বৃক্ষপ্রেম নিয়ে কোন সন্দেহ না থাকলেও বৃক্ষরোপন ও লালন পালনে আমার অদক্ষতা এবং অযোগ্যতা সুবিদিত। আমি কখনো কোন গাছ লাগিয়ে ফুল ফোটাতে পারিনি, ফল ধরেনি আমার লাগানো কোন গাছে। শুনলে বিশ্বাস হবে না হয়তো, আমার বাগান জুড়ে এত গাছ গাছালির মেলা ছিল তার সবটুকুই আকাশ থেকে পাওয়া। আমি বৃক্ষদের ভালোবাসি, কিন্তু তারা আমার হাতে বড় হতে পছন্দ করতো না। আমার হাতের ছোঁয়া পেলে তাদের বৃদ্ধি থেমে যেতো।
একটা জলপাই গাছ দশ বছরেও তিন ফুটের বেশী বাড়েনি। একটা কাঁঠাল চাপা যেটুক লাগিয়েছি, সেই ডালেই তিনটি ফুল দিয়েছিল তিন বছরে বাড়েনি এক ইঞ্চিও। সবচেয়ে বেশী প্রতারিত হয়েছি গোলাপের কাছে। আমার হাতে গোলাপ ফোটেনা বলে তৈরী ফুটন্ত কালচে মেরুন রঙের গোলাপসহ গাছ লাগালাম। নার্সারি থেকে বলেছিল গোলাপটির নাম পাপ্পা মেলন।
সেই ফুল ঝরে যাবার পর ওই গাছে আর কোন ফুল ফোটেইনি বরং গাছের ডাল ফুঁড়ে দীর্ঘ কন্টকময় অসংখ্য কাণ্ডের জন্ম হয়েছিল যা লতার মতো বেড়ে আমার বাগানের একাংশ গ্রাস করে ফেলেছিল। কোন ফুল নেই, শুধু সুন্দর সুন্দর কাঁটা ঝোপের পাতা। এত সুন্দর গোলাপ পত্র আর কোথাও দেখিনি। কিন্তু ফুলের দেখা নেই যেখানে দীর্ঘ এক বছরেও পাতা দিয়ে কী করবো।
একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম গাছটিকে ঝাড়ে বংশে উৎখাত করবো। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করার আগেই গাছটি নতুন একটা চাল দিল। হঠাৎ করে সেই বন্ধ্যা কাণ্ড থেকে এক থোকা কুঁড়ি বের হয়ে এলো। পরের সপ্তাহে আরো। একটা ফুল না। এক থোকায় দশ পনেরোটি ছোট ছোট ফুল, দেখতে গোলাপের মতো, কিন্তু রঙটা সাদাটে গোলাপী। আমি যে ফুল দেখে গাছটি কিনেছি তার সাথে কোন মিল নেই। ওই অদ্ভুত ফুল গুলি তার রূপ দেখিয়ে গাছের জীবন রক্ষা করেছিল সেবারের মতো।
ঘটনাটি আজ অবধি রহস্যময় হয়ে আছে আমার কাছে। সেই শেষ। আমি আর কোন গোলাপের সাথে লেনদেন করিনি পরবর্তী জীবনে। শুধু গোলাপ নয়, কোন বৃক্ষ লালনে আমার আর আগ্রহ নেই। আমি বুঝে গেছি আমার হাতে বৃক্ষদের বৃদ্ধি নেই। তবু আকাশ থেকে পাওয়া বৃক্ষরা আমাকে যে অগণিত ফুল ফল ছায়া মায়া উপহার দিয়েছিল, সেগুলো আমি প্রাণভরে উপভোগ করেছি, তাতেই আমার সারা জীবনের সকল তৃষ্ণা মিটে গেছে।
তবু অনেক বছর পর, যুগের পর যুগ কেটে যাবার পর, নতুন সময়ে এসে আরেকটি বৃক্ষের চারা রোপন করলাম। এই গাছের অনেক সুনাম। আমি নিশ্চিত এই গাছের ফুলে ফলে ছেয়ে যাবে একদিন নির্জন প্রান্তর। গাছটি আমি বিক্রি করবো না, ফার্নিচার বানাবো না, কেটেছেঁটে লাকড়ির চুলাও জ্বালাবো না। গাছটিকে বড় করার স্বপ্নটা তবু আমাকে দিন রাত আচ্ছন্ন করে রাখে। গাছটি জানে না আমি কেন তাকে বড় করতে চাই। আমি জানি কেন করছি। এই বৃক্ষের কাছ থেকে আমি কিছুদিনের জন্য একটা ছায়ার বাগান চাই। শুধু ছায়া আর কিছু নয়। ছায়া দিতে কোন বৃক্ষ কখনো দ্বিমত করে না। ছায়া রেখে কোন গাছ কাউকে বিমুখ করে না।একটা জলপাই গাছ দশ বছরেও তিন ফুটের বেশী বাড়েনি। একটা কাঁঠাল চাপা যেটুক লাগিয়েছি, সেই ডালেই তিনটি ফুল দিয়েছিল তিন বছরে বাড়েনি এক ইঞ্চিও। সবচেয়ে বেশী প্রতারিত হয়েছি গোলাপের কাছে। আমার হাতে গোলাপ ফোটেনা বলে তৈরী ফুটন্ত কালচে মেরুন রঙের গোলাপসহ গাছ লাগালাম। নার্সারি থেকে বলেছিল গোলাপটির নাম পাপ্পা মেলন।
সেই ফুল ঝরে যাবার পর ওই গাছে আর কোন ফুল ফোটেইনি বরং গাছের ডাল ফুঁড়ে দীর্ঘ কন্টকময় অসংখ্য কাণ্ডের জন্ম হয়েছিল যা লতার মতো বেড়ে আমার বাগানের একাংশ গ্রাস করে ফেলেছিল। কোন ফুল নেই, শুধু সুন্দর সুন্দর কাঁটা ঝোপের পাতা। এত সুন্দর গোলাপ পত্র আর কোথাও দেখিনি। কিন্তু ফুলের দেখা নেই যেখানে দীর্ঘ এক বছরেও পাতা দিয়ে কী করবো।
একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম গাছটিকে ঝাড়ে বংশে উৎখাত করবো। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করার আগেই গাছটি নতুন একটা চাল দিল। হঠাৎ করে সেই বন্ধ্যা কাণ্ড থেকে এক থোকা কুঁড়ি বের হয়ে এলো। পরের সপ্তাহে আরো। একটা ফুল না। এক থোকায় দশ পনেরোটি ছোট ছোট ফুল, দেখতে গোলাপের মতো, কিন্তু রঙটা সাদাটে গোলাপী। আমি যে ফুল দেখে গাছটি কিনেছি তার সাথে কোন মিল নেই। ওই অদ্ভুত ফুল গুলি তার রূপ দেখিয়ে গাছের জীবন রক্ষা করেছিল সেবারের মতো।
ঘটনাটি আজ অবধি রহস্যময় হয়ে আছে আমার কাছে। সেই শেষ। আমি আর কোন গোলাপের সাথে লেনদেন করিনি পরবর্তী জীবনে। শুধু গোলাপ নয়, কোন বৃক্ষ লালনে আমার আর আগ্রহ নেই। আমি বুঝে গেছি আমার হাতে বৃক্ষদের বৃদ্ধি নেই। তবু আকাশ থেকে পাওয়া বৃক্ষরা আমাকে যে অগণিত ফুল ফল ছায়া মায়া উপহার দিয়েছিল, সেগুলো আমি প্রাণভরে উপভোগ করেছি, তাতেই আমার সারা জীবনের সকল তৃষ্ণা মিটে গেছে।
তবু কেন যেন অমূলক একটা আশংকা এসে ভর করে, কেউ যেন বলছে জেনো, এই বৃক্ষটা একদিন তোমাকে ছায়াবিমুখ হতাশ করবে।
No comments:
Post a Comment