বিউগল রেষ্টুরেন্ট
সুবেদার আলীর শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। শরীর বললে ভুল হবে। কাঁপছে তার দুই গ্যালন সাইজ ভুড়িটা।
জীবনে এই প্রথম তার এরকম কোন জায়গায় আসা। তার নিজের কখনো সুযোগ হতো না যদি হাতেম তাকে এই সুযোগ না দিত। হাতেম তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী। একই মেস ঘরে থাকে দুজনে। বিউগল রেষ্টুরেন্টে কাজ করে হাতেম। ভালোমন্দ খাবার সুযোগ হলেও হাতেমের দিন কাটে হয় মুলার ঝোল নয় শশার ঝোলের তরকারি আর বড়জোর একটা ডিম। সুবেদার মেট্রিক পাশ। হাতেমের চেয়ে শিক্ষিত। কিন্তু খাবার দাবারে দরিদ্র। কারণ সে একটা গুদামে বস্তা গুনার কাজ করে। হাতেমের কাছ থেকে খাবার দাবারের গল্প শুনতে শুনতে অবিশ্বাস্য লাগে তার। কোন কোন বেলায় নাকি দুইশো পদের খাবারও সাজানো থাকে ওখানে। তার নাম বুফে। এত খায় কেমনে? এমনকি তার দুই গ্যালনের পেটের মধ্যেও বড়জোর বিশ পদ ঢুকানো যাবে ঠেসেঠুশে।
অনেক আবদার অনুরোধ করে হাতেমকে রাজী করিয়ে একটা সুযোগ বের করে এই ঢেকি গিলতে আসা। এক বড়লোকের বিয়ে। বিশাল হল ঘরের তিন দেয়াল জুড়েই খাবারের রুপোলী বাক্সগুলো সাজানো। প্রতিটা বাক্সের নীচে মোমবাতি জ্বালানো। হাতেমের টেবিলে বসেছে আরো কয়েকজন। তাদের একজনের পিছু নেয় হাতেম। স্পাইসি প্রন সুপ উইথ ইয়ং কোকোনাট মিল্ক নামের আইটেমটা নেয়। মজা লাগে না। আবার উঠে আসে। এবার নিল স্পাইসি ক্লিয়ার প্রন সুপ। এটা একটু ঝাল, কিন্তু ঝোল পাতলা। একটু খেয়ে রেখে দিল। এবার গিয়ে নিয়ে আসলো স্পাইসি ক্লিয়ার চিকেন সুপ। এটায় মুরগীর টুকরাগুলো কেমন সাদা সাদা।
ধুত্তারি!
সে আবার গিয়ে নিল সিফুড সুপ উইথ ইয়ং কোকোনাট মিল্ক। আবারো মেজাজ খারাপ হয়। এত মিল্ক মিল্ক কেন? সে কি দুধ খাইতে আসছে? সে খুজে নিল ভিন্ন একটা ফিশ সুপ, মজা পেলে উঠে গিয়ে নিল চাইনিজ থাই সুপ। বাহ এটাতো দারুণ! তারপর নিল ডাক নুডলস সুপ, বিফ নুডলস সুপ, কর্ন সুপ, তোফু সুপ। নাহ এত জায়গা হবে না। একটু রেষ্ট নিল সে। তারপর গিয়ে নিয়ে আসলো কয়েকটা চিকেন অর বিফ বলস এবং নুডলস সুপ উইথ ফিশ রোল।
সুপ পর্ব শেষ হলো তার।
ডান দিকে তাকিয়ে দেখলো ওখানে আসল খাবার। প্রথমেই দেখলো ফ্রাইড মিক্সড ভেজিটেবল উইথ ওস্টার সস। প্লেটের একপাশে নিয়ে সাজাতে শুরু করলো ফ্রাইড মিক্সড ভেজিটেবল উইথ সয়াসস, ফ্রাইড মিক্সড ভেজিটেবল উইথ গ্র্যাভি, ফ্রাইড মাশরুম অ্যান্ড ব্যাম্বো সস উইথ ওস্টার সস, ফ্রাইড গ্রিন ভেজিটেবল, মিক্স ভেজিটেবল উইথ তোফু, ফ্রাইড ব্রোকানি উইথ ওস্টার সস, মিক্স ভেজিটেল ইন গ্রিন কারি। প্লেটটা উচু হয়ে গেল মৈনাক পর্বতের মতো।
সে এমন সবজি কখনো খায়নি। গপাগপ গিলতে থাকে। শেষ হলে হাঁপাতে শুরু করলো। পানি খেলে যদি পেটের জায়গা নষ্ট হয় সেই ভয়ে সে এক চুমুক পানিও খায়নি।
আশেপাশের লোকজন মাঝে মাঝে তার দিকে তাকাচ্ছে খাওয়া থামিয়ে। এসবে সে পরোয়া করে না। এখানে কেউ তাকে চেনে না। না চিনলে লজ্জার কিছু নাই। জীবনে এমন অভিজ্ঞতা একবারই পায় মানুষ।
প্লেট খালি হয়ে গেলে সে একটু বিশ্রাম করে এবার এগিয়ে গেল পরবর্তী ইনিংসের দিকে। এবার ধরলো ফ্রাইড রাইস উইথ শ্রিম্প এণ্ড চিকেন। পাশে ফ্রাইড রাইস উইথ ক্র্যাব মিট দেখে সে আন্দাজ করার চেষ্টা করলো জিনিসটা কি। তারপর সামান্য করে নিতে শুরু করলো ফ্রাইড রাইস উইথ গ্রিনকারি, ফ্রাইড রাইস উইথ বাসিল লিফ, ফ্রাইড রাইস উইথ বয়ড কারি, ফ্ল্যাট রাইস নুডলস, রাইস নুডলস উইথ গ্রিন ভেজিটেবল, রাইস নুডলস উইথ সি ফুড অ্যান্ড মিক্সস ভেজিটেবল কারি, চিকেন চাউমিন ইত্যাদি।
বামদিকে ঘুরে তার চোখ পড়লো আরো কিছু বাদ পড়া আইটেমের দিকে। হাতেম তাকে বলে দিয়েছে সবকিছুই নিতে পারবো। কোন বাধা নেই। এবার সে কিছু রাইস আইটেম সরিয়ে নতুন একটা প্লেট নিয়ে এগিয়ে গেল নতুন আইটেমের দিকে। এবার নিতে শুরু করলো প্রণ বল প্যালেট, সুইট এন্ড সাওয়ার প্রণ, চাইনিজ বিফ কাটলেট, সিচুয়ান বিফ, চিকেন ড্রাম স্টিক, ফ্রাইড স্প্রিং চিকেন, পিকিং চিকেন, চিকেন স্প্রিং রোল, ম্যানডারীন ফিশ, অ্যামেরিকান চপসুয়ে, সিচুয়ান শ্রিম্প রোল এবং বাটার ফ্লাই শ্রিম্প
। এবারো প্লেটের উপর তৈরী হলো আরেকটা পর্বত।
এই পর্বতটা যখন প্লেটের সমান হয়ে গেল তখনই তার ভুড়িটা কাঁপতে শুরু করলো। সে প্রথমে ভেবেছে ভূমিকম্প হচ্ছে। ভূমিকম্পের সময় সে সিলিং এর দিকে তাকায় ফ্যানটা দুলছে কিনা দেখার জন্য। এখানে ফ্যান নেই কিন্তু সিলিং এ ঝোলানো ঝাড়বাতিগুলো একদম অনড়। সুতরাং ভূমিকম্প নয়। তখনই তার নজর গেল শার্টের বোতাম চেপে বসা দুই গ্যালন সাইজের ভুড়িটার দিকে। ওটার ভেতরেই কম্পনটা হচ্ছে। ভয় পেয়ে গেল সুবেদার আলী। এত পদের খাওয়া গিয়ে ভুড়ির ভেতরে হজমের ঝড় তুলেছে। সে চেয়ার থেকে উঠতে গিয়ে আটকে গেল। বসে পড়লো আবার। এবার বুঝলো কি পরিমান ঢুকেছে ভেতরে।
পেটের ঝামেলাটার দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে ছিল বলে টের পায়নি তার চারপাশে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।
ব্যাপার কি? সে কি ধরা পড়ে গেল হাকুল্যা খেতে গিয়ে? এত খাওয়া উচিত হয়নি। সবার নজরে পড়ে গেছে। এখন উপায়?
তাকে ঘিরে ফেলেছে ভিড়টা। দাওয়া বিহীন বুফে খাওয়ার শাস্তিটা মনে হয় এবার পিঠের উপর পড়বে। অথচ তখনো কোনার ডেজার্ট আইটেমগুলো বাদ রয়ে গেছে। পায়েসম ফ্রুট সালাদ, লাচ্ছি, বোরহানি, আইসক্রিম, দই,সন্দেশের কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল এই দুঃসময়ে। মারটা খাবার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হতে হতে ভাবলো হাতেম শালাটা গেল কই। এই সময় তাকেও একটা ভাগ দেবার দরকার ছিল।
ব্যাপার কি? সে কি ধরা পড়ে গেল হাকুল্যা খেতে গিয়ে? এত খাওয়া উচিত হয়নি। সবার নজরে পড়ে গেছে। এখন উপায়?
তাকে ঘিরে ফেলেছে ভিড়টা। দাওয়া বিহীন বুফে খাওয়ার শাস্তিটা মনে হয় এবার পিঠের উপর পড়বে। অথচ তখনো কোনার ডেজার্ট আইটেমগুলো বাদ রয়ে গেছে। পায়েসম ফ্রুট সালাদ, লাচ্ছি, বোরহানি, আইসক্রিম, দই,সন্দেশের কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল এই দুঃসময়ে। মারটা খাবার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হতে হতে ভাবলো হাতেম শালাটা গেল কই। এই সময় তাকেও একটা ভাগ দেবার দরকার ছিল।
তখন রেষ্টুরেন্টের কোলাহল থেমে গেল হঠাৎ। ছাদের কোনে ঝোলানো স্পিকারে একটা ঘোষণা ভেসে এল -
"উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজকের ইচ্ছে অনুসারে আমরা আমাদের কাংখিত শীর্ষ ভক্ষককে পেয়ে গেছি। জনাব সুবেদার আলী আজ সম্মানিত খাদক নির্বাচিত হয়েছেন। সবাই হাত তালি দিয়ে অভিননন্দন জানান তাঁকে। আপনার জন্য আগামী সাত দিনের খাবার ফ্রি এখানে। আপনার খাদক কার্ড নিয়ে যান দয়া করে।"
সুবেদার আলী তাকিয়ে দেখলো এক কোনায় হাতেম তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
সে খাদক কার্ড নিয়ে দেখলো লেখা আছে-
"উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজকের ইচ্ছে অনুসারে আমরা আমাদের কাংখিত শীর্ষ ভক্ষককে পেয়ে গেছি। জনাব সুবেদার আলী আজ সম্মানিত খাদক নির্বাচিত হয়েছেন। সবাই হাত তালি দিয়ে অভিননন্দন জানান তাঁকে। আপনার জন্য আগামী সাত দিনের খাবার ফ্রি এখানে। আপনার খাদক কার্ড নিয়ে যান দয়া করে।"
সুবেদার আলী তাকিয়ে দেখলো এক কোনায় হাতেম তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
সে খাদক কার্ড নিয়ে দেখলো লেখা আছে-
"অভিনন্দন অতিথি। আপনি আমাদের আজকের খাদক। পুরস্কার হিসেবে এই রেষ্টুরেন্টগলোর নিন্মোক্ত আইটেমগুলো আগামী এক মাসের জন্য আপনার জন্য বরাদ্দ করা হলো।
পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানী
লালমাটিয়ার স্বাদ এর তেহারী
মতিঝিলের ঘরোয়ার খিচুড়ী
হাতিরপুলের শর্মা হাউজের শর্মা
বংশালের শমসের আলীর ভুনা খিচুড়ি
কাঁটাবনের অষ্টব্যাঞ্জনের গ্রীল,শর্মা
ফার্মগেটের ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানী
ধানমন্ডির লায়লাতি'র খাশির ভূনা খিচুড়ি,কাবাব"
সুবেদার আলী বুঝতে পারলো না তার কি সম্মানিত বোধ করা উচিত নাকি অপমানিত।
---------------------------------------------------------------------------------------
গল্প-২
আতিক্কা হোঁচট
রাহুল রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ লাগে শালার আনইনস্টল করতে। অথচ ইনস্টল করার সময় কয়েক সেকেণ্ড মাত্র। কি মিষ্টি মিষ্টি কথা শুরুতে। বছর না যেতেই শুরু হলো যন্ত্রণা।
দুবছর আগের কথা।
কাজের অবসরে একটা ওয়েবসাইটে ঢুকে স্টিভেন ওয়েনবার্গের 'ড্রিমস অব এ ফাইনাল থিওরি'র একটা অংশ পড়ছিল গভীর মন লাগিয়ে। কসমোলজি নিয়ে চল্লিশ বছর আগে লেখা বইটি এখনো প্রাসঙ্গিক। এমনিতে কসমোলজি তার প্রিয় বিষয়। তার মধ্যে এই লোক সম্পর্কে তার একটা মোহ কাজ করে।
হঠাৎ পাশ থেকে মিষ্টি গলায় চ্যাট করতে ডাকলো এক সুন্দরী। বললো সে ওয়েনবার্গের নাতনীর মেয়ে। চাইলে ওয়েনবার্গের আরো কিছু বইপত্র দিতে পারে। রাহুল অবাক হয়নি। আজকাল সব ওয়েবসাইটেই এরকম সাহায্যকারী হাত থাকে। যারা ভার্চুয়ালী ইন্টারএকটিভ।
রাহুলের নেট একটিভিটি খুবই সীমিত। গবেষণার পাশাপাশি এসব করার কোন সুযোগ নেই। অন্য কেউ হলে ইগনোর করতো। কিন্তু স্টিভেনের নাম শুনে আগ্রহী হলো সে। আমন্ত্রণ গ্রহন করে, ইনস্টল করে নিল তাকে। হ্যাঁ এই যুগে বন্ধুও ইনস্টল করতে হয় আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে। খোলা বন্ধুতার দিন শেষ।
মেয়েটার নাম জেনী, জেনী ওয়েনবার্গ। খুবই চটপটে। গলাও খুবই মিষ্টি। রাহুল ভার্চুয়াল প্রেমে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলো। জেনীই প্রথম অগ্রসর হয়েছিল এটা বলা কি বাহুল্য হবে?
পরদিন থেকে শুরু হলো তথ্য আদানপ্রদান। কিছুকাল পর যা ভাব আদান প্রদানে এসে পৌঁছুলো। আজকাল এমন যুগ এসেছে, ভাব আদান প্রদান করলেও বাস্তবে কারো সাথে দেখা সাক্ষাত করার উপায় নেই। কে কোন দেশ থেকে কথা বলছে সেটা বোঝার উপায়ও নেই। ফলে ভাব ভালোবাসার মতো সম্পর্কের পরিণতিও ভার্চুয়ালী সীমাবদ্ধ। তবু একালের তরুণ সমাজ এই যান্ত্রিক সম্পর্কের জন্য উন্মাতাল।
কয়েক মাস পর দেখা গেল রাহুল ওয়েনবার্গ ছেড়ে ডুমার শপের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। ডুমার শপ হলো গত শতকের মহাযুদ্ধে ব্যবহৃত বাতিল মালের অনলাইন আখড়া। ওই শপ থেকে মহাযুদ্ধের বাতিল অস্ত্রপাতি এন্টিকস হিসেবে কিনছে একালের ধনপতিরা। জেনীর শখ হয়েছে সেখান থেকে জার্মানীর একটা প্লেনের লেজ কিনবে। ওই লেজের একটা অংশে বিধ্বংসী পরমানু অস্ত্রের নিক্ষেপক ছিল। এটার সাথে কসমোলজির কোন সম্পর্ক নেই। তবু জেনীর শখ মেটাতে রাহুল অর্ডার দিল।
প্রতি সপ্তাহেই এরকম নতুন নতুন শপিং মলে ঘুরতে লাগলো রাহুল আর জেনী। কিছুদিন যাবার পর রাহুল কসমোলজি আর ওয়েনবার্গ ভুলে জেনীর ভেতর ডুবে গেল।
প্রফেসর এসে সেদিন তাগাদা দিতে জেগে উঠলো সে। জেনীর কাছ থেকে ছুটি নিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। ওয়েনবার্গের সাইটে গিয়ে জেনিকে খুঁজতে গেল। দেখলো জেনী নেই। ওখানে বসে আছে ফস্টার নামের গোমড়ামুখো এক তরুণ প্রফেসর। রাহুলকে দেখে বললো, হাই। কি চাই। রাহুল তখন জেনীর কথা জিজ্ঞেস করতে হা হা করে উঠলো ফস্টার।
রাহুল জিজ্ঞেস করলো, ঘটনা কি। তখন ফস্টার বললো, কোথাকার এক হ্যাকার বছর দুই আগে তাদের সাইট হ্যাক করে ঘাপটি মেরে বসেছিল। প্রচুর লোকজনকে ফতুর করে আজ ভেগেছে। রাহুল জিজ্ঞেস করলো, নাম কি তার। প্রফেসর বললো, জেনী বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু আসলে সে একটা ভাইরাস রোবট।
সর্বনাশ!!
রাহুল আঁতকে উঠলো। আজই তাকে একটা বড় পেমেন্ট করাবার কথা ল্যাঙ্গারমেন ডায়মণ্ড শপকে। জেনী ২.৬৩ ক্যারাটের দুটো ডায়মণ্ড পছন্দ করেছে গতকাল। সে তার ডিভাইস খুলে লগইন করে দেখলো জেনী অপেক্ষা করছে। রাহুলের দুবছরের ভালোবাসায় আগুন ধরে গেল। শালার ভাইরাস রোবট!
ক্লিক করলো আন ইনস্টল বাটনে। জেনী ওদিকে টের পেয়ে হায়হায় করে উঠলো। করছো কি করছো কি রাহুল। তুমি আমার এতদিনের প্রেমকে চুলোয় ফেলে দিচ্ছো? প্লীজ অমন করো না সোনা মনা!
রাহুলের মাথায় তখন আগুন। অশ্রাব্য গালিগালাজ বেরুলো মুখ দিয়ে, যার কিছুই পৌঁছায়নি অপরপ্রান্তে। জেনীর অনুনয়ভরা ইমো গুলোর দিকে একবার দেখে রিকনফার্ম বাটনে ক্লিক করে দিল!
দুই বছরের ভার্চুয়াল বন্ধুতা এখানেই খতম। এবার সে মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। পড়ার সাইটে ঢোকার আগে সে একবার ব্যাংক একাউন্টে লগ ইন করলো। হায়, ওখানে ব্যালেন্সের ঘর জুড়ে একটা বিরাট মাইনাস ফিগার! গত সপ্তাহেই রাহুলের ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার চেয়ে নিয়েছিল জেনী এক অভিমানী সেশানে। ফোর ডি সাউন্ড ফোনে, জেনীর চোখের জলের সাথে নাকের জলের মিশালো নাসিকা সঙ্গীতে রাহুলের বুকে বেদনার ঝড় তুলেছিল।
---------------------------------------------------------------------------------------
গল্প-২
আতিক্কা হোঁচট
রাহুল রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ লাগে শালার আনইনস্টল করতে। অথচ ইনস্টল করার সময় কয়েক সেকেণ্ড মাত্র। কি মিষ্টি মিষ্টি কথা শুরুতে। বছর না যেতেই শুরু হলো যন্ত্রণা।
মেয়েটার নাম জেনী, জেনী ওয়েনবার্গ। খুবই চটপটে। গলাও খুবই মিষ্টি। রাহুল ভার্চুয়াল প্রেমে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলো। জেনীই প্রথম অগ্রসর হয়েছিল এটা বলা কি বাহুল্য হবে?
রাহুল জিজ্ঞেস করলো, ঘটনা কি। তখন ফস্টার বললো, কোথাকার এক হ্যাকার বছর দুই আগে তাদের সাইট হ্যাক করে ঘাপটি মেরে বসেছিল। প্রচুর লোকজনকে ফতুর করে আজ ভেগেছে। রাহুল জিজ্ঞেস করলো, নাম কি তার। প্রফেসর বললো, জেনী বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু আসলে সে একটা ভাইরাস রোবট।
রাহুল আঁতকে উঠলো। আজই তাকে একটা বড় পেমেন্ট করাবার কথা ল্যাঙ্গারমেন ডায়মণ্ড শপকে। জেনী ২.৬৩ ক্যারাটের দুটো ডায়মণ্ড পছন্দ করেছে গতকাল। সে তার ডিভাইস খুলে লগইন করে দেখলো জেনী অপেক্ষা করছে। রাহুলের দুবছরের ভালোবাসায় আগুন ধরে গেল। শালার ভাইরাস রোবট!
ক্লিক করলো আন ইনস্টল বাটনে। জেনী ওদিকে টের পেয়ে হায়হায় করে উঠলো। করছো কি করছো কি রাহুল। তুমি আমার এতদিনের প্রেমকে চুলোয় ফেলে দিচ্ছো? প্লীজ অমন করো না সোনা মনা!
দুই বছরের ভার্চুয়াল বন্ধুতা এখানেই খতম। এবার সে মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। পড়ার সাইটে ঢোকার আগে সে একবার ব্যাংক একাউন্টে লগ ইন করলো। হায়, ওখানে ব্যালেন্সের ঘর জুড়ে একটা বিরাট মাইনাস ফিগার! গত সপ্তাহেই রাহুলের ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার চেয়ে নিয়েছিল জেনী এক অভিমানী সেশানে। ফোর ডি সাউন্ড ফোনে, জেনীর চোখের জলের সাথে নাকের জলের মিশালো নাসিকা সঙ্গীতে রাহুলের বুকে বেদনার ঝড় তুলেছিল।
[আতিক্কা হোচট]
No comments:
Post a Comment