Tuesday, December 8, 2015

নিঃসঙ্গ সৈকতের প্রান্তে দাঁড়ানো শতাব্দীর বাতিঘর

পর পর দুই শুক্রবারের ব্যর্থতার পর তৃতীয় শুক্রবারে যাত্রার জন্য যখন চুড়ান্ত মনস্থির করা হলো অমনি বিষুদবার সকালে আকাশের মুখ ভার হয়ে গেল এবং বিকেল হতে হতে এই শীত ডিসেম্বরেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নামতে শুরু করলো।

যে দ্বীপে যাবো সেখানে যাবার জন্য বঙ্গোপসাগরের ছোট্ট একটা চ্যানেল পাড়ি দিতে হয় ছোট ডিঙ্গি নৌকায় এবং ঝড়বাদলার দিনে চ্যানেলটায় বড় বড় ঢেউ যাত্রাপথকে কিঞ্চিৎ বন্ধুর করে তোলে। বিষুদবারের গুড়িবৃষ্টির মেঘলা সন্ধ্যাকে উপেক্ষা করে দ্বীপ যাত্রা অক্ষুন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। বিশ বছর আগে সেন্ট মার্টিন যাত্রার সময়েও এরকম বাধা এসেছিল এবং উপেক্ষা করে গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছিলাম বিক্ষুব্ধ সমুদ্র পেরিয়ে।

আমরা অভিযাত্রী নই, ছাপোষা মানুষ মাত্র। তাই সামান্য সমুদ্র চ্যানেল পেরোতেও শংকা পোহাতে হয় না জানি পিতৃপ্রদত্ত প্রাণটার উপর কোন হামলা আসে। যা হোক, পরদিন ভোরে গৃহত্যাগ করার পর পর দেখি কুয়াশা মেঘ সরে গেছে, পুবাকাশ রাঙিয়ে হাসছে রবির কিরণ।

কর্ণফুলী সেতুর কাছে বাসস্ট্যান্ড নামক কুরুক্ষেত্রে গিয়ে নির্ধারিত কাউন্টার খুঁজে পাওয়া গেলেও বাসের চিহ্নমাত্র নেই। সমগ্র স্ট্যান্ডজুড়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে ভয়ানক সব ভেঁপুর তাণ্ডব চলছে দক্ষিণমুখী বাসগুলোর। হেলপার কন্ডাকটরদের চিৎকারে সয়লাব। একটার পেছনে আরেকটা বাস তেকোনা হয়ে রাস্তায় জ্যাম লাগিয়ে দিয়েছে। আমাদের বাস আসবে বহদ্দারহাট থেকে যাত্রী বোঝাই হয়ে, আমাদের জন্য তিনখানা আসন খালি রেখে আসার কথা।

বাস আসলো। যেমনটি আশা করেছিলাম তার চেয়ে খারাপ দশা।  ওই রুটে এর চেয়ে ভালো বাস চলে না। একদম পেছন দিকে আমাদের জন্য তিনখানা সিট রাখা। একখানা সিট আমার পাশে খালি পড়ে থাকলে পেছন থেকে এক সহযাত্রিনী জিজ্ঞেস করলেন ওই আসনে আমি বসবো কিনা, বসলে হেলান দেয়া যাবে না বলে সতর্ক করলেন কেননা ওই সিটের হেলান ভেঙ্গে গেছে। সেই সিটের টিকেট বিক্রি হয়নি বলে আমরা তিনজন ওখানে আমাদের ব্যাগগুলোকে আশ্রয় দিলাম। এবার পেছনের যাত্রী নিশ্চিন্ত বোধ করলেন, কেননা লাগেজ ব্যাগ মানুষের মতো মোচড়ামুচড়ি করে না, যেভাবে রাখা হয় সেভাবে চুপচাপ বসে থাকে।

আমি আমার সিটে হেলান দিলাম, এবং ঘুমিয়ে পড়লাম শীঘ্রই। আকাশযান বা বিলাসবহুল বাসে আমার ঘুম না আসলেও লোকাল  বাসে আমার ঘুমটা বেশ দ্রুততর।

পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারী, আমিরাবাদ পেরিয়ে চকরিয়ার আগে বড়ইতলী নামক জায়গায় বাসটা  ডানদিকে ঢুকে গেল। এই পথে মাইল দশেক গেলে পেকুয়া, তারপর মগনামা ঘাট। সেই ঘাট থেকে ডিঙ্গি নৌকায় কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বড়ঘোপ ঘাট।

বাস থেকে নামার সময় পেছনের যাত্রী জানালেন তিনিও ওই পথের যাত্রী। একসাথে যাবার প্রস্তাবে সায় দিতেই আনন্দিত চিত্তে আমাদের পথ দেখিয়ে এগোতে লাগলেন। ঘাটে গিয়ে নৌকায় ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই, যাত্রীতে পরিপূর্ণ। দ্রুতগামী এক নৌযান এলে তাতে উঠতে গেলাম। কিন্তু সহযাত্রীদের উঠতে দিয়ে দেখা গেল আর কোন সিট খালি নাই। সেই যাত্রী উঠে গিয়ে ফিরে দেখলো আমরা উঠতে পারিনি। আক্ষেপ করে লাভ নেই। নৌকা ছেড়ে দিলে পরবর্তী রেসের জন্য আমরা তিনজন তৈরী হতে লাগলাম। লেবু দেয়া লাল চা খেয়ে আবারো ঘাটের সিঁড়িতে দাড়ালাম। সেই যাত্রাসঙ্গী নৌকা থেকে ফোন করলেন, তিনি পৌঁছে গেছেন, আমরা যেন পরের নৌকায় দ্বীপে পৌঁছে যাই। তিনি বিকেলে আমাদের সাথে দেখা করবেন। এতটা আতিথ্য আশা করিনি এই পরিচয় বিবর্জিত এলাকায়।

পরের নৌকায় আমাদের ঠাঁই হয়ে গেল খানিকটা কৌশল খাটিয়ে। ওপারে পৌঁছে রিকশা। রিকশা চললো দ্বীপের সরু কংক্রিটের রাস্তা দিয়ে। ভরদুপুরে লোক চলাচল কম। শুক্রবার। মাইকে মসজিদের আওয়াজ আসছে। রাস্তাঘাট কিছু চিনি না। রিকশাওয়ালাকে বলেছি নির্ধারিত হোটেলে নিতে। এই দ্বীপে একটাই আবাস অতিথিদের জন্য। জেনেছি পত্রিকা থেকে।

পৌঁছে গেলাম বড়ঘোপ বাজার। হোটেল সমুদ্র বিলাস বাজারের মাঝখানেই। চারতলা দালানটির একশো গজের মধ্যেই সমুদ্র সৈকত দেখে উচ্ছ্বসিত। বিশ বছর আগের সেন্টমার্টিনের কথা মনে পড়লো। যদিও সেন্টমার্টিনে একদম কিছুই ছিল না তখন। আগে খাওয়া সেরে ফেললাম পাশের একটা রেস্টুরেন্টে। হোটেল নিউ মদিনা। দারুণ এক তাজা মাছ খেলাম, সাথে দেশী মুরগীর সালুন। অসাধারণ রান্না। ভরপেট খেয়ে হোটেলে চেক ইন করলাম। চারতলায় হোটেলের রুমে পৌঁছে সামনের আদিগন্ত সমুদ্র দেখে তাকিয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ। ঠিক যেমনটি চেয়েছিলাম। জানালা খুললেই সমুদ্রের হাওয়া এসে গায়ে লাগবে। বিছানায় শুয়ে সমুদ্রের ঢেউ গোনা যাবে। এই দ্বীপে এমন একটা আনকোরা সৈকত আছে, কেউ কখনো বলেনি কেন?

তবু শুনে ভীষণ স্বস্তি পেলাম, এই দ্বীপে তেমন কোন পর্যটক আসে না। সমগ্র দ্বীপে আজকে আমরা তিনজনই তথাকথিত পর্যটক আজ। আমরা নতুন একটা দ্বীপ আবিষ্কার করার তৃপ্তি নিয়ে সৈকতে পা রাখলাম। দুদিনে দেখা হয়ে গেল অনাবিষ্কৃত সৈকত, বাতিঘর, বায়ুবিদ্যুত, শুটকির বাগান, মানুষের মুখের সারল্য, আহারে তৃপ্তি, রাত্রির নির্জনতা, গর্জনহীন সমুদ্র। .

......আর যখন সমগ্র আকাশ নিয়ে রাত জেগে ছিল.... তুমি ছিলে খুব খুব কাছে!

তোমার দু'চোখ দিয়ে একদিন কতবার চেয়েছ আমারে ।
আলো –অন্ধকারে
তোমার পায়ের শব্দ কতবার শুনিয়াছি আমি !
নিকটে – নিকটে আমি ছিলাম তোমার তবু সেইদিন,-
আজ রাত্রে আসিয়াছি নামি এই দূর সমুদ্রের জলে!
যে-নক্ষত্র দেখ নাই কোনোদিন , দাঁড়ায়েছি আজ তার তলে !
সারাদিন হাঁটিয়াছি আমি পায়ে পায়ে
বালকের মতো এক,- তারপর,- গিয়েছি হারায়ে
সমুদ্রের জলে ,
নক্ষত্রের তলে !
রাত্রে,- অন্দজকারে !
-তোমার পায়ের শব্দ শুনিব না তবু আজ,- জানি আমি,-
আজ তবু আসিবে না খুঁজিতে আমারে !

তোমার শরীর ,-
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার;- তারপর,- মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন দিকে জানিনি তা,- হয়েছে মলিন
চক্ষু এই;- ছিঁড়ে গেছি- ফেড়ে গেছি ,- পৃথিবীর পথ হেঁটে হেঁটে
কত দিন রাত্রি গেছে কেটে !
কত দেহ এল,- গেল, - হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
দিয়েছি ফিরায়ে সব;- সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
নক্ষত্রের তলে
ব'সে আছি,- সমুদ্রের জলে
দেহ ধুয়ে নিয়া
তুমি কি আসিবে কাছে....

[ধূসর পাণ্ডুলিপি - জীবনানন্দ দাশ]

Thursday, December 3, 2015

অচল মুদ্রার জীবনযাপন

জগতে কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে কথা বলতে গেলে শুধু 'আচ্ছা' 'আচ্ছা' করতে হয়। তারা এর বাইরে আর কোন শব্দ সহ্য করতে পারে না। তারা যাই বলবে, শুধু হ্যাঁ বলতে হয়। তারা তোমাকে মতামত নেবার জন্য একটা প্রস্তাবের কথা জানাবে, সেই প্রস্তাবে তুমি যদি সহমতের বাইরে সামান্যতম বিচ্যুতও হও, তাহলে মহাযুদ্ধ সম্ভাবনা। এরা হলো বাংলাদেশের সংসদের মতো, যেখানে তোমাকে সরকারী দলের সদস্য হিসেবে আশা করে। আপন মানুষের মধ্যে এই চরিত্রের লোক থাকাটা একটা বিব্রতকর অবস্থা। এরকম মানুষগুলো যখন কথা বলতে আসে আমার রীতিমত আতংক হয়, তাদের মতকে মেনে নিতে হবে সেজন্য না। ক্রমাগত হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ানোর ফলে আমার মাথা ধরে যায়, সেটা নামাতে গিয়ে রীতিমত বুকে ব্যথা শুরু হয়।

বুকের ব্যথাটা নিয়েও বিব্রত আছি। বুকের বাঁ দিকে ব্যথা মানেই হার্টের অসুখ নয়। নানান পদের ব্যথা আছে। তবু চল্লিশোর্ধ মানুষদের আশংকা, বাম দিকের যে কোন ব্যথা হৃদযন্ত্রের আর্তনাদের শব্দ। কয়েক  বছর আগে এরকম ব্যথা ট্যাথা হলে কাউকে না কাউকে বলতাম। কিন্তু ক্রমাগত দেখা গেল কদিন বাদেই ব্যথা সেরে গেছে, কিছুই ঘটেনি। চেক আপ করেও কিছুই পাওয়া যায়নি। তারপর থেকে এসব বলা ছেড়ে দিয়েছি। বলতে গেলে মনে হয় সহানুভুতি আদায় করার চেষ্টা করছি। যখন যা ঘটার ঘটবেই, খামাকা নিজের জন্য অন্যকে বিব্রত করে রাখাল বালক হবার কী দরকার!

বছর দুয়েক আগে মে মাসের এক সকালে আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হলো বিশাল এক ঘুর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে চট্টগ্রামের দিকে। দুপুরের পরপরই আঘাত হানবে। সকল জাহাজ, উড়োজাহাজ সরিয়ে নেয়া হলো, পতেঙ্গা থেকে লোক সরে গেল, সমগ্র ইপিজেড এলাকা ছুটি দেয়া হলো। আমরা তড়িঘড়ি করে বাইরের কাজ সেরে ঘরে এসে ঢুকলাম। দুপুরে খেয়েদেয়ে বারান্দায় বসে দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে আছি, ঝড়ের আগমন পথ ওই দিকে, বাতাস হচ্ছে কিন্তু আকাশভর্তি রোদ, কেমন একটা ব্যাপার। এবার রোদেলা আকাশেই ঝড় আসবে? বাতাস প্রচুর ধুলো ওড়াচ্ছে, লোকজনের চোখমুখে ঝাপটা মারছে, রিকশাওয়ালা টেনে টেনে চলছে। সমস্ত রাস্তা ফাঁকা হয়ে আসছে।

দুপুর গড়ালো, বিকেল নামলো, অবশেষে সন্ধ্যাও। সেই ঝড় আর এলোই না। সন্ধ্যার পর টেলিভিশনে বলা হলো ঝড় নাকি দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তাই আঘাত হানেনি। কিন্তু বিপদমুক্ত হবার আনন্দের বদলে আমি মনে মনে যেন হতাশ হলাম। এত বড় প্রস্ততি সব মাঠে মারা গেল? কী লজ্জার কথা! অফিসের বড় সাহেবও তো বলছিল, কিচ্ছু হবে না, তোমরা কাজ করতে থাকো। মরলেও কাজ করতে করতে মরবা। কর্মশহীদ হবার সুযোগ অর্জন করবা। তাকে অমান্য করে, প্রায় বিদ্রোহ করে অফিস ছেড়েছি আমরা। এখন তো তার কথাই সত্য হলো।

মৃত্যুকে নিয়েও কি আমি এমন হতাশায় ভুগবো? রোগীর টেস্টে গুরুতর সমস্যা না পেলে কি ডাক্তারও হতাশ হয়? এই প্রশ্নগুলো কাউকে করা শোভন তো নয়, সুস্থতারও লক্ষণ নয়। আমরা অনেকে নিজেদের অজান্তেই অসুস্থ জীবনযাপন করি।

Wednesday, December 2, 2015

অপারেশান জ্যাকপট নিয়ে


অপারেশান জ্যাকপট নিয়ে বেশ কিছু বইপত্র পড়লেও এই অপারেশানের নেতৃত্বে থাকা এ.ডব্লিউ. চৌধুরীর কোন লেখা পড়া হয়নি। আজকের দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ তাঁর লেখা নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আর্কাইভ করে রাখলাম ভবিষ্যত রেফারেন্সের জন্য। লেখক এবং দৈনিক উভয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা। দৈনিক সুপ্রভাতের প্রতিবেদনের লিংক:

দুঃসাহসিক অভিযানের আদ্যোপান্ত

লিখেছেন কমডোর (অব.) এ. ডব্লিউ চৌধুরী
http://suprobhat.com/5831-2/





Friday, November 27, 2015

ওয়াসফিয়ার সেভেন সামিট

ওয়াসফিয়া নাজরীন অবশেষে সেভেন সামিটের টার্গেট পূর্ণ করেছে ইন্দোনেশিয়ার দুর্গমতম কার্সটেসন পিরামিড পর্বত শৃঙ্গ জয় করার মাধ্যমে। কয়েক বছর আগে যখন ওয়াসফিয়ার সাথে দেখা হয় বিশদ বাঙলার অনুষ্ঠানে, তখন মেয়েটির দুঃসাহসী আত্মবিশ্বাস অবাক করেছিল। অবশেষে পেরেছে সে। অভিনন্দন ওয়াসফিয়া! এর আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এডভেঞ্চার অব দ্য ইয়ারে সেরা একটিভিস্ট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল ওয়াসফিয়া।
http://adventure.nationalgeographic.com/adventure/adventurers-of-the-year/2015/wasfia-nazreen/

পড়া যাক বিবিসির আরেকটু বিস্তারিত সংবাদ বিবরণ:
------------------------------------------------------------------------
ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কার্সটেসন পিরামিড পর্বত শৃঙ্গ জয় করলেন পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরিন।

সেখান থেকে যে তিনি ফিরে আসতে পারবেন সে কথা কল্পনাও করতে পারেননি।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের এই পর্বতারোহী।

ওয়াসফিয়ার বর্ণনায় হিমালয়ের চেয়েও জটিল এবং কঠিন এই কার্সটেসন পিরামিড পর্বত শৃঙ্গ জয় করা।

তিনি বলেন, পুরো পাহাড়টি গ্রানাইট পাথরের। একটি চূড়া থেকে অন্য চূড়ায় যেতে হয় দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে।

ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত মাউন্ট কার্সটেনস নামের পর্বতের শৃঙ্গটি পুঞ্জাক জায়া নামেও পরিচিত, যার উচ্চতা ৪৮৮৪ মিটার।

ওয়াসফিয়া বলেন , " বিশ্বাস করেন, আর নাই করেন- কার্সটেসন পিরামিড আমার জীবনে সবচেয়ে কঠিন ও দূর্গম পাহাড়। এভারেস্টের চেয়েও।"

এই পর্বতের চূড়ায় উঠতে গিয়ে পদে পদে বিপদের সম্মুখিন হয়েছেন ওয়াসফিয়া। পাহাড়ের বেসক্যাম্পে পৌঁছাতে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির সাথে দেখা হয়।

যাদের মধ্যে নানা ধরনের কুসংস্কার এবং হিংস্রতা রয়েছে।

পর্বত আরোহণ শেষ করে ওয়াসফিয়া যখন ফিরছিলেন তখন একটি গ্রামে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি মারা যায়। সেজন্য দায়ী করা হয় ওয়াসফিয়া ও তার সহযোগিদের!

কারণ সেই গ্রামের লোকজন বিশ্বাস করে বিদেশীদের আগমনের কারণেই সেই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে!

এমন কুসংস্কার প্রচলিত আছে পর্বতের পাদদেশের গ্রামগুলোতে। সেজন্য তাদের ক্ষতিপূরণও দিতে হয়েছে।

ওয়াসফিয়া বলেন , " এরপর আমাদের ধরে নিয়ে যায়। তারপর চার ঘন্টা সালিশ হয়। শেষ পর্যন্ত ওদের চার হাজার ডলার দিয়ে আমরা সেখান থেকে আসি।"

তিন বছর ধরে সেই পর্বতে ওঠার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের এই পর্বতারোহী। কিন্তু অনেক দূর্গম পাহাড় হবার কারণে এর আগে তার কয়েকটি চেষ্টা বিফল হয়।

তিনি বলেন, গ্রামের পর গ্রাম পার হয়ে এবং ২২০ কি.মি. পথ হেটে কার্সটেসন পিরামিড পর্বতের বেসক্যাম্পে যেতে হয়।

পর্বতের এক দিকে সোনার খনি থাকায় সেখানে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ান মাফিয়াদের আনাগোনা। অন্যদিকে স্থানীয় বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির মধ্যে তীর ধনুকের মারামারি।


দূর্গম পথ এবং সাংঘাতিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই কার্সটেসন পিরামিড জয় করেছেন এই পর্বতারোহী।

কার্সটেসন পিরামিডের তুলনায় এভারেস্ট জয় করা অনেক সহজ বলে জানালেন ওয়াসফিয়া।

তিনি বলেন, " নিরাপদে পৌঁছাতে পারবো কিনা সেটা নিয়ে সংশয় ছিল। সামিটের দিন আমি বাচ্চাদের মতো কাঁদছিলাম।"

"হিমালয়ে ওঠার সময় শেরপারা রাস্তা বানিয়ে দেয়। আপনি দড়ি ধরে ধরে উঠবেন। এখানে ওরকম কিছু নেই। সবকিছু নিজের করতে হয়।"

কিন্তু তারপরও কথা রাখতে পেরেছেন ওয়াসফিয়া। কথা দিয়েছিলেন বিশ্বের সাতটি পর্বত শৃঙ্গ জয় করেবেন। চার বছর আগে তিনি তার এই কর্মসূচি শুরু করেন।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেটির বাস্তবায়ন করলেন বাংলাদেশের এই পর্বতারোহী।

Monday, November 23, 2015

সংসার

বিপরীত লিঙ্গের দুজন মানুষ পরস্পরকে সহ্য করে দীর্ঘকাল সহাবস্থানের অভ্যেসের নাম সংসার

[এরকম একটা সংজ্ঞা আগেও কেউ বলেছিল]

Sunday, November 15, 2015

টুকিটাকি

১. লিখি। লেখালেখি ব্যথানাশক মলমের মতো।

২. সকালবেলায় রিকশা করে যাবার সময় ফুটপাতের গাছতলার টং দোকানের ভিড়টায় চোখ পড়ে প্রায়ই। একদল লোক হল্লা করে কাপ পিরিচের শব্দ তুলে চা খায়, কাপের ভেতর ডালপুরি চুবিয়ে আয়েশ করে চিবোয়। ঘামে ভেজা মুখ মুছে কোমরে প্যাঁচানো গামছা দিয়ে। শ্রমজীবি এই মানুষেরা কেউ পত্রিকা পড়ে না, টিভি দেখে না, ব্লগ ফেসবুকের নামও শোনেনি হয়তো। এরা জানে না পৃথিবীর কোন শহরে কত অশান্তির আগুন জ্বলছে, জানে না ধর্ম নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে কত যুদ্ধ-চাপাতি-বোমাবাজি চলে নানান শহরে। টং দোকানের ভিড় অতিক্রম করতে করতে প্রতিদিন মনে মনে বলি, তোমাদের ভিড়ে একটু জায়গা দিতে পারো? আমি সভ্যতা থেকে পালাতে চাই।

৩. যুদ্ধ যখন পন্য, শান্তি নিশ্চয়ই ফেরারী।

৪. সভ্যতার জনক তুমি, সভ্যতার মৃত্যুদুতও তুমিই। মানুষ।

৫. অসময়ের বৃষ্টি পেকে যাওয়া ফসলেরও ক্ষতি করে।


Saturday, November 14, 2015

টাইগার রোড! এ কোন টাইগার?

পরাজিত পাক জেনারেল নিয়াজী সেনাবাহিনীতে 'টাইগার নিয়াজী' নামে পরিচিত ছিল। তার লেখা 'দ্য বিট্রেয়াল অব ইষ্ট পাকিস্তান' এর অনুবাদ পড়তে গিয়ে এক জায়গায় চোখ আটকে গেল। সে দাবী করছে ঢাকা ক্যান্টমেন্টের একটা রাস্তার নাম 'টাইগার রোড', যেটি তার নামে রাখা হয়েছিল, এবং এখনো(১৯৯৫) বহাল আছে। আমি ঠিক জানি না ঢাকার কথাটা। কিন্তু চটগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের একটা রাস্তার নাম 'টাইগার রোড'। এটিও কি 'টাইগার নিয়াজী'র নামে রাখা? যদি তাই হয় এখনো সেই নামটি বহাল থাকাটা ভয়ানক গ্লানি ও অপমানকর।

Thursday, November 12, 2015

একটি দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ডের রায়


দুবছর আগের একটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার শাস্তি ঘোষিত হলো আজ। পিতা-মাতাকে খুন করার দায়ে কন্যার ফাঁসির আদেশ দিলেন আদালত। ঘটনাটি ভীষণভাবে চমকে দিয়েছিল সমগ্র বাংলাদেশকে। এও কি সম্ভব? সতেরো বছরের একটি মেয়ে তার বাবা-মা দুজনকে হত্যা করেছে কোন এক ভয়ংকর ক্রোধে? কী এমন ঘটনা ছিল তার পেছনে? আমাদের কখনো জানা হবেনা হয়তো। মানব মনের অদ্ভুত কোন বিগড়ে যাওয়ার কাহিনী কেবল ঐশীর ভেতরেই থেকে যাবে। মেয়েটির নাম ঐশী। নিষ্পাপ মুখটা দেখে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না সে এমন কাজটা করতে পারে। ঘটনাটা আমরা ভুলে যাবো কদিন বাদেই। তাই ঘটনাটি সংক্রান্ত খবরের লিংকগুলো সংরক্ষণ করে রাখছি ভবিষ্যতের জন্য।

আজকের সংবাদ

বাবা-মা হত্যায় ঐশীর ফাঁসির রায়

ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছর কারাদাণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বেকসুর খালাস পেয়েছেন আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি।

ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ বৃহস্পতিবার চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

২৭ মাস আগে ওই হতাকাণ্ড এবং তাতে রহমান দম্পতির কিশোরী মেয়ের জড়িত থাকার অভিযোগ নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ওই ঘটনা বর্তমান সময়ের শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠা এবং তাতে অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছিল, তেমনি ঐশীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের 'দায়িত্বহীন' আচরণ হয়েছিল সমালোচিত।   

এ মামলায় ঐশীদের বাসার শিশু গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার বিচার চলছে শিশু আদালতে। গত বছরের ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তাকে জামিন দেন শিশু আদালতের বিচারক জাকিয়া পারভিন। গত বছরের ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পেয়েছে সে।

২০১৩ সালের ১৬ অগাস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন ঐশী। পরে গ্রেপ্তার করা হয় রনি ও জনিকে।

২০১৪ সালের ৯ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের মাতুব্বর আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। তাতে বলা হয়, বাবা-মা'কে ঐশীই হত্যা করেন; আর অন্যরা তাকে সহযোগিতা করেন।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালতে তিনি বলেছিলেন, এই হত্যায় ঐশী জড়িত নয় বলেই তার বিশ্বাস।

=========================

ঘটনাটি যেদিন ঘটেছিল সেদিনের খবর-

রাজধানীর চামেলীবাগের একটি বাসা থেকে এক পুলিশ পরিদর্শক ও তার স্ত্রীর  রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত মো. মাহফুজুর রহমান (৪৫) পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) রাজনৈতিক শাখায় কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী স্বপ্না বেগম (৪২) এবং দুই ছেলে-মেয়ে ও এক শিশু গৃহকর্মীকে নিয়ে ওই বাসার পঞ্চম তলায় থাকতেন তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় তালাবন্ধ ফ্ল্যাটের একটি বাথরুম থেকে মাহফুজ ও স্বপ্নার লাশ পায় পুলিশ। তাদের দুজনের শরীরেই ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

এসবির উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, গত বুধবার অফিস শেষ করে রাত ১১টায় বাসায় ফেরেন মাহফুজ। পরদিন ছুটি থাকায় অফিসের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি।

মাহফুজের দুই সন্তানের মধ্যে ঐশী একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের 'ও' লেভেলের ছাত্রী এবং ছেলে ঐহীর বয়স সাত বছর।

ঐহীর বরাত দিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ঐশী ছোট ভাইকে বলে, তাদের বাবা-মা রাগ করে বাসা ছেড়ে চলে গেছে। এরপর খালুর বাসায় যাওয়ার কথা বলে ভাইকে নিয়ে ঐশী বাসা থেকে বের হয়। শুক্রবার সকালে একটি রিকশায় করে ঐহীকে চামেলী ম্যানসনের ওই ভবনে এক প্রতিবেশীর বাসায় পাঠানো হয়।

তবে লাশ উদ্ধারের পর থেকে ঐশীর কোনো খোঁজ পুলিশ জানতে পারেনি।

ঘটনাস্থল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব জানান, তিন কক্ষের ওই ফ্ল্যাটের একটিতে থাকতেন মাহফুজ ও স্বপ্না। একটিতে থাকতো ছেলে ঐহী এবং অন্যটি ছিল ঐশীর ঘর।

ঐশীর ঘর সংলগ্ন বাথরুমের ভিতরে তার বাবা মাহফুজের লাশ পাওয়া যায়। আর স্বপ্নার লাশ ছিল বাথরুমের দরজায়। ঐশীর বিছানায় রক্ত লেগে থাকতে দেখা যায় বলে জানান তিনি।

ডিআইজি মোশাররফ বলেন, "আক্রোশ থেকে পরিকল্পিতভাবে দুজনকে খুন করা হয়েছে। চার থেকে পাঁচ জন এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।"

মতিঝিলের এডিসি মেহেদী হাসান বলেন, "দুজনের শরীরেই ছুরি ও বটির আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া গেছে। মাহফুজের গলায়ও আঘাত করা হয়েছে।"

বাসা থেকে একটি বটি ও একটি ছুরি উদ্ধার হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিবেদক ধ্রুব জানান, ঐশীর ঘরের জিনিসপত্র ছিল অনেকটা এলোমেলো। রান্নাঘরে একটি প্লেটে কিছু অর্ধভুক্ত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পড়ে ছিল বলে পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন।

পাশের ফ্ল্যাটের গৃহকত্রী জানান, মাহফুজের পরিবার অনেক দিন ধরেই তার পাশের বাসায় আছেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কখনো কলহ হতে দেখেননি।

ওই অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার আমজাদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ঐশীকে একটি অটোরিকশা ডাকতে দেখা যায়। এ সময় তার সঙ্গে ছোট ভাই ঐহী ও বাসার গৃহপরিচারিকা সুমি (১১) ছিল।

"বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে ঐশীকে বাসার বাইরে বের হতে না দেয়ার নির্দেশনা থাকায় আমি তার মায়ের নম্বরে ফোন দিলে একটি মোটা কণ্ঠ ভেসে আসে। তিনি বলেন, ঠিক আছে। ওকে যেতে দাও।"

ঐশীর মামা রবিউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঐশী ফোন করে তাকে বাসায় আসতে অনুরোধ করে।

"ও বলে, মামা আমরা বাসার বাইরে ছিলাম। এখন বাসায় যাচ্ছি, তুমি আসো।"

রবিউল জানান, তিনি বাসায় এসে ঐশীদের ফ্ল্যাট তালাবন্ধ দেখেন। ঘণ্টাখানেক পর বেলা ১১টার দিকে ঐহী বাসায় আসে। তখন বোন-দুলাভাইয়ের ফোনে অনেকবার কল করে সেগুলো বন্ধ পান। দুপুরে বিষয়টি তিনি এসবি অফিসে জানালে সেখান থেকে পল্টন থানায় যোগাযোগ করা হয়। পরে পুলিশ এসে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে মাহফুজ ও স্বপ্নার লাশ উদ্ধার করে।

ম্যানেজার আমজাদ আলী জানান, রাতে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ওই বাসার নিরাপত্তারক্ষী মোতালেব ও শাহীন ধরে নিয়ে গেছে।

এডিসি মেহেদী বলেন, "ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। আশা করি শিগগিরই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।"

নিহত মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায়।

সংবাদ লিংক-
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1054506.bdnews
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article660106.bdnews

========================================================

কিছু প্রশ্ন

১. মামলার বাদী মাহফুজের ভাই মশিহুর রহমান মনে করেন, তার ভাতিজি এই হত্যাকাণ্ড ঘটাননি। তাহলে কে?
২. ঐশী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে তা অস্বীকার করে বলেন, ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল। কেন?
৩. মামলার অন্য আসামি ঐশীদের বাসার গৃহকর্মী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর আদালতে তার বিচার চলছে। সেও জামিনে রয়েছে। কাজের মেয়েটিকে শাস্তি পেতে হবে কেন? সে কি পরিস্থিতির শিকার?



আমাদের জীবদ্দশায় এমন ঘটনা আর দেখার দুর্ভাগ্য না হোক।






Friday, October 30, 2015

মনে রাখতে যেন না ভুলি .......(জীবনানন্দ প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব বসু)

জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুবার্ষিকী চলে গেল মাত্র কয়েকদিন আগে। ইচ্ছে ছিল একটা লেখা তৈরী করবো তাঁকে নিয়ে। তাঁর জীবন ও সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আমার ভালো রকমের আগ্রহ আছে। কিন্তু ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলার কারণে লেখা গোছাতে পারিনি। তাছাড়া এখনো পড়ার অনেক বাকী, তাই তাঁকে নিয়ে পড়াশোনা এখনো চলছে ফাঁকে ফাঁকে। পড়ছি প্রণব চৌধুরী সম্পাদিত 'জীবাননন্দ: জীবন ও সৃষ্টি'। ১৯৫৯ সালে কলকাতা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে বুদ্ধদেব বসু থেকে শামসুর রাহমান পর্যন্ত অনেক কবি সাহিত্যিক তাঁকে নিয়ে লিখেছেন, ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেছেন। ৮৮৬ পাতার বেশ স্বাস্থ্যবান বই, এক নাগাড়ে পড়ে শেষ করা কঠিন। তবে বইটিতে এমন দুর্লভ কিছু লেখা পেয়েছি জীবনানন্দ পরিবারের সদস্যদের, যা এতদিন ধরে খুঁজছিলাম। বইটার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে হয় বইয়ের হাটকে, যাদের কাছ থেকে আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই সংগ্রহ করতে পেরেছি। জীবনানন্দ সংক্রান্ত তাবৎ বই আমি গোগ্রাসে গিলি। তাঁর কবিতা দুর্বোধ্য বলেই বোধহয় বারবার টানতে থাকে। তাঁর গল্প উপন্যাসগুলোর বেশ কিছুটা পড়া হয়ে গেছে যেখানে অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলে আবার অনেক প্রশ্ন আরো জটিল হয়ে জড়িয়ে যায়। জীবনানন্দের উপন্যাস যতটা না সাহিত্য তার চেয়ে বেশী তাঁর জীবনযাপনের একাংশের প্রতিফলন। তাঁর জীবনটাও দুর্বোধ্য, ফলে তাঁর জীবনের অমীমাংসিত ব্যাপারগুলোও খুব টানে। অনেকগুলো প্রশ্নবোধক চিহ্ন পেছনে ফেলে জীবনানন্দ চলে গিয়েছিলেন। আরো অনেক যুগ সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজবে তাঁর পাঠকেরা।

এই লেখার বিষয় কিন্তু বই আলোচনা নয়, ভিন্ন একটি বিষয়। বইটিতে বুদ্ধদেব বসুর লেখা পড়তে গিয়ে একটা অংশে চোখ আটকে গেল।

"....জীবনে যেখানে যেখানে সুন্দরের স্পর্শ পেয়েছি সেটা যেমন স্মরণযোগ্য, তেমনি যেখানে কুৎসিতের পরাকাষ্ঠা দেখেছি তা যেন দুর্বলের মতো মার্জনীয় মনে না করি। যেন মনে রাখি, মনে রাখতে যেন ভুলে না যাই....." [বুদ্ধদেব বসু, ১৯৫৫]

কথাটা খুবই সত্যি। আমি যাদের প্রতি কুৎসিত আচরণ করেছি তারা যেমন ভুলবে না, আমার প্রতি যারা কুৎসিত আচরণ করেছে আমিও তাদের কথা ভুলবো না। কিন্তু খুব আপন যাদের প্রতি অসদাচরণ করেছি, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কেমন হবে। তাদের প্রতিও অনেক সময় কুৎসিত রাগ দেখিয়েছি। আসলে রাগ বা মেজাজ দেখানোর জন্য আমার বরাবর পছন্দের মানুষ হলো খুব কাছের বন্ধু বা পরিবারের সদস্য, তারাও নিশ্চয়ই মনে রাখবে। মনে মনে ঘৃণা করবে আজীবন। এটা একটা কনফেশন, ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া শাস্তি সবকিছু অনিবার্য ছিল। মজার ব্যাপার হলো আমি রাগী মানুষ বলে সমাজে পরিচিত নই। কেননা আমার যা রাগ তাপ কোপ সব নিতান্তই আপনজনের সাথে সীমাবদ্ধ এবং আমার কন্যাটিই সবচেয়ে বেশী শিকার। তবু কী আশ্চর্য সে পরদিনই ভুলে যায় আগের দিন তাকে কিভাবে বকেছি। কন্যাটি ভুললেও বন্ধুটি ভুলে কিনা জানা হয় না, হবে না।

Thursday, October 29, 2015

অন্ধকারেরও আছে ঠিকানা......

সন্ধ্যে নেমে এসেছিল শহরে। আমরা কজন হাঁটছিলাম শহরের প্রান্তদেশে। সড়ক পথ শেষ হবার পর হাঁটাপথ। প্রথমে সারিবদ্ধ দোকানপাট। দোকানপাট ফেলে একটু পশ্চিমে যাবার পর একটা বেড়িবাঁধ উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছুঁয়ে। সেই বেড়িবাধের উপর একটা এক্সপ্রেসওয়ে। দ্রুতগামী যানবাহন ছুটে চলছে ব্যস্তসমস্ত হয়ে।

আমাদের তাড়া ছিল না। চলছিলাম হেলেদুলে। কোথায় যাবো জানতাম না। এই পথটা যেখানে শেষ সেখানে গিয়ে বসবো কোথাও। এক্সপ্রেসওয়ের  নীচ দিয়ে একটি সুরঙ্গপথ। সেই সুড়ঙ্গে পা দিতেই শব্দের আকার আকৃতি বদলে গেল। ধ্বনিপ্রতিধ্বনিতে মুখরিত। একটা শব্দ হলে তার তিনটে উত্তর আসে। গা ছমছমে ব্যাপার।

একজন বললো, সিগ্রেট দে। আরেকজন এগিয়ে দিল। সাথে ম্যাচিস। আগুন জ্বলে উঠলে দেখা গেল গুহার ভেতর জনপ্রাণীর চিহ্ন নেই। শুধু আমরা কজন।

পা চালিয়ে গুহা পেরিয়ে নুতন একটা জায়গায় গিয়ে পড়ি। অতি প্রাচীন একটা বাজার। অন্ধকারে থমথম করছে। মৃদু আলো জ্বলছে কুপির ভেতর। এই ভুতুড়ে বাজারে কারা আসে? বাজারে তো কোন পন্য নেই। মাছের আঁশটে গন্ধ বাজারজুড়ে। এবড়ো থেবড়ো পথ, যে কোন অসতর্ক মুহুর্তে পা পিছলে আলুর দম হয়ে যেতে পারে কেউ।

চারপাশ তাকিয়ে মনে হলো এটা কোন মৃত নগরী। কত বছর আগে মরে গেছে কেউ জানে না। নাহ, আরেকটু এগোতেই লোকজন দেখা গেল। মাছের ঝাঁকা নিয়ে বসে গেছে বেপারী। ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশী। কাছে গিয়ে দেখা গেল সব ইলিশ মাছ। সামনেই সমুদ্র, জেলেরা মাছ ধরে এখানে রেখে যায়। আবারো এবড়ো থেবড়ো পথে এগিয়ে চলা।

এই পথে মানুষ নেই। সূর্য ডুবে গেছে কবেই। তবু পশ্চিমাকাশে খানিক রং এখনো টিকে আছে। সমুদ্রের কাছে চলে যাই আমরা। কিন্তু সমুদ্র অনেক দূরে সরে গেছে। এখন ভাটার সময়। আমরা চাইলেও সমুদ্রকে পেতে পারি না। তবু সমু্দ্রের রেখে যাওয়া কাদামাটি আর বালিয়াড়িতে নেমে যাই আমরা। অদৃশ্য কাঁকড়া শামুক ঝিনুকের দলকে খুঁজি উদ্দেশ্যহীন।

সামনে তাকিয়ে আমাদের গল্প থেমে যায়। চারজনই চুপ করে গেলাম। কী অসাধারণ এক দৃশ্য, সমুদ্রের সৈকত জুড়ে মৌনতা মেশানো অপার্থিব এক সৌন্দর্য। অন্ধকারেরও আছে হৃদয়স্পর্শী আলোর ছটা। সমুদ্রের কাছে আসলেই আমার একজনের কথা মনে পড়ে যায়। এখানে আসলে আমি তাকেই খুঁজি। একদিন ছিল, এখন নেই। সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। পর্যাপ্ত জ্বালানীর অভাবে প্রদীপটা নিভে গেছে কেবল। জীবনটাও তো তাই। যখন প্রাচুর্য থাকে তখন মানুষটা জীবন্ত থাকে। যখন থাকে না তখন জীবন থেকেও নেই। আমরাও সেরকম। একসময় জীবনপ্রদীপের তেলও তো ফুরিয়ে যাবে। তাই বলে তো জীবনটা বিফলে গেলো না। সুদূর অতীতে যে জীবন ছিল তাও তো সত্যি। অন্ধকার হয়ে গেলেও দিনের আলোটা সত্যি। তাই অন্ধকারের প্রতি আমার একরকমের পক্ষপাতিত্ব আছে। আমি পশ্চিমাকাশের শেষ আভাটুকু দেখতে দেখতে ধোঁয়া ওড়াতে থাকি আপনমনে।

Life was a song
You came along
I lay awake the whole night through.........

Wednesday, October 28, 2015

আধঘন্টার গদ্য

পরের দিনগুলো আর আগের দিনের মতো হবে না। পরের দিনের সাথে আগের দিনের তুলনা হয় না। বহুবছর পেরিয়ে যাবার পর এই সত্যটা জেনেছি। আগের দিনের সাথে পরের দিন মেলাতে গেলেই কষ্ট। পৃথিবীতে শীত হেমন্ত বসন্ত বারবার ঘুরে ফিরে এলেও মানুষের জীবনের ঋতুগুলো কখনো ফেরে না। মানুষের জীবনে প্রতিটা ঋতুই ভিন্ন।  পাহাড়ের কিনারায় ঝর্ণা ঝরানো রেস্তোঁরাটি যেদিন মিশে গেল উন্নয়ন বুলডোজারে, সেদিন আবারো বুঝেছি এবার নতুন জীবন তার। পুরোনোকে সেখানে খুঁজতে যাওয়া বৃথা।

সময় ফুরিয়ে আসছে, আগে পরে একজনকে চলে যেতে হবে। যে লেখাটা অপ্রকাশিত থেকেছে, সেটা পাণ্ডুলিপিতেই থেকে যাবে। চলে যাবার পর কেউ যদি পুড়িয়ে ছাই করে দিতো! সৃষ্টিকে নিজের হাতে ধ্বংস করার বেদনা অসহ্য।

নতুন কিছু লিখতে গেলেও পুরোনো এসে আঁকড়ে ধরে, অপরাধী করে। পুরোনো খাতা ফেলে নতুন কোন খাতা খোলার সময় নেই আর।

মনস্তাত্ত্বিক বিচারে মানুষ এক অসাধারণ রকমের স্বার্থপর প্রাণী। আত্মরক্ষার প্রবৃত্তিই মানুষকে স্বার্থপর করে তুলেছিল আদিম যুগে। সেই প্রবৃত্তির বীজ আধুনিক মানুষের রক্তে মিশে বিনা ওজরেও স্বার্থপরতার উদাহরণ সৃষ্টি করে।

এটুকু লিখতেই পেরিয়ে গেল দীর্ঘ আধঘন্টা। পৃথিবীর অনেক আধঘন্টা অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে। কোন কোন আধঘন্টায় ফলেছে সোনালী ফসল। এমন কতো আধঘন্টা কেটে যাবে কারো.......88

Thursday, October 22, 2015

আমি, আমার একাকীত্ব, আর অপেক্ষা - (পোড়াবাস্তব স্বপ্ন)

১.
যদি অনেক অনেক বেশী স্বপ্ন দেখা মানুষের তালিকা হয়, আমি সেই তালিকার উপরের দিকে থাকবো। তার মানে আমি খুব স্বপ্নবাজ মানুষ তা নয়। যে স্বপ্নের কথা বলছি সেটাও ইচ্ছেপুরণ স্বপ্ন নয়। এই স্বপ্ন নিতান্তই ঘুম ঘোরে দেখা অর্থহীন সব স্নায়বিক স্বপ্ন। ছেলেবেলা থেকেই প্রতিরাতে হাবিজাবি স্বপ্নে কেটে যেতো ঘুমের সময়। অধিকাংশ স্বপ্নই ছিল প্রচণ্ড রকমের ভীতিকর। কোন কোন স্বপ্নে দমবন্ধ হয়ে যেতো আমার, নিঃশ্বাস নেবার জন্য এক ফোঁটা বাতাস পেতাম না, মরে যাবার যে অভিজ্ঞতা আমাদের সুদূরলব্ধ, সেই অভিজ্ঞতা হয়তো আমি কোন কোন রাতে ঘুম ঘোরেই স্বপ্নবেশে পেয়ে গেছি। যৌবনের শেষ অবধি আমার স্বপ্নগুলো সব সেই রকমই। বাস্তবে সেই স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়ন ঘটেনি বলে এখনো টিকে আছি।

আজকাল দেখতে শুরু করেছি নতুন জাতের স্বপ্ন। আমি কোন নতুন শহরে গিয়েছি এবং পথ খুঁজে পাচ্ছি না। একের পর এক গাড়ি বদল করছি, নতুন নতুন জায়গায় গিয়ে পৌঁছাচ্ছি, কিন্তু আমার ঠিক ঠিকানায় পৌঁছাতে পারছি না। আজ দুপুরেও সেরকম একটা স্বপ্নে অন্ধকার নেমে এসেছিল। সকাল থেকেই মাথাব্যথা পিনপিন করে জানান দিচ্ছিল, দুপুরের পর সেটা জ্বর জ্বর শীত শীত আবেশ নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কেমন একটা ক্লান্তিতে ঘুম নেমে এলো, তারপরই শুরু হলো স্বপ্ন যাত্রা, বলা উচিত দুঃস্বপ্নের যাত্রা। আমি পথ হারিয়ে অলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে অন্ধকার কোন দালানের প্রবেশপথে গিয়ে বসে আছি। সেই প্রাচীন দালান কিসের মনেও করতে পারছি না। কিন্তু সেখান থেকে বের হয়ে অদ্ভুত কিছু মানুষ অদ্ভুত চোখে আমাকে দেখতে দেখতে পার হয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের কাছে পথের হদিস জিজ্ঞেস করলে তারা জবাব না দিয়ে চলে গেল। এরপর আরো অনিশ্চয়তা নিয়ে আমি একটা গাড়ির অপেক্ষা করছি। বড় একটা সহৃদয় যাত্রীপূর্ণ বাস, যেখানে উঠে আমি পৌঁছে যাবো আমার চেনা কোন ঠিকানায়। আমি জানি আমি ঢাকা শহরের কাছে কোথাও আছি, কিন্তু কিছুতেই আমার ঢাকার চেনা এলাকায় পৌঁছাতে পারছি না। অবাক ব্যাপার আমি ঢাকার কোন জায়গার নামও মনে করতে পারছি না। সব নাম আমার স্মৃতিপ্রকোষ্ঠ থেকে হারিয়ে গেছে। কেমন অসহায়ের মতো আমি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছি একা। কোথাও আলো নেই। অন্ধকার পরিত্যক্ত একটা শহর বা মফস্বল।  এখানে কোন মানুষ নেই কেন?

ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি সন্ধ্যে নেমে এসেছে আমার শহরে। আমি রীতিমত নিজের বাড়িতে, নিজের বিছানায়। মাথাটা তখনো ঝিমঝিম করছে, বাস্তবে ফিরে আসতে আসতে বুঝতে পারলাম, জ্বরের প্রেমময় স্পর্শ মস্তিষ্কের বাম কোনায় খোঁচা দিয়ে জানান দিচ্ছে।

===================

২.
অনেকদিন আগে এক বন্ধু লিখেছিল:

মানুষ চলে যায়; সঙ্গে নিয়ে যায় তার সমস্ত সম্ভাবনা, আশা-ভালবাসা; মহত্তম আকাঙ্ক্ষা, স্নায়ুক্ষয়ী আশঙ্কা... নিজস্ব পৃথিবীর সবটুকু গ্লানি, গহনতম বেদনা... যাবতীয় প্রাপ্তির তৃপ্তি, অপ্রাপ্তির হাহাকার... উপচে পড়া আশীর্বাদ, উথলানো স্মৃতিকাতরতা, উগরানো অভিশাপ... কত সত্য কত মিথ্যা, কত প্রতিশ্রুতি কত ভান কত অপেক্ষা কত স্বপ্নসাধ...

অন্তর্গত অনুভূতির সমুদয় প্রকরণ সঙ্গে নিয়েই তো বিদায়ের পথ ধরে মানুষ!
.......

ঘুমিয়ে কখনও দেখিনি, ঘুমঘোরেও না; শুধু কল্পনায় এই স্বপ্নটা মাঝেমাঝে দেখি। নিতান্ত হাস্যকর ছেলেমানুষি। আমার একটা ক্যাফে হবে। ছোট্ট একটা ক্যাফে। দুপুরবেলায় কেউ থাকবে না ভেতরে, তবে দিনরাতের সবটুকু সময় এর দরজা খোলা থাকবে।





একটা পুরনো বাতিঘরের ধারে আঙুরলতায় ছাওয়া ঘন সবুজ পাহাড়; সেই পাহাড়ের পাথুরে ঢাল সোজা নেমে গেছে সোনালী বালির সৈকতে; ঝকঝকে ফেনা মাথায় বয়ে আনা নীলচে সবুজ ঢেউ আসছে, একের পর এক, আছড়ে পড়ছে বড় বড় পাথরের চাঁইতে। ওরকম একটা পাহাড়ের শেষ প্রান্তে থাকবে ছোট্ট ক্যাফেটা; কাঠের মেঝে- টালির ছাদ- কাচের জানলা- অল্প কটা বেতের চেয়ার। তন্দুরের গর্ভে ফুলেফেঁপে উঠবে মাখনগন্ধী কুকি, ফুলকাটা আনারসফালিতে চিনিপোড়া গন্ধ মাখামাখি হবে পাইনঅ্যাপল কেকের তলায়। ক্রিমের ফেনা উঠবে কফির কাপে, কেতলির জলে আদাএলাচ ফুটবে লেবুচায়ের অপেক্ষায়। হঠাৎ কোন রোদসম্ভাবী ভোরে আসে যদি কোন প্রিয়বাঞ্ছিত আগন্তুক; চাইলে গরমাগরম মুচমুচে পরোটাভাজিও জুটবে তার!

রাত গভীর হলে ঝুলবারান্দায় জেগে বসে থাকব- সামনে সমুদ্র, ডানে পাহাড়, আর বাঁয়ে শূন্যতা নিয়ে- আঁধারে চেয়ে বসে থাকবে তিনজন- আমি, আমার একাকীত্ব, আর অপেক্ষা (বাহ্, সবাই স্বরবর্ণে শুরু!)...

হয়ত মনে পড়বে গুলজারকে, নিজের মতো করে-

a few of my belongings

are still in your possession

a few wet days of monsoon

a night wrapped in a letter

return to me what is mine...

a few autumns

the sound of falling leaves

return to me what is mine...

once under a single umbrella

both of us were half wet and half dry

the dry half I had brought along

the wet part , perhaps , is still lying by the bed

send it across...

a hundred and sixteen moonlit nights

the lone mole on your shoulder

the aroma of still-moist henna

a few complaints that were forged

a few false promises too

let me remind you of them all...

send them all back to me

return to me what is mine...

but grant me this one last wish

that when I bury these memories

may I bury myself there too...

একদিন, একদিন না একদিন, এমন একটা জীবনে চলে যাব ঠিকঠিক!
অর্থ নয়, কীর্তি নয়... কত তুচ্ছ, কত অর্থহীন স্বপ্নসাধের খড়কুটো, কত যত্নেই না আগলে রাখে মানুষ!

ডিসেম্বর ২০১১




Monday, October 19, 2015

কফি হাউসের সন্ধানে.........

নতুন জায়গায় গেলে বাঙালরে নাকি হাইকোর্ট দেখায়, কোলকাতার রিকশাওয়ালা দেখালো 'কফিহাউস'। নিউমার্কেটের সামনে এক রিকশাওয়ালার সাথে  কলেজ স্ট্রিট- কফি হাউসে যাবার ব্যাপারে আলাপ করছিলাম। অমনি পাশ থেকে আরেক রিকশাওয়ালা এসে আমাদের ছো মেরে টেনে নিয়ে বললো, আমি চিনি, কিন্তু আশি টাকা ভাড়া লাগবে। বললাম, ঠিকাছে চলো।
.
সে মাইল দেড়েক গিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে একটা দালানের সামনে নামিয়ে দিয়ে বললো, এটাই কফি হাউস। ভেতরে কফি বিক্রি হয়। আমার হাতের গুগল ম্যাপ বলছে জায়গাটা আরো বহুদূর। বললাম, এই জায়গা না, কফি হাউস তো আরো দূরে, কলেজ স্ট্রিটে, তুমি কলেজ স্ট্রিটে চলো। সে চোখ উল্টে বললো, আমি ওখানে যেতে পারবো না। আমার ভাড়া দিয়ে এখানেই নেমে যাও তোমরা। যদিও এক চতুর্থাংশ পথও যায়নি তবু আমি তাকে ৬০ টাকা দিলাম। কিন্তু সে ভাড়া প্রত্যাখান করে হুমকির সুরে বললো, পুরো আশি টাকাই দিতে হবে।
.
কথার ধরণে মেজাজ টং হয়ে গেল। বললাম, আয় বেটা এদিকে আয়। বলে একটা দোকানের কাছে গিয়ে দোকানীকে বললাম, দাদা নিউমার্কেট থেকে এই জায়গার ভাড়া কত? দোকানী বললো, বড়জোর ৫০ টাকা। আমি বললাম, এরে ৬০ টাকা দিছি তবু ব্যাটা বলে কম হয়েছে। তখন দোকানী রিকশাওয়ালাকে কঠিন ধাতানি দিয়ে বিদায় করলো।
.
আমরা হাঁটাপথ ধরলাম এবার। কিছুদূর গিয়ে সামনে একটা ছাত্রমতন তরুণকে পেয়ে জানতে চাইলাম, কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস কিভাবে যাবো। ছেলেটা বললো, সামনে গিয়ে বাসস্টপে দাঁড়ান, ট্রাম বাস যাই আসে উঠে যাবেন, সোজা কলেজ স্ট্রিট নামবেন, ওখানেই কফি হাউস। কী সহজ সমাধান!
.
ট্রামে চড়লাম, প্রথমবারের মতো। এই প্রাচীন বাহনটিতে চড়ার একটা সুযোগ খুঁজছিলাম, পেয়ে গেলাম। ভিড় নেই, সিট পেয়ে গেলাম। ট্রামে চড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে আলাদা পোস্ট দেয়া যাবে, এখন কফি হাউস যাই। ধীর লয়ে চলতে চলতে কলেজ স্ট্রিট পৌঁছে গেল ট্রাম। পাঁচ টাকা ভাড়া মিটিয়ে নেমেই দেখি প্রেসিডেন্সি কলেজ! আহ যেন এই কলেজে আমি কোন এক কালে পড়েছি, তেমন নস্টালজিক হয়ে গেলাম। কফি হাউজ খোঁজার আগে ঢুকে পড়লাম প্রেসিডেন্সিতে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। তরুণ তরুণীরা তখনো আড্ডারত। এক কোনায় বসে পড়তে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সময় কম। কিছু সময় ঘুরাঘুরি করে, মোবাইল ক্যামেরার দুয়েকটা ক্লিক সেরে রাস্তা পার হয়ে আবারো কফি হাউজের খোঁজে।
.
যে দালানে কফি হাউস সেটি দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে ওটার ভেতর একটা রেস্তোঁরা থাকতে পারে। কফি হাউসের সামনে দাঁড়িয়েও সন্দেহমুক্ত হতে পারি না। চারপাশে শুধু বই আর বইয়ের দোকান। মাঝখানে একটা আধো অন্ধকার প্রবেশপথ। সিঁড়ি বেয়ে দোতলার দিকে যেতেই বুঝলাম ঠিক পথে আছি। সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছেই দেখা গেল কাংখিত সাইনবোর্ড INDIAN COFFEE HOUSE।
.
অবশেষে চপ-কাটলেট খেয়ে, ধুমায়িত কফিতে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে ফেলা এক আড্ডার কথা ভাবতে ভাবতে এক ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম। তারপর কফি হাউস থেকে বেরিয়ে ফিরতি ট্রামের অপেক্ষায় রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের নীচে এসে দাঁড়ালাম। উল্টোদিকে প্রেসিডেন্সি কলেজের বিশাল প্রবেশপথ। তার আলো আঁধারিতে তাকিয়ে মনে হলো সাদা পাঞ্জাবি ধুতি পরা জীবনানন্দের ছায়া যেন হেঁটে চলে গেল ভেতরে বাগানের সীমানা পেরিয়ে....

পাঁচ লাইন

কোলাহলপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দুপুর।
পাহাড় চেরা পথে ঘাসজঙ্গল মাড়িয়ে হেঁটে যাওয়া।
লাইব্রেরী ছায়ার স্বস্তিতে ফিরে টং দোকানের চা।
শাটল ট্রেনের জানালার পাশে মুখোমুখি আসন।
আটকে থাকা ঘাসবিচালির সযত্ন উৎপাটন।

[চবিতে একটি দুপুর]

Thursday, October 15, 2015

মিলিয়ে যাওয়া সুখের বিন্দুগুলো

১.


ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই চোখটা কচকচ করছে পানি দিলাম অনেকখানি তবু কমেনি চোখটা ডলতে ডলতে লাল হয়ে গেছে আরো ঘন্টা দুই ঘুমোতে পারলে পূর্ণ হতো চোখের বিশ্রাম  গতরাতে ঘুম হয়নি তেমন অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলাম অদ্ভুত কিছু কষ্ট আর ভালোলাগা ঘুমকে বিলম্বিত করেছে কালরাতে একটু পড়াশোনা করছিলাম বারোটার দিকে বই বন্ধ করে শোবার জন্য আসলাম দেখলাম ওরা তিনজন ঘুমোচ্ছে শিহান আমার পাশে ঘুমোয় ঘন্টা দেড়েক আগে ওদেরকে শুতে বলে আমি বাতি নিবিয়ে ড্রইং রুমে চলে গিয়েছিলাম শিহান ওর খেলনা ল্যাপটপটা নিয়ে দুষ্টুমি করছিল বলে হালকা বকা দিয়ে বলেছিলাম, 'ঘুমোবার সময় এটা দরকার নাই টেবিলে রাখো ওটা এখন' আমি একটু জোরে কথা বললেও পছন্দ হয় না ওর কিন্তু প্রতিবাদ করে না তাই বোঝা যায় না রাগ করছে কিনা আমার কথা শুনে সে চুপচাপ ল্যাপটপটা টেবিলে রেখে শুয়ে পড়েছিল

 

এখন ফিরে এসে দেখি সবাই ঘুম আজ একটু গরম লাগছে সাধারণত ওশিন শিহানের যে কোন একজন দাদী বা ফুফুর সাথে থাকার জন্য জেদ করে প্রতিদিন তিন জন এক বিছানায়  ঠাসাঠাসি করে শুতে ভাল্লাগে না আমার তাই আমি আস্তে করে শিহানের পাশ থেকে বালিশটা নিয়ে আলগোছে দরোজা বন্ধ করে ড্রইং রুমের ডিভানে গিয়ে শুয়ে পড়লাম বাতি নিবিয়ে এখানে ঘুমোতে ভালোই লাগে আমার মাঝে মাঝে

 

কিন্তু কয়েক মিনিট পর অন্ধকারে একটা ছোট্ট একটা ছায়ামুর্তি দেখা গেল গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে ডিভানের কাছে কে এসেছে বুঝতে পেরে ঘুমের ভাণ করে চুপ করে পড়ে থাকলাম চোখ বুজে সে এসে ডাকলো, "বাবা বাবা, ওঠো, রুমে চলো, তুমি না থাকলে আমার ঘুম আসে না" এটা সত্যি ওকে রেখে কখনোই আমি অন্য ঘরে ঘুমোতে পারিনি আজ ভেবেছিলাম সে ঘুমিয়ে গেছে তাই চুপিসারে চলে এসেছিলাম ওর ডাকাডাকিতেও আমি মটকা মেরে পড়ে থাকলাম দেখি কি করে সে আমার চোখের পাতা খুলে দিল ছোট ছোট আঙুল দিয়ে, মুখে হাত দিয়ে ঠোট দুটো ফাক করলো আমার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা তবু আমি হাসি চেপে পড়ে থাকলাম আমার কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে চলে গেল

 

খানিক পর আবারো ফিরে এলো এবার সোজা ডিভানে উঠে আমার পেটের উপর বসলো তারপর দুহাতে আমার গাল ধরে বললো, "আমি কিন্তু এখানে বসে থাকবো চলো তুমি নইলে আমি নামবো না" আমার খুব হাসি পাচ্ছিল ওর কাণ্ড দেখে তবু হাসি চেপে চুপ করে থাকলাম এবারো ব্যর্থ হয়ে চলে গেল

 

পাঁচ মিনিট পর ওর ছোট বালিশটা নিয়ে আবারো এলো বললো, "তুমি যদি না যাও, আমি এখানেই ঘুমাবো" বলেই পাশের সোফায় বালিশ দিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো আমার খুব মায়া হচ্ছে বুঝতে পারছি এখানে ঘুমানো অসম্ভব তবু দেখি কতক্ষণ থাকে খানিক পর সে আর কোন কথা না বলে ছোট বালিশটা নিয়ে গুটিগুটি পায়ে চলে যায় বেডরুমের দিকে

 

এবার আমাকে উঠতেই হয় আমি রুমে গিয়ে দেখি শুয়ে পড়েছে আমার দিকে পেছন ফিরে আমি পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম আস্তে করে শুয়ে এক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আমি এসেছি এদিকে ফিরো কিন্তু সে শক্ত হয়ে আছে কিছুতে ফিরবে না অনেক ডাকলাম, কিছুতে কিছু হয় না শরীরটা শক্ত করে রেখেছে বুঝতে পারলাম অভিমান করেছে জোর করে যখন আমার দিকে ফিরিয়ে আদর করলাম তখন আমার মুখটা সরিয়ে দিয়ে গাল ফুলিয়ে বললো, "দেখছো না আমার রাগ হয়েছে? অনেক রাগ! তোমার সাথে কথা বলবো না"

 

কথাটা শুনে আমার বুকের ভেতর এত ভালোলাগা আর কষ্ট একসাথে হানা দিয়ে চোখ দুটো জ্বালা করে উঠলো মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ওর এত মায়াকাড়া ভালোবাসা! এটাই প্রথম না, আরো ছোটকাল থেকেই এমন বাবার বুকে মুখটা গুঁজে ঘুমোবে শক্ত করে আকড়ে ধরে রাখবে ওকে নিয়ে আমারো ভীষণ প্রিয় অভ্যেস এটা কিন্তু আজ ভালোলাগার সাথে কেমন একটা কষ্টবোধ মাথার ভেতরে কেমন সব চিন্তা ভর করতে শুরু করলো আমি যদি হুট করে যে কোনদিন হারিয়ে যাই, এই পুচকাটা কী কষ্টই না পাবে সবকিছু হারাতে পারলেও ওকে হারিয়ে আমি কোথাও যেতে চাই না কিন্তু একদিন তো যেতে হবেই যাওয়াটা অনিবার্য তখন সে কী করবে, কার সাথে ঘুমোবে, কাকে খুঁজে আনবে ড্রইং রুম থেকে ওর পাশের বালিশটা চিরকালের জন্য খালি হয়ে যাবে? আমার ইচ্ছে করছিল ওকে জড়িয়ে নেই বুকের সাথে কিন্তু ওরও মাত্র ঘুম এসেছে হয়তো জাগাতে ইচ্ছে হলো না তারপর, তারপর থেকে অনেক রাত অবধি শুধু ওই কষ্টটাই জেগে থাকলো ঘুম পালিয়ে গেল দুচোখ থেকে যখনই একটু ঘুম আসে, আবার কেমন চমকে উঠে ভেঙ্গে যায় ঘুম ভেঙ্গে মনে হয় চলে যাবার ডাক এসেছে আসছে

 

আসবেই তো আয়ু কমতে কমতে একদিন ছোট্ট একটা বিন্দুতে এসে থেমে যাবে আমি যতবারই চোখ বন্ধ করছিলাম, ততবারই সেই বিন্দুটা এসে হাজির হচ্ছিল চোখের উপর চমকে চমকে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছিল তাই বারবার শেষমেষ কটার দিকে ঘুম এলো টেরই পেলাম না সকালে উঠেও চোখের জ্বালাপোড়া থেকে গেছে বুকের ভেতর দলাপাকানো কষ্ট

 

কোন কোন সুখের সময়ে এরকম বেদনাদায়ক ভাবনা কেন ভর করে?

[২০১৪]


২.

সুখের আয়ু খুব সীমিত আমাদের। যে মানুষগুলোকে ঘিরে আমাদের সুখ, সেই মানুষগুলো একদিন কোন না কোন কারণে দূরে মিলিয়ে যায়। যে সম্পর্কগুলো নিয়ে আমাদের প্রতিদিনের তৃপ্তি, সেই সম্পর্কের আয়ুও একদিন ফুরিয়ে আসে। যে মানুষগুলো আমাদের দেখে একসময় সুখী হতো, একদিন সেই মানুষগুলোই আমাদের দেখে বিরক্ত হয়। যে বন্ধুগুলোর সাথে একসময় প্রতিদিন দেখা হতো এখন তাদেরকে আর কোথাও খুঁজে পাই না। বয়স যখন অর্ধশতকের কাছাকাছি পথে চলে আসে তখন অনেক কিছুই জীবনের কাছ থেকে নির্বাসিত হয়ে যায়। মাত্র কবছর আগেও মনে হতো আমি কখনো বুড়ো হবো না, শরীর বুড়ো হলেও মনে মনে চিরতরুণ থেকে যাবো। আশ্চর্যজনকভাবে চল্লিশ পার হবার পরও কী করে যেন টিকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু পঞ্চাশের দিকে যেতে যেতে সে ধারণা বদলে গেল। আজকাল মানুষের আচরণ দেখেই বুঝে ফেলি, সময় শেষ হয়ে আসছে। সুখের বিন্দুগুলো ঘুরতে ঘুরতে বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে মিলিয়ে যাবে সহসা। অনেক মানুষ আমাকে মুছে ফেলবে, আমিও অনেককে মুছে ফেলবো। একসময় এটাকেই স্বাভাবিক মনে হবে। একসময় এটাই জীবনের ধর্ম হয়ে যাবে। আমরা সেই কালের দিকে এগিয়ে চলছি। [২০১৫]