Thursday, October 29, 2015

অন্ধকারেরও আছে ঠিকানা......

সন্ধ্যে নেমে এসেছিল শহরে। আমরা কজন হাঁটছিলাম শহরের প্রান্তদেশে। সড়ক পথ শেষ হবার পর হাঁটাপথ। প্রথমে সারিবদ্ধ দোকানপাট। দোকানপাট ফেলে একটু পশ্চিমে যাবার পর একটা বেড়িবাঁধ উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছুঁয়ে। সেই বেড়িবাধের উপর একটা এক্সপ্রেসওয়ে। দ্রুতগামী যানবাহন ছুটে চলছে ব্যস্তসমস্ত হয়ে।

আমাদের তাড়া ছিল না। চলছিলাম হেলেদুলে। কোথায় যাবো জানতাম না। এই পথটা যেখানে শেষ সেখানে গিয়ে বসবো কোথাও। এক্সপ্রেসওয়ের  নীচ দিয়ে একটি সুরঙ্গপথ। সেই সুড়ঙ্গে পা দিতেই শব্দের আকার আকৃতি বদলে গেল। ধ্বনিপ্রতিধ্বনিতে মুখরিত। একটা শব্দ হলে তার তিনটে উত্তর আসে। গা ছমছমে ব্যাপার।

একজন বললো, সিগ্রেট দে। আরেকজন এগিয়ে দিল। সাথে ম্যাচিস। আগুন জ্বলে উঠলে দেখা গেল গুহার ভেতর জনপ্রাণীর চিহ্ন নেই। শুধু আমরা কজন।

পা চালিয়ে গুহা পেরিয়ে নুতন একটা জায়গায় গিয়ে পড়ি। অতি প্রাচীন একটা বাজার। অন্ধকারে থমথম করছে। মৃদু আলো জ্বলছে কুপির ভেতর। এই ভুতুড়ে বাজারে কারা আসে? বাজারে তো কোন পন্য নেই। মাছের আঁশটে গন্ধ বাজারজুড়ে। এবড়ো থেবড়ো পথ, যে কোন অসতর্ক মুহুর্তে পা পিছলে আলুর দম হয়ে যেতে পারে কেউ।

চারপাশ তাকিয়ে মনে হলো এটা কোন মৃত নগরী। কত বছর আগে মরে গেছে কেউ জানে না। নাহ, আরেকটু এগোতেই লোকজন দেখা গেল। মাছের ঝাঁকা নিয়ে বসে গেছে বেপারী। ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশী। কাছে গিয়ে দেখা গেল সব ইলিশ মাছ। সামনেই সমুদ্র, জেলেরা মাছ ধরে এখানে রেখে যায়। আবারো এবড়ো থেবড়ো পথে এগিয়ে চলা।

এই পথে মানুষ নেই। সূর্য ডুবে গেছে কবেই। তবু পশ্চিমাকাশে খানিক রং এখনো টিকে আছে। সমুদ্রের কাছে চলে যাই আমরা। কিন্তু সমুদ্র অনেক দূরে সরে গেছে। এখন ভাটার সময়। আমরা চাইলেও সমুদ্রকে পেতে পারি না। তবু সমু্দ্রের রেখে যাওয়া কাদামাটি আর বালিয়াড়িতে নেমে যাই আমরা। অদৃশ্য কাঁকড়া শামুক ঝিনুকের দলকে খুঁজি উদ্দেশ্যহীন।

সামনে তাকিয়ে আমাদের গল্প থেমে যায়। চারজনই চুপ করে গেলাম। কী অসাধারণ এক দৃশ্য, সমুদ্রের সৈকত জুড়ে মৌনতা মেশানো অপার্থিব এক সৌন্দর্য। অন্ধকারেরও আছে হৃদয়স্পর্শী আলোর ছটা। সমুদ্রের কাছে আসলেই আমার একজনের কথা মনে পড়ে যায়। এখানে আসলে আমি তাকেই খুঁজি। একদিন ছিল, এখন নেই। সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। পর্যাপ্ত জ্বালানীর অভাবে প্রদীপটা নিভে গেছে কেবল। জীবনটাও তো তাই। যখন প্রাচুর্য থাকে তখন মানুষটা জীবন্ত থাকে। যখন থাকে না তখন জীবন থেকেও নেই। আমরাও সেরকম। একসময় জীবনপ্রদীপের তেলও তো ফুরিয়ে যাবে। তাই বলে তো জীবনটা বিফলে গেলো না। সুদূর অতীতে যে জীবন ছিল তাও তো সত্যি। অন্ধকার হয়ে গেলেও দিনের আলোটা সত্যি। তাই অন্ধকারের প্রতি আমার একরকমের পক্ষপাতিত্ব আছে। আমি পশ্চিমাকাশের শেষ আভাটুকু দেখতে দেখতে ধোঁয়া ওড়াতে থাকি আপনমনে।

Life was a song
You came along
I lay awake the whole night through.........

No comments: