Thursday, November 14, 2013

১৪ নভেম্বর ২০১৩ সিনেমা টিনেমা

১.
কমলেশ্বর মুখোপধ্যায়ের 'মেঘে ঢাকা তারা' ছবিটা দেখে ফেললাম সেদিন। এই ছবিটা অতীতে আমার দেখা উপমহাদেশের সব ছবিকে ছাড়িয়ে গেল। এই একটা ছবির ভেতর উপমহাদেশের ইতিহাস আন্দোলনের বিরাট একটা সারাংশ চলে এসেছে। এই মাপের নির্মান, এই মানের চলচ্চিত্র আর কয়টি হয়েছে জানি না। তবে আমি দেখিনি। 'মেঘে ঢাকা তারা ২০১৩' তাৎক্ষণিকভাবে আমার চোখে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসে গেল। আমার বিশ্বাস এই ছবি যদি আটলান্টিকের পূর্ব-পশ্চিমে নির্মিত হতো, এটা অবশ্যই খান কয়েক অস্কার পকেটে পুরে আনতো। ঋত্বিক ঘটকের জীবনের বৈচিত্র্যময় অধ্যায়গুলো ততোধিক বৈচিত্রময়রূপে উপস্থাপন করার যে দক্ষতা কমলেশ্বর দেখিয়েছেন, সেটা সাম্প্রতিক ইতিহাসে তুলনাবিহীন। ছবির দেশকাল মানুষ নিয়ে গানগুলো মর্মভেদী। বিটোফেনের ফিফথ সিম্ফোনীর এমন মর্মান্তিক ও প্রাসঙ্গিক ব্যবহার সম্ভবতঃ বিশ্বের আর কোন চলচ্চিত্রে হয়নি। এই নতুন মেঘে ঢাকাও তারা(http://en.wikipedia.org/wiki/Meghe_Dhaka_Tara_%282013_film%29) দর্শকের স্মৃতিতে বেঁচে থাকবে অনেক কাল। যদি সম্ভব হতো এই ছবির একটা রিভিউ লিখতাম। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় সেই দুঃসাহস আমার নেই।

২.
প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার যে আনন্দ, তার বিপরীত ঘটনাটাই ঘটলো মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর 'টেলিভিশন' দেখে। এটার উপর ব্লগ ফেসবুক আর পত্রিকার লেখালেখি পড়ে, ছবিটা নামিয়ে দেখেই ফেললাম। ছবিটা সম্পর্কে আলোচনা করে শব্দ অপচয় করবো না। শুধু দেখতে বসে যে তেতো বেরিয়েছে তার খানিকটা বলি। তবে ছবি দেখার সময় যে অনুভূতি হয়েছে তার সাথে তুলনা করা যায় আশির দশকের বিটিভির হীরামনের সাথে। আপনি বলতে বাধ্য হবেন, ফারুকী ইগ্গা জিনিস বটে!  এই জিনিস আবার বিদেশের হলে প্রদর্শিত হয়েছে শুনে আমি বাংলাদেশের জন্য সমবেদনা অনুভব করলাম। বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের সিনেমাকে অপমান করার জন্য এই সিনেমার চেয়ে উপযুক্ত আর কিছু হতে পারে না। সিনেমা আর টিভি নাটকের মধ্যে ব্যবধান তৈরী করা দূরূহ হয়ে যায় এই ছবিতে। সিনেমাটোগ্রাফি বলে একটা জিনিস আছে চলচ্চিত্র নির্মানের কায়দায়। এটি তার ধারে কাছেও ছিল না। এবার নাকি অস্কারের জন্যও লাইনে দাঁড়িয়েছে ছবিটা। শুনে লজ্জাই পেয়ে গেলাম। ধন্য হে ফারুকী।

৩.
গত কয়েক মাসে যে শখানেক ছবি যোগাড় করেছি সেগুলো নিয়ে আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহ প্রায় ৫০০ ছুঁয়ে গেছে। মূল টার্গেট নন হলিউডি এবং নন ইংরেজি ছবি সংগ্রহ অব্যাহত থাকবে। কিন্তু যে পরিমান যোগাড় করছি সেই গতিতে ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছি না। ফলে জমে যাচ্ছে অঢেল অঢেল। পরশুদিন একটা শর্ট ফিল্ম দেখলাম The Crush. ভালো লেগেছে। তার আগে শ্রীলংকান ছবি 'আকাশ কুসুম' দেখলাম। বাণিজ্যিক ছবি হলেও রুচিসম্মত বাণিজ্য। এই প্রথম শ্রীলংকার ছবি দেখলাম। নেপালের 'কাগবেনি' অবশ্য আরো ভালো লেগেছিল। তবে ভূটানের 'ট্রাভেলার্স এণ্ড ম্যাজিশিয়ান' তুলনাবিহীন। গতবার ভূটান গিয়ে ওই মুভিটা কিনেছিলাম চড়া দাম দিয়ে। দেশে অনেক খুঁজেও পাইনি। কদিন আগে ইউটিউবে দেখি ছবিটা কে যেন আপ করে রেখেছে। বিনে মাগনাতেই পাওয়া যাচ্ছে এখন। এরকম ঘটনায় মনটা একটু খারাপ হয়। যেমন বাংলাপিডিয়া যখন প্রথম বেরোয় ১০০০০ টাকা দিয়ে কিনতে হতো। আমি সেই দামে কিনে পরের বছর দেখলাম ডিসকাউন্টে ৩৫০০ টাকায় দিচ্ছে। এক কলিগ ৮০ টাকা দিয়ে একটা সিডি কিনে পুরো সবগুলো খন্ডই পেয়ে গেল। কেমন অবিচার! ২০০৩ সালে দশ হাজার টাকা আজকের এক লাখ টাকার সমান ছিল। টাকাগুলোর জন্য মায়াই লেগেছিল পরে।

৪.
কাল রাতে যে এক ঘন্টাও ঘুম হয়নি, তা আজ দুপুরের চমৎকার লাঞ্চ পুষিয়ে দিয়েছে। খুব বেশী কিছু না, ছোট মাছের চচ্চড়ি আর চিংড়ি-ফুলকপি। অপূর্ব। নতুন ওঠা শীতের তরকারি ভীষণ ভালো লাগে এই সময়ে। অফিসের জঘন্য খাবার এড়াতে মাঝে মাঝে বাসা থেকে আনা খাবার অমৃতের মতো লাগে। বিশ্রী রাজনীতির বিবমিষা নিয়ে লিখতে ভালো লাগছে না বলে খাবারদাবারের কথা চলে এল।


 




No comments: