ঠিকঠাক চললে মানুষের সভ্যতা টেনেটুনে অন্ততঃ আরো কয়েক হাজার বছর চলতে পারতো। কিন্তু বিশ শতকে মানুষের হাতে পৃথিবী ধ্বংসের মতো যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। এখন এই সভ্যতা যদি এসব মারাণাস্ত্র ব্যবহার না করে আরো ৫০০ বছরও টিকে যায় সেটা হবে একটি বিস্ময়কর ঘটনা। হাজার বছরের মধ্যে যদি অন্য কোন লোভনীয় গ্যালাক্সি/গ্রহে পাড়ি জমাবার প্রযুক্তি এসে যায় তখন হয়তো পুরোনো এই গ্রহটি বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে। ধনী দেশগুলো নতুন গ্যালাক্সিতে রাজ্য স্থানান্তর করে এই গ্রহটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বস্তির মতো আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। অবশ্য তার আগেই শিল্প দুষণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নরক হয়ে উঠার সম্ভাবনা। যে ভবিষ্যত আমরা দেখবো না, সেই ভবিষ্যতের এমন চিত্র আমাদের ব্যথিত করে।
কিন্তু এই কল্পনার বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে। মানুষ হয়তো ক্রমশঃ সভ্য হয়ে উঠবে। যুদ্ধের বদলে ক্ষুধা আর দারিদ্র দূর করার গুরুত্ব বুঝতে শিখবে। পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হবে। মানব সভ্যতা বিস্তৃত হবে আরো পাঁচ হাজার বছর। গ্রহে গ্রহে মানুষ বিচরণ করবে, গ্যালাক্সি জুড়ে মানব সমাজের শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে পড়বে। অন্য গ্যালাক্সির সভ্যতার সাথে আমাদের সংযোগ ঘটবে। মহাবিশ্বের অজানা জ্ঞান উন্মোচিত হবে। সুদূর গ্যালাক্সির কোন গ্রহে বসে কোন পৃথিবীর বংশজাত কোন মানব একদিন দূরবীনে চোখ রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবে, ওই তো, ওই নীল গ্রহটিতে একদিন আমাদের পূর্বপুরুষের বসতি ছিল, ক্ষেতখামার ছিল, এখন সেখানে কে কোথায় আছে বহুকাল খবর রাখি না। গত দেড় হাজার বছর ওই গ্রহের সাথে নাকি কোন যোগাযোগ হয়নি। নতুন গ্যালাক্সিতে এসে মানুষ ভুলে গেছে আদিম পিতার কথা।
কিন্তু এই কল্পনার বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে। মানুষ হয়তো ক্রমশঃ সভ্য হয়ে উঠবে। যুদ্ধের বদলে ক্ষুধা আর দারিদ্র দূর করার গুরুত্ব বুঝতে শিখবে। পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হবে। মানব সভ্যতা বিস্তৃত হবে আরো পাঁচ হাজার বছর। গ্রহে গ্রহে মানুষ বিচরণ করবে, গ্যালাক্সি জুড়ে মানব সমাজের শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে পড়বে। অন্য গ্যালাক্সির সভ্যতার সাথে আমাদের সংযোগ ঘটবে। মহাবিশ্বের অজানা জ্ঞান উন্মোচিত হবে। সুদূর গ্যালাক্সির কোন গ্রহে বসে কোন পৃথিবীর বংশজাত কোন মানব একদিন দূরবীনে চোখ রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবে, ওই তো, ওই নীল গ্রহটিতে একদিন আমাদের পূর্বপুরুষের বসতি ছিল, ক্ষেতখামার ছিল, এখন সেখানে কে কোথায় আছে বহুকাল খবর রাখি না। গত দেড় হাজার বছর ওই গ্রহের সাথে নাকি কোন যোগাযোগ হয়নি। নতুন গ্যালাক্সিতে এসে মানুষ ভুলে গেছে আদিম পিতার কথা।
আমাদের কল্পনার দৌড় খুব সীমিত। ৫০০ কিংবা ৫০০০ বছর পর এই পৃথিবীর ভবিষ্যত কী দাঁড়াবে সেটা না জেনেই চলে যেতে হবে আমাদের।
ডায়নোসরের সভ্যতা ১৬ কোটি বছরের মতো। ৬ কোটি বছর আগে যে মহাজাগতিক দুর্ঘটনাটি তাদের ধ্বংস করেছিল তার নাম Cretaceous–Paleogene (K–Pg) extinction event । মানুষের সভ্যতাও যদি তেমন কোন আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে আমাদের সব লিখিত ইতিহাসও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ডায়নোসর যুগের কোন লিখিত ইতিহাস পাওয়া গেলে জানা যেতো সেই মহা দুর্ঘটনার আগের সভ্যতার অগ্রগতি। ১৬ কোটি বছরে তাদের জগতে কতগুলো হিটলার চেঙ্গিস খানের জন্ম হয়েছিল। যে উল্কার দানাটা পৃথিবীতে এসে আঘাত হেনেছিল সেই গোলাটা কী নিছক দুর্ঘটনা ছিল নাকি কোন মহাজাগতিক যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া আমরা জানি না। অথবা সেটা কোন গ্যালাক্সির দুষ্টু বাচ্চার গুলতি থেকে এসে পড়েনি, সেটাও কেউ নিশ্চিত বলতে পারে না।
ডায়নোসর যুগ কোনো উন্নত প্রযুক্তির সভ্যতায় বিবর্তিত হয়েছিল কিনা, সেই প্রযুক্তিতে তাদের কোন বংশধর অন্য কোন গ্যালাক্সিতে পাড়ি দিয়েছিল কিনা তার কোন রেকর্ড মানুষের খতিয়ানে নেই। আমাদের বর্তমান সভ্যতায় এখনো মানুষের জ্ঞান খুব সীমিত, এখনো মানুষের দৃষ্টি অতি নগণ্য দূরত্ব অতিক্রম করেছে। গ্যালাক্সি নিয়ে গবেষণার জ্ঞান যখন চরম উৎকর্ষতায় পৌঁছাবে, তখন হয়তো এমন অনেক অদ্ভুত প্রাচীন সভ্যতার নকশা আবিষ্কৃত হবে। হয়তো ডায়নোসর যুগেও ছিল মানুষ জাতের কোন একটা প্রাণী যাদের কোন চিহ্নমাত্র নেই এখন। আমাদের জানা ইতিহাসে তেমন কিছু নেই, কেননা এযাবত যাদের ফসিল/চিহ্ন মানুষের নাগালে এসেছে তাদের নিয়েই তৈরী আমাদের জানা ইতিহাস। যাদের কোন চিহ্ন কোথাও নেই, তাদের কোন ইতিহাস নেই। হয়তো হাওয়ায় ছড়িয়ে থাকা কোটি বছর পুরোনো কোন কণিকা থেকে আবিষ্কৃত হয়ে যাবে অদ্ভুত অজানা ইতিহাস। কে জানে? এটা তো অনস্বীকার্য যে ৬ কোটি বছর আগের সেই মহাজাগতিক দুর্ঘটনায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া প্রাণীদের সংখ্যা আবিষ্কৃত ফসিলের কোটি কোটি গুন বেশী। ১৬ কোটি বছরে কতগুলো সভ্যতা জন্মে আবার মরে গেছে সেটা কেউ জানে না। বিস্মিত হবার কত উপাদান জমে আছে ভবিষ্যতের কোটায়। যে ভবিষ্যত প্রযুক্তি সম্পর্কে এখন আমরা কল্পনাও করতে পারি না সে ভবিষ্যত উন্মুক্ত করে দেবে বিচিত্র থেকে বিচিত্র সব প্রাগৈতিহাসিক উপাদান। বর্তমান অনতিক্রম্য দূরত্বকে করে দেবে অতি নিকট। সেই ভবিষ্যতে জন্ম নিতে না পারার আক্ষেপ থেকে এই এলোমেলো ভাবনাগুলো জন্ম নিল।
[শিরোনাম কৃতজ্ঞতা : শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'মহাকাল মেলের প্যাসেঞ্জার' থেকে উদ্ভুত]
No comments:
Post a Comment