোন সুযোগ নেই। চিরকাল শুনে এসেছি বিমানের ট্রেতে রাখা একগ্লাস পানিও কাঁপে না, এত মসৃন বিমানযাত্রা। নাকি আমার যাত্রা পথেই যত কাঁটা? বিজ্ঞানচিন্তা বাদ দিয়ে দোয়া-দরুদ পড়া শুরু করলাম এবার। কেন যে এই কুক্ষনে বিদেশ যেতে হচ্ছে, আজই বোধহয় জীবনের শেষ দিন। তিরস্কার করলাম মনে মনে নিজেকে। বিমানের সব এয়ারকুলারের বাতাসও আমার কোটের ভেতরে ঘেমে ওঠা ঠেকাতে পারছে না। প্রথম বিদেশ যাত্রা বলে শখ করে স্যুট টাই পরে যাচ্ছি। পাইলট এখানো নীরব। কোন সংবাদ দিচ্ছে না। আমি যাবতীয় বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা মনে করতে চাইলাম। এয়ার ডিজাস্টার বলে একটা বই পড়েছিলাম বিশ্বের বিখ্যাত বিমান দুর্ঘটনার উপর লেখা। তার লক্ষনগুলো মেলাতে চাইলাম। কয়েক মিনিট গেছে মাত্র, অথচ মনে হচ্ছে বহু ঘন্টা। আমার সাধ মিটে গেছে বিমানে চড়ার। সিদ্ধান্ত নিলাম, ঢাকা নেমেই পালাবো। সামান্য চল্লিশ মিনিটের যাত্রায়ই আমি কাহিল, আর ওদিকে ঢাকা-সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর-সিউল এই দুই ফ্লাইটের আট ঘন্টা কীভাবে টিকে থাকবো? কপালে যাই থাক, চাকরী চলে গেলেও পালাবো ঢাকা নেমে। দরকার নাই বাপু আমার বিমানে করে বিদেশ যাত্রার। প্রান বাঁচাই আগে।

এসব ভাবছি আর ঘামছি এমন সময় পাইলট সাহেবের বহু কাংখিত কন্ঠ ভেসে আসলো স্পীকারে। আমরা ঢাকার আকাশে পৌছে গেছি। আহ, আমার ধড়ে প্রান এলো। কী দারুন সুসংবাদ। আজাবের অবসান হবে শীঘ্রই। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম এ যাত্রা মাফ করে দেয়ার জন্য। প্লেন ঢাকা এয়ারপোর্টে নামলো নির্বিঘ্নে। কী শান্তি, মাটির মানুষ মাটির কাছে ফিরে এসেছি। তখনই বোধ হলো, মাটি আমাদের কত আপন, কত প্রিয়। মাটি বিহনে কী করে বাঁচে আদম সন্তান। এসব আধ্যাত্বিক ভাব নিয়ে বেরিয়ে এলাম এয়ারপোর্ট দিয়ে। ঢাকা অফিসের আলী যথারীতি দাড়িয়ে আছে আমাকে নেবার জন্য। দু’ঘন্টা ওর তত্তাবধানে থাকবো। তারপর রাত বারোটায় পরবর্তী ফ্লাইট সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের। সেই যাত্রাটা ছিল সত্যিকার মসৃন আকাশ ভ্রমন, মর্তের হুরপরীদের নিয়ে। সে গল্প আরেকদিন।

সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়। পরবর্তী জীবনে বহুবার আকাশ ভ্রমন করেছি, কিন্তু বাংলাদেশ বিমান ছাড়া আর কোন ফ্লাইটে এত ঝাঁকুনি দেখিনি। তাতে মনে হয়েছে, হয় বাংলাদেশ বিমানগুলোর যন্ত্রপাতিতে সমস্যা আছে নয়তো পাইলটের মাথার যন্ত্রপাতিতে সমস্যা । ড্রাইভিং একটা আর্টও বটে। সে স্বর্গে হোক বা মর্তে হোক।

দুই পর্বের মাস্তানী

অনুর্বর মাস্তানীঃ

ভাল ছাত্র হিসেবে কখনোই নাম ছিলনা ছাত্রজীবনে। তবে দুষ্টামিতেও যশ কুড়াতে পারিনি তেমন। ডানপিঠে হবার প্রচেষ্টা ব্যহত হয়েছে বারেবারে নানান কারনে। তারুন্যের শুরুতে মাস্তান হবার শখ জেগেছিল কিছুদিন। স্বপ্ন দেখতাম একটা ‘মাছমার্কা’ ছুরির মালিক হবার। আশির দশকে যারা তরুন ছিলেন তাঁরা মাছমার্কা ছুরির খ্যাতি সম্বন্ধে অবগত আছেন। এখনকার তরুনেরা চিনবে না হয়তো। ১৯৮৪তে এসএসসি পাশ করার পর থেকে মাছমার্কার মালিক হবার প্রচেষ্টা জোরদার হয়। বন্ধুদের কয়েকজন মাছমার্কা যোগাড় করে ফেলেছিল ইতিমধ্যে। এটা সাথে থাকলে নাকি বুকে সাহস অনেক বেড়ে যায়, বাঘ-ভালুকও ভয় লাগে না। মাছমার্কা নামকরন হবার কারন হচ্ছে এটার খাপটা মাছের লেজের মতো। তবে নকল মাছমার্কাও ছিল। আসল নকল চেনার উপায় হলো ভাঁজ থেকে ছুরির ফলাটা খোলার সময় কট কট করে সাতটা আওয়াজ দেবে, এজন্য অনেকে এটাকে সেভেন গিয়ার নামেও ডাকতো। খুব ধারালো ফলা, নিমেষে ফালা ফালা করে দেয়া যায় শরীরের যে কোন অংশ। আমার এক বন্ধুকে তার প্রতিপক্ষ মাছমার্কা দিয়ে আক্রমন করেছিল, সে সরে গিয়েছিল বলে আঘাতটা লেগেছিল উরুতে, তার জিন্স কেটে উরুর ভেতরে আধ ইঞ্চি ঢুকে গিয়েছিল ছুরির ধার। বন্ধুটি মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্ট হলেও মাছমার্কাকে ঠেকাতে পারেনি। তবে কদিন পর ছুরি খাওয়া বন্ধুটিও যখন মাছমার্কার মালিক হয়, তখন প্রতিপক্ষ এলাকা ছেড়ে পালায়। প্রধানতঃ সেই ঘটনা থেকে আমরা মাছমার্কার ভক্ত হয়ে পড়ি। একটা মাছমার্কা যোগাড় করতেই হবে। কিন্তু পাওয়া সহজ ছিল না। এটা ব্ল্যাকমার্কেটের জিনিস, পুলিশের খাতায় নিষিদ্ধ আইটেম।

বাবা তখন দেশের বাইরে থাকতেন। বছরে একবার ছুটিতে আসতেন। একবার বাবা ছুটিতে আসলে, ড্রয়ারে বাবার বিদেশী নানান জিনিসের মধ্যে ছোট একটা ছুরি পাই। নেইল কাটারের চেয়ে একটু বড় হবে। ফলটল কাটার জন্য হবে। দুইদিকে দুটো ব্লেড আছে, একটা বড়, আরেকটা ছোট। কৌতুহলী হয়ে ধার টেষ্ট করতে যেতেই বুড়ো আঙুলটা কেটে গেল অনেকটা। রক্ত পড়ছে আঙুল থেকে। কিন্তু আমি ব্যাথা-ট্যাথা ভুলে অবাক-বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছি ছোট্ট ধারালো বস্তুটার দিকে। এই কী সেই জিনিস যা আমি খুজে বেড়াচ্ছি দিনের পর দিন? দেরী না করে পকেটে চালান করে দিলাম ছুরিটা। যদিও মাছের লেজের কোন চিহ্ন নেই গায়ে, কিন্তু রুপালী ষ্টীলের চকচকে শরীরটা ভক্তি জাগিয়ে দিয়েছে আমার ভেতর, তাছাড়া একটু আগের রক্তাক্ত কান্ডে নিশ্চিত হয়েছি এর ক্ষমতা সম্পর্কে।

আমি নিশ্চিত যে এটা মাছমার্কা না হলেও নির্ঘাত তার সাক্ষাত খালাতো মামাতো ভাইটাই হবে। কথাটা গোপন রাখতে হবে। পরদিন কলেজে যাবার সময় নিয়ে যাবো, গোপনে লুকিয়ে রাখতে হবে যেন কেউ টের না পায়। পকেটে রাখলে ধরা পড়ে যাবো, বন্ধুরা সবসময় পকেট হাতায়। হঠাৎ মনে পড়লো গত সপ্তাহে এক নব্যমাস্তান বন্ধু কলেজের এক কোনে গিয়ে গোপনে তার লুকানো ভ্রাম্যমান অস্ত্রভান্ডার দেখিয়েছিল। তার পায়ের সাথের বেল্টে বাঁধা অস্ত্র। আমার সেরকম কোন বেল্ট নেই, তাতে কী, আমি একটা ইলাস্টিক দিয়ে পায়ের সাথে মজবুত করে বেধে নিলাম ক্ষুদ্র রুপালী অস্ত্রটি। কেউ টের পাবে না। এবার আসুক কোন শালা, ভুঁড়ি ফাসিয়ে দেবো। বুক ফুলিয়ে চলাচল শুরু করলাম কলেজে।

কিন্তু কারো ভুঁড়ি ফাসানোর সুযোগ হয়নি। কেউ আসেনি আমার ধারে কাছে। কোন হুমকি নয়, কোন আক্রমন নয়। এমন কোন ছুতা পাই না যাতে খপ করে ছুরিটা বের করে কাউকে দাবড়ানি দিতে পারি। আসবেই বা কোত্থেকে? কলেজে তো আমাদের কোন প্রতিপক্ষ নাই। এখানে শিবির নিষিদ্ধ, ছাত্রদল নিষিদ্ধ, যে কোন রাজাকার সংগঠন এখানে নিষিদ্ধ। ‘মাথা তুললেই খাবি মার’ এমন কঠিন আইন। শুধু জাতীয় ছাত্রলীগ এখানে। শুধু নিজেরা নিজেরা আড্ডা দেয়া, হৈ হৈ করে সিনেমা দেখা, হোটেলে খাওয়া। ফলে নীরস লাগলো দিনের পর দিন ছুরি বয়ে বেড়ানো। কদিন বাদে ছুরিটা খুলে রেখে দিলাম আমার গোপন ড্রয়ারে। বন্ধুদের সারপ্রাইজ দেয়ার সুযোগ হলো না ক্ষুদে বিষ্ময়টা দিয়ে। মাঠে মারা গেল মাস্তানির স্বপ্ন।

সফল মাস্তানীঃ

তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। আমাদের এক নতুন প্রতিবেশী পাশে বাড়ী করার জন্য ইট বালি এনে জড়ো করছে। এলাকায় নতুন কেউ আসলে কিছু চিহ্নিত লোকাল মাস্তান বরাবর এসে হাজির হয় চাঁদাবাজি করতে। এবারও যথারীতি মাস্তানরা এসেছে। সারাদিন হম্বিতম্বি করেছে, নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। মাস্তানরা ফিরে যাবার আগে হুমকি দিয়েছে রাতে হামলা করে ইট বালি সব নিয়ে যাবে, দেয়াল ভেঙে দিবে। প্রতিবেশী নিরীহ ভদ্রলোকের প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা। আমাদেরকে এসে বললো একটু যেন সাহায্য করি। আমি ভার্সিটি থেকে ফিরে ঘটনা শুনলাম। বুঝতে পারলাম না, কিভাবে ভদ্রলোককে সাহায্য করবো। বিশেষ করে রাতের বেলা একা ওদের কীভাবে ঠেকাবো।

কিন্তু জেদ চাপলো, আমি তো আর বইঙ্গা না। এক বন্ধু মিজানকে খবর দিলাম। বললাম রাতে আমার সাথে থাকতে, পাহারা দিতে হবে। বন্ধু রাজী। প্ল্যান করলাম কিভাবে কী করবো। রাত এগারটার দিকে খাওয়া-দাওয়া সেরে তৈরী হলাম বাইরে যাবার জন্য। বন্ধুটি এসেছে শীতের জবরজং পোষাকে। কালো হাইনেক সুয়েটার, কালো জ্যাকেট, কালো প্যান্ট, কালো সু। আর সবচেয়ে ইন্টারেষ্টিং চোখে দুটো ছিদ্র সমেত কালো মাংকি ক্যাপ। পুরোপুরি তৈরী হবার পর ওকে দেখে ব্ল্যাকক্যাট কমান্ডো মনে হচ্ছিল। আমার কাছে বিদেশী দুটো খেলনা পিস্তল ছিল। দুটোই কালো চকচকে, দেখে আসলই মনে হয়। একটা ছোট পকেট সাইজ, আরেকটা বড় নলের পয়েন্ট থ্রী ফাইভ টাইপের। দুজনে দুটো গুজে নিলাম জ্যাকেটের ভেতর। বেরিয়ে রাস্তায় গেলাম। এ মাথা ও মাথা হাঁটছি আর খুজছি কাউকে দেখা যায় কি না।

শীতকাল বলে পুরো এলাকা ঘুমিয়ে গেছে। রাস্তা সুনসান। দু একটা কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছিল দুর থেকে। সামনের বাড়ীর এক দারোয়ান হান্নান উপরে আমাদের পক্ষের লোক, ভাজা মাছও উল্টে খেতে জানে না, কিন্তু ভেতরে ওই মাস্তানদের ইনফরমার। আমি সেটা জানতাম। ওই বাড়ির সামনে হাটছি, আমাদের দেখে হান্নান বেরিয়ে এল। আমি আর বন্ধু তখন হাঁটতে হাটতে পিস্তল বদলা বদলি করছি। হান্নানের চোখে পড়ে গেল ব্যাপারটা। আমিও চাইছিলাম সেটা। আমি হান্নানকে জিজ্ঞেস করলাম মাস্তানদের কাউকে দেখেছে কিনা। হান্নান তখন কিঞ্চিত ভীত। বললো, না দেখেনি। আমি তখন বললাম- শোন মিজান, রাতে যদি ওদের দেখা যায় হান্নান টর্চ মারবে ওদের গায়ে, আর তুই ওদের পাছায় গুলি করবি। বিচি রেডী রাখ। একজনের জন্য একটা করে বিচি। হান্নানকে বললাম - খেয়াল রাখিস। বলে আমরা আবার পায়চারি শুরু করলাম। এদিক থেকে ওদিক। ওদিক থেকে এদিক। টহল পুলিশের মতো। একটু পর দুর থেকে খেয়াল করলাম হান্নান হন হন করে কোথায় যেন যাচ্ছে। ওদের খবর দিতে বোধহয়। আমাদের কাজ শেষ। আমি আর মিজান বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।

আমার বিশ্বাস ছিল কাজ হবে। হয়েছিলও। এক ওষুধে খেল খতম। সে রাতে কেউ আসেনি, পরেও না। খবর পৌছে গিয়েছিল ওদের কাছে। পাছায় গুলির রিস্ক নেয়া সহজ না। ওরা ভাবেনি আমি কমান্ডো নিয়ে আসবো। পরেও আর কোন অসুবিধা হয়নি। প্রতিবেশী নির্বিঘ্নে কাজ শেষ করেছে। আমার প্রথম সফল কাউন্টার মাস্তানী।

একটি সুখ ও অ-সুখ বিষয়ক গদ্য

আমি কী সুখী? প্রতিটি মানুষ নিজেকে এই প্রশ্নটা করে এবং বেশীরভাগই কোন উপসংহারে পৌঁছাতে পারে না। সুখের সংজ্ঞা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি আছে। আমরা ভাবতে চাই যে - সুখ হলো একটা চুড়ান্ত গন্তব্য এবং সেই গন্তব্যে পৌছানোর জন্য আমরা প্রত্যেকে প্রানান্তকর চেষ্টা করে যাই সারাজীবন। এটা সেটা পেয়ে সুখী হবার জন্য একটার পর একটা অভিযানে নামি। চাকরী-ব্যবসা-বিয়ে-সন্তান-গাড়ী- বাড়ী-সম্মান-প্রতিপত্তি ইত্যাদি নানান ধরনের সুখ অভিযান। অভিযানে নেমে কেউ কেউ খেই হারিয়ে অন্ধকার পথেও চলে যায়। প্রতিটা অভিযান শেষে আমরা আবারো অভিযানে নামি, আরো আরো চাই, আরো বেশী সুখ। সুখী হবার এত চেষ্টার পরও শেষ পর্যন্ত খুব কম মানুষই বলতে পারে ‘আমি সুখী’। কারন এই কথা বলার পরমুহুর্তেই হয়তো অ-সুখের সংবাদ চলে আসতে পারে। তবে মূল যে কারনে আমরা সুখী হতে পারি না তা হলো আমরা আসলে জানিই না সুখ কী।

সুখ আসলে কী? সুখ যদি গন্তব্য না হয় সুখ কী গাড়ী? না, সুখ গন্তব্যও নয়, গাড়ীও নয়। সুখ হলো ভ্রমন, একটা চলমান প্রক্রিয়া। জীবনের পথে চলতে গিয়ে আমরা কখনো হাসি, কখনো কাঁদি। ছোট ছোট দুঃখেও বিষন্ন হয়ে পড়ি, আবার বড় বড় সুখেও হাসতে ভুলে যাই। তাই হাসি কান্নার পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। সেই অর্থে সুখী হওয়াটাও আপেক্ষিক। কেউ কেউ একবেলা সাদাভাত পেলেই নিদারুন সুখে গড়াগড়ি দেয়। আবার কেউ সাদাভাতের সাথে মাছ-মাংস-কোরমা-রেজালা নিয়েও অসন্তুষ্ট দই-সালাদের ব্যবস্থা নেই বলে। সুতরাং সুখের নির্দিষ্ট কোন গন্ডী নেই। কতটুকু পেলে সুখী হওয়া যাবে তার কোন পরিমাপ নেই।

জামিলের কথাই বলা যাক। ভার্সিটিতে জামিল রুনাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। রুনার মন জয় করার জন্য হেন কাজ নেই জামিল করেনি। রুনার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিল জামিল। প্রথমদিকে রুনা জামিলের প্রস্তাব এড়িয়ে যাবার পর সে আরো উন্মাদ হয়ে যায়। একদিন রুনাকে শাহবাগ মোড়ে রজনীগন্ধা কিনতে দেখে সে পরদিন শাহবাগের সবগুলো রজনীগন্ধা কিনে ক্যাম্পাসের মাঠে রুনার পায়ের সামনে বিছিয়ে দেয়। এরকম পাগলকে ভালো না বেসে রুনার কোন উপায় ছিলনা। বড়লোক বাবার মেয়ে রুনা সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করে জামিলকে। বিয়ে করে সুখী হয় দুজনে। সুখী থাকে একমাস, দুই মাস, নয় মাস, এমনকি বছরও গড়ায়। জামিল মোটামুটি ভালো চাকরী করে এখন, ছোট একটা বাসা নিয়ে থাকে মালিবাগে। ইদানীং বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায় প্রায়ই, ফিরে খেয়েই ঘুম। পরিশ্রমের চাকরী বটে তাই বউয়ের দিকে খেয়াল রাখার ফুরসত নেই। নেই ফুল কেনা নেই কথার ফুলঝুরি। ব্যস্ততার কারনে সব বাসী নিরামিষ হয়ে গেছে। আসলে কি তাই? ব্যস্ততাই সব? নাকি প্রেমের স্টক ফুরিয়ে গেছে। যদি ফুরিয়েই যেত তাহলে অফিসের শ্যামলা তিরতিরে রিসেপশানিষ্ট পলিকে দেখলে বুকে কাঁপন লাগে কেন। ওর শাড়ী পরার ভঙ্গীটা, মুচকি হাসিটা ওর ভাবনাকে এলোমেলো করে দেয় কেন? বৃহস্পতিবার ছুটির সময় মন খারাপ হয়ে যায় কেন শুক্রবারদিন পলিকে দেখবে না বলে।

আসলে সুখের চাহিদা এবং ফলাফল এরকমই। পাওয়ার আগ পর্যন্ত খুব তৃষিত, পাওয়ার পর পানসে। এ শুধু প্রেম নয়। গাড়ী, বাড়ী, জামা, জুতো, ঘড়ি সবকিছুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। স্থায়ী সুখ বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। সব সুখই অস্থায়ী। তাই জীবনের পথে চলতে গিয়ে ছোট ছোট সুখগুলি যে যত বেশী সংগ্রহ করতে পেরেছে সে তত বেশী সফল, সে-ই সত্যিকারের সুখী।

আপনি কী অসুখী? তাহলে আমি যা করি তা একবার করে দেখুনতো কিছু যদি বদলায় কিনা? আমার নিজস্ব ফরমূলাটা বিনামূল্যে ছেড়ে দিলাম এখানে।

১) ‘কী নেই’ সেই ভাবনাটা বাদ দিয়ে ‘কী আছে’ সেটা ভাবুন। [আপনার গাড়ী-বাড়ী নেই, কিন্তু একটা সুখী পরিবার আছে অথবা আপনার সুখী পরিবার নেই, কিন্তু আপনি সুস্থ দেহে বেঁচে আছেন, পৃথিবীর রূপরস উপভোগ করতে পারছেন]

২) আপনার যা আছে তা কতজনের নেই সেটা ভাবুন। [আপনার ফুটফুটে একটা বা দুটো ছেলে-মেয়ে আছে, অনেকে লক্ষ টাকা খরচ করেও একটা সন্তানের পিতামাতা হতে পারে না]

৩) আপনার চেয়ে যার বেশী আছে তার দিকে না তাকিয়ে আপনার চেয়ে কম আছে তার দিকে তাকান। [আপনার এক বন্ধুর গাড়ী আছে, কিন্তু আরেক বন্ধুর চাকরীও নেই]

৪) আপনার বৈষয়িক চাহিদাকে সীমাবদ্ধ করুন। [বেশী টাকা, বেশী সম্পদ, বেশী সমস্যার জন্মদাতা]

৫) অতীতের আরো বড় সমস্যার কথা ভাবুন [আজকের সংকট কেবলই অর্থের, বানিজ্যের কিংবা চাকরীর কিংবা মনোমালিন্যের, অতীতে জীবন-মরন সংকটও গেছে যেটা অনেক বেশী মারাত্মক ছিল]

নির্ভয়ে বলছি এই মুহুর্ত পর্যন্ত আমি সুখী। আপনিও সুখী হোন। নীচের সংগৃহিত লেখাটি প্রতিদিন একবার পাঠ করুন, বাঁধিয়ে রাখুন আপনার অফিসে কিংবা বাসায়ঃ

Happiness is a journey, not a destination

So, treasure every moment that you have and treasure it more because you shared it with someone special, special enough to spend your time … and remember that time waits for no one.

So, stop waiting until you finish school,
until you go back to school,
until you lose ten pounds,
until you gain ten pounds,
until you have kids,
until your kids leave the house,
until you start work,
until you retire,
until you get married,
until you get divorced,
until Friday night,
until Sunday morning,
until you get a new car or home,
until your car or home is paid off,
until spring, until summer,
until fall, until winter,
until you are off welfare,
until the first or fifteenth,
until your song comes on,
until you’ve had a drink,
until you’ve sobered up, until you die,
until you are born again to decide that there is no better time than right now to be happy.

Happiness is a journey, not a destination

Sunday, January 18, 2009

মধ্যবিত্তের ইতিবৃত্ত

[একবার ভেবেছি লিখবো না। আবার ভাবলাম, ভাবনাগুলো সবসময় গোছানো থাকে না, লিখেই ফেলি। নিজের ব্লগের জন্যই লেখা। কিছুটা স্মৃতিকথা, কিছুটা পারিবারিক কথা, কিছুটা মধ্যবিত্ত জীবনের ইতিহাস, কিছুটা আত্মকথা, সব মিলিয়ে বলা যায় কথার খিচুড়ি, মধ্যবিত্তের সাতকাহন। ব্লগের জন্য কপি-পেষ্ট করলাম অনুভুতি শেয়ার করার জন্য। লেখাটা কিঞ্চিত বড় হয়ে গেছে, কিন্তু একসাথে না দিলে বোঝা যাবে না ]

মধ্যবিত্ত পূর্বপুরুষঃ
মধ্যবিত্ত জীবন একটা ফ্যাকড়া। আমি মধ্যবিত্ত, আমার বাবা মধ্যবিত্ত, আমার দাদা মধ্যবিত্ত, দাদার দাদাও মধ্যবিত্ত ছিল এবং পূর্বপুরুষের ইতিহাস যতদুর জেনেছি ততদুর মধ্যবিত্তই পেয়েছি। এমনকি প্রায় কয়েকশ বছর আগে যখন পটিয়ার আজিমপুর গ্রামে আমাদের বংশের গোড়াপত্তন হয় যাদের মাধ্যমে তারাও মধ্যবিত্তই ছিলেন। মোহাম্মদ শরীফ ও তোয়ার শরীফ নামের দুই ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের বংশ যাত্রা শুরু করে প্রায় চার-পাঁচশ বছর আগে, যারা স্থানীয় জমিদার আলী আকবর শাহের আমন্ত্রনে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন হিসেবে এখানে এসেছিলেন পশ্চিম পটিয়া থেকে। আমাদের গ্রামটা আগে মগদের এলাকা ছিল, মগদের কাছ থেকেই পুরো পাড়াটা আমার পূর্বপুরুষ কিনে নিয়েছিল বলে শুনেছি। ক'বছর আগেও আমাদের পুকুর পাড়ে বিশাল বিশাল দুটি তেঁতুল গাছ মগদের স্বাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে ছিল। ওর মধ্যে নাকি জ্বীনদের বসতি ছিল। মন্ত্রপড়া বড় বড় পেরেক পোঁতা আছে বলে জ্বীনকূল এখান থেকে বসতি গুটাতে বাধ্য হয়েছিল বলে এলাকায় প্রচার আছে। তবে গাছ দুটো এত বিশাল যে দশ-বারোজন গাছে উঠে লুকিয়ে থাকলেও নীচ থেকে কেউ দেখতে পাবে না। একেকটি গাছের বেড় ছিল অন্ততঃ বিশ হাত। ছেলেবেলায় খুব ভয় পেতাম ওই তেঁতুল গাছের নীচ দিয়ে হাঁটতে। এমনকি দিনের বেলায় বিশেষ করে ভর দুপুরেও গা ছম ছম করতো। রাতে তো বড়রাও তেঁতুল গাছের নীচে একা একা ঘুরতে ভরসা পেতো না।

আমার দাদা স্বাবলম্বী লোক ছিলেন। খুব উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না, কিন্তু লেখার হাত এবং হাতের লেখা এই দুটোই এত ভাল ছিল যে বৃটিশ আমলে দাদীর কাছে লেখা চিঠিতে ইংরেজীর ব্যবহার দেখে আমি টাসকি খেয়ে গিয়েছিলাম। সেরকম ইংরেজী হাতের লেখা আমি খুব কম দেখেছি এ যুগে। আমার বাবাও হাতের লেখার সে ধারাটা পেয়েছিলেন, তবে আমি বহু চেষ্টা করেও রপ্ত করতে পারিনি সেটা। আমার দাদারা ছিলেন পাঁচ ভাই। দাদা সবার ছোট ছিলেন। দাদাদের সবগুলো ভাই ভাগ্য অন্বেষনে রেঙ্গুন-আকিয়াব গিয়েছিলেন কোন না কোন সময়। ওখানে ব্যবসার পসার জমিয়েছিলেন সবাই। সবার শেষে দাদা ফিরে আসেন ১৯৪৭ সালে দেশ-ভাগের পর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দাদার বিশাল আর্থিক ক্ষতি হয়ে যায় বার্মায়। রেঙ্গুনে যখন বোমা পড়েছিল তখন দাদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়। দাদা নগদ কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে মাটির নীচের সুরঙ্গে প্রায় সাতদিন অর্ধাহারে কাটিয়ে বোমাবাজি থামার পর সব কিছু ফেলে দেশে পালিয়ে আসেন। যুদ্ধের পর ফিরে গিয়ে কিছুই পাননি আর । নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হয়নি আগের মতো। ততদিনে দেশ ভাগ হয়ে গিয়েছিল। এতদিন বিনা পাসপোর্টে আসা যাওয়া করলেও, শেষবার দেশে আসতে হয় পাসপোর্ট নিয়ে। প্রায় ধনী হয়ে যাওয়া আমার দাদা আবার মধ্যবিত্ত চক্রে ফিরে আসেন।

দেশে জমানো টাকা পয়সা দিয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ব্যবসা শুরু করেন আবার। বাবাকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসেন, শহরের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। বাবা সকালে স্কুল করে বিকালে দোকানে বসতেন। এভাবেই চলছিল। কিন্তু সেই পুরোনো জৌলুস তো ফিরে আসলোই না, বরং ঠগবাজদের পাল্লায় পড়ে দাদা বারবার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেন। শেষমেষ ব্যবসা বন্ধ করে গ্রামে ফিরে জমিজমা দেখাশোনা শুরু করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গ্রামেই বসবাস করেছেন। দাদা শহরে বসবাস পছন্দ করতেন না। তিনি সবচেয়ে বেশী ভয় পেতেন হাসপাতালকে। তার ভয় ছিল শহরে বাস করলে কোনদিন অসুস্থ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিক্যাল যেতে হবে, আর মেডিক্যাল থেকে জীবিত ফিরবেন না। তিনি গ্রামেই মরতে পছন্দ করতেন। তার ইচ্ছে পুরন হয়েছিল। কাকডাকা এক ভোরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গ্রামেই শান্তির মৃত্যু খুঁজে নেন তিনি। ১৯৭৬ সালে দাদার যখন মৃত্যু হয় আমার বাবা তখন আমাদের নিয়ে শহরে নাগরিক জীবন শুরু করেছেন। সিজিএস কলোনী আমাদের আবাসস্থল।

এখন আমার মনে হয় দাদাই আমাদের শহুরে জীবনের ভিত্তিস্থাপন করেন। কারন তিনি বার্মা থেকে ফিরে শহরে ব্যবসা শুরু করার সময় বাবাকে সেই যে শহর চিনিয়েছিলেন, সেটাই বাবার চোখ খুলে দিয়েছিল। দাদা নিজেও জানতেন না তিনি সেদিন তার উত্তরসূরীদের দিক পরিবর্তন করে দিচ্ছেন। পরে দাদার বাকী সন্তানেরা অর্থাৎ বাবারা পাঁচ ভাইই শহরমূখী হয়ে জীবনকে বদলে ফেলতে শুরু করে। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। দৃষ্টি খুলে দেয়া। চোখের বাঁধন উন্মোচন করে দেয়া। দাদা আর তার চার ভাই প্রায় একই রকম মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করেছেন ঠিকই, কিন্তু অন্য ভাইদের মতো শহর বিমূখ ছিলেন না। দাদার বাকী ভাইদের কেউ ছেলেমেয়েদের শহর চেনায়নি মানে শহরভিত্তিক কিছু করেনি। শহর-গ্রাম নিয়ে গ্রামে একটা বিতর্ক দেখা যায়। কেউ গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস করলে সেটা গ্রামের প্রতি আস্থাহীনতা বলে ধরা হয়, এই আস্থাহীনতা তাঁর পূর্বপুরুষের প্রতি একপ্রকার অবজ্ঞা বা অপমান বলেও ধরা হয়। তাই সম্ভব হলে কেউ চাইতো না গ্রাম ছেড়ে শহরে কিছু করতে। বার্মা গিয়েছো টাকা কামাতে, ফিরে আসো গ্রামে, যা করার এখানেই করবে। আমাদের পূর্বপুরুষ কী শত শত বছর বসবাস করেনি এখানে? তখন কী শহর ছিল? এসব ভাবনা গ্রামে খুব প্রাধান্য পেতো।

আমার দাদাও শহরে বসত করতে চায়নি। তাই শহরে তখন সস্তায় এত জমি থাকা সত্ত্বেও ( আগ্রাবাদে যেখানে আমাদের প্রাক-সাম্প্রতিক আবাস ছিল সেই এলাকায় দাদা একরের পর একর ধূধূ জমি কিনতে পারতেন) এক কাঠাও কেনার চেষ্টা করেননি, কারন তখন এসব এলাকায় ভদ্রলোকের বসতি ছিল না। কিন্তু বাবাকে শহরে নিয়ে এসে ছোট্ট যে কাজটি করে গিয়েছিলেন, সেটিই পরবর্তীতে পুরো পরিবারের দিকপরিবর্তনে বিশাল ভুমিকা রেখেছে। দাদার অন্যভাইয়েরা সেটা করেনি। ফলে তাদের পরবর্তী বংশধরেরা পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষাদীক্ষা সহ জীবনের সবক্ষেত্রে। এটা নিয়ে আমার একটা মনোকষ্ট আছে। একই মায়ের পেটের পাঁচ ভাই, এক সামাজিক অবস্থানে বসবাস ছিল অথচ এত পার্থক্য দুই জেনারেশান পরে। কারনটা শুধুমাত্র শিক্ষার আলো। শহরবাস এবং শিক্ষা দুটোই মানুষের জীবনে বিরাট ভুমিকা রাখে। শিক্ষার স্পর্শেই মানুষ আলোর স্পর্শ পায়। আমি বলি, এক মুহুর্তের একটা সিদ্ধান্তও পাল্টে দিতে পারে একটা শতাব্দী।

মধ্যবিত্ত পিতাঃ
আমার বাবাও মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করছিলেন। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সামান্য বেতনের চাকরী। কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য শহুরে মধ্যবিত্ত জীবন, আনন্দ বেদনার কাব্য। দশটায় অফিস যেতেন পাঁচটায় ফিরতেন। হঠাৎ বাবার মাথায় পোকা উঠলো বড়লোক হবার। ধুম করে চলে গেলেন বিদেশে। মা একটু দিশেহারা প্রথমে। একা কীভাবে শহরে থাকবেন। কেউ কেউ বললো শহরের বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যেতে। পরীক্ষামূলকভাবে কদিনের জন্য বোয়ালখালীতে নানাবাড়ীতে গেলাম। আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি আগ্রাবাদ কলোনী স্কুলে। দুচারজন বন্ধুবান্ধবও গজিয়েছে ইতিমধ্যে। গ্রামে গিয়ে স্কুল দেখলাম। ক্লাস ফোর কোথায়। এমা, এখানে দেখি খোলা হলরুমের মতো একটা ঘরে ওয়ান, টু, থ্রী, ফোর পাশাপাশি ক্লাস করছে। এ কেমন স্কুল। সিনিয়র জুনিয়র মানসম্মান নাই। আমার ভালো লাগলো না। পড়াশোনায় মন বসলো না। অবস্থা দেখে মা শহরে ফেরার সিদ্ধান্ত নিল। আবার আগের জায়গায়।

বাবা প্রায় আট বছর জাপানী কোবে ষ্টীল মিলে চাকরী করে যখন দেশে ফিরে আসেন তখন আমি কলেজে উঠে গেছি। বাবার হাতে অঢেল টাকা পয়সা। এমনিতেই বিদেশে যাবার আগেও পাকিস্তানী আমল থেকেই বাবা সুটেট বুটেড মানুষ, আগ্রাবাদ হোটেলের মতো থ্রী-ষ্টার হোটেলে তাঁর নিত্য যাওয়া আসা। এখনতো আরো বেড়েছে জৌলুস। দেদারসে খরচ করতো বাবা। টাকা ধার নেয়ার জন্য লোকে লাইন দিত। সুখের পায়রাদের সেই প্রথম ব্যাকরন বইয়ের বাইরে উড়তে দেখেছি। বাবা ছিল দিল খোলা উদার। টাকাকে ধরে রাখার কোন চেষ্টা নেই। মধ্যবিত্তের কাটাতারের বেড়া পেরিয়ে আমরা প্রায় বড়লোক হয়ে গেছি। গ্রামে শহরে প্রচুর জমিজমা কেনা হয়েছে, বাড়ী করা হবে শহরে। ব্যবসায়ে হাত দিচ্ছেন বাবা। চারিদিকে স্বচ্ছলতার উৎসব। বাবার বন্ধুরা ব্যবসায় সফলতার মুখ দেখতে শুরু করছিল বিশেষ করে কেডিএস এবং এস এ গ্রুপের মালিক । তারাও উৎসাহ দিল ব্যবসায় ঢোকার জন্য। উৎসাহ পেয়ে বাবা নানান রকম ব্যবসায় হাত দেয়া শুরু করলো। খাতুনগন্জ, মাদারবাড়ী, কদমতলীতে আমদানী পন্যের ব্যবসায় দাড় করানোর জন্য প্রানান্তকর চেষ্টা। ব্যবসা বিনিয়োগের পাশাপাশি বাকী টাকা দিয়ে ছোট্ট একটা বাড়ীও করে ফেললেন আগ্রাবাদের ১০ কাঠা প্লটটাতে। এরপর মাস যায়, বছর যায়। ব্যবসা থেকে ভালো সংবাদ আসে না। একের পর এক ক্ষতির সংবাদে বাবা স্থবির বিমুঢ় হয়ে যেতে থাকে। ক্ষতি পোষাতে বিক্রি করতে হয় একের পর এক জমি। তবু ক্ষতি পুষিয়ে ওঠে না। বাবার মুখের দিকে তাকালে কষ্ট হতো তখন। বাবা খুব সিগারেট খেতেন। এত বেশী যে সর্বাধিক ভোক্তা হিসেবে কোন এক বছর 555 কোম্পানী থেকে ডিনার সেট পুরস্কার পর্যন্ত পেয়েছিলেন। সেই বাবা এখন গোল্ডলীফও কিনতে পারেন না। ষ্টার ফিল্টার ধরেছিলেন শেষে। কী অদ্ভুত মানুষের জীবন। এক স্বচ্ছল সফল মানুষ ক'বছরের মধ্যেই সবকিছু হারিয়ে ফিরে আসে মধ্যবিত্তের টানাপোড়েনে। যে ব্যাংকে বাবার লক্ষ লক্ষ টাকা জমা থাকতো সেখানে আমি একদিন যখন দুশো টাকার একটা চেক ভাঙাতে গেছি ব্যাংকের অফিসার কেমন করে আমার দিকে তাকালো, করুনাই হবে হয়তো! মৃত্যূর আগ পর্যন্ত বাবা মধ্যবিত্তই ছিলেন।

পহেলা বৈশাখে আমি চিরকাল উৎসবের মেজাজে কাটিয়েছি। গ্রুপ থিয়েটারে যখন ছিলাম তখন ডিসি হিলে আগের দিন বর্ষবিদায় পরের দিন বর্ষবরন ছিল নিয়মিত প্রিয় অনুষ্ঠান যাতে সক্রিয় অংশগ্রহন ছিল আমার। চাকুরীতে ঢোকার পর থেকে উৎসবে যোগ দেয়া হতো না, কারন পহেলা বৈশাখে আমার বিদেশী কোম্পানীর ছুটি নাই। তবু পরিবারের অন্যান্য সদস্যের কেউ না কেউ তাতে অংশ নিত সানন্দে। সেবার পয়লা বৈশাখে আমার সব বোনেরা ভোরে চলে গেল ডিসি পার্কে। ওরা কখনো সবাই একসাথে যেতো না বাসায় আম্মাকে একা রেখে। কেউ না কেউ থাকতো আম্মার সাথে। সেবারই প্রথম গেল। আমি তখনো ঘুমিয়ে। গতকাল বাংলাদেশ কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ান হয়েছে সেই সুখ গায়ে মেখে আরো একটু গড়িয়ে নিচ্ছি। অফিসে যাবার জন্য বেরুবো সাতটার একটু পরে। হঠাৎ মার কন্ঠ পেলাম, উদ্বিগ্ন। বললো, দেখতো তোর বাবা ঘুম থেকে উঠছে না কেন? আমি ভাবলাম, বাবা তো দেরীতেই উঠে, এত তাড়াতাড়ি ডাকার দরকার কি। তবু মার কন্ঠে কি একটা যেন ছিল, আমি গেলাম বাবার ঘরে। মশারি আধখোলা, বাবা শুয়ে আছে ঘুমে। অস্বাভাবিক লাগলো না। কাল রাতে বাবা হঠাৎ প্রচন্ড বমি করে, ব্লাড প্রেশার বেশী ছিল বোধহয়। আমরা মাথা ধুয়ে দিলে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেই ঘুম যে আর ভাঙবে না, কে জানতো।

আমি যখন বাবা ঠান্ডা কপালে আমার হাতটা রাখি, তখনো আমার কোন ধারনা নাই কী দেখতে যাচ্ছি। আমি বাবাকে গা ধরে ঝাকালাম, ডাকলাম। বাবা বাবা। নড়ছে না। নাকের কাছে হাতটা নিলাম, একি? গরম নিঃশ্বাস কই? হাত ধরলাম, পালস খুজলাম। আমার মাথা খারাপ হয় নি তো। না না। আবার দেখতে হবে। আমি মার দিকে তাকালাম। বোবা আমার ভাষা। আমি বললাম, ডাক্তার ডাকতে হবে। আমি দৌড়ে পাশে এক বন্ধুর বাসায় গেলাম। ইনামের বোন ডাক্তারী পাশ করেছে মাত্র। বাসায় মা ছাড়া একটা প্রানীও নেই। আমি পাগলের মতো ইনামের বাসায় গিয়ে বললাম, "বাবা তো ঘুম থেকে উঠছে না। মুন্নীকে ডেকে বল সে যেন একটু দেখে কী হয়েছে, অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে বোধহয়।" ওখান থেকে মেজ চাচার বাসায় ফোন করলাম, বললাম- 'বাবা ঘুম থেকে উঠছে না। তোমরা একটু আসো।' আবার আরেক দৌড়ে গেলাম আরেক বন্ধু পারভেজের বাসায়। ওকে বললাম তুই একটু আমার বাসায় যা, বাবা ঘুম থেকে উঠছে না, কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। আমি মোড়ে এসে একটা টেক্সী নিলাম। ছোট চাচাদের বাসায় ফোনে পাইনি, টেক্সি নিয়ে গেলাম ওদের বাসায়, ওরা সবাই অবাক আমাকে দেখে। বললাম, 'বাবা ঘুম থেকে উঠছে না, তোমরা একটু যাও, কি হয়েছে জানি না।' আমি এই একলাইন বলে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম। কোথায় যাবো? মনে পড়লো ডিসি পার্কে যেতে হবে। আমার বোনেরা সবাই ওখানে আছে, ছোটবোন সুমীর গান গাওয়ার কথা আজ। ওদের নিয়ে আসতে হবে।

আমি পার্কের কাছাকাছি যেতেই প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যে পড়লাম। টেক্সী দুরে দাঁড় করিয়ে হাঁটা দিলাম ভেতরের দিকে। এত মানুষ, এত মানুষ। কোথায় খুঁজে পাবো ওদের হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে। সবাই হাসি-খুশীতে উচ্ছল। কিন্তু আমার চোখ পড়ছিলনা কিছুতে। আমি কাঁদছিলাম না। কিন্তু আমি কিছু ভাবছিলামও না। আমার ভাবনা ছিল শূন্য, একেবারে শূন্য। আমি হাজারো মানুষের ভীড়ে উদভ্রান্তের মতো এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে খুঁজছি আমার বোনদের। কোথায় ওরা? কীভাবে পাবো এত মানুষের ভীড়ে? আজ কী শাড়ী পরে এসেছে ওরা, হলুদ না বাসন্তী? পহেলা বৈশাখে মেয়েরা কী রঙের শাড়ি পরে? আমার কিছুই মনে পড়ছিল না। আমি বিভ্রান্ত হয়ে দাড়িয়ে আছি ভিড়ের মধ্যে। লোকজন আমাকে দেখে কী ভাবছিল জানি না। কিন্তু আমি কিছু ভাবছিলাম না। আমি ছিলাম শূন্য, একেবারে শূন্য মানব। আমি জানিনা আমার বাবার কী হয়েছে। শুধু জানি বাবা ঘুম থেকে উঠছে না, উঠবে না। বাবা নেই। কীভাবে আমি ওদের মুখ দেখাবো এখন, কোন মুখে বলবো সেকথা। ওরা বাবাকে জীবিত জেনে ঘর থেকে বেরিয়েছে সকালে। পহেলা বৈশাখের এই উৎসবে এসেছে, ১০ বছর বয়সী সবচেয়ে ছোটবোন দিশা আর কখনো আসেনি পহেলা বৈশাখের মেলায়। ওর বায়না ছিল আপুদের কাছে এবার নিয়ে যেতে হবে ডিসি পার্কের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে। তাই ওকেও নিয়ে এসেছে এই নববর্ষের উৎসবে। এই বিপুল উৎসবে আমি এখন কীভাবে তাদের বলি, বাবা আর নেই? বাবা ছিল, এখন নেই। কিভাবে বলি আমাদের বাবা আমাদের না বলে কোন অজানায় চলে গেছে, এই পৃথিবীতে আমরা আর কোনদিন খুঁজে পাবো না আমাদের প্রিয় বাবাকে। কোথাও না। কীভাবে করি আমি সেই কঠিন উচ্চারন।

ঠায় কয়েক মিনিট দাড়িয়ে হঠাৎ বোধ হলো, আমি এখানে কি করছি? বাসায় মা একা, দখিনের বেডরুমে বাবার পাশে বসে আছে, বাবা আমার চির ঘুমে। নিশ্চয় এঘুম ভাঙবে না। আমি এখন ফিরে যাই, ওদের খুজে পাবো না বোধহয়। না জানি মা একা একা কী করছে। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুঁজলাম আবার শেষবারের মতো। তখনি চোখ আটকে গেল এক জায়গায়। ওই তো দিশাকে দেখা যায়। হাসছে। ওরা সবাই ওখানে বসে গল্প করছে, গান শুনছে। আমি এখন ওখানে গিয়ে দাঁড়াবো। ওরা আমাকে দেখে অবাক হয়ে যাবে। বলবে, ভাইয়া তুমিও চলে এসেছো অফিস ফাঁকি দিয়ে? না, আমি ওদের অবাক হতে দেবো না। আমি মুখটা নির্বিকার করে থাকবো। এই উৎসবের মেলায় আমি কোন ক্রন্দনের সুত্রপাত হতে দেবো না। যত কান্না ওরা বাসায় গিয়ে কাঁদুক। বাইরের মানুষের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটাবো না আমরা ক'ভাইবোন। আমি এখন কিছুই বলবো না।

আমি সোজা ওদের কাছে গিয়ে বললাম, "চল এখন বাসায় চল, বাবার অসুখ করেছে।" কান্না চেপে কী করে শব্দগুলো উচ্চারন করেছিলাম এখন অবাক লাগে। আমি একফোঁটা কাঁদিনি। আমি শক্ত, শূন্য হয়ে ছিলাম। ওরা আমার পিছু পিছু এসে টেক্সীতে উঠলো। পুরো রাস্তা নিশ্চুপ। একটা কথাও বলিনি আমরা। নিঃশব্দের উচ্চারনগুলো কিভাবে ভাব বিনিময় করেছিল আজ মনে পড়ে না। বাসার সামনে যখন টেক্সীটা থামলো, গেটের সামনে দেখলাম অনেক মানুষের ভীড়, অনেক মানুষ। আর আমার উৎসব ফেরত বোনেরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে দৌড়ে ছুটলো বাসার দিকে। তারপর?...........থাক, আর বলতে পারছি না। বুকটা ভার হয়ে গেছে এত বছর পরও।

তবে সেইদিন থেকে পহেলা বৈশাখ আমাদের জীবনে হারাম হয়ে গেল। আমরা আর কখনো পহেলা বৈশাখে হাসতে পারিনি। সবাই যখন পান্তা ইলিশে ব্যস্ত থাকে, আমরা তখন ছুটে যাই বাবার কবরের পাশে যেখানে আমাদের খুব প্রিয় বাবা একাকী শুয়ে আছে অনেক বছর ধরে। গিয়ে অপরাধী মনে চুপচাপ কিছুক্ষন কাটিয়ে চলে আসি। বাবার তো এরকম একা থাকার কথা ছিল না এসময়ে। সেই আমার মধ্যবিত্ত বাবা।


মধ্যবিত্ত আমিঃ
বাবার যখন মৃত্যূ হয় তখন আমার মাত্র নতুন চাকরী। বেতন খুব কম। এই টাকায় সংসার চলবে না। ছোট চার বোন পড়াশোনা করছে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। তাদের সবকিছু দেখাশোনার ভার এখন আমার উপর। বাবা থাকতে আমি কোন কাজ করতাম না বাসায়। কোনদিন ইলেকট্রিক, গ্যাস, ওয়াসার বিল দেই নি। এমনকি জানিও না কোথায় কিভাবে দিতে হয়। সব কিছু বাবাই করতেন। এমনকি বাজারটাও। আজ এতকিছু আমি কী করে সামলাবো। ভাবনাগুলো চাপা দিয়ে শক্ত হবার চেষ্টা করলাম। বাবার মধ্যবিত্ত জীবনের অবসান হলো, এবার আমার মধ্যবিত্ত জীবনের শুরু। জীবনের আসল পরীক্ষা। শক্ত হাতে ধরতে হবে জীবনের হাল। এতগুলো মানুষের ভার যেন আমি বইতে পারি। আমি যেন ভেঙ্গে না পড়ি। আমার কাধ যেন হয় অনেক শক্ত, মজবুত।

আমি পেরেছিলাম। হ্যাঁ, একে অদ্ভুত এক দৈবী সহায়তা বলবো আমি। যখন যা দরকার আমি পেয়ে গেছি। কীভাবে যেন সব হয়ে গেছে। বাবার মৃত্যূর এক মাসের মধ্যে আমার প্রমোশন হলো। ব্যাপক ইনক্রিমেন্ট। গোটা চাকরী জীবনে এই বিষ্ময় কাটেনি। ঠিক যখন দরকার তখনি পেয়ে গেছি। এরপরও পেয়েছি। পেয়েই গেছি একের পর এক। প্রয়োজন তৈরী হবার আগেই পাওয়া। কখনো কোন কাজে সমস্যা হয়নি আমার। একদিনও অর্থকষ্ট দেখতে হয়নি আর। তরতর করে না হলেও ধাপে ধাপে উপরে উঠেছি। নিজ পায়ে দাড়িয়েছি। যতটুকু শক্ত হয়ে দাড়ানোর কথা ছিল, তার চেয়েও বেশী। যোগ্যতার চেয়ে বেশী পেয়েছি আমি। যতটুকু পাবার কথা ছিল, তার চেয়ে বেশী পেয়ে গেছি। আমার আর কিছু চাইবার নাই জীবনের কাছে। আমি ভাবি পেয়েছি অনেক বেশী দিয়েছি অনেক কম। হিসেবের সমীকরনটা মেলাতে হবে এবার বাকী জীবনে। তবে কেউ যেন না ভাবেন এই পাওয়াটা আর্থিক পাওয়া, এই পাওয়াটা বরং অনেক বেশী আত্মিক।

আমি এখনও মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করি, মধ্যবিত্ত জীবনটা উপভোগ করি। মধ্যবিত্ত জীবনে টানাপোড়েনের এমন কিছু অনুভুতি আছে যা মানুষের চেতনাকে জাগিয়ে রাখে। আমি বড়লোক হতে ভয় পাই কারন বড়লোক মানে বেশী টাকা, আর মানুষের অনেক বেশী টাকা থাকাটা ভয়ংকর। একজন মানুষের সেই পরিমান টাকা থাকা উচিত যে পরিমান টাকা সে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। মানুষের উচিত টাকাকে নিয়ন্ত্রন করা। কিন্তু টাকা যখন মানুষকে নিয়ন্ত্রন করে, মানুষ তখন অমানুষ হয়ে যায়। সেজন্যই আমি অনিয়ন্ত্রিত টাকাকে ভয় পাই এবং অনুপার্জিত টাকায় আস্থা নাই। অর্থের চেয়ে সম্মানের প্রতি জোর দেয়া চাই, দুর্নীতির হাতছানিকে গুডবাই জানাই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি মধ্যবিত্ত জীবনই যাপন করতে চাই, সবকিছু পেয়ে যাওয়া বোরিং মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। জীবনের সব চাওয়া যেন কানায় কানায় পূর্ন না হয়। একটু অপূর্নতা জীবনকে সমৃদ্ধ করে, সুন্দর করে। মধ্যবিত্ত ছাড়া কে আর এই অপূর্নতার স্বাদ পায়? কে না জানে - খিদে না থাকলে খাওয়ারও আনন্দ নেই।

তবু কেন শিবির করবেন?

আপনি সুন্দর জীবন যাপন করেন। সৎভাবে আয় রোজগার করেন। সদা সত্য কথা বলেন। পরিবারের সব দায়িত্ব পালন করেন। নিয়মিত নামাজ-রোজা করেন। বন্ধুবান্ধব আত্মীয় প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রাখেন। লোভ-হিংসা-অহংকার করেন না। আপনার সুন্দর সুন্দর শখ আছে। পান-সিগারেট মদ-গাঁজার অভ্যেস নাই। ঘুষ-দুর্নীতি করেন না। ফটকাবাজি-জোচ্চুরি করেন না। আপনি সৎ মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত।

কিন্তু আপনি জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন করেন। কেন করেন? সমর্থন করেন কারন আপনি জামায়াত-শিবিরের কর্মকান্ডে বিশেষভাবে মুগ্ধ। কারন জামায়াত বলে তারা সৎলোকের শাসন চায়, আল্লাহর আইন চায়। আপনিও তা বিশ্বাস করেন এবং স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু আপনার বিশ্বাস কি সঠিক? আপনি কি নিশ্চিত আপনি কোথাও ভুল করছেন না? আপনি কি নিজে পড়াশোনা করে, নিজের বিবেক খরচ করে ভেবে দেখেছেন আপনার বিশ্বাসে কোন ফাঁক আছে কিনা? জামায়াত সম্পর্কে আপনি কী সব জানেন? আসলেই জানেন, গভীরভাবে? আপনাকে প্রথম কে বলেছিল জামায়াত সম্পর্কে? নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্য কেউ, নাকি জামায়াত সংগঠনের কেউ, অথবা কঠিন আওয়ামী বিদ্বেষী কেউ? আপনি কার কথায় জামায়াতের উপর আস্থা অর্জন করেছেন?

যিনি আপনাকে বুঝিয়েছেন, তিনি নিশ্চয় বলেছেন ১৯৭২-৭৫ সালের শেখ মুজিবের দুঃশাসনের কথা, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের কথা, আওয়ামী-বাকশালী শক্তির অপকর্মের কথা, শেখ কামালের ব্যাংক লুটের কথা, মেজর ডালিমের বউকে হাইজ্যাক করার কথা। আপনি ছোট ছিলেন কিংবা জন্ম হয়নি তখন তাই আপনার যাচাই করার উপায় নাই, তাই আপনি শুধু বিশ্বাস স্থাপন করেছেন শোনা কথার ওপর, কিংবা সুলিখিত জামাতী পুস্তকের ওপর। এখনতো আপনি যাচাই করতে পারেন শোনা কথাগুলো। যাচাই করতে পারেন কেন আপনাকে এতগুলো মিথ্যা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়েছিল। কার স্বার্থে? যাচাই করেছেন কি? যিনি আপনাকে শিবিরে এনেছেন, তিনি কী একবারও বলেছেন জামায়াত একাত্তরে কী করেছিল? জামায়াতের যারা পরিচালক, তারা কিভাবে একাত্তরে হাজার হাজার মানুষের হত্যার সাথে জড়িত ছিল সেটা কি আপনাকে বলেছে? নিশ্চয়ই বলেননি। নিশ্চয়ই বলেননি ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে রাজাকার, আল-বদরের সৈনিকেরা নিরীহ বুদ্ধিজীবিদের কিভাবে চোখ বেধে বধ্যভুমিতে নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল।

বরং আপনি হয়তো শুনেছেন জামায়াত কেবল একাত্তরে ইসলামের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই পাকিস্তানের হাতে হাত রেখে ভারতীয় চক্রান্ত রুখে দেয়ার চেষ্টা করেছে মাত্র। হয়তো বলেছে রাজাকার-আলবদরদের সাথে জামাতের কোন সম্পর্ক নেই। জামায়াত একটা মুসলমানকেও হত্যা করেনি একাত্তরে। জামায়াত স্বাধীনতার বিরোধিতাও করেনি আবার সমর্থনও করেনি। এটা কোন অপরাধ নয় কারন শেখ মুজিবও তো স্বাধীনতা চায়নি। শেখ মুজিবও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখে গেছেন। ২৫শে মার্চে কোন গনহত্যা হয়নি, কেবল ভারতীয় দালাল খুঁজে খুঁজে গুলি করে মারা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। কোন মুসলমান মারা যায়নি, সব নাসারা হিন্দু ভারতীয় দালালকে কতল করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত যোগ দেয়নি কারন ওটা ছিল ভারতীয় নীল নকশার অংশ। নয় মাসের রক্ষক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ আসলে পাকিস্তানের উপর, মুসলিম ঐক্যের উপর ভারতীয় আগ্রাসনের প্রচেষ্টা মাত্র। নয়মাস পর ভারত চক্রান্ত করে পাকিস্তানকে আত্মসমর্পন করিয়েছে তারপর সাড়ে তিন বছর অরাজকতার মধ্যে থেকে বাংলাদেশকে শাসন করিয়েছে ভারতীয় দালাল সরকার দিয়ে। বাংলাদেশ সত্যিকারের মুক্ত হয়েছে ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫। বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড ছিল ভারতীয় মদদে আওয়ামী চক্রান্ত। ইত্যাদি ইত্যাদি শুনেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন আপনি।

তবে আপনি কোন না কোন ভাবে উপরের কথাগুলো বিশ্বাস করেন। আপনি মনে করেন জামায়াত একাত্তরে কোন ভুল করেনি। ইসলামের স্বার্থ রক্ষার জন্য কিছু অনিয়ম করতে হয়েছে মাত্র। যেসব অনিয়ম করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশী বাড়িয়ে বলা হয়েছে ইতিহাসে। আসলে এত মানুষ মারা যায়নি একাত্তরে। জামায়াত তেমন বড় কোন অন্যায় করেনি। এটাই হয়তো আপনার সরলভাবে সৎভাবে বিশ্বাস করেন।

কিন্তু আপনি কি নিশ্চিত আপনার এই বিশ্বাসে কোন ভুল নেই? কোটি মানুষের সাক্ষ্য, লক্ষ মানুষের ভাষ্য, হাজার মানুষের বই, সব মিথ্যা আর জামায়াতের কয়েকটা লোকের বানোয়াট কথা সত্যি মনে হয়? আপনি কি জানেন ভুল বিশ্বাসের কারনে আপনার ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে? আপনি কী সেই উদ্ধৃতিটা শুনেছেন -একটা মিথ্যায় বিশ্বাস করার চেয়ে সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়াও ভালো?

প্লীজ, আপনাকে যতটুকু পড়তে দেয়া হয়েছে, তারচেয়ে একটু বেশী পড়ুন। সত্য যাচাই করে দেখুন। বাইরে চোখ মেলে তাকান। আপনাকে শিবির করতে হবে কেন? আপনার যেসব গুনাবলী আছে, আপনি সহজেই আলোকিত মানুষ হিসেবে বাঁচতে পারবেন। ইহকাল পরকাল সবদিকেই আপনার রাস্তা সুপ্রশস্ত থাকবে। আপনি বরং শিবিরের মতো ভন্ড অনৈতিক দলকে সমর্থন করে নিজের বেহেশতে যাবার সুযোগকেই হুমকি মুখে ফেলে দিচ্ছেন। আপনার শিবির করার দরকার নাই, আওয়ামী লীগ করার দরকার নাই, বিএনপি করার দরকার নাই, আপনি মানুষ হিসেবে, মুসলমান হিসেবে নিজেই নিজের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ন হয়ে বেঁচে থাকতে পারেন।

আপনার বিবেকের জন্য কয়েকটা প্রশ্নমালা দিলাম-

যারা একটা মিথ্যাকেও সমর্থন করতে পারে তাদের কী সৎ মানুষ বলা যায়?
যারা একটা সত্যিকেও গোপন করতে পারে তাদের কী সৎ মানুষ বলা যায়?
আপনি যাদের সমর্থন করেন তারা কি একটা মিথ্যাকেও সত্যি বলে নাই?
আপনি যাদের সমর্থন করেন তারা একটা সত্যকেও গোপন করে নাই?

আপনি একজন মুসলমান। আপনি জানেন মুসলমান হবার প্রধানতম যোগ্যতা হলো ঈমান বা বিশ্বাস। এই বিশ্বাস শুধু আল্লাহতে বিশ্বাস না। এই বিশ্বাস হলো আল্লাহসহ অনেকগুলো বিশ্বাসের সমষ্টি। আপনার সবগুলো বিশ্বাসের মধ্য একটা বিশ্বাসও ভুল থাকে, আপনার ঈমান দুর্বল হয়ে যাবে না? আপনি জামায়াতকে সমর্থন করতে গিয়ে আপনার এতগুলো গুনাবলী সমৃদ্ধ ঈমানকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন না তো? আপনি কী আজাজিল ফেরেশতার ঘটনাটা জানেন? আপনি কি এজিদের চরিত্র পড়েছেন? আপনি কি জানেন এজিদ মুসলমান ছিল?

আপনি শিবির হলে আপনি ঈমানদার হতে পারেন না। আপনি ঈমানদার হলে শিবির সমর্থন করতে পারেন না। ‘ঈমানী শিবির’ কিংবা ‘শিবিরের ঈমান’ শব্দ দুটি সোনার পাথর বাটি। তবু কেন শিবির করবেন?

বঙ্গবন্ধুর ভাষন

ইলিশ পোলাও খুব প্রিয় আমার। প্রতিদিন দিলে প্রতিদিন খেতে পারবো। প্রতিদিন মানে কতদিন? ছেলেবেলায় এরকম বায়না ধরাতে মা বললো ঠিক আছে তোকে প্রতিদিন খাওয়াবো। মা রাঁধতো আমি মজা করে খেতাম। একদিন, দুইদিন, তিনদিন। চারদিনের দিন মোচরামুচরি শুরু হলো, পাঁচদিনের দিন গলা দিয়ে নামছে না, ছয়দিনের দিন বললাম, মা জীবনে আর কখনো ইলিশ পোলাও খাবো না, এই কান ধরলাম। সেই থেকে ইলিশ পোলাও দেখলে আমার বমনেচ্ছা জাগে।

বঙ্গবন্ধুর ভাষনও আমার খুব প্রিয়। প্রতিদিন বাজালে প্রতিদিন শুনতে পারবো। কিন্তু প্রতিদিন মানে কতদিন? একদিন, দুইদিন, তিনদিন। তারপর? উত্তরটা আপনারা অনুমান করতে পারেন।

সুতরাং আমি বর্তমান সরকারকে অনুরোধ করবো বঙ্গবন্ধুর ভাষন প্রচারের উপর এখুনি নিয়ন্ত্রন আরোপ করতে। এই ভাষনটি গত ২৪ ঘন্টায় আমি ৩০ বার শুনেছি রেডিও টেলিভিশনে। তেলবাজরা খুব দ্রুত নামিয়ে দেবে জনপ্রিয়তার পাল্লা। দয়া করে এই মহান মানুষটাকে সস্তা করে ফেলবেন না।

বেদনার্ত হবার কিংবা বেদনা ভোলার অধিকার

একদিন.
১) হাড়তো জিরোয় না, কম্পুনি দিতে দিতেই সারারাত পার করিয়াছে। হাড়ের কী দোষ, হাড়ের উপর চামড়াখানা হাড়কে যথাযথ উপায়ে রক্ষা করিতে ব্যর্থ হইয়াছে। কম্পমান চর্মের উপর ঠক ঠক করিয়া সারারাত ঝাল ঝাড়িতেছে ২০৩ খানা শুকনো হাড়। চামড়াই বা কি করিবে, বেচারা একতিল উষ্ণ চর্বিযুক্তি মাংস কবে কোন কালে দেখিয়াছে তার কি ঠিক আছে। ফলাফল হাড়ে-চর্মে রাতব্যাপী ঠোকা-ঠুকি, ঠোকা-ঠুকি। চামড়ার উপরে কুয়াশায় আধভেজা কাঁথাখানা ঢুপ করিয়া বসিয়া আছে, যদিচ তাহা চাপিয়া রাখা বাদে আর কোন ভুমিকা রাখিয়াছে কিনা সন্দিহান। ঠকঠক তো থামে নাই একদন্ড। তবু মিনসের বাচ্চা দুটোরে চাপিয়া চুপিয়া ঢাকিয়া রাখিয়াছে। একটার নয় মাস আরেকটার দুই বছর। মরনঘুমে ঠাঠাইয়া পড়িয়া আছে দুটো। বাপের কুনো পাত্তা নাইক্কা। বাপ কেডা কেলা কইবো। আহাতের সুময় কুন বেডারটা কহন লাগিয়া গিয়াছে। বেডার দুষ নাই, সিকিমের মার একা একা লাগে জীবনে, বুড়োকাল আসিলে দেখিবে কে, এই চিন্তায় ঘুম আসিতো না। সে-ই চালাকিডা করিয়া দুইটা বাইচ্চা বাগাইছে মিনসেগো থেকে। মিনসেরা কাম সাইরা কথা কয় না আর। লাগাবি তো লাগাবি, কথা কবি না ক্যান। আমিও কম নাই, চালাকিডা করছি। দুই মিনসের কাছ থেকইক্যা দুইটা বাগাইছি। অহন অফুরাৎ জীবন তার এই নন্দনকাননের ফুটপাতে। সামনে সবুজ পাহাড়ের আধখানা খাড়াই। মুয়াজ্জিনের ডাক শেষে আধারেও একটু আশার আলো, শালার সূয্যিমামা আইবে কতক্ষন পর। হাড়-চামড়ার ঠোকা-ঠুকি কমিবে। ভোরের আলো ফুটিতে থাকে ধীরে ধীরে। ক্যাএএএএএ .......করে আধভেজা কাঁথায় নাড়ন দেয় ছুডো মিয়া। উল্টিয়ে দেখে পুরানা পত্রিকার বিছানায় মল-মুত্রের ছরছরানি। মর জালা আকাইম্যার বাইচ্চা-চিৎকার কইরা উঠে সিকিমের মা, চিরিৎকারের চোটে ধাম করি উঠি বসে ২ বছরের সিকিম। মাআআআ.... মনা আগু দিসে। মা'র পাল্টা ধমক আবার, চুপ হারামির পুত বানাজ্যার বাচ্চা। পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ফেরত আসে সেই চিৎকার। ফুটপাতে হাঁটা মানুষ ফিরে তাকায়, পার্কে সাদা গেন্জী গায়ে জোয়ান বুড়ো ব্যায়ামী মানুষের কেউ কেউ চোখ ফেরায়। দুহাতে নেংটো বাচ্চার হাত ধরে ঝুলিয়ে রাখে সিকিমের মা। প্যান্টুতো ভিজিয়া গেইছে, গেন্জীটাও ভিজা। রোদ উঠিলে শুকাইবে প্যান্টু, তার আগে পেশাবের পানি ঝরায়া লই শরিল থেইক্যা।

২) সেই মুহুর্তে হুশ করে বেরিয়ে যায় নীল রঙের একটা সিডান গাড়ী। সময় সাড়ে ছটা পেরিয়েছে। গাড়ীর জানালা থেকে এক জোড়া নজর ফুটপাতে উপর দিয়ে গড়িয়ে যেতে ঝুলন্ত অর্ধনগ্ন শিশুটির সাথে আটকে যায় এক সেকেন্ড কিংবা আধসেকেন্ড। দৃশ্যটি ইমরাজের চোখে ভাসমান থাকে অফিস যাওয়া অবধি। সেই শিশুটি ঝুলন্ত অর্ধনগ্ন দেহ। ওই শিশুটা, ওই যে ঝুলানো শিশুটা, শীত নাই ওর? অফিসগাড়ির বদ্ধ আরামে উল জ্যাকেটের উষ্ণতার ভেতরেও শিউরে উঠে ইমরাজ। সামান্য দৃশ্যটা নাড়া দেয় তাকে প্রবলভাবে। ওর কিছু একটা করতে ইচ্ছা করে। ইচ্ছে করে এখুনি ছুটে গিয়ে শিশুটির গায়ে নরম কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়। আহারে কী কষ্ট ওদের, কী কষ্টে আছে খোদা। করুন চিন্তায় ডুবে যায় সে। কিছু একটা করতেই হবে এবার। বহুবছর ভাবছে। নিজের যা কিছু আছে তার থেকে কিছু একটা করার তাগিদ। এই শুক্রবার ভোরেই চলে আসবে ডিসি পার্কের সামনে। আগের রাতে কিনে রাখবে উষ্ণ কম্বল আর শীতের পোষাক। গেলবার রংপুরে পাঠিয়েছিল কিছু শীত কাপড়। এবার নিজ শহরে। গাড়ী অফিসে পৌছে কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরের উষ্ণতায় প্রবেশ করে।


পরদিন.
১) কুয়াশায় আধভেজা কাঁথার আড়ালে ঠকঠক সিকিমের মা। ত্রিশেই বুড়িয়ে শরীর। সিকিম, সিকিমের নয় মাসের ভাই ঘুমে কাদা জড়াজড়ি। কাল রাতে কেউ আসেনি সিকিমের মার কাছে। বাচ্চার মার সাথে কেউ শুতে চায় না। খাওয়া তাই যথেষ্ট মেলেনি। ক্ষুধায় ঘুম আসেনা। কটকট করে কাঁপতে কাঁপতে সূয্যিমামার অপেক্ষা করে সিকিমের মা।

২) সেই মুহুর্তে হুশ করে বেরিয়ে যায় নীল রঙের সিডান গাড়ীটা। সাড়ে ছয়টা বাজে। পত্রিকার পাতায় ছিনতাই-খুনের ঘটনায় নিমগ্ন ইমরাজ। দেশটা রসাতলে গেল। নতুন সরকার আসার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেছে পুরোনো রোগ। নাহ, এবার দেশটাকে বদলাতে হবে। উন্নত ভাবনায় ডুবে যায় ইমরাজ। জানালার বাইরে চোখ যায় না, গেলে দেখতে পেতো ঝুলন্ত শিশুটিকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না আজ। ফুটপাতে শুধু একটা কুয়াশাভেজা কাঁথার পিন্ড নড়ছে ঠক্ ঠক্ ঠক্।

শুক্রবার.
১) বেলা বাড়লে সিকিমের মা খুব খুশী রোদের দেখা পেয়ে, সারারাতের ঠকঠকানি একটু কমেছে। কাল রাতে তিন জন থেকে ইনকাম পেয়েছে বলে কোচড়ে আজ টাকার ঝনঝনানি। মাছ কিনবে সে আজ।

২) ইমরাজ সাহেব দেরীতেই ওঠেন ছুটির দিনে। সাড়ে আটটা বাজে। চা খেয়ে চ্যানেল আইতে গোলাম মোর্তজার আজকের পত্রিকা দেখতে বসে যান তিনি। শুক্রবারটাই দেখা হয়। নটার পর বাজারে যাবেন। আজ আর কোন কাজ নেই।

পাদটিকাঃ
ইমরাজ সাহেব ভুলে গেছেন ফুটপাতের ঝুলন্ত শিশুটির কথা। ভুলে গেলেও সিকিমের মা কিছু মনে করেনি। কারন সিকিমের মা জানেও না ইমরাজ সাহেব তার শীতার্ত শিশুটির দিকে চেয়ে বেদনায় হাহাকার করে উঠেছিলেন সেদিন। জানলেই বা কী হতো। ইমরাজ সাহেবের ভুলে যাওয়াকে কি দোষ দেয়া যায়? যায় না, কারন তিনি কাউকে কোন প্রতিশ্রুতি দেননি। প্রতিশ্রুতি না দিলে প্রতিশ্রুতি পালনেরও কোন দায় থাকে না। বেদনায় হাহাকার করার অধিকার যেমন আছে, তেমনি বেদনা ভুলে যাবারও অধিকার আছে ভদ্রলোকদের। জীবন বহতা নদী।

Neturei Karta : প্যালেষ্টাইনী দাবীতে সোচ্চার একটি ইহুদী সংগঠন

গাজায় প্যালেষ্টাইনীদের উপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলী সরকারের বর্বরতার প্রেক্ষিতে ইসরায়েলী বুদ্ধিজীবিদের সাথে তর্ক-বিতর্কে অংশ নিয়ে একটা ইহুদী সংগঠনের সাথে জানাশোনা হলো। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও Neturei Karta (Guardians of the City") বা 'নগর কর্তা' নামের ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক ইহুদী সংগঠন কঠিন ভাবে ইসরায়েল রাষ্টের অস্তিত্বের বিরোধী। তারা বিশ্বব্যাপী প্যালেষ্টাইনীদের অধিকারের জন্য প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে । ইহুদী ধর্মের আদিপুস্তক 'তোরাহ' এর রেফারেন্স দিয়ে তারা বলেছে, যে অজুহাতে ধর্মের ভিত্তিতে ইসরায়েল রাষ্টের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা কতটা ভিত্তিহীন। সামান্য কয়েকটি নীচে দেয়া হলোঃ

১) ইহুদী ধর্মের মুল ভিত্তি জুডাইজম, যা ইহুদী ধর্মের আদি উৎস। কিন্তু ইসরায়েল রাস্ট্রের ভিত্তি জিয়নবাদ, যার জন্ম দেড়শো বছরেরাও কম, যার ভিত্তি রাজনীতি। সত্যিকার ইহুদী ধর্মের সাথে জিয়নবাদের কোন মিল নেই।

২) ইসরায়েল জিয়নিজমের নামে কেবল ইঙ্গ-মার্কিন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির স্বার্থ সংরক্ষন করে। ইহুদীদের স্বার্থ তো রক্ষা করেই না, বরং বিশ্বব্যাপী নিরীহ ইহুদিদের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে।

৩) উনিশ শতকে যে যুক্তিতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ধারনার জন্ম হয়েছিল তোরাহ বর্নিত সেই 'প্রতিশ্রুত ভুমি' বা promised land (Genesis 15:18-21) এর অজুহাত বর্তমান সময়ে ধোপে টেকে না। তোরাহ বর্নিত প্রতিশ্রুতি আড়াই হাজার বছর আগের প্রেক্ষিতে বর্নিত। এই আড়াই হাজার বছরে পৃথিবীর মানচিত্র শতশত বার পরিবর্তিত হয়েছে। তাছাড়া প্রতিশ্রুত ভুমি পাওয়ার কথা ছিল মহান মেসিয়াহ'র পুনরুত্থানের পরে। জোর করে অন্যের ভুমি দখল করে প্রতিশ্রুত রাস্ট্র বানানোর কোন ধর্মীয় বা নৈতিক অধিকার কারো নেই।

গাজায় ইসরায়েলী বর্বরতার বিরূদ্ধে গত ২৭শে ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে নিউইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে Neturei Karta আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভার বক্তৃতার একাংশঃ

The world stands aghast as the atrocities being committed by the Zionist regime in Gaza, becomes known in ever greater and shocking detail.

Mere words are insufficient to express the pain that all mankind feels at the plight of the Gaza and Palestinian people.

For over one hundred years, they have been subject to a carefully conceived plan, to drive them from their homes and their land.

Throughout their history, the Zionists have resorted to intimidation, war, ethnic cleansing and state—sponsored terrorism to achieve their goals.

This is, has been and continues to be, the criminal agenda of the Zionist movement. But among this movement’s greatest crimes, is that it has claimed to carry out these nefarious actions in the name of holiness, in the name of the Almighty, in the name of Judaism and the Jewish people !!

This is a wicked and monstrous lie !!

It is a desecration of our religion !!
......................................................................
Before the advent of Zionism, Muslims and Christian, Arabs and Jews, lived peacefully together in the Holy Land, as in all the Muslim lands, — Ask your grandparents! — They remember those peaceful days! And in fact it is here the opportune time to thank all the Muslim countries for their extraordinary friendship, hospitality and safe haven that they have provided to the Jewish people throughout the ages!
......................................................................

(সম্পূর্ন ভাষনটি পড়তে চাইলে ক্লিক করুন http://www.nkusa.org/activities/Speeches/20081227.cfm)

দেখা যাচ্ছে সব ধর্মের সমস্যাগুলো সৃষ্টি করে এসব নব্য মতবাদ। মুসলমানদের মধ্যেও যেমন রয়েছে মওদুদীবাদ, ওহাবীবাদ যারা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসকে ইসলামের সাথে একাকার করে ফেলেছে। মওদুদীবাদ মানে যেমন আসল ইসলাম নয়, তেমনি জিয়নবাদ মানেও যেমন আসল ইহুদী ধর্ম নয় । মানুষকে যুগে যুগে বিভ্রান্ত করে বিশ্বশান্তিকে হুমকির মুখে ফেলে রেখেছে এসব বিবেকবর্জিত স্বার্থান্ধ শক্তি।

ইসরায়েল রাস্ট্রের অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা যতটুকু ধার্মিক তার চেয়ে অনেক বেশী বানিজ্যিক। মধ্যপ্রাচ্যে তেল আবিস্কারের পর থেকেই ইজরায়েল রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তাটা মারাত্মক আকার ধারন করেছিল পশ্চিমা শক্তি বিশেষতঃ বৃটেন ও আমেরিকার কাছে। ইসরায়েল রাস্ট্র প্রতিষ্টার সুযোগের সুচনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয়ের পর বেলফোর চুক্তি থেকে হলেও পুর্নাঙ্গতা পেয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন নির্যাতিত ইহুদীদের প্রতি সারা বিশ্বের সহানুভুতি প্রবল। অন্যদিকে বিশৃংখল, অনৈক্যে পরিপূর্ন আরব ভুমিতে সচল বৃটিশ থাবা। সৌদি আরবের সিংহাসনে বৃটেনের অনুগ্রহে ক্ষমতা প্রাপ্ত আল-সৌদ পরিবার। মিশর ছাড়া মাথা তুলে দাড়ানোর কোন শক্তিই ছিল না আরব ভুমিতে। সেই মিশরও তখন রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থায় পতিত। সেরকম বিশৃংখল অনুকূল পরিবেশে ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে পেটের ভেতর রোপিত হয় ইসরায়েল নামক বিষফোড়াটা। যেটি এখন সার্বভৌম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত হলেও মাঝে মাঝে ওটাকে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ অঙ্গরাজ্য বলেই মনে হয়। তেলসম্পদ আর ভৌগলিক কৌশলগত অবস্থান দুটোরই সমান গুরুত্ব পেয়েছে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের পেছনে। তেল বিক্রির টাকায় সৌদি কোম্পানী কত বিলিয়ন ডলার কামিয়েছে আর ইঙ্গ-মার্কিন কর্পোরেট জগত কত বিলিয়ন ডলার কামিয়েছে সেই হিসেবটা দেখলে স্বার্থের এই সমীকরন বোঝা আরো সহজ হয়। যে যার ফায়দা লুটে নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মার খাচ্ছে বিশ্বমানবতা। বর্তমান পৃথিবীতে বানিজ্যিক স্বার্থ ছাড়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর (বিশেষ করে ইঙ্গ-মার্কিন) একটা তৎপরতাও চোখে পড়বে না। অজুহাতটা মানবাধিকার হোক, বা সংখ্যালঘু স্বার্থ রক্ষা হোক কিংবা অন্য যে কোন দোহাই।

স্বার্থবানিজ্যের আক্রমনে মানবতা যখন নিস্পেষিত, Neturei Karta এর মতো সংগঠনের উপস্থিতি বিশেষ প্রয়োজনীয়। স্বার্থকলুষতার অক্ষশক্তি নিপাত যাক, Neturei Karta এর মতো ক্ষুদ্র সংগঠনগুলোর শক্তিবৃদ্ধি হোক। জয় হোক ফিলিস্তিনি জনগনের।

কিছু একটা বলুন প্লীজ, মহামান্য ঘাঘু

নির্বাচনের পর থেকে ব্লগজগতে একদল মানুষকে নিখোজ দেখা যাচ্ছে। তারা হলেন সবজান্তা মহামান্য ঘাঘু।

এই দলের তাত্ত্বিকগন সর্বক্ষেত্রে সর্বসময় সংবিধান ও গনতন্ত্র খুঁজে বেড়ান। জীবন থেকে তত্ত্বকে আলাদা করতে পারেন না ইনারা। এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্যও তাঁরা সংবিধানের ধারার সন্ধান করেন। এই ঘাঘুরা সবখানে সব জায়গায় নিজেদের সিলেবাসের তত্ত্ব হাজির করেন। সিলেবাস ছেড়ে কিছুতেই বেরুতে পারেন না। সেই তত্ত্বের বিরাট অংশ জুড়ে থাকে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র পরিকল্পানার অজানা কাহিনী। বিশ্বের কোথায় কোথায় কীভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গনতন্ত্রকে নস্যাত করে ষড়যন্ত্র করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে সেই তত্ত্বের চর্বিত চর্বন। কীভাবে দেশের মানুষ গনতন্ত্রের অভাবে, সংবিধানের অভাবে হাঁসফাঁস করছে, সংবিধান ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, ইত্যাদি। যদিও আমি গত দুবছরে গনতন্ত্রের জন্য হাসফাস করা একজন মানুষও দেখিনি রাজনৈতিক ধান্ধাবাজ আর দুর্নীতিবাজ বাদে। আরেকটা শ্রেনীকে হাসফাস করতে দেখেছি - তারা জামাত শিবির চক্র। কারন তত্ত্বাবধায়ক সরকার একের পর এক স্বাধীনতার স্তম্ভগুলোকে স্বীকৃতি দিচ্ছিল, পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতার বিকৃত ইতিহাসকে সংশোধন করছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসংগ উত্থাপন করছিল নানান সভাসমিতিতে। এতে জামাত-শিবিরের রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছিল যদিও বাস্তবে তাদের বিচার করার শক্তি তত্ত্ববধায়ক সরকারেরও ছিল না।

১/১১ এর পর অসাংবিধানিক সরকার যখন ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ন কাজ করার উদ্যোগ নিচ্ছিল, এই ঘাঘুরা তখন জাত গেল জাত গেল রব তুললো। কারন এসব কাজ তো সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত গনতান্ত্রিক সরকারের করার কথা। নাপাক অসাংবিধানিক সরকার কিভাবে এসব করবে? এটা পুরা অবৈধ, নাজায়েজ কাজ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নামে সময় ক্ষেপন করে ক্ষমতা দখলের পায়তারা করছে মঈন-ফখরুদ্দিন গং। তাদেরকে জীবনেও নামানো যাবে না। ব্যাটারা ভেতরে ভেতরে জামাতের দালাল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা আইওয়াশমাত্র। ইত্যাদি ইত্যাদি।

কখনো আবার বলতো এটা বাংলাদেশের বিপুল পরিমান মজুদ তেল-গ্যাস খাওয়ার ইন্ডিয়ান-আমেরিকান ষড়যন্ত্র। ইন্ডিয়ার কাছে দেশ বিক্রির ষড়যন্ত্র। মঈন-ফখরুদ্দিন বিশ্বব্যাংক ও ইন্ডিয়ার দালাল, ইত্যাদি ইত্যাদি। কথার কোন ট্যাক্স নাই, কথার কোন শেষ নাই। জানিনা এই ঘাঘুরা বাংলাদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন দেশ মনে করে কেন। না হলে বিশ্বের বড় বড় শক্তিগুলো বাংলাদেশের তেল গ্যাস দিয়ে বড়লোক হবার স্বপ্ন দেখছে এসব ভাবনা আসে কী করে। এমনও শুনেছি বাংলাদেশের সব মানুষের ডাটাবেজ তৈরী করে দেশের সার্বভৌমত্ব আমেরিকার হাতে তুলে দেয়া হবে। হায়রে মস্তিস্কের উর্বরতা। এই উর্বর পলি যদি চাষবাসের কাজে লাগতো, তাহলে দেশে ফসলের বাম্পার ফলন হতো বছর বছর।

আমরা যারা এই অসাংবিধানিক সরকারের উপর আস্থাশীল ছিলাম, ভোটার তালিকা-জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি কাজের প্রশংসা করতাম, তাদের প্রচুর তিরস্কার-গালি হজম করতে হয়েছে গত দুবছরে। আজ আমি তাই সেইসব ঘাঘু ভাইদের কাছ থেকে দেশের বর্তমান অবস্থায় নতুন কিছু বানী শুনতে আগ্রহী।

মঈন-ফখরুদ্দিন গং দেশের বারোটা বাজিয়ে ৮৭ভাগ আসন দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় পাঠিয়ে ষড়যন্ত্র সফল করেছে, আপনারা তার প্রতিবাদ না করে এখনো চুপচাপ কেন।

মঈন-ফখরুদ্দিনের দিন তো শেষ। দেশে এখন পূর্ন গনতন্ত্র। কিছু একটা বলুন প্লীজ, মহামান্য ঘাঘু।

স্বার্থপর অনুচিন্তা

দুই বছরের নিস্পাপ প্যালেষ্টাইনী শিশুটির গুলিবিদ্ধ লাশের ছবিটা যখন আমার চোখে ভাসে, আমি ভুলে থাকতে চাই আমি যা দেখেছি।
...............................................................................
আমার আড়াই বছরের ফুটফুটে মেয়ের গোলাপ কোমল গালটা ছুঁয়ে যখন আমি অফিসে আসি, আমার সারাদিন ভরে থাকে সেই সৌরভে। আমি যদি প্যালেষ্টাইনী বাবা হতাম, আমার মেয়ে হতো যদি প্যালেষ্টাইনী শিশু, আমার মেয়ের গোলাপ সৌরভ কী কখনো পেতাম আমি? বারুদের কটু গন্ধে আমার মেয়ের করুন লাশ শুয়ে থাকতো না সেই রাস্তার পাশে? শিউরে উঠি, চমকে উঠি ভাবতে গিয়ে।

ভাগ্যিস প্যালেষ্টাইনে জন্মাইনি আমি। বাংলাদেশের দারিদ্রে আমার সুখী বসবাস গোলাপী সৌরভ নিয়ে।

একটি দেশ, নতুন বছর, পুরোনো স্বপ্ন

গনতন্ত্রে ফিরে যাচ্ছি আবার। ২০০৯ সাল শুরু হচ্ছে নতুন আশা নিয়ে। এই গনতন্ত্রে ফিরে যাওয়া ১৯৯১ সালের মতো নয়, কিংবা ১৯৭২ সালের নব্য স্বাধীন দেশের মতোও নয়। আমরা গত ৩৮ বছরে অনেক তন্ত্র দেখেছি, কিন্তু ১/১১ এর পর আমরা যা দেখেছি তার সাথে কোন কিছুর তুলনা হবে না। আমরা অকল্পনীয়, অবিশ্বাস্য অনেক কিছু দেখেছি গত দুবছরে। অনেক পরাক্রমশালী উজির নাজিরকে পরাভুত হতে দেখেছি গত দুবছরে। হয়তো তারা আবার উঠে দাড়াবেন। কিন্তু আগের মতো করে কী? মনে হয় না। আমরা কী শিখলাম গত দুবছরে? আমরা শিখলাম টাকা, ক্ষমতা, প্রভাব, প্রতিপত্তি সবকিছুরই একটা শেষ আছে। অসীমতার কোন ধারনা এখানে বাতুলতা মাত্র। যারা অসীম ক্ষমতাবান বলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্ঠা করেছে একসময়, তাদের পরিনতি আমরা দেখেছি, দেখে আমরা কিছু শিক্ষা নিয়েছি। আমরা আর সে পথে যাবো না।

আওয়ামী লীগ ইতিহাস বিরল জয় পেয়েছে নির্বাচনে। কেন পেয়েছে সেটা ব্যাপক গবেষনার বিষয়, কোটি মানুষের মনস্তত্বের বিষয়। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে মানুষ বিরক্ত হলে কাউকেই ছাড়ে না। জনগন ২০০১ সালে আওয়ামী লীগকে ৬৩ আসনে নামিয়ে দিয়েছিল বলে আমরা চমকে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই জনতা ২০০৮ সালে আবার বিএনপিকে আছাড় দিয়ে ২৯ আসনে ছুড়ে ফেলেছে। আমরা নির্বাক হয়ে গেলাম। গণ রায় কখনো কখনো এমন নিষ্ঠুরও হতে পারে!! কিন্তু এমন আছাড় দেয়ার কারন আমরা প্রায় সবাই জানি। আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই সিগন্যাল পেয়ে গেছে এর মাধ্যমেই। আশা করা যায় তারা ইতিহাসের ভুল থেকে শিক্ষা নেবে। আমরা কখনো ভুল করিনি, করতে পারি না - এধরনের বাকোয়াজি কথা জনগন গ্রহন করে না। যারা আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়েছে তারাও না। বরং বিজয়ীদের বিনয় পছন্দ করে জনগন। আমরা সে বিনয় আশা করবো আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। আর আশা করবো নির্বাচনপূর্ব প্রতিশ্রুতিগুলি একে একে বাস্তবায়ন করবে। কোন ছলচাতুরীর আশ্রয় নেবে না। কোন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে সেটার জন্য যথাযথ ব্যাখ্যা দেবে, কিন্তু বাজে অজুহাতে এড়িয়ে যাবে না কিংবা ঠাট্টার সুরে উড়িয়ে দেবে না।

বাংলাদেশ এখনো বিশ্বের হতদরিদ্র দেশগুলোর একটা হলেও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে বড় ধরনের কোন সমস্যা নেই। যেটা আছে ভারতে, পাকিস্তানে, শ্রীলংকায়, বার্মায়, নেপালে। প্রতিবেশীদের তুলনায় আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যাগুলো অনেক কম সহিংস। একটু কম স্বার্থপর, একটু কম অসহিষ্ণু, একটু কম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত, একটু কম ক্ষমতালোভী হলে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান বাইরের কোন হস্তক্ষেপ ছাড়াই করতে পারি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ অনেক বছর ধরেই মোটামুটি স্থিতিশীল। রপ্তানী প্রতিবছরই বাড়ছে, বিনিয়োগ বাড়ছে, রেমিটেন্স বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। প্রতিবেশী অনেকের তুলনায় এখনো আমরা হয়তো পিছিয়ে, কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রা অনেক স্বচ্ছল হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা বিশ্বের ৪৮তম বৃহত্তম অর্থনীতি। এটাকে হেলাফেলা করা যায়না কিছুতেই। আমাদের নিজেদের অবস্থান নিজেদেরই জানান দিতে হবে। গতবছর বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের মুখেও বাংলাদেশ টিকে গেছে শেষ পর্যন্ত। খাদ্যে মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ন আমরা। যেটুকু আমদানী করতে হয় সেটাও করতে হবে না, যদি আমরা কৃষি ব্যবস্থায় ব্যাপক সমন্বয় ঘটাতে পারি।

নতুন সরকারের কিছু করনীয় বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই।

- জনজীবনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে সর্বপ্রথমে। আইন-শৃংখলা সরকারের পুরো নিয়ন্ত্রনে থাকতে হবে।
- পুলিশের সাথে চোর-চ্যাচ্ছর সন্ত্রাসীদের ভালোবাসা বন্ধ করতে হবে। দলীয় গডফাদার-সন্ত্রাসীর উত্থান গোড়াতেই রোধ করতে হবে।
- শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। বাংলা-ইংরেজী-মাদ্রাসা এই তিন ধরনের শিক্ষাকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
- বিদ্যুত উৎপাদন বাড়াতে হবে। ছোট ছোট বিদ্যুত প্রকল্প প্রাইভেট সেক্টরে গ্রামগন্জে ছড়িয়ে দেয়া যায়।
- খনিজসমূহকে বিদেশী শকুনের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। দেশবিরোধী কোন গোপন চুক্তি যেন না হয়।
- কৃষককে আর কৃষিজমিকে রক্ষা করতে হবে। বিদেশী হাইব্রীডের চেয়ে দেশী হাইব্রীডে জোর দিতে হবে।
- জঙ্গীবাদ বা যে কোন অশুভ শক্তির উত্থান রোধ করতে হবে। কঠোর আইন করতে হবে। কোন কোন সন্ত্রাসীর জন্য বিনা বিচারে ক্রসফায়ার চালু রাখতে হবে।
- স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, বিচার না করার জন্য কোন বিদেশী চাপ থাকলে জনগনকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে হবে।
- অপ্রয়োজনীয় আমদানী নিরুৎসাহিত করতে হবে। কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে হবে।
- বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের সমস্যার ব্যাপারে গভীর মনোযোগ দিতে হবে। সবচেয়ে বেশী ডলার যোগানদাতা এই শ্রেনীকে সম্মানের সাথে সাহায্য করতে হবে।
- দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া কল-কারখানাগুলো চালু করতে হবে, নাহয় বিক্রি করে নতুন কারখানা করতে হবে। বন্ধ কারখানা হলো সম্পদের অলস অপচয়।

আফ্রিকার ক্ষুধা-সন্ত্রাস পীড়িতদেশগুলোর দিকে যখন তাকাই, কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের আগুন ঝরানো শহরগুলো, বাংলাদেশকে মনে হয় সোনার বাংলা। আমাদের তেমন কোন বড় সমস্যা নাই। অনেক বেশী শান্তিতে আছি আমরা এখনো। খুড়ে খুড়ে নতুন সমস্যা আবিষ্কার না করে পুরোনোগুলোকে আগে সমাধান করি। সবাই মিলে মিশে কাজ করি। নিজের দেশকে ভালো বাসি। আমরা নিশ্চয়ই ভালো থাকবো।

Wednesday, January 7, 2009

নিজের কথা

এক.
গ্রামের জন্য মাঝে মাঝেই মনটা কেমন যেন করে। আমাদের গ্রামটা আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম। এটা নিরপেক্ষ বিবেচনা অবশ্যই নয়। প্রতিটি মানুষই হয়তো নিজের গ্রামকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে, যেমন প্রতিটা মায়ের চোখে তার সন্তান। স্থায়ীভাবে গ্রামে আমি বেশীদিন ছিলাম না। জীবনের প্রথম ৪/৫ বছর। তখনকার তেমন কোন স্মৃতি বেঁচে নেই। স্কুলে ভর্তি হবার সময় পাকাপাকিভাবে শহরে চলে আসি ১৯৭৪ সালে। আগে চাকরী সুত্রে বাবা একাই বাসা ভাড়া নিয়ে শহরে থাকতেন। শহরে স্কুলে ভর্তি হবার পর ছুটিছাটাতেই গ্রামে যাওয়া হতো মাঝে মাঝে। কখনো এক সপ্তাহের জন্য, কখনো বা দুই সপ্তাহের জন্য। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে বেশী। ছুটির সেই কয়েকটা দিন যেন স্বর্গীয় সুখে ভরপুর। গ্রামের মাঠে মাঠে দৌড়ানো, গাছে চড়া, ফল পাড়া, পুকুরে ভেসে থাকা বাঁশ ধরে ধরে সাঁতার শেখার চেষ্টা, পাশের পাহাড়ি ছড়ার হাঁটুসমান টলটলে স্বচ্ছ পানিতে ছোট ছোট মাছের পিছু পিছু ছোটা। অবাধ স্বাধীনতা। আহ, ভাবলে চোখ মুদে আসে এখনো। স্বর্গের সুন্দর কোন ছবি কল্পনা করতে গেলে আমার গ্রামের আদলটাই ফুটে ওঠে সবার আগে। হাস্যকর, তাই না? কিন্তু আমার সুখবোধ সীমিত হয়ে আছে আমার গ্রামের সৌন্দর্যের ভেতরে। টাইম মেশিনে কয়েক মুহুর্তের জন্যও যদি অতীতে ফিরে যাওয়া যেতো, বেরিয়ে আসতাম সেই ছুটির গ্রামটি থেকে।

এখনও গ্রামে গেলে ভালো লাগে। শুধু ভালো না, খুব বেশী ভালো লাগে। কিন্তু এখন গ্রামে যাওয়া হয় খুব অল্প সময়ের জন্য। থাকা হয় না। শহরে আমাদের অনেক কাজ, অনেক ব্যস্ততা, অনেক যোগাযোগ। কাজের হোক, অকাজের হোক। এসব রক্ষার্থে রাতের মধ্যেই ফিরে আসা চাই। এছাড়া শহুরে নাগরিক সুবিধা ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না। আমার গ্রামে ইলেকট্রিসিটি থাকলেও, লাইনের পানি নেই, টাইলসের বাথরুম নেই, নিরাপত্তা নেই, রাতে হঠাৎ অসুখ করলে ডাক্তার নেই ইত্যাদি অনেক শহুরে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে সারাদিন ঘুরে ফিরে আবার রাতে শহরে ফিরে আসা।

দুই.
আমি হাড়ে হাড়ে জানি অভাব কাকে বলে। মধ্যবিত্ত অভাবের কী নিদারুন চিত্র তা আমার খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আমি যখন চরম দারিদ্রের সেই স্বরূপ দেখেছি তখন আমার বয়স বিশের কোটায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু। মোটামুটি পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা কাটিয়েছি চরম দারিদ্রের মুখোমুখি দাড়িয়ে। আমার মতো অভাবী ঘরের ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখে না। আমারও তেমন স্বপ্ন ছিলনা। পড়ার জন্যই পড়া। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে টিকে গেছি বলেই পড়তে শুরু করলাম। না করে কি করা। আর কী করার আছে। ঘরে বসে থাকার উপায় তো নেই। পড়াশোনাটা শেষ করে একটা চাকরী ধরতে হবে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে। দারিদ্রের কারনে আমি অনেক বন্ধুবান্ধব এড়িয়ে চলতাম যাদের সাথে মেলামেশা করা ব্যয়বহুল। আমার নিজের কোনরকম আয় ছিল না কারন আমি টিউশানী বা সেরকম কিছু করতাম না। মোটামুটি একরকম অকর্মাই বলা চলে আমাকে। ভার্সিটি যাবার সময় মা হাতে ১৫ টাকা দিয়ে দিত গাড়ীভাড়া বাবদ। সেই ১৫টাকাই অনেক ছিল আমার জন্য। তখন রেলষ্টেশানে যাওয়ার রিকশা ভাড়া ছিল ৫/৬ টাকার মধ্যে। কদমতলী নামলে ৪ টাকায় যাওয়া যেত। তাই প্রায়ই কদমতলী নামতাম। ভার্সিটিতে গিয়ে সিঙাড়া চা কিংবা পরটা ভাজি খাওয়ার জন্য খরচ ছিল ৫ টাকার মতো। এভাবে পনের টাকায় পুরো দিন পার করে দেয়ে যেত সহজেই। কখনো কখনো বাসে যেতাম। বাসে গেলে মুরাদপুর থেকে নাজিরহাটের বাস ধরতাম। বাসা থেকে আগ্রাবাদ গিয়ে মুরাদপুরের বাস ধরতাম। বাসভাড়া ১ টাকার ভেতর ছিল। মুরাদপুর থেকে ভার্সিটি ভাড়া ছিল দুটাকা। আমরা ডিসকাউন্টে ১ টাকাও দিতাম কখনো কখনো। ছাত্র ডিসকাউন্ট। আজ বুঝি সেসব নাই আর। ভার্সিটি এক নম্বর গেটে নামলে ভেতরে যাবার বাস থাকতো ভার্সিটি কতৃপক্ষের। কোন ভাড়া লাগতো না। সে বাসে মেন গেটে রেলষ্টেশানের ওখানে যেতাম। স্টেশান থেকে অন্য বাসে আর্টস ফ্যাকাল্টি। এভাবেই চলতো আসা যাওয়া। আসার সময় আমি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বাসে চলে আসতাম। ট্রেনে ভিড় বেশী আর ট্রেনে দেরী হবে বলে ট্রেন এড়িয়ে চলতাম প্রায় সময়ই।

সেই সময়টা আমাদের সংসারে নিদারুন অভাব। বেপারীপাড়ার বাড়ীটা মাত্র শেষ হয়েছে। আমরা প্রান্তরের মাঝখানে একলা বাড়ীতে বসবাস করছিলাম। বেপারীপাড়া মসজিদের লাগোয়া পশ্চিম পাশের গলিতে ঢুকে ২০০ গত মতো গেলে হাতের বায়ে পুকুর পাড় দিয়ে একটা মাটির রাস্তা পশ্চিম দিকে চলে গেছে। সেই রাস্তায় শ'পাচেক গজ গেলে হাতের ডানে আমাদের একতলা সেমিপাকা বাড়ীটা। তিন দিকে দেয়াল, রাস্তার দিকে বাশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। বাড়ীর সামনে কিছু সবজি লাগানো, কলাগাছ, আরো নানান ফলফলারির চারাগাছ। আশে পাশে আর কোন বাড়ী নেই। পেছনে ধুধু প্রান্তর পেরিয়ে ছোটপোল পুলিশ লাইনের বিল্ডিংটা দেখা যায়, তারও পরে বহুদুরে যেন হালিশহরের বাড়ীগুলি ছোট ছোট দেখা যায়। উত্তর দিকেও খালি মাঠ, অনেক দুরে রঙ্গীপাড়ার সবুজ গাছপালা দিগন্তছোয়া আভাস। সেই নিস্তব্ধ বিরানভুমিতে আমরা প্রথম বসত গড়ি। এই বসত না গড়লে আমরা শহরে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারতাম কিনা সন্দেহ আছে। গ্রামে গিয়ে পরের কাজ করে খেতে হতো। সেটা হয়নি বলে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। এই আমি আর সেই আমার মধ্যে অনেক দিগন্তজোড়া তফাৎ হয়ে যেতো। আমাকে আমিই চিনতাম না। এত অভাবেও টিকে গেছিলাম সেই বসত ঘরটার জন্য।

অভাব কেন ছিল? বাবার অনেক টাকা ছিল কয়েক বছর আগেও। বিদেশ থেকে মোটা অংকের টাকা এনেছিলেন তিনি। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে ও নানা জনের দুর্বুদ্ধিতে সব শেষ হয়ে যায়। টাকা পয়সা শেষ হবার পর গ্রামের জমি জমা বিক্রি শুরু হয়। গ্রামের জমি শেষ হবার পর ঘরের যত স্বর্নালংকার ছিল সেগুলো বিক্রি শুরু হয়। তারপর ধারকর্জ। টিকে থাকার প্রানপন যুদ্ধ। মুখোমুখি না হলে কেউ বুঝবে না অভাব কী জিনিস। আমরা পাচ ভাইবোন। সংসার কম বড় নয়। আত্মীয় স্বজন সবাই বুঝে গেছে আমরা আর টিকবো না। শুধু সময়ের অপেক্ষা, কখন পতন ঘটবে। খরচের ভয়ে আমরা কোথাও বেড়াতে যেতাম না। দাওয়াত খাওয়া ছিল বিলাসিতা। দাওয়াতের গিফট কেনার জন্য টাকার যোগাড় হবে কোত্থেকে, সে চিন্তায় আমরা দাওয়াতেও যেতাম না নিতান্ত বাধ্য না হলে। বন্ধুবান্ধব কেউ জানতো না আমার এই নিদারুন অভাবের কথা। তখন আমার চেয়ে অভাবী বন্ধু একজনও ছিল না। আত্মীয়কূলেও আমরা ছিলাম সবচেয়ে নিন্মস্তরের দরিদ্র। হয়ে গেছিলাম। জানিনা আত্মীয়রা মনে মনে কী বলতো আমাদের নিয়ে, মুখে অবশ্য হাসিখুশীই দেখাতো। বাসায় আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে এলে আমরা বিব্রত বোধ করতাম কী খাওয়াবো সে ভাবনায়। আমরা তো কচু ঘেচু খেয়ে চলছি, মেহমানকে তো তা খাওয়ানো যায় না। মা কী করে যেন ম্যানেজ করতো। ভাবতে অবাক লাগে এখন।

সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে বাবার জন্য কষ্ট হয়। বাবা আমাদের ছেড়ে গেছে ১১ বছর আগে। বাবা আমাদের সুখের দিনগুলো দেখে যেতে পারলো না। আমাদের স্বচ্ছলতার দিন আসার আগেই বাবাকে চলে যেতে হয়েছে। যাবার আগ পর্যন্ত বাবা বিশ্বাস করতো না আমরা কখনো উঠে দাড়াবো। এরকম অবস্থা থেকে কেউ উঠে দাড়াতে পারে না। আজ আমরা যে উঠে দাড়িয়েছি সেটাও অলৌকিক। আমি নিজেই অবাক হই কিভাবে সব কিছু ঘুরে দাড়ালো। যারা আমাদের ত্যাগ করেছিল, তারাও আমাদের পাশে ফিরে আসতে লাগলো।

অভাবের দিনগুলিকে আমি একদিনও ভুলি না। অনেক বছর পেরিয়ে গেছে তবু আমি প্রতিনিয়ত মনে রাখি সেই দিনগুলো, রাতগুলো। আমার আজকের জীবনের ভিত্তিমূল গাথা হয়েছিল সেই সময়ে। আমি তখন জানতাম না। যেমন এখন জানিনা ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে।

একজন ভুটারের খুলা চিঠি

শ্রদ্ধেয় ভুটপ্রার্থী,

গতকাল আপনি আমার কাছে ভুট চাইতে এসেছিলেন, আমি আপনাকে কোন প্রতিশ্রুতি দিতে পারিনি কারন আপনাকে নিয়ে আমার অনেক প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক উত্তর না পেলে আমি ভুট দেয়ার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। আপনার অবগতির জন্য আমি প্রশ্নমালার তালিকা আপনার হাতে তুলে দিচ্ছিঃ-

১) আপনি কেন নির্বাচন করছেন? আপনার মূল উদ্দেশ্য কী? কেন আপনাকে ভোট দেব? আপনি এলাকার মানুষের জন্য কি করেছেন?

২) আপনি কি দেশ সেবার জন্য নির্বাচন করছেন নাকি হাতে কিছু বাড়তি নগদ জমে গেছে বলে সমাজে মানীগুনী ব্যক্তি হবার জন্য নির্বাচন করছেন? আপনি কি কখনো সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন? আপনার কী পোষা বাহিনী আছে?

৩) আপনি কোন পেশায় নিয়োজিত আছেন? বছরে কত আয় করেন? কত টাকার আয়কর দেন? কতটাকার দুর্নীতি করেন? আপনি কি দুর্নীতিবিহীন জীবন যাপন করতে পারবেন?

৪) আপনার নির্বাচনী ব্যয় কতো? ৫ কোটি? আপনি নির্বাচনে এতটাকা ব্যয় করছেন কেন? আপনি নির্বাচনী ব্যয়ের সমান টাকা কোন জনহিতকর কাজে ব্যয় করেছেন কী? কোন সে খাত?

৫) আপনি কী কখনো সক্রিয় রাজনীতি করেছেন? রাজনীতি না করে আপনি কেন রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচন করছেন? আপনি পার্টিকে নিয়মিত চাঁদা দেন বলে?

৬) নির্বাচনে জিতলে আপনার লাভ কতো? নির্বাচনে জিতে আপনি কি কি সুবিধা নেবেন সরকার থেকে? আপনি কি সরকারী সুবিধা নেয়ার জন্য নির্বাচন করছেন না?

৭) আপনি কি জানেন সংসদের কিংবা সাংসদের কাজ কি? আপনি কি সংবিধান পড়েছেন কখনো? আপনি কি সংবিধান বোঝেন? কিংবা আপনি জীবনে কখনো সংবিধান দেখেছেন?

৮) আপনি কি জানেন সংসদ একটা আইনসভা? আপনি কি জানেন সংসদের প্রধান কাজ আইন প্রনয়ন করা?

৯) আপনি কি কোন আইন প্রস্তাব করার ক্ষমতা রাখেন? আপনি কী সংসদে দাড়িয়ে সুস্থ বিতর্ক করার ক্ষমতা রাখেন?

১০) আপনি কি জানেন একজন সাংসদকে সারা দেশ নিয়ে ভাবতে হয়? আপনি কি সারা দেশ নিয়ে ভাবার মতো যোগ্যতা রাখেন? আপনি কতটুকু পড়াশোনা করেছেন?

১১) আপনি কি জানেন একজন সাংসদকে প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্টের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হয়?

১২) আপনি কি জানেন একজন সাংসদের বেতন কতো? আপনি কি জানেন শুধু বেতন নির্ভর হলে একজন সাংসদকেও সৎভাবে বেঁচে থাকতে হলে মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করতে হয়?

১৩) আপনি কী মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করে দেশের সেবা করার জন্য নির্বাচন করছেন? নির্বাচনে না জিতলে কী আপনি দেশ সেবা স্থগিত রাখবেন?

১৪) আপনি কি নিজের টাকায় দেশ সেবা করতে চান নাকি সরকারের টাকায়? সরকারের টাকার কত অংশ জনগনের জন্য ব্যয় করবেন আর কত অংশ আপনি নেবেন?

১৫) আপনি কি নির্বাচনের পরে ধনী হয়ে যাবার স্বপ্ন দেখছেন, নাকি আরো ধনবৃদ্ধির আশা করছেন?

১৬) আপনি কী মেয়াদ শেষে জনগনকে ৫ বছরের দেশ সেবার ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের হিসেব দেবেন?

নির্বাচনে জিতে আপনি কি করবেন সে প্রতিশ্রুতি আমি বিশ্বাস করছি না। আপনি যতই কসম কাটেন আপনাকে আমি এক কানাকড়িও বিশ্বাস করছি না। আমি আপনাকে ভবিষ্যত দেখে বিচার করতে পারবো না। আপনার চরিত্র বিচার করবো আপনার বিগত জীবনের ইতিহাস দেখে এবং আমার প্রশ্নমালার উত্তর দিয়ে। একটা প্রশ্নের উত্তরও যদি সন্তোষজনক না হয় তাহলে দয়া করে আপনি আপনার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করুন। আপনাকে আমরা ভোট দেবো না। আপনি যদি এই প্রশ্নগুলো শুনে অপমানিত বোধ করেন, প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে বাধ্য নন বলে মনে করেন তাহলে আপনি নির্বাচনের অযোগ্য। আপনাকে আমরা ভোট দেবো না, ভোট দিতাম ন, ভোট দিয়াম না, ভোট দিবাম না, ভোট নইদ্দুম। সাফ সাফ কথা।

২৯ তারিখ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আপনার উত্তরের অপেক্ষা করবো। ভালো থাকবেন।

ইতি,
জনৈক ভুটার

রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ – ৩:৪০ অপরাহ্ণ ২৮ টি মন্তব্য আমারব্লগ