Wednesday, February 5, 2014

পাওয়ার হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই

                             
[ছবিতে যারা: ইকবাল, বেনজামিন, মোমিন, নাজমুল, মামুন, মিরাজ, রিপন, মোশাররফ, গুজা ইকবাল, টুটুল, মিজান, শাহেদ, চোরাবাবু, সাঈদ, বাকী তিনজন জুনিয়র ভাই]


বাইরের কারো কাছে এই ছবিটা কেবলই একটি পুরোনো ছবি। কিন্তু ছবিতে যারা আছে, ছবির মুখগুলোকে যারা চিনতো পঁচিশ ত্রিশ বছর আগে, তাদের কাছে এটা লাখ টাকার চেয়েও দামী। আমি জানিনা ছবিটা তোলার সময় আমি কোথায় ছিলাম। এই ছবিতে আমার না থাকার আক্ষেপ দূর করা যাবে না। কিন্তু এই ছবির প্রত্যেকটা বন্ধু(উপরে তিনজন ছোটভাই ছাড়া) আমার ছেলেবেলার সবচেয়ে আপনজন। আমার কলোনীর স্মৃতি মানেই এদের স্মৃতি। এদের অনেকেই হারিয়ে গেছে ছড়িয়ে গেছে নানান জায়গা। এখানে অনেকের গোঁফও ওঠেনি, কিন্তু এখন এদের অনেকের চুল দাড়ি পেকে গেছে। জীবনের শেষার্ধে উপস্থিত হয়ে গেছে প্রায় সবাই। কফি হাউজের আড্ডা আমাদের ছিল না, কিন্তু এই পাওয়ার হাউজের আড্ডা আমাদের চিরস্থায়ী আনন্দের স্মৃতি। এই কলোনী এখন আর নেই, এই মানুষগুলো কেউ একসাথে হবে না, এদের অনেকেই বিচ্ছিন্ন থাকবে বাকী জীবন। কিন্তু আমাদের সবার স্মৃতি এক ফ্রেমে বাধা থাকুক চিরকাল।

এটা কলোনীর পাওয়ার হাউজ। এটার খোলা বারান্দা আমাদের আড্ডার অন্যতম আশ্রয়। এখানে সকাল দুপুর বিকেল সন্ধ্যা কেউ না কেউ থাকতোই। এমনকি রাত এগারোটার  সময় আসলেও দেখা যেত কেউ না কেউ আছে। ছবিতে যে কজন দেখা যাচ্ছে তার বাইরেও কয়েকজন আছে। ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত সময় এই পাওয়ার হাউজের আড্ডার স্বর্নযুগ। এই ছবিটা আশির দশকের দ্বিতীয়ার্ধে তোলা ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে। আমি তখন কলোনী ছেড়ে বাইরের বাসায় চলে যাই।  কিন্তু প্রতিদিন সকাল বিকাল হাজির হতাম আড্ডায়। পাওয়ার হাউজের আড্ডা নিয়ে একটা বড় লেখা লিখতে হবে আরেকটু সময় নিয়ে। 
আড্ডার কথা লিখতে গিয়ে মনে পড়লো সবচেয়ে বেদনাদায়ক ব্যাপারটা। এই আড্ডার সবচেয়ে মধ্যমনি জীবনের এক বিপরীত পথে একাকী হাঁটছে এখন। এই ছবির অধিকাংশের সাথে যোগাযোগ নেই তার। নাম তার বেনজামিন। এই নাম অনেকে ভুলে গেছে, কিন্তু আজ ওই নামটা ধরে ডাকতে ইচ্ছে করলো ওকে।



                                        [ছবিতে:  আগ্রাবাদ টেনিস ক্লাবে প্র্যাকটিসরত বেনজামিন ও মোমিন। ১৯৮৭?]


এই যে মানুষের মাথার উপরের লেভেলে পাখির মতো ভেসে আছে যে ছেলেটা, সেই আমাদের প্রিয় বন্ধু বেনজামিন। আমাদের দলের নায়ক। মার্শাল আর্টের যাদুকর। এরকম যাদুকরী ফ্লাইং কিক আমরা সিনেমাতেও খুব বেশী দেখিনি। মারামারির এত আর্ট জানতোভেতরে এত শক্তি ছিলঅথচ সে কখনো কোন মারামারি করতো না।অদ্ভুত এক মানুষ, যার ভেতরে অনেক অনেক সম্ভাবনা ছিল। যার ভেতরে বাস করতো নিরন্তর এক দার্শনিক। সে বই পড়তে ভালবাসতো, গান শুনতে ভালোবাসতো, গান গাইতে ভালোবাসতো, ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতো, আরো কত কত কি যে ভালোবাসতো। অথচ সে বড় হয়ে একদিন হঠাৎ পথের দিশা হারিয়ে ফেললো। সব থেকেও নেই রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে গেল। সে এক ভিন্ন কাহিনী। ভিন্ন অধ্যায়।

[ছবি কৃতজ্ঞতা: মোমিন]

No comments: