Tuesday, December 28, 2010

ইউনিপেটু্ইউ (UNIPAY2U), মানি মেকিং মেশিন নাকি ফাঁদ?

১.
দ্রুত বড়লোক হতে কে না চায়?

সবচেয়ে বেশী চায় স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত যারা প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশী আয় করে। ধরা যাক, আমি সেরকম একজন আবুল হোসেন। আমার মাসিক আয় ২৫০০০ টাকা। মাসিক খরচ ২০০০০ টাকা গিয়ে সঞ্চয় থাকে ৫০০০ টাকা। বছরে আমার জমে প্রায় ৬০০০০ টাকা। দশ বছরে জমবে ৬০০০০০ টাকা। তবু দেখা যায় এই টাকা দশ বছর জমিয়েও একটা গাড়ী কিনতে পারবো না, ততদিনে গাড়ীর দাম আরো বেড়ে যাবে এবং একশো বছর চাকরী করেও একটা ফ্ল্যাট কিনতে পারবো না।

এখন আমার সামনে কেউ যদি একটা মুলো ঝুলিয়ে বলে ১ বছরে টাকা দ্বিগুন হবে তেমন একটা যাদুকরী মেশিন এসেছে, আমি মরিয়া হয়ে সেই মেশিনে টাকা ঢালার জন্য ছুটবো।

কারণ আমার ব্যাংকে আছে ৩ লাখ টাকা। তার অন্তত ২ লাখ টাকা এখানে খাটালে ২০১১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তত ১৯৯৭ মডেলের একটা টয়োটা কিনতে পারবো। আরেকটু দূর স্বপ্নে পাঁচ বছর চললে এই টাকা (২..৪..৮..১৬..৩২..৬৪) =১২৬ লাখ হয়ে যাবে এবং মাত্র পাঁচ বছরে আমি কোটি পতি!! টাকা বাড়ে গুনিতক হারে, কে না জানে।

সুতরাং বুদ্ধিমানের মতো ২ লাখ টাকা ইউনিপেটুইউর হাতে তুলে দিলাম।

২.
পুরোনো বাংলা সিনেমার একটা গান ছিল রুনা লায়লার কন্ঠে -"প্রেমেরই ফাঁদ পাতা ভূবনে, কে কোথায় ধরা পড়ে কে জানে......."। আজকাল প্রেমের ফাঁদ নেই আর, ভোগবাদী মানুষের জন্য এখানে সেখানে মোহনীয় টাকার ফাঁদ।

বেশ কিছুদিন ধরে ইউনিপেটু্ইউ (UNIPAY2U) নামে নতুন একটা ফাঁদের গল্প শুনে যাচ্ছিলাম নানা জনের কাছ থেকে। দ্রততম উপায়ে বড়লোক হবার প্রকল্পে যোগ দেবার জোর নিমন্ত্রন পাচ্ছিলাম। কিন্তু সহজ উপায়ে বড়লোক হবার ব্যাপারে গুরুর নিষেধাজ্ঞা থাকাতে পাত্তা দেইনি। কিন্তু গতকাল এমন একজনের কাছ থেকে এর গুনগান শুনলাম যার কথাকে আমি গুরুত্ব দেই। তিনিও বললেন এটা 'ওয়ার্ল্ডওয়াইড' কোম্পানী। শুনে একটু নড়ে চড়ে বসলাম। ভাবলাম অন্ততঃ একটু সাইবার ভ্রমন হোক।

ক্লিক করি unipay2u.com ওয়েব সাইটে। ঢুকে দেখলাম ওয়েবসাইটটিতে মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, বাংলাদেশ, দুবাই, নেপাল, চীন এইদেশগুলোর আলাদা ট্যাবে মিরর ওয়েবসাইটের মতো তৈরী করা আছে। সবার শেষে আছে ইউনিগোল্ড টু ইউ ট্যাব। এটি ব্লিংকিং করে চোখ মারছে সোনালীর রঙে। বড়শির ছিপের ফাৎনার মতো মনে হলো জিনিসটা। এতগুলো দেশের তালিকা দেখেই প্রথমে ভড়কে যায় বাঙালী। মনে হবে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী। মাল্টিন্যাশনাল মানে বিশ্বাসী, টাকা পয়সার বটগাছ ওরা। সবগুলো লিংক কাজ করছে না দুবাই এবং চীন এরর দেখায়।

বাকীগুলো বাদ দিয়ে, খালি বাংলাদেশের অংশে মন দিলাম। প্রথম পাতার নীচের দিকে দেখি দুটো সার্টিফিকেটের রঙিন স্ক্যানকপি দেয়া আছে। সম্ভবতঃ বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর স্বার্থে। বাঙালী আবার সার্টিফিকেট জাতীয় বস্তুর খুব ভক্ত।

একটা সার্টিফিকেট জয়েন্ট স্টক কোম্পানীর ইনকরপোরেটেড সার্টিফিকেট, আরেকটা হলো আমদানী সার্টিফিকেট(IRC) যাতে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আমদানী সীমা দেয়া আছে।

এই কোম্পানী ১৫ লক্ষ টাকার কী আমদানী করার সার্টিফিকেট নিল? বছরে শতকোটি টাকার আমদানী সার্টিফিকেট হলে না হয় বুঝতাম স্বর্ন আমদানীর লাইসেন্স পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের FOREIGN EXCHANGE REGULATION ACT, 1947 ACT NO. VII অনুযায়ী সরকার কাউকে স্বর্ন আমদানীর লাইসেন্স দেয় না। তাছাড়া দেশে যে কোন ধরনের আর্থিক ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেরকম কোন অনুমতিপত্র দেয়নি ওরা সাইটে। থাকলে নিশ্চয়ই একটা খেলো আমদানী সার্টিফিকেট দিয়ে পাবলিকের চোখে চশমা পরাতো না। তাহলে ব্যাপারটা কি?

তারপর একটু টেকি বিষয়ে খোঁজ খবর নিলাম। ওয়েবসাইটের হোষ্ট ও আইপি বিষয়ক তথ্যগুলোতেও বেনামী থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করলাম, যেটা সন্দেহকে আরো গাঢ় করে তুললো। আইপি বিষয়ক তথ্য প্রকাশে বিধিনিষেধ আছে বলে এখানে প্রকাশ করলাম না। কিন্তু যে কেউ http://www.ip-adress.com/whois অথবা http://www.dnsstuff.com এ গিয়ে সার্চ দিয়ে তথ্যগুলো দেখে নিতে পারবেন।

সব মিলিয়ে মনে হয় বড় ধরনের ঘাপলা আছে কোথাও। কি সেই ঘাপলা? যারা ফাঁদে পা দিয়েছে সবাই তো অশিক্ষিত না। সরকারের চোখের সামনেই তো ঘটছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার কি অপেক্ষা করছে কখন মানুষ রাস্তায় নেমে 'সব নিয়ে গেল রে' বলে বুক চাপড়ে কাঁদবে? মধ্যবিত্তের সামান্য সঞ্চয়কে ছেঁকে নেবার ফাঁদ পাতার সুযোগ আর কতকাল দিয়ে যাবো আমরা?

1 comment:

wholesale leggings said...

something statesman challenging on knifelike blogs familiar. It gift always be invigorating to
indicate assemblage off their writers and exercise a short something from their stock. I’d
choose to use many with all the collection in my least weblog whether you do not listen.
Natually I’ll provide a contact on your own net weblog. Very informative, thank you! I’ve by
no means had much of a focus this – I tend to only write about whatever is on my thoughts
once I really feel like writing. I assumed it’s fair to deposit my comment as a manner of
showing gratitude. I assume trust to blogging whim wriggle more stock, mainly due to
corporate blogging. I evermore intimate to my clients to continue a blog to their existing
websites seeking 3 reasons: Wow! This can be one particular of the most useful blogs
We have ever arrive across on this subject. Actually Great. I am also a specialist in this
topic therefore I can understand your effort. I have search some information and blogs
that might need someday. Good thing I finally found your site. Good looks which I expected.
I just want to say what a cool post it is enjoying so much looking through this post thanks for
share. A very well-written post. I read and liked the post and have also