মাঝে মাঝে দুর কোন স্থান থেকে কে যেন আমায় ডাকে। কোন অচিন বাঁশীর সুরে সে ডাক আমার কানে বাজতে থাকে। হৃদয়ে কম্পন তোলে একটানা হাহাকার। ইচ্ছে হয় সব ছেড়েছুড়ে ছুটে যাই তার পানে। আমি জানিনা কোথা হতে এ আহবান আসে। তবু মানসচক্ষে যেন দেখতে পাই ভরা পূর্নিমার রাতে বয়ে যাওয়া সেই পাহাড়ী নদী। পার ঘেঁষে সারি সারি পাইনের সবুজ বনানী বুকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে সুউচ্চ পাহাড় শ্রেনী। সেই অচিনপুর থেকে রাত্রির কুয়াশা ভেদ করে ভেসে আসে এক অনাবিল আহবান। এত করুন সে ডাক মাঝে মাঝে আমি সহ্য করতে পারিনা। অজানা কোন কষ্টে জ্বলতে থাকে চোখ দুটো। সে ডাক আমার নিঃসঙ্গ জীবন আরো নিঃসঙ্গতর করে তোলে। কেন আমার কাছে এমন আহবান আসে আমি বুঝি না। আর কারো এমনটি হয় কিনা জানি না। সাধারন যে কোন ডাকের চেয়ে এর শক্তি অনেকগুন বেশী। অন্তর ছিড়েখুড়ে এ ডাক বেরিয়ে যায়। আমাকে স্থির থাকতে দেয় না। আর আমিও যেন প্রতীক্ষায় থাকি সে ডাকের জন্য। কখন আসে, কখন আসে। অথচ কিছুই জানিনা, কোথায় সেই পাহাড়ী নদী, পাইনের বন আর কুয়াশার বুক চিরে ভেসে আসা জ্যোৎস্নার বান। যখন সে ডাকটা আসে তখন সেই অচিন জায়গার পরিষ্কার একটা ছবি আমার চোখে ভেসে ওঠে। স্বপ্নের চেয়ে অনেক সুন্দর এই ছবি। নদী থেকে কিছু দুরে পাহাড়ের কোল ঘেষে দাড়িয়ে থাকা ছোট্ট একটা বাংলোর উচু বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে আছি আমি। বাড়ীটার কোথাও আলো জ্বলছে না। পাশের জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে কোন বুনো ফুলের গন্ধ। নিস্তব্ধ রাত। একটানা ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে যাচ্ছে। রূপোলী আঁচল বিছিয়ে মাথার উপর মস্ত চাঁদ। কোথাও কেউ নেই। সে আমাকে ডাকছে সেও নেই। তবু কান্নার সুরের মতো একটা অচেনা ধ্বনি ভেসে আসছে দুর পাহাড় থেকে। এসব কিছুই আমি পরিষ্কার দেখতে পাই। আর আমার বুকের ভেতর হু হু করে ওঠে। কে সে? কেন এমন করে ডাকে? সে কি আমার স্বপ্নের মানবী যার মুখ আমি জীবনেও দেখিনি। আমি যাবো সেখানে? যাবো? নাকি যাবো না। আমি নিশ্চয়ই যাবো। আমার সব কাজ শেষ করে আমি নিশ্চয়ই যাবো সেখানে। যেখানে বাঁশীতে অচেনা সুর তুলে আমাকে ডাকছে একাকী এক বৈষ্ণবী।
১৭/১০/১৯৯৪
No comments:
Post a Comment