Thursday, November 12, 2015

একটি দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ডের রায়


দুবছর আগের একটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার শাস্তি ঘোষিত হলো আজ। পিতা-মাতাকে খুন করার দায়ে কন্যার ফাঁসির আদেশ দিলেন আদালত। ঘটনাটি ভীষণভাবে চমকে দিয়েছিল সমগ্র বাংলাদেশকে। এও কি সম্ভব? সতেরো বছরের একটি মেয়ে তার বাবা-মা দুজনকে হত্যা করেছে কোন এক ভয়ংকর ক্রোধে? কী এমন ঘটনা ছিল তার পেছনে? আমাদের কখনো জানা হবেনা হয়তো। মানব মনের অদ্ভুত কোন বিগড়ে যাওয়ার কাহিনী কেবল ঐশীর ভেতরেই থেকে যাবে। মেয়েটির নাম ঐশী। নিষ্পাপ মুখটা দেখে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না সে এমন কাজটা করতে পারে। ঘটনাটা আমরা ভুলে যাবো কদিন বাদেই। তাই ঘটনাটি সংক্রান্ত খবরের লিংকগুলো সংরক্ষণ করে রাখছি ভবিষ্যতের জন্য।

আজকের সংবাদ

বাবা-মা হত্যায় ঐশীর ফাঁসির রায়

ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছর কারাদাণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বেকসুর খালাস পেয়েছেন আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি।

ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ বৃহস্পতিবার চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

২৭ মাস আগে ওই হতাকাণ্ড এবং তাতে রহমান দম্পতির কিশোরী মেয়ের জড়িত থাকার অভিযোগ নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ওই ঘটনা বর্তমান সময়ের শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠা এবং তাতে অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছিল, তেমনি ঐশীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের 'দায়িত্বহীন' আচরণ হয়েছিল সমালোচিত।   

এ মামলায় ঐশীদের বাসার শিশু গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার বিচার চলছে শিশু আদালতে। গত বছরের ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তাকে জামিন দেন শিশু আদালতের বিচারক জাকিয়া পারভিন। গত বছরের ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পেয়েছে সে।

২০১৩ সালের ১৬ অগাস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন ঐশী। পরে গ্রেপ্তার করা হয় রনি ও জনিকে।

২০১৪ সালের ৯ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের মাতুব্বর আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। তাতে বলা হয়, বাবা-মা'কে ঐশীই হত্যা করেন; আর অন্যরা তাকে সহযোগিতা করেন।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালতে তিনি বলেছিলেন, এই হত্যায় ঐশী জড়িত নয় বলেই তার বিশ্বাস।

=========================

ঘটনাটি যেদিন ঘটেছিল সেদিনের খবর-

রাজধানীর চামেলীবাগের একটি বাসা থেকে এক পুলিশ পরিদর্শক ও তার স্ত্রীর  রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত মো. মাহফুজুর রহমান (৪৫) পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) রাজনৈতিক শাখায় কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী স্বপ্না বেগম (৪২) এবং দুই ছেলে-মেয়ে ও এক শিশু গৃহকর্মীকে নিয়ে ওই বাসার পঞ্চম তলায় থাকতেন তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় তালাবন্ধ ফ্ল্যাটের একটি বাথরুম থেকে মাহফুজ ও স্বপ্নার লাশ পায় পুলিশ। তাদের দুজনের শরীরেই ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।

এসবির উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, গত বুধবার অফিস শেষ করে রাত ১১টায় বাসায় ফেরেন মাহফুজ। পরদিন ছুটি থাকায় অফিসের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি।

মাহফুজের দুই সন্তানের মধ্যে ঐশী একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের 'ও' লেভেলের ছাত্রী এবং ছেলে ঐহীর বয়স সাত বছর।

ঐহীর বরাত দিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ঐশী ছোট ভাইকে বলে, তাদের বাবা-মা রাগ করে বাসা ছেড়ে চলে গেছে। এরপর খালুর বাসায় যাওয়ার কথা বলে ভাইকে নিয়ে ঐশী বাসা থেকে বের হয়। শুক্রবার সকালে একটি রিকশায় করে ঐহীকে চামেলী ম্যানসনের ওই ভবনে এক প্রতিবেশীর বাসায় পাঠানো হয়।

তবে লাশ উদ্ধারের পর থেকে ঐশীর কোনো খোঁজ পুলিশ জানতে পারেনি।

ঘটনাস্থল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব জানান, তিন কক্ষের ওই ফ্ল্যাটের একটিতে থাকতেন মাহফুজ ও স্বপ্না। একটিতে থাকতো ছেলে ঐহী এবং অন্যটি ছিল ঐশীর ঘর।

ঐশীর ঘর সংলগ্ন বাথরুমের ভিতরে তার বাবা মাহফুজের লাশ পাওয়া যায়। আর স্বপ্নার লাশ ছিল বাথরুমের দরজায়। ঐশীর বিছানায় রক্ত লেগে থাকতে দেখা যায় বলে জানান তিনি।

ডিআইজি মোশাররফ বলেন, "আক্রোশ থেকে পরিকল্পিতভাবে দুজনকে খুন করা হয়েছে। চার থেকে পাঁচ জন এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।"

মতিঝিলের এডিসি মেহেদী হাসান বলেন, "দুজনের শরীরেই ছুরি ও বটির আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া গেছে। মাহফুজের গলায়ও আঘাত করা হয়েছে।"

বাসা থেকে একটি বটি ও একটি ছুরি উদ্ধার হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিবেদক ধ্রুব জানান, ঐশীর ঘরের জিনিসপত্র ছিল অনেকটা এলোমেলো। রান্নাঘরে একটি প্লেটে কিছু অর্ধভুক্ত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পড়ে ছিল বলে পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন।

পাশের ফ্ল্যাটের গৃহকত্রী জানান, মাহফুজের পরিবার অনেক দিন ধরেই তার পাশের বাসায় আছেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কখনো কলহ হতে দেখেননি।

ওই অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার আমজাদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ঐশীকে একটি অটোরিকশা ডাকতে দেখা যায়। এ সময় তার সঙ্গে ছোট ভাই ঐহী ও বাসার গৃহপরিচারিকা সুমি (১১) ছিল।

"বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে ঐশীকে বাসার বাইরে বের হতে না দেয়ার নির্দেশনা থাকায় আমি তার মায়ের নম্বরে ফোন দিলে একটি মোটা কণ্ঠ ভেসে আসে। তিনি বলেন, ঠিক আছে। ওকে যেতে দাও।"

ঐশীর মামা রবিউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঐশী ফোন করে তাকে বাসায় আসতে অনুরোধ করে।

"ও বলে, মামা আমরা বাসার বাইরে ছিলাম। এখন বাসায় যাচ্ছি, তুমি আসো।"

রবিউল জানান, তিনি বাসায় এসে ঐশীদের ফ্ল্যাট তালাবন্ধ দেখেন। ঘণ্টাখানেক পর বেলা ১১টার দিকে ঐহী বাসায় আসে। তখন বোন-দুলাভাইয়ের ফোনে অনেকবার কল করে সেগুলো বন্ধ পান। দুপুরে বিষয়টি তিনি এসবি অফিসে জানালে সেখান থেকে পল্টন থানায় যোগাযোগ করা হয়। পরে পুলিশ এসে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে মাহফুজ ও স্বপ্নার লাশ উদ্ধার করে।

ম্যানেজার আমজাদ আলী জানান, রাতে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ওই বাসার নিরাপত্তারক্ষী মোতালেব ও শাহীন ধরে নিয়ে গেছে।

এডিসি মেহেদী বলেন, "ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। আশা করি শিগগিরই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।"

নিহত মাহফুজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায়।

সংবাদ লিংক-
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1054506.bdnews
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article660106.bdnews

========================================================

কিছু প্রশ্ন

১. মামলার বাদী মাহফুজের ভাই মশিহুর রহমান মনে করেন, তার ভাতিজি এই হত্যাকাণ্ড ঘটাননি। তাহলে কে?
২. ঐশী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে তা অস্বীকার করে বলেন, ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল। কেন?
৩. মামলার অন্য আসামি ঐশীদের বাসার গৃহকর্মী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর আদালতে তার বিচার চলছে। সেও জামিনে রয়েছে। কাজের মেয়েটিকে শাস্তি পেতে হবে কেন? সে কি পরিস্থিতির শিকার?



আমাদের জীবদ্দশায় এমন ঘটনা আর দেখার দুর্ভাগ্য না হোক।






No comments: