আজকাল প্রায় প্রতিদিন একটা করে দুঃসংবাদের টেলিফোন পাই। কখনো একাধিক। পৃথিবীর দুঃসংবাদের ভয়ে টিভি দেখা, খবরের কাগজের পাঠ ছেড়ে দিয়েছি। নিজের কাজ, পড়াশোনার বাইরে আমার যোগাযোগ পৃথিবী খুব সীমিত করে রেখেছি। কোন কোন দুঃসংবাদ এমন হয় বুক ভরে শ্বাস নেয়া যায় না। ভার হয়ে থাকা বুকটা হালকা করার পথ যেখানে খুঁজি, সেখানেও এলোমেলো হাওয়া। তোর টেলিফোন পেয়ে আমি আবারো ভারাক্রান্ত হলাম। আমি যখন পথ খুঁজে পেতাম না, তোর কাছে গিয়ে হালকা হতাম। তুই যখন দিশেহারা তখন আমার কাছে ছুটে আসতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষাটা দিয়ে আমি তোর কাছে গিয়ে থেকেছিলাম কয়েকদিন। তখন আমার অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যত। কিন্তু তোর কাছে গিয়ে আমি আলো খুঁজে পেতাম। আমার সব দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে যেতো তোর কাছে গেলে। তুই অভয় দিয়ে বলতি যতদিন তুই দুপায়ে দাঁড়িয়ে আছিস, আমি চিন্তামুক্ত। আমি জানতাম ভালো করেই। তাই আমার কখনো দ্বিধা ভর করতো না তোর কাছে আমার সব জানালা খুলে দিতে। আমার বন্ধুর সংখ্যা নেহাত কম ছিল না, তবু তুই সবার চেয়ে আলাদা। তোর চায়ের কাপের আধখানা আমার থাকবে আমি জানতাম। মানুষে মানুষে সম্পর্কে কত জটিলতা, কত অবিশ্বাস, কত রকমের রাসায়নিক পরিবর্তন আসে, কিন্তু তিন দশকের বেশী সময়েও আমাদের কখনো ভুল বোঝাবুঝি হয়নি। আমাদের সব লেনদেন একপাক্ষিক বলেই হয়তো। আমরা দুজন দুজনকে যা দেই সেটা চুড়ান্ত। কখনো কিছু ফেরত চাই না। ফিরতি প্রত্যাশা থাকলেই যত সমস্যা। তুই ছাড়া আমার তেমন বন্ধু সারাজীবনে মাত্র আর একজনই হয়েছে। এখানে আমি চিরঋনী থেকে সুখী। যেখানে আমি নিজের জীবনটা হাতে তুলে দিতে পারি নিশ্চিন্তে। এই বিশ্বাস কিভাবে তৈরী হয় কেউ জানে না। আমি খুব বেশী মানুষের সাথে মিশি না, খুব বেশী মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখি না কষ্ট পাবার ভয়ে। কিন্তু আমি যাকে বিশ্বাস করেছি সেটা নিজের প্রাণের সাথে বাজী রেখে করেছি। সে আমাকে কখনো ঠকাবে না জানি। এই যে বিশ্বাস, এটা কোন লেনদেনের ব্যাপার না। প্রাণের সাথে প্রাণের যোগাযোগ। এটা একটা স্বস্তি। একটা আশ্রয়। তুই আমার সেই আশ্রয়।
সেই তুই যখন 'ভালো নেই' বলিস,তখন আমি আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার অস্থিরতায় ভুগি। পঞ্চাশের কাছাকাছি পৌঁছে জীবনের অনেক পতনশীল সুত্র এসে আমাদের আহত করবে এটা স্বাভাবিক জেনেও মেনে নিতে পারি না।
No comments:
Post a Comment