Monday, October 19, 2015

কফি হাউসের সন্ধানে.........

নতুন জায়গায় গেলে বাঙালরে নাকি হাইকোর্ট দেখায়, কোলকাতার রিকশাওয়ালা দেখালো 'কফিহাউস'। নিউমার্কেটের সামনে এক রিকশাওয়ালার সাথে  কলেজ স্ট্রিট- কফি হাউসে যাবার ব্যাপারে আলাপ করছিলাম। অমনি পাশ থেকে আরেক রিকশাওয়ালা এসে আমাদের ছো মেরে টেনে নিয়ে বললো, আমি চিনি, কিন্তু আশি টাকা ভাড়া লাগবে। বললাম, ঠিকাছে চলো।
.
সে মাইল দেড়েক গিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে একটা দালানের সামনে নামিয়ে দিয়ে বললো, এটাই কফি হাউস। ভেতরে কফি বিক্রি হয়। আমার হাতের গুগল ম্যাপ বলছে জায়গাটা আরো বহুদূর। বললাম, এই জায়গা না, কফি হাউস তো আরো দূরে, কলেজ স্ট্রিটে, তুমি কলেজ স্ট্রিটে চলো। সে চোখ উল্টে বললো, আমি ওখানে যেতে পারবো না। আমার ভাড়া দিয়ে এখানেই নেমে যাও তোমরা। যদিও এক চতুর্থাংশ পথও যায়নি তবু আমি তাকে ৬০ টাকা দিলাম। কিন্তু সে ভাড়া প্রত্যাখান করে হুমকির সুরে বললো, পুরো আশি টাকাই দিতে হবে।
.
কথার ধরণে মেজাজ টং হয়ে গেল। বললাম, আয় বেটা এদিকে আয়। বলে একটা দোকানের কাছে গিয়ে দোকানীকে বললাম, দাদা নিউমার্কেট থেকে এই জায়গার ভাড়া কত? দোকানী বললো, বড়জোর ৫০ টাকা। আমি বললাম, এরে ৬০ টাকা দিছি তবু ব্যাটা বলে কম হয়েছে। তখন দোকানী রিকশাওয়ালাকে কঠিন ধাতানি দিয়ে বিদায় করলো।
.
আমরা হাঁটাপথ ধরলাম এবার। কিছুদূর গিয়ে সামনে একটা ছাত্রমতন তরুণকে পেয়ে জানতে চাইলাম, কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস কিভাবে যাবো। ছেলেটা বললো, সামনে গিয়ে বাসস্টপে দাঁড়ান, ট্রাম বাস যাই আসে উঠে যাবেন, সোজা কলেজ স্ট্রিট নামবেন, ওখানেই কফি হাউস। কী সহজ সমাধান!
.
ট্রামে চড়লাম, প্রথমবারের মতো। এই প্রাচীন বাহনটিতে চড়ার একটা সুযোগ খুঁজছিলাম, পেয়ে গেলাম। ভিড় নেই, সিট পেয়ে গেলাম। ট্রামে চড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে আলাদা পোস্ট দেয়া যাবে, এখন কফি হাউস যাই। ধীর লয়ে চলতে চলতে কলেজ স্ট্রিট পৌঁছে গেল ট্রাম। পাঁচ টাকা ভাড়া মিটিয়ে নেমেই দেখি প্রেসিডেন্সি কলেজ! আহ যেন এই কলেজে আমি কোন এক কালে পড়েছি, তেমন নস্টালজিক হয়ে গেলাম। কফি হাউজ খোঁজার আগে ঢুকে পড়লাম প্রেসিডেন্সিতে। সন্ধ্যে হয়ে গেছে। তরুণ তরুণীরা তখনো আড্ডারত। এক কোনায় বসে পড়তে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সময় কম। কিছু সময় ঘুরাঘুরি করে, মোবাইল ক্যামেরার দুয়েকটা ক্লিক সেরে রাস্তা পার হয়ে আবারো কফি হাউজের খোঁজে।
.
যে দালানে কফি হাউস সেটি দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে ওটার ভেতর একটা রেস্তোঁরা থাকতে পারে। কফি হাউসের সামনে দাঁড়িয়েও সন্দেহমুক্ত হতে পারি না। চারপাশে শুধু বই আর বইয়ের দোকান। মাঝখানে একটা আধো অন্ধকার প্রবেশপথ। সিঁড়ি বেয়ে দোতলার দিকে যেতেই বুঝলাম ঠিক পথে আছি। সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছেই দেখা গেল কাংখিত সাইনবোর্ড INDIAN COFFEE HOUSE।
.
অবশেষে চপ-কাটলেট খেয়ে, ধুমায়িত কফিতে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে ফেলা এক আড্ডার কথা ভাবতে ভাবতে এক ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম। তারপর কফি হাউস থেকে বেরিয়ে ফিরতি ট্রামের অপেক্ষায় রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের নীচে এসে দাঁড়ালাম। উল্টোদিকে প্রেসিডেন্সি কলেজের বিশাল প্রবেশপথ। তার আলো আঁধারিতে তাকিয়ে মনে হলো সাদা পাঞ্জাবি ধুতি পরা জীবনানন্দের ছায়া যেন হেঁটে চলে গেল ভেতরে বাগানের সীমানা পেরিয়ে....

No comments: