Saturday, December 11, 2010

বোকা কর্নার

চালাক মানুষের সংখ্যা কত বাংলাদেশে? এরকম কোন পরিসংখ্যান হয় না দেশে। চালাক বনাম বোকা মানুষের পরিসংখ্যান হলে চালাকেরা আওয়ামীলীগের চেয়েও বেশী সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবে নিশ্চিত। কারণ আমি চারপাশে কোন বোকা মানুষ দেখি না। সবাই চালাক। কে কত চালাক এটা নিয়ে মানুষের প্রচ্ছন্ন গর্বও আছে।

তবে অতি চালাক লোককে জিজ্ঞেস করা হলে জবাব পাওয়া যাবে উল্টো।

সেরকম এক স্বঘোষিত বোকা (!) সহকর্মী প্রায়ই বলতেন, "আমার চেয়ে সরল আর বেকুব আল্লাহ আরেকটা বানাইছে, যারে আমি বিয়া করছি।" বউ ভক্ত এই বোকা(!) মানুষটা মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা বেতনে দশ বছর চাকরী করে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়েছিলেন। একসময় কোম্পানী তার বোকামি(!) টের পেয়ে খোদা হাফেজ জানিয়ে দিয়েছিল এবং আমার কানটা নিস্তার পেয়েছিল তার অবিরাম বোকামি আর সরলতার গল্প থেকে।

চালাক মানুষদের আমি ভয় পাই। কারণ জানি না। তবে অস্বস্তি হয় তাদের সাথে কথা বলতে। আমি তাই কোন অনুষ্ঠানে গেলে বোকা কর্নার খুঁজি। এমন একটা যুতসই জায়গা যেখানে চালাক মানুষেরা আড্ডা দিচ্ছে না। প্রায়ই খুব মুশকিল হয়ে যায় বোকা কর্নার পাওয়া। এদেশে চালাকের সংখ্যা অসহ্য রকমের বেশী। সব আড্ডায় চালাকির গল্প। কে কত চালাকি করে কোটিপতি হয়ে গেল, কে কত চালাকি করে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে কোটি টাকার গাড়ী অর্ধকোটিতে কিনলো, কে পাঁচ বছর আগে ভিখিরি ছিল, এখন শতকোটি টাকার মালিক, ইত্যাদির গল্প। সম্পদ প্রাচুর্যের গালগল্প আমার পোষায় না, কারন আমার ওসব কিছুই নাই, কখনো হবার সম্ভাবনাও নাই। আগ্রহও নাই। চাকরী ক্যারিয়ার নিয়ে আলাপও অপছন্দ করি কারণ তাতেও আমার উন্নতি নাই। কাজ করা দরকার করি, ব্যাস। তাই বরাবর যেখানে যাই আমি বোকা কর্নার খুঁজি।

সেদিন এক বিয়েতে গিয়ে চুপচাপ এক কোনায় বসে আছি। পরিচিত মুখ নেই তেমন। হঠাৎ পাশে এসে বসলো একজন। চালাকের কেউ কিনা শংকিত চোখে তাকিয়েও আস্বস্ত হলাম। নাহ, ইনি মোকারম ভাই। নিরেট বোকা। খুশীতে মোটামুটি জোরেসোরে হাত চাপাচাপি করলাম দুজনে। মুখ দেখে বুঝলাম তিনিও বোকা কর্নারের সন্ধানে ছিলেন।

কিন্তু আলাপ খানিকক্ষণ গড়ানোর পর মোকারম ভাই বললেন, "আমার জন্য একটা চাকরী দেখো। এটাতে পোষাচ্ছে না। সারাদিন বসে মাছি মারি। একটা কাজের চাকরী দরকার। আরো প্রেস্টিজিয়াজ। বেতন লাখের খানিক উপরে হলেই চলবে।"

আশ্চর্য! এই মোকারম ভাই না বাসায় চোর ঢুকেছে শুনে খাটের নীচে লুকিয়ে ছিলেন? এতটাকা বেতনের চাকরী করেন, এত সুখের ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। আরো চাই আপনার? আপনিও চালাকের সারিতে যেতে চান? আমি জবাব না দিয়ে হতাশ ও বিরক্ত হয়ে হয়ে উঠে গেলাম। একটা বিড়ি খেতে হবে কোনার অন্ধকার বারান্দায় দাড়িয়ে। পেছন পেছন মোকারম ভাইও এলেন। বললেন "কি ব্যাপার কিছু বললা না?"

"দেখেন মোকারম ভাই, আমি খুব চালাক না হলেও মোটামুটি চরে খাই। তবু চাকরী বদলের স্বপ্ন দেখিনাই এখনো। আপনি তো এখনো চরতেও শেখেননি। আপনি কেমনে চাকরী বদলাবেন?"
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।

কারণ মোকারম ভাই তখন কোটের ভেতর পকেট থেকে ছোট্ট একটা চ্যাপটা বিদেশী বোতল বের করে হাতের আড়ালে নিয়ে মুখে ঢালছেন। এই মানুষকে জীবনে সিগারেটে একটা টানও দেয়াতে পারিনি। আসলে বোকা কর্ণার থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

No comments: