১.
যদি অনেক অনেক বেশী স্বপ্ন দেখা মানুষের তালিকা হয়, আমি সেই তালিকার উপরের দিকে থাকবো। তার মানে আমি খুব স্বপ্নবাজ মানুষ তা নয়। যে স্বপ্নের কথা বলছি সেটাও ইচ্ছেপুরণ স্বপ্ন নয়। এই স্বপ্ন নিতান্তই ঘুম ঘোরে দেখা অর্থহীন সব স্নায়বিক স্বপ্ন। ছেলেবেলা থেকেই প্রতিরাতে হাবিজাবি স্বপ্নে কেটে যেতো ঘুমের সময়। অধিকাংশ স্বপ্নই ছিল প্রচণ্ড রকমের ভীতিকর। কোন কোন স্বপ্নে দমবন্ধ হয়ে যেতো আমার, নিঃশ্বাস নেবার জন্য এক ফোঁটা বাতাস পেতাম না, মরে যাবার যে অভিজ্ঞতা আমাদের সুদূরলব্ধ, সেই অভিজ্ঞতা হয়তো আমি কোন কোন রাতে ঘুম ঘোরেই স্বপ্নবেশে পেয়ে গেছি। যৌবনের শেষ অবধি আমার স্বপ্নগুলো সব সেই রকমই। বাস্তবে সেই স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়ন ঘটেনি বলে এখনো টিকে আছি।
আজকাল দেখতে শুরু করেছি নতুন জাতের স্বপ্ন। আমি কোন নতুন শহরে গিয়েছি এবং পথ খুঁজে পাচ্ছি না। একের পর এক গাড়ি বদল করছি, নতুন নতুন জায়গায় গিয়ে পৌঁছাচ্ছি, কিন্তু আমার ঠিক ঠিকানায় পৌঁছাতে পারছি না। আজ দুপুরেও সেরকম একটা স্বপ্নে অন্ধকার নেমে এসেছিল। সকাল থেকেই মাথাব্যথা পিনপিন করে জানান দিচ্ছিল, দুপুরের পর সেটা জ্বর জ্বর শীত শীত আবেশ নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কেমন একটা ক্লান্তিতে ঘুম নেমে এলো, তারপরই শুরু হলো স্বপ্ন যাত্রা, বলা উচিত দুঃস্বপ্নের যাত্রা। আমি পথ হারিয়ে অলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে অন্ধকার কোন দালানের প্রবেশপথে গিয়ে বসে আছি। সেই প্রাচীন দালান কিসের মনেও করতে পারছি না। কিন্তু সেখান থেকে বের হয়ে অদ্ভুত কিছু মানুষ অদ্ভুত চোখে আমাকে দেখতে দেখতে পার হয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের কাছে পথের হদিস জিজ্ঞেস করলে তারা জবাব না দিয়ে চলে গেল। এরপর আরো অনিশ্চয়তা নিয়ে আমি একটা গাড়ির অপেক্ষা করছি। বড় একটা সহৃদয় যাত্রীপূর্ণ বাস, যেখানে উঠে আমি পৌঁছে যাবো আমার চেনা কোন ঠিকানায়। আমি জানি আমি ঢাকা শহরের কাছে কোথাও আছি, কিন্তু কিছুতেই আমার ঢাকার চেনা এলাকায় পৌঁছাতে পারছি না। অবাক ব্যাপার আমি ঢাকার কোন জায়গার নামও মনে করতে পারছি না। সব নাম আমার স্মৃতিপ্রকোষ্ঠ থেকে হারিয়ে গেছে। কেমন অসহায়ের মতো আমি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছি একা। কোথাও আলো নেই। অন্ধকার পরিত্যক্ত একটা শহর বা মফস্বল। এখানে কোন মানুষ নেই কেন?
ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি সন্ধ্যে নেমে এসেছে আমার শহরে। আমি রীতিমত নিজের বাড়িতে, নিজের বিছানায়। মাথাটা তখনো ঝিমঝিম করছে, বাস্তবে ফিরে আসতে আসতে বুঝতে পারলাম, জ্বরের প্রেমময় স্পর্শ মস্তিষ্কের বাম কোনায় খোঁচা দিয়ে জানান দিচ্ছে।আজকাল দেখতে শুরু করেছি নতুন জাতের স্বপ্ন। আমি কোন নতুন শহরে গিয়েছি এবং পথ খুঁজে পাচ্ছি না। একের পর এক গাড়ি বদল করছি, নতুন নতুন জায়গায় গিয়ে পৌঁছাচ্ছি, কিন্তু আমার ঠিক ঠিকানায় পৌঁছাতে পারছি না। আজ দুপুরেও সেরকম একটা স্বপ্নে অন্ধকার নেমে এসেছিল। সকাল থেকেই মাথাব্যথা পিনপিন করে জানান দিচ্ছিল, দুপুরের পর সেটা জ্বর জ্বর শীত শীত আবেশ নিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কেমন একটা ক্লান্তিতে ঘুম নেমে এলো, তারপরই শুরু হলো স্বপ্ন যাত্রা, বলা উচিত দুঃস্বপ্নের যাত্রা। আমি পথ হারিয়ে অলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে অন্ধকার কোন দালানের প্রবেশপথে গিয়ে বসে আছি। সেই প্রাচীন দালান কিসের মনেও করতে পারছি না। কিন্তু সেখান থেকে বের হয়ে অদ্ভুত কিছু মানুষ অদ্ভুত চোখে আমাকে দেখতে দেখতে পার হয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের কাছে পথের হদিস জিজ্ঞেস করলে তারা জবাব না দিয়ে চলে গেল। এরপর আরো অনিশ্চয়তা নিয়ে আমি একটা গাড়ির অপেক্ষা করছি। বড় একটা সহৃদয় যাত্রীপূর্ণ বাস, যেখানে উঠে আমি পৌঁছে যাবো আমার চেনা কোন ঠিকানায়। আমি জানি আমি ঢাকা শহরের কাছে কোথাও আছি, কিন্তু কিছুতেই আমার ঢাকার চেনা এলাকায় পৌঁছাতে পারছি না। অবাক ব্যাপার আমি ঢাকার কোন জায়গার নামও মনে করতে পারছি না। সব নাম আমার স্মৃতিপ্রকোষ্ঠ থেকে হারিয়ে গেছে। কেমন অসহায়ের মতো আমি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছি একা। কোথাও আলো নেই। অন্ধকার পরিত্যক্ত একটা শহর বা মফস্বল। এখানে কোন মানুষ নেই কেন?
===================
২.
অনেকদিন আগে এক বন্ধু লিখেছিল:
মানুষ চলে যায়; সঙ্গে নিয়ে যায় তার সমস্ত সম্ভাবনা, আশা-ভালবাসা; মহত্তম আকাঙ্ক্ষা, স্নায়ুক্ষয়ী আশঙ্কা... নিজস্ব পৃথিবীর সবটুকু গ্লানি, গহনতম বেদনা... যাবতীয় প্রাপ্তির তৃপ্তি, অপ্রাপ্তির হাহাকার... উপচে পড়া আশীর্বাদ, উথলানো স্মৃতিকাতরতা, উগরানো অভিশাপ... কত সত্য কত মিথ্যা, কত প্রতিশ্রুতি কত ভান কত অপেক্ষা কত স্বপ্নসাধ...
অন্তর্গত অনুভূতির সমুদয় প্রকরণ সঙ্গে নিয়েই তো বিদায়ের পথ ধরে মানুষ!
.......
ঘুমিয়ে কখনও দেখিনি, ঘুমঘোরেও না; শুধু কল্পনায় এই স্বপ্নটা মাঝেমাঝে দেখি। নিতান্ত হাস্যকর ছেলেমানুষি। আমার একটা ক্যাফে হবে। ছোট্ট একটা ক্যাফে। দুপুরবেলায় কেউ থাকবে না ভেতরে, তবে দিনরাতের সবটুকু সময় এর দরজা খোলা থাকবে।
একটা পুরনো বাতিঘরের ধারে আঙুরলতায় ছাওয়া ঘন সবুজ পাহাড়; সেই পাহাড়ের পাথুরে ঢাল সোজা নেমে গেছে সোনালী বালির সৈকতে; ঝকঝকে ফেনা মাথায় বয়ে আনা নীলচে সবুজ ঢেউ আসছে, একের পর এক, আছড়ে পড়ছে বড় বড় পাথরের চাঁইতে। ওরকম একটা পাহাড়ের শেষ প্রান্তে থাকবে ছোট্ট ক্যাফেটা; কাঠের মেঝে- টালির ছাদ- কাচের জানলা- অল্প কটা বেতের চেয়ার। তন্দুরের গর্ভে ফুলেফেঁপে উঠবে মাখনগন্ধী কুকি, ফুলকাটা আনারসফালিতে চিনিপোড়া গন্ধ মাখামাখি হবে পাইনঅ্যাপল কেকের তলায়। ক্রিমের ফেনা উঠবে কফির কাপে, কেতলির জলে আদাএলাচ ফুটবে লেবুচায়ের অপেক্ষায়। হঠাৎ কোন রোদসম্ভাবী ভোরে আসে যদি কোন প্রিয়বাঞ্ছিত আগন্তুক; চাইলে গরমাগরম মুচমুচে পরোটাভাজিও জুটবে তার!
রাত গভীর হলে ঝুলবারান্দায় জেগে বসে থাকব- সামনে সমুদ্র, ডানে পাহাড়, আর বাঁয়ে শূন্যতা নিয়ে- আঁধারে চেয়ে বসে থাকবে তিনজন- আমি, আমার একাকীত্ব, আর অপেক্ষা (বাহ্, সবাই স্বরবর্ণে শুরু!)...
হয়ত মনে পড়বে গুলজারকে, নিজের মতো করে-
a few of my belongings
are still in your possession
a few wet days of monsoon
a night wrapped in a letter
return to me what is mine...
a few autumns
the sound of falling leaves
return to me what is mine...
once under a single umbrella
both of us were half wet and half dry
the dry half I had brought along
the wet part , perhaps , is still lying by the bed
send it across...
a hundred and sixteen moonlit nights
the lone mole on your shoulder
the aroma of still-moist henna
a few complaints that were forged
a few false promises too
let me remind you of them all...
send them all back to me
return to me what is mine...
but grant me this one last wish
that when I bury these memories
may I bury myself there too...
একদিন, একদিন না একদিন, এমন একটা জীবনে চলে যাব ঠিকঠিক!
অর্থ নয়, কীর্তি নয়... কত তুচ্ছ, কত অর্থহীন স্বপ্নসাধের খড়কুটো, কত যত্নেই না আগলে রাখে মানুষ!
ডিসেম্বর ২০১১
No comments:
Post a Comment