Wednesday, July 27, 2016

আনন্দ-বিষাদের আপেক্ষিক গুরুত্ব

আনন্দ, তুমি সরে যাবার পর বিষাদ এসে আমাকে আঁকড়ে ধরে। আনন্দ, তুমি বেশী সময় থাকো না কেন? তোমার কেবলই দেরী হয়ে যায়। তোমার জন্য কেবলি গাড়িটা ছেড়ে যাবার অপেক্ষায় থাকে। তোমার হাত ধরার আগেই তুমি টুপ করে অপেক্ষার ট্রেনে উঠে যাও আমাকে পেছনে ফেলে। প্ল্যাটফর্মে আমি যখন একা, তখন ওঁত পেতে থাকা বিষাদ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে- আমি, আমিই তোমার আসল, আনন্দ কেবল মায়া, ভ্রান্তি।

তুমি বলো আনন্দ, আমি কী করি? বিষাদকে ঝেড়ে ফেলে আমি আবার ফিরতি ট্রেনের অপেক্ষায় থাকি যদি তুমি ফিরে আসো। তুমি কখনো আসো, কখনো সপ্তাহান্তেও আসো না। আনন্দ তুমি জানো আমি আমার সব কাজ তোমাকে সাথে নিয়েই। তুমি থাকলে আমি সব করতে পারি। তুমি চলে গেলে আমার কাজ থেমে যায়, হাত থেমে যায়, মুখ থেমে যায়, হাসি উড়ে যায়, আমার মুখে ঝোলভাতের অমৃতও রোচে না।

বিষাদকে তুমি চেনো? বিষাদের কোন রং নেই, বিষাদ ধূসর, মেঘলা দুপুরের বৃষ্টিহীন আকাশের মতো।  বিষাদ আমাকে ভালোবাসে। আমাকে সুযোগ পেলেই আকড়ে ধরে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখে। কোন কাজ করতে দেয় না। আমার হাত পা অচল করে রাখে। বলে আমি, আমিই তোমার আসল। তোমার কিছু করতে হবে না। এই দেখো আমি তোমাকে চেপে হৃদপিণ্ডে রক্তপাত বন্ধ করে দিতে পারি। আমাকেই তুমি রাখো, আনন্দ তোমার কেউ না। আনন্দকে ভুলে যাও।

অথচ আনন্দ, আমি তোমাকে ভুলতে পারি না। বিষাদ আমার সবকিছু আটকে দিতে পারে, স্মৃতি ছাড়া। যদি স্মৃতিও আটকে দিতে পারতো আমার এত কষ্ট হতো না। আমি তোমাকে ভুলে বিষাদকে নিয়ে কাটিয়ে দিতাম বাকীটা সময়। আনন্দ তুমি কেন চলে যাও আমি জানি না। তুমি কখনো বলে যাও না, বলো না কেন তুমি চলে যাও। তোমাকে কারণ জিজ্ঞেস করতে আমার সাহস হয় না।

আনন্দ আমি কি তোমাকে ভয় পাই? তোমাকে হারাবার ভয় আমাকে তাড়া করে। তুমি এলে আমার ভয় কেটে যায়, কিন্তু সেই ভয় কাটিয়ে সোজা হয়ে বসার আগেই তোমার ট্রেন চলে আসে। তুমি হুট করে সেই অচেনা ট্রেনে উঠে চলে যাও।

আনন্দ তুমি কোথায় ঘুরে বেড়াও? আনন্দ তুমি কখনো সমুদ্রে গিয়েছো কিংবা পাহাড়ে। আমি তোমাকে নিয়ে সমুদ্রে যেতে চাই, পাহাড়ে চড়তে চাই। তোমার কখনো কি সময় হবে আনন্দ? আমি যেভাবে যতক্ষণ তোমাকে চেয়েছি সেভাবে কখনোই পাইনি। তুমি এসেই চলে যাও। তোমার কেবলি তাড়া, তোমার কেবলি সময়স্বল্পতা। তোমাকে পেতে আমাকে আর কী করতে হবে?

আনন্দ, তোমাকে আমি কত বয়স থেকে চিনি? তুমি আমাকে চেনো কোন বয়স থেকে? তোমার কি বয়স আছে? তোমার তো বয়স নেই। তুমি সৃষ্টির আদিকাল থেকে আছো। আমার জন্মেরও বহুবছর আগ থেকে।

আনন্দ, আমি যখন তোমাকে বুঝতে শিখেছি, পেতে শিখেছি -তখন খুব অল্প বয়স। আমি চাইতাম তুমি আমার সাথে সাথে থাকো। কিন্তু তোমাকে রাখার সামর্থ্য আমার নেই বলে আমার চাওয়া কখনো পূর্ণ হয়নি। যখন তোমাকে পেতে শুরু করলাম, যখন তোমার সাথে আমার দেখা হতে শুরু হলো, তখন তুমি ছিলে, তখন তুমি আমার সাথেই থাকতে চাইতে। তখন ভেবেছি আমি তোমাকে পেয়ে গেছি আনন্দ। আমি ভুল আনন্দে নিজেকে স্বপ্ন দেখিয়েছি। সময় সময় সময় করে হারিয়ে গেছে তোমার সময়। এখন তোমার সাথে আমার খুব অল্প সময়ের দেখা হয়, খুব সামান্য কয়েকটি মুহূর্ত মাত্র। তুমি এসেই মাধবীর মতো বলো, যাই।

তুমি কোথায় কোথায় যাও আনন্দ? পরেরবার এলে তোমার ঠিকানাটা রেখে যেও। আমি সেই ঠিকানায় উড়ে যাবো সোনালী ঈগলের ডানা হয়ে। উড়ে যেতে যেতে ভাবতে থাকবো, জীবনানন্দ তোমাকে পায়নি, আমি কী পাবো? জীবনানন্দের জীবনে তুমি শুধু নামটিতে ছাপ রেখেছিলে, বাকী জীবনে তুমি নেই, বাকী জীবন বিষাদের কাছে গছিয়ে তুমি চলে গেছো অন্য কোন ট্রেনে চড়ে।


[যদি জীবনানন্দ দাশ এমন করে ভাবতো....]

No comments: