বিকেলটা হাসছিল। চাহিবামাত্র রিকশা পেয়ে যাওয়ায় নীতুও। রোদ কমে গেছে। হেমন্তের সূর্যে তাপ নেই।
রিকশাটা গলিতে ঢুকতেই চেইনটা পড়ে গেল। রাস্তার একপাশে থেমে গেল। পেছনে গিয়ে চেইন টানাটানি করছে রিকশাওয়ালা। জায়গাটা নির্জন। এঁদো গলি। কোন বাসাবাড়ি নেই এদিকে। দুপাশে আধভাঙ্গা দেয়াল।
নীতু বুঝে ফেলেছে কেন চেইনটা পড়ে গেল হঠাৎ। যে কোন সময় একটা সিএনজি টেক্সী এসে দাঁড়াবে পাশে। পিস্তল/চাপাতি/ ক্ষুর হাতে তিন-চার যুবক নেমে দাঁড়াবে দুপাশে। হাতব্যাগ আর গলার কানের চেইন-দুল টানাটানি করবে।
এরকমই হবার কথা। রাস্তায় কোন লোকজন থাকে না এরকম সময়ে। থাকলেও কেউ ফিরে তাকায় না।
রিকশাওয়ালা তখনো চেইন টানাটানি করছে। নীতু জানে এসব অহেতুক সময়ক্ষেপণ। ঠিক সময়ে ওরা এসে হাজির হবে। হাতের ব্যাগটা আগেভাগেই আলগা করে ধরে রাখে যাতে বিনা আয়াসেই নিয়ে যেতে পারে। কেবল ওড়নাটা ঠিক করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে জড়োসড়ো। শীত লাগছে অথচ ঘাম দিচ্ছে।
নন্দনকাননের দিক থেকে সবুজ সিএনজিটা এগিয়ে আসতে দেখলো। ভেতরে তিনজন তরুন। কাছাকাছি এসে থেমে গেল সিএনজি। ঠিক যেরকম হবার কথা। মাথা নীচু করে বসে আছে ব্যাগের উপর হাতটা আলগা করে। ব্যাগ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত সে, তবু ধমকে দেবে ওরা, 'চুপ্! কথা বললে লাশ ফেলে দেবো।'
সিএনজি থেকে গলা বের করে একজন বললো, 'অ্যাই!'
ওদিকে তাকাতে ভরসা পাচ্ছে না সে।
সেই গলা আবারো হাঁক দিল, ''অ্যাই রিক্সা, কি হইছে?'
রিকশাওয়ালা বলে, 'চেইন পইড়া গেছে, লাগাইতে পারতেছি না।'
ওই গলাটা আবারো বলে, 'চেন লাগবে না, হাতে টেনে চলে যা, এই জায়গা ভালো না।'
বলেই সিএনজিটা সাঁই টান দিয়ে চলে গেল।
রিকশাওয়ালা চেইন ছেড়ে হ্যান্ডেল ধরে টেনে চালাতে থাকে দ্রুত। গলি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে এখুনি।
এতক্ষন চেপে রাখা নিঃশ্বাসটা ফেললো নীতু।
No comments:
Post a Comment