Wednesday, February 19, 2014

বসন্তের চিঠি: হাইহিল ভালোবাসা.......

প্রিয় হৃদয়হীনা কঠিনশীলা,

ইহা একটি বেদনাদায়ক পত্রবাণ। নিতান্ত বাধ্য হইয়া তোমার নিকট পত্রখানা লিখিতে বসিয়াছি। আমি আগেও হাজার হাজার পত্র লিখিয়াছি তোমার কাছে। কিন্তু কোটি বছর ধরিয়া তোমার ফসিল হৃদয় জীবাস্ম হইয়া আছে বলিয়া আমার প্রেমময় বার্তা তোমার কলিজায় আঘাত হানিতে পারে নাই। আমি যতবারই পত্রবাণ করি তুমি ততবারই উহাকে মহাসমুদ্রে ছুঁড়িয়া ফেলো।

আমার সকল প্রেমপত্র জলে নিমজ্জিত হইবার পর আমি গতকল্য শেষ বারের মতো তোমার জন্য একটি পুষ্পরথ তৈরী করিয়া আকাশ পথে পাঠাইয়া দেই। কিন্তু তুমি তাহা পাইয়া (সম্ভবতঃ রুদ্রমুর্তি ধারণ করিয়া) আমার উদ্দেশ্যে যে এক পাটি নীল জুতা ছুড়িয়া মারিয়াছো তাহা আমার বুকে শেলের মতো বিধিয়াছে। পরনে মোটা জ্যাকেট থাকিবার কারণে জুতার নীচের চোখা হিল অল্পের জন্য আমার কলিজা ভেদ করিয়া যায় নাই। অতএব আমি এই যাত্রা প্রাণে বাঁচিয়া গেলাম। ভাগ্যকে এই ক্ষণে আরো ধন্যবাদ জানাইতে হয় যে জুতা নিক্ষেপের ঘটনা আর কেহ দেখে নাই। তাহাতে আমার ইজ্জত ও কূল উভয় রক্ষা পাইয়াছে।

তবে তোমার সেই নীল জুতার একটি ব্যাপার আমাকে অতীব ভাবনায় ফেলিয়াছে। এই জুতার উপরিভাগে আছে একটি সাদা রঙের পাথরের ফুল। ফুলের মধ্যিখানে একটি সবুজ রত্নপাথর। ওই রত্নপাথরটি মূল্যবান বলিয়া মনে হইতেছে। শুধু তাহাই নহে, ইহার সবকিছু দেখিয়া শুনিয়া ইহাকে সিণ্ডরেলার জুতা বলিয়া মনে হইতেছে। সিণ্ডরেলার জুতা হইলে ইহার সঙ্গে ভালোবাসার একটা সম্পর্ক থাকিবার সম্ভাবনা উড়াইয়া দেওয়া যায় না।

অতএব আমি আবারো হিলের গুতো খাইবার ঝুঁকি লইয়া এই পত্রবান তৈরী করিয়াছি সেই কথা জানিতে যে তুমি কি ভালোবাসিয়া আমাকে জুতাখানা নিক্ষেপ করিয়াছিলে যাহাতে আমি জুতাখানা তোমার কাছে ফেরত দিবার সুযোগ পাই? সেই সুযোগে তুমি আমার নৈকট্য গ্রহন করিবে? ঘটনা তাহা হইলে জুতাখানাকে আমি প্রেমশর ভাবিয়া বুকের সাথে বাঁধিয়া রাখিব। জুতা ফিরত দিবার কালে তুমি যদি দুর্ঘটনাক্রমে কোন প্রেমময় বাক্য শুনাইয়া দাও, তাহা হইবে আমার জীবনের সবচেয়ে মুল্যবান সংগ্রহ।

আর যদি বিপরীত ঘটনা হইয়া থাকে, অর্থাৎ আমার এই পত্র খানা দেখিবামাত্র জুতার বাকী পাটিখানাও নির্দয়ভাবে ছুড়িয়া মারো, তাহা হইলে আমি অশ্রু বিসর্জন দিয়া বাকী জুতাখানা কুড়াইয়া বাজারে বিক্রয় করিয়া ভেজাল বিহীন বিষ সংগ্রহ করিব এবং অবশিষ্ট টাকা হাসপাতালের বিল বাবদ জমা রাখিব।  

ভাবিতেছো হাসপাতালের বিল কেন? তুমি তো জানো আমি আরো একবার আহত হইয়া মরিবার চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হইয়াছি। ভেজাল বটিকার কারণে যমদুতকে মরন দুয়ার হইতে খালি হাতে ফিরিতে হইয়াছে। আমার মৃত্যুর জন্য কেহ দায়ী নয় মর্মে এক খানা পত্র লিখিয়া বোতল ভর্তি তরল বিষ গলায় ঢালিবার পরক্ষণেই তাহা বদহজম হইল, অতঃপর জলোচ্ছ্বাসের মতো বমনক্রিয়ায় বিছানা ভাসাইয়া আমি অপমানজনক ভাবে মাঝপথে এমনভাবে ঝুলিয়া ছিলাম যাহা হইতে যমদূতের আলিঙ্গন মধুর হইত। যমদুত হাসপাতালে উপস্থিত হইয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া আমার কলিজা গুর্দা ধরিয়া টানাটানি করিয়া বিফল মনোরথে ফেরত গিয়াছিল। উপরন্তু আমার মৃত্যু ঘোষণার চিঠিখানা প্রতিবেশীদের বিনোদনের খোরাক হইয়াছিল। বাঁচিয়া থাকা যে কিরকম লজ্জাজনক যন্ত্রণা সেই প্রথমবার টের পাইলাম।

শুধু তাহাই নহে, ঘটনার পরে মড়ার উপর খাড়ার ঘা স্বরূপ হাসপাতালে বিষমুক্তির চিকিৎসার জন্য আমার অফিসের ক্যাশ হইতে যে বিপুল অংকের টাকাকড়ি খরচ হইয়াছিল তাহা আমাকে মাসের বেতন হইতে গুনিয়া পরিশোধ করিতে হইয়াছিল। মুর্খ চিকিৎসকগন বোঝে নাই - বাঁচিতে চাহি নাই আমি সুন্দর ভূবনে। খেয়াল করিয়া  মাত্র দেড়শো টাকার একটি ইনজেকশান চামড়ার নীচে পুশ করিয়া দিলে আমি দেড় লক্ষ টাকার হাসপাতাল বিল হইতে বাঁচিয়া যাইতাম।

যাহা হউক, দুঃখের কথা বাড়াইয়া আর কাজ নাই। কপালে যাহা আছে তাহাই ঘটিবে। তোমার নীল জুতার একপাটি আমি যত্ন সহকারে শোকেসে সাজাইয়া রাখিয়াছি। বাকী পাটির অপেক্ষায় আজিকার পত্রবান এইখানেই সমাপ্তি ঘটাইলাম।


ইতি,
তোমার (মাইরের ডরে)  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরাণ পাখি.......‍‍‍‍‌‌‌‌ 



No comments: