অফিসেই ৯০% ইন্টারনেট ব্যবহার করি। ফাইবার অপটিকসের হাই ব্যান্ডউইথে পংখীরাজের মতো উড়ে উড়ে কাজ করা যায়। বাসায় ধীরগতির ইন্টারনেটে বিরক্তি লাগে বলে খুব জরুরী না হলে বাসা থেকে ইন্টারনেটে ঢুকি না। ওয়েব মেইল চেক করা, অফিসের কিছু টুকটাক অনলাইনের কাজ সারা, ব্লগ ফেসবুকে খানিক উঁকিঝুকি দেয়া বাদে আর কিছু করা হয় না। এই পরিমান ব্যবহারের জন্য মাসে ১ গিগাবাইট যথেষ্ট। সেই হিসেবে গ্রামীন ফোনের ১ গিগা লিমিটের ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম সাড়ে তিনশো টাকা দিয়ে। সুখেই ছিলাম।
একদিন ভুতে কিলালো।
অফিসের এক কলিগ পট্টি দিয়ে বললো, বস আপনার মতো লোকের মাসে ১ গিগা লিমিট, কেমন কেমন লাগে। আপনি আনলিমিটেডে চলে যান। আমিও আনলিমিটেড ব্যবহার করি। মাত্র পাঁচ ছয়শো টাকা বেশী যাবে। কিন্তু সারাটি মাস দুশ্চিন্তা মুক্ত। বিষুদবার রাতে টরেন্টে মুভি ডাউনলোড দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন, শুক্রবার জেগে উঠে নাস্তা সেরে দিনভর আরামসে মুভি দেখবেন।
ভদ্রলোকের মতো গ্রামীণ অফিসে গিয়ে বিধি মোতাবেক ফটো আইডি জমা দিয়ে নতুন সিম রেজিষ্ট্রেশান করালাম। পোষ্টপেইড আনলিমিটেড। বিল মাসে ৯৭৭ টাকা। তবে বিল পেতে কখনো দেরী হলে ফট করে যাতে লাইন কেটে না দেয়, সেজন্য বাড়তি এক হাজার টাকার ডিপোজিট রেখে দিলাম। স্মার্ট এক্সিকিউটিভ আশ্বাস দিল, বিল না দিলেও আপনার লাইন কাটার কোন ঝুঁকি নেই স্যার।
খুশী মনে বাড়ী ফিরলাম। কিন্তু মাস যায়, আমার টরেন্টে যাবার সময় হয় না। অফিসের মেইল, ব্লগ, ফেসবুক, জিমেইল এই তিনের বাইরে আর কোথাও যাবার সময় পাই না। ইচ্ছেও করে না। মাস গেলে বিল দেখি ৯৭৭ টাকা। কিন্তু আমার ইউসেজ ডাটা দেখি ৮০০মেগারও কম। মানে আমি এখনো ৩৫০ টাকার ভেতরেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছি। পরের মাসে মনে হলো খামাকা অপচয় করছি মাসে তিনগুন টাকা। ফিরে যাই ১ গিগা লিমিটে। ৩৫০ টাকার লাইনই যথেষ্ট আমার।
গেলাম গ্রামীণ অফিসে। স্মার্ট কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ আমাকে ১ গিগা লিমিটের প্যাকেজে বদলে দিল। লাইন পোষ্টপেইড থাকবে। কেবল লিমিট বদল হলো। ভিন্ন প্যাকেজে। বিল আসবে, কিন্তু লাইন কাটবে না, কারন এক হাজার টাকার ডিপোজিট। ধন্যবাদ দিয়ে ফিরে এলাম।
প্রথম মাসে বিল এলো ৩১২ টাকা ইউসেজ ডাটা ১১২৯মেগাবাইট। বিল দিলাম। এই বিলটা ঠিক এসেছে।
কিন্তু দ্বিতীয় মাসের ১৫ দিন যাবার আগেই একদিন লাইনটা কাটা গেল। কাহিনীর শুরু এখানে। পরদিনই ছুটলাম গ্রামীণ অফিসে। বিলের প্রিন্ট নিলাম। তাজ্জব হয়ে দেখলাম পনের দিনের বিল দেখাচ্ছে ১৫৪৬ টাকা, ইউসেজ ডাটা ৮৪২ মেগাবাইট। বললাম, আমার তো তিনশো টাকার ১ গিগা লিমিট, এত টাকা কেমনে আসে? তাছাড়া আমার ডাটা ইউসেজ তো ১ গিগার কম দেড় হাজার টাকা কেমনে আসে? স্মার্ট এক্সিকিউটিভ জানালো কোথাও টেকনিক্যাল প্রবলেম হয়েছে, তাই এতটাকা বিল। ভয় নেই স্যার, আশ্বাস দিলেন তিনি। আমার কাছ থেকে ৫৪০ টাকা নিয়ে খুটখাট টাইপ করে লাইন চালু করে দিলেন।
জিজ্ঞেস করলাম, আমার ১০০০ টাকা ডিপোজিট ঠিক আছে তো, তিনি বললেন, ঠিক হ্যায়। ৩৫০ টাকার জায়গায় ৫৪০ টাকা জমা দিয়ে তেতো মুখে বাসায় ফিরে এলাম।
তৃতীয় মাসে ১২ দিন যাবার আগেই একটা ওয়ার্নিং এলো। বলা হলো, আপনি সীমা অতিক্রম করবেন শীঘ্রই। বাঁচতে চাইলে টাকা জমা দিন। অতরাতে আমি কই টাকা জমা দেই।
ঘন্টা খানেক পরেই দুম করে লাইনটা কাটা গেল। আমি বোবা হয়ে গেলাম। মেজাজ চরমে উঠলো এবার। জরুরী একটা কাজের মাঝখানে লাইনটা অসভ্যের মতো কেটে গেল। রাত তখন সাড়ে দশটা। আমি দৌড়ে বাইরে গিয়ে রাস্তার পাশের দোকান থেকে আরেকটা সিম যোগাড় করে প্রিপেইডে চলে গেলাম। জরুরী কাজটা সারলাম।
কদিন পরে আগের বিল আসলো। দেখলাম ১৯৭০ টাকা!! মাত্র ১২ দিনের বিল। ইন্টারনেট ব্যবহার ১১৫২মেগা। বলা হলো পুরো টাকাটাই দিতে হবে, আমার ডিপোজিট হাপিস। ডাটার হিসেবে আমি ৩০০ টাকার সমপরিমান ১ গিগা ব্যবহার করেছি। কিন্তু বিল এসেছে ৬০০% বেশী।
এবার আর গ্রামীণ অফিসে লাইন দিতে মন চাইলো না। স্মার্ট এক্সিকিউটিভ এবারো নিশ্চয়ই 'টেকনিক্যাল এরর, ঠিক হয়ে যাবে' বলে পিঠে হাত বুলিয়ে ১৯৭০ টাকা আদায় করে বিদায় করে দেবে। তার চেয়ে বরং বিল খেলাপী হই। কতো মানুষ কতো কোটি কোটি টাকা হাপিস করে দেয় ব্যাংক থেকে নিয়ে। আমি না হয় একটি রাক্ষস বিল মেশিনের বিরুদ্ধে গিয়ে ১৯৭০ টাকার খেলাপী হলাম। বিল দিলাম না, গ্রামীন অফিসে গেলাম না।
এখন কদিন পর পর চিঠি আসে গ্রামীণ থেকে। আপনি কিন্তু সীমা লংঘন করেছেন বলে আপনার লাইন কেটে দিয়েছিলাম। অতি সত্ত্বর গ্রামীন অফিসে এসে পাওনা মিটিয়ে আপনার লাইন পুনরুদ্ধার করুন। আমি মনে মনে বলি, ধুত্তোরি, তোর লাইনের গুষ্টি মারি। সীমা লংঘন আমি করি নাই, তোমরাই ৩০০টাকার সীমানায় ফাটল ধরিয়ে ১৯৭০ টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছো।
আপনারাই বলেন, আমার কি এখন ভদ্রলোক হওয়া সাজে?
ইদানীং সচলে তেনাদের গল্প আসছে খুব। ধরে নেয়া যেতে পারে এটাও গ্রামীণের তেনাদের কাজ। তেনারা আজকাল ডিজিটাল বিট বাইটেও হানা দিচ্ছেন। কোন পত্রিকা তেনাদের গল্প ছাপায় না বলে ব্লগই একমাত্র ভরসা। তেনাদের গল্প পত্রিকায় না ছাপানোর পেছনে কতোটা কর্পোরেট বন্ধুত্ব, কতোটা বিজ্ঞাপন বানিজ্য সেটাও একমাত্র তেনারাই বলতে পারবেন।
আগে বলা হতো, কাক কাকের মাংস খায় না। এখন সেটাকে বাড়িয়ে বলা যায়, কর্পোরেট কর্পোরেটের মাংস খায় না। তাই পত্রিকায় সব সংবাদ আসে না।
No comments:
Post a Comment