সিটি গেট থেকে বাসটা ছাড়ার পরপরই টাকমাথা গোলগাল চেহারাটা ঘুরলো আমার দিকে।
চেহারা দেখে চমকে উঠি। এই তো সেই মুখ। একেই তো খুঁজছি এতদিন। লোকটা চেনে না আমাকে। তবু তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড, চোখে চোখ নয় কপালের ইঞ্চিখানেক উপরের চকচকে জায়গাটার দিকে। স্বগোত্রীয় বলে কথা।
তার লক্ষ্য আমার চকচকে টাক হলেও আমার লক্ষ্য তার গোলাকার খোমা। মাথার উপর আমার এই সমৃদ্ধ চকচকে বিরান ভূমির জন্য জন্য দায়ী এই খোমার মালিক। বহুবছর ধরে খুঁজছি তাকে।
"হেয়ার এন্ড কেয়ার" কোম্পানীর বিজ্ঞাপনের স্টিকারে এই খোমা মালিকের পাশাপাশি দুটো ছবি ছাপানো থাকতো। 'তিনমাস আগে' ছবিতে চকচকে টেকো মাথা, 'তিনমাস পরে' ছবিতে সুন্দর সিঁথি দেয়া ঝকমকে চুলো মাথা। বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়ে হেয়ার এন্ড কেয়ার কোম্পানীর অফিসে গিয়ে নগদ ২৫০০ টাকা দিয়ে তিনমাসের বটিকা নিয়ে আসি। বিয়ে ঠিক হয়েছিল এক কেশবতী কন্যার সাথে, তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম এক কেশবান যুবক স্বামীর।
বিয়ে করলাম। কিন্তু ছমাস যাবার পর সর্বনাশের চেহারা দেখা গেল। গ্যালারীতে যে কিছু চুল অবশিষ্ট ছিল তাও উড়ে গেল অব্যর্থ বটিকার গুনে। ছিলাম গ্যালারী স্টেডিয়াম, হয়ে গেলাম পরিপূর্ণ ইনডোর স্টেডিয়াম। মারমুখী হয়ে ছুটলাম হেয়ার এন্ড কেয়ার কোম্পানীতে। কিন্তু পাখি উড়ে গেছে। কাউকে পাওয়া গেল না ওই ঠিকানায়।
সেই থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি ওই কোম্পানী কিংবা এই মাথার মালিককে। হতে পারে সে মডেল বা মালিক, তার মুন্ডু চেটে ওই কোম্পানীর ঠিকানা বের করবো। আমার আড়াই হাজার টাকা!!!
বাস চলছে আর মনে মনে তার মুন্ডু চটকাচ্ছি। ভীড় বাড়তে থাকলো নয়া বাজার ফেলে আসার পর। এই বাস নিউমার্কেট পর্যন্ত যাবে। ভীড়ের ফাঁকে ফাঁকে চোখ রাখছি কোথায় নামে লোকটা। ঝিমুনি আসছে এত গরমেও। চোখ খোলা রাখা দায় হয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর ভীড়ের ফাঁক দিয়ে দেখলাম, লোকটাও ঝিমোচ্ছে। কি কি বলতে হবে মনে মনে ডায়লগগুলি কল্পনা করছি।
-ভাই কেমন আছেন
-আপনাকে চিনলাম না
-আপনার এই টাক আমি চিনি
-জী, আমি মডেল ছিলাম একসময়
-জী দেখেছি আমি। তা এইটা আপনার তিনমাস আগের মাথা, তিনমাস পরের মাথাটা গেল কই?
-হে হে, আর বলবেন না ভাই, আগে পরে সব সমান। পরচুলা।
-সব সমান না, আপনার পরচুলার জন্যই আমার মুন্ডুর আজকের এই দশা
-মানে?
-দাঁড়াও ব্যাটা মানে বোঝাচ্ছি তোমাকে, তোমার বাবার কোম্পানীর ঠিকানা দাও............
কলারটা চেপে ধরার মুহূর্তেই কল্পনাটা আছাড় খেল যখন বাসটা একটা রাইডারের পাছায় মাঝারি ধাক্কা দিয়ে থেমে গেল। রাইডারের হেলপার দৌড়ে নেমে এসে বাস ড্রাইভারের কলার ধরে ঝুলে পড়েছে। শুরু হলো হৈ হৈ। বাসে রাইডারে মারামারি কাড়াকাড়ি। বাস আর যাবে না। যাত্রীরা দুদ্দাড় নেমে যাচ্ছে।
যার যেখানে খুশী যাক, আমি ছাড়ছি না টেকোকে। কিন্তু কই? লোকটা গেল কই। ওই তো সামনেই...... দরোজা দিয়ে একটা চকচকে মাথা নামছে। ভিড় ঠেলে এগিয়ে যাই দরোজার দিকে।
এ্যাঁ......একী? এ তো সেই লোক নয়। অথচ এই মাথার দিকেই তো তাকিয়ে ছিলাম গত আধঘন্টা! কিন্তু খোমা আর শার্ট তো মেলে না। এই টেকোর শার্ট বাদামী, ওটার ছিল সাদা। ভীড়ের মধ্যে টাকটাই নজরে ছিল, শার্টটা ছিল না।
সাদা শার্ট মাঝপথে নেমে গেছে, আর সাথে করে নিয়ে গেছে আমার ২৫০০ টাকা উদ্ধারের আশা।
No comments:
Post a Comment