মধ্য চট্টগ্রামের হরিকেল রাজ্য
অবিভক্ত চট্টগ্রাম প্রায় ১৬৬ মাইল দীর্ঘ। ফেনী নদী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত এই জেলাটিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। উত্তরভাগ মীরেরসরাই থেকে কর্নফূলী নদী পর্যন্ত। মধ্যভাগ কর্নফুলীর দক্ষিণ তীর থেকে শংখনদী পর্যন্ত। দক্ষিণ ভাগ শংখ নদী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত। মধ্য ভাগের যে ভূখণ্ড সেখানে একটি প্রাচীন রাজ্যের অবস্থান পাওয়া যায় ইতিহাস খুঁড়ে। বহুদিন পর্যন্ত এই রাজ্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুব ক্ষীণ ছিল। বিশ শতকের শেষভাগে এসে বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত আর ঐতিহাসিক নজির গবেষণা করে জানা গেছে সেই রাজ্যটি হরিকেল নামে পরিচিত ছিল।
প্রাচীন সমৃদ্ধ রাজ্য গুলোর মধ্যে হরিকেল অন্যতম। হরিকেল রাজ্যের সাথে আরাকান রাজ্যের একটা সম্পর্কের বিষয় জানা যায় মুদ্রা বিনিময়ের সুত্রে। মধ্যযুগে সেই রাজ্যটি প্রায় পাঁচশত বছর টিকেছিল। হরিকেল রাজ কান্তিদেবের নামে একটি তাম্রশাসনের সন্ধান পাওয়া গেছে যেটি ৮৫০ থেকে ৯৫০ খ্রীষ্টাব্দে উৎকীর্ণ হয়েছিল। এ ছাড়াও আরো দুটি পাত্র লিপির সন্ধান পাওয়া গেছে যাতে হরিকেল রাজ্য সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্যের সন্ধান মেলে। তাছাড়া সন্ধান পাওয়া গেছে বেশ কিছু ধাতব মুদ্রারও। মুদ্রাগুলো তিন রকমের। পূর্ণমুদ্রা, অর্ধমূদ্রা এবং এক চতুর্থাংশ মুদ্রা। খাঁটি রূপার তৈরী মুদ্রাগুলো সপ্তম শতকের।
হরিকেল রাজত্বের সময় চট্টগ্রামের বন্দর ছিল কর্নফুলীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত দেবগ্রামে যা বর্তমানে দেয়াং নামে পরিচিত। ওই বন্দরটি চট্টগ্রামের আদি বন্দর ছিল যেখান দিয়ে চীনা পর্যটক তেন কাওং হরিকেল রাজ্যে এসেছিলেন। তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্তে হরিকেল রাজ্যের কিছু বিবরণ খুঁজে পাওয়া যায়।
আবার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড.সুনীতি ভূষণ কানুনগো বলেছেন বন্দরটির অবস্থান সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে ছিল না, কর্নফুলীর মোহনা থেকে আট দশমাইল ভেতরে ছিল। এই অনুমান বর্তমান ভৌগলিক বাস্তবতায় সঠিক মনে হলেও আদি অবস্থান হিসেবে তা সঠিক না। ষোড়শ শতকের পর ইউরোপীয়ানদের তৈরী করা মানচিত্রগুলো বিশ্লেষন করে দেখা গেছে গত তিনশো বছরে কর্ণফুলী নদীর মোহনা বিপুল আকারে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এমনকি কর্ণফুলীর মোহনায় চর জেগে তা শহরের একাংশ হয়েছে আরো এক অংশ দক্ষিণ তীরে মিশেছে। ভৌগলিক অবস্থান বিচারে মোহনার কাছেই বন্দরের অবস্থান ছিল তা মানচিত্রে নির্দেশিত আছে। একাধিক ইউরোপীয়ান মানচিত্রে সেই বন্দরকে Bangala নামে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment